আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ বিশ্বের মডেল : হিলারি

নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রশংসা করে বিশ্বে বাংলাদেশকে 'মডেল' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। একই সঙ্গে বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রগতির প্রত্যাশা জানিয়ে গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুতি এড়াতে রাজনীতিকদের সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার ঢাকায় আসার পর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিয়ে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। হিলারি ক্লিনটন আঞ্চলিক যোগাযোগে ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি অর্থনীতির স্বার্থে হরতালের বিরোধিতা করেন।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্পরিক অংশীদারি সংলাপের ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন। সেই আলোকে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। হিলারি ক্লিনটনের নেতৃত্বে ৩৮ সদস্যের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল গতকাল বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছায়। বিমান থেকে ১৪ সদস্যের সাংবাদিক প্রতিনিধিদল নেমে এলেও প্রায় ৫০ মিনিট পর নামেন হিলারি ও তাঁর সঙ্গীরা। হিলারি বিমানে থাকাকালেই বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন প্রতিনিধি বিমানে ওঠেন।

জানা গেছে, বিমানে ওই বৈঠকের পর হিলারিসহ অন্যরা নেমে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটন মতপার্থক্য দূর করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার তাগিদ দেন। দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত রাখতে সংলাপ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটন বলেন, 'বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আমরা সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা সবাই যেহেতু একই নৌকার যাত্রী, তাই আমাদের সবাইকে একই দিকে দাঁড় টানতে হবে।

' হিলারি আরো বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে যেমন সহনশীল আচরণ করতে হবে, তেমনি সুশীল সমাজের ভূমিকা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে হিলারি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একজন দক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের তাগিদ দেন। হিলারি আরো বলেন, 'আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী, সফল ও এমন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাই, যা দেখে মনে হয়, গণতন্ত্রই উন্নতির প্রধান হাতিয়ার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আমরা সব রাজনৈতিক নিয়ামক শক্তির মধ্যে ঐকমত্য চাই। বাংলাদেশ যে মাত্রায় অগ্রগতি চায় তা অর্জন করতে জাতীয় মৌলিক বিষয়গুলোতে অবশ্যই পারস্পরিক সহযোগিতা থাকবে।

' সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এর বাইরে কিছু চাই না। গণতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করলে পরস্পরের সহযোগিতার জন্য অনেক ইস্যু রয়েছে। গণতন্ত্র, বাণিজ্য, উন্নয়নে আমাদের সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। আর আমরা এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। ' তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণে আইনের শাসন, স্বচ্ছতার মতো কঠিন বিষয়ে আমরা বারবার বলি। এগুলোর কোনোটাই অর্জন করা সহজ নয়। অনেক দেশ হাল ছেড়ে দিয়েছে বা পারেনি। অথচ আপনারা এই ইস্যুতে হাল ছাড়েননি। এটি বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের সফল নেতাদের কৃতিত্ব।

' হিলারি ক্লিনটন বলেন, 'স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা মোটেও সহজ নয়। আমরা গণতন্ত্র থেকে কোনো ধরনের বিচ্যুতি দেখতে চাই না। আমরা চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হোক। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, এটি সম্ভব। ভবিষ্যতে এ দেশে শতভাগ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

' হিলারি বলেন, 'আমরা বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আপনাদের প্রশংসা করি। কেনেডি এ দেশে অনেক আগে একটি বটগাছের চারা লাগিয়েছিলেন। আমরা দেখতে চাই ওই বটগাছের মতোই এ দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে। ' যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশ দুটিকে আমরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতা হিসেবে দেখি।

আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি রক্ষা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেয়। আমি সারা বিশ্বে তা দেখেছি। আপনাদের গর্ব করা উচিত। আমি স্বীকার করব, আমি নারীদের নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত। আপনাদের নিরাপত্তা বাহিনীতে নারীরা রয়েছেন।

আমি একে অত্যন্ত জোরালো বার্তা হিসেবে দেখতে চাই। এটি বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। নারী নেতৃত্ব, প্রতিভাবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, সাংবাদিকতা, নিরাপত্তা, সামরিক বাহিনী- প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। এ দেশ বিশ্বের জন্য মডেল।

' হিলারি বলেন, 'আমরা জানি, এটি কঠিন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের অগ্রগতির ব্যাপারে নিশ্চিত। আমরা কঠিন ইস্যুগুলো তুলে ধরব। কারণ, আমরা মনে করি, বন্ধুরা এটিই করে থাকে। ' তিনি বলেন, 'সার্বিকভাবে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় আছি।

' সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, 'আজ আমরা হিলারি ক্লিনটনকে এখানে পেয়ে আনন্দিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথমবার তিনি এলেও এ দেশে এটি তাঁর প্রথম সফর নয়। ১৯৯৫ সালে মেয়ে চেলসিকে নিয়ে তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর সবাই আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করে। ব্যক্তিগত কাজের মধ্য দিয়ে তিনি এ দেশের জনগণের হৃদয় ছুঁয়েছেন। ' দীপু মনি বলেন, 'হিলারি ক্লিনটন এ দেশের ঘরে ঘরে পরিচিত একটি নাম।

উষ্ণতা ও ভালোবাসা দিয়ে আমরা হিলারিকে স্বাগত জানাই। তাঁর এ সফর বহুল প্রতীক্ষিত। ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর হিলারির এই সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন মাইলফলক হিসেবে গণ্য হবে। ' দীপু মনি আরো বলেন, 'বছরে বছরে আমাদের সম্পর্ক পূর্ণতা পেয়েছে। পারস্পরিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার ওপর ভিত্তি করে এ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত।

সত্যিকারের অংশীদারে এ সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়েছে। ' দীপু মনি বলেন, 'বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ' তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, জিএসপি সুবিধা বৃদ্ধি এ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এর বাইরে মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তি, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত একজন খুনিকে ফেরত আনার ব্যাপারেও আমরা আলোচনা করেছি। ' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'উভয় পক্ষ অংশীদারি সংলাপকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অংশীদারি সংলাপের ঘোষণায় দুই দেশের মূল্যবোধ ও সহযোগিতার আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। ' পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের বন্ধুরাও তাঁদের বিশেষ আগ্রহের কিছু বিষয় তুলেছেন। সেগুলোর মধ্যে সুশাসন ও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যু, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমনে সহযোগিতা ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে অংশীদারি অন্যতম।

' তিনি বলেন, 'উভয় দেশ বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আইনের শাসন, বৈচিত্র্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে উত্তর-দক্ষিণ বা পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ দূর করে এক বিশ্ব গড়তে উভয় পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.