আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্লিজ আমাকেও গুম করেন !!!

"" It is a difficult thing to tell the story of a life;and yet more difficult when that life is one's own. "" শিরোনাম টা দেখে যে কারো ঘাবড়ানোর কথা, বাস্তবতাটা তার চেয়েও বেশি ঘাবড়ানোর মত। শুরু করছি একটু ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলে, ছোটবেলা থেকে আমি খুব বেশি পড়ালেখায় মনোযোগী না হলেও রেজাল্ট ছিল খুবই ভালো। অল্প পড়লেই হয়ে যেত, আমার পাশের বাসার আন্টি বলতেন, ছেলেটার মাথা আছে, তার কথার আগা-মুন্ডু আমি ধরতেই পারতাম নাহ, মাথা তো সবারই আছে, রেজাল্টের সাথে মাথার সম্পর্ক নিরূপণ করতে লেগে যেতাম,কিন্তু কূলকিনারা পেতাম নাহ। ছোট্ট একটা গল্প মনে পড়ছে, আমার জীবনে অভিনয়ে প্রথমবারের মত পুরস্কার পাওয়ার ঘটনা, তখন আমি ক্লাস ফোরে, পরের দিন দুপুর বেলায় শিশু একাডেমীর একক অভিনয় প্রতিযোগিতা, একক অভিনয় কি তা এই মুহুর্ত পর্জন্ত জানতাম না, ফুয়াদ নামে আমার এক বন্ধু আমার বাসায় এলো, সে আমাকে একটা একক অভিনয় করে দেখালো, আমি তারটাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম, সারারাত ধরে চর্চা করলাম, পরেরদিন দুপুরে পার্ফরম করলাম, ফুয়াদ সেবার কোন পুরস্কার পেলেও আমি হলাম সেকেন্ড ( সমগ্র ঢাকায়)। নানা রঙের স্বপ্নের শুরু তখন ই।

কলেজ লাইফ কাটালাম ঢাকা কলেজে, রক্ত গরম তখন,বুঝে হোক না হোক ছাত্রলিগের সাথে জড়িয়ে পড়লাম, তখন ওয়ান এলেভেনের সরকার ক্ষমতায়। একদিন কলেজের কমন রুমের ক্যারাম খেলছিলাম, আমাদের মধ্যে কোন একজন ছেলে পুকুরপাড়ের দিকে যেই অংশটা কমন রুমের পিছনে ছিল সেখান থেকে দেখেছিল যে কিছু মানুষ ওখানে অস্ত্র নিয়ে কি জানি করছে, হঠাত তাদের মধ্যে কেউ একজন ছেলেটিকে দেখে ফেলে দৌড়ানি দেয়,সে ভয়ে কমন রুমেই ঢুকে, যে কয়জন দাবড়ানি দিয়েছিল তাদের ২জনের হাতে জীবনে প্রথমবারের মত রামদা দেখলাম, আমাদের তো ভয়ে জান জান যায় অবস্থা, এর কিছুদিন পরেই ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের ৩ গ্রুপের সংঘর্ষে ১জন মারা যায়। এরপর পরীক্ষা ছাড়া কলেজেই যেতাম নাহ। এরপর এলো ভার্সিটি লাইফ, বুয়েট এ ভর্তি হতে পারলাম নাহ, ঢাবি তে পলিটিক্স আছে বলে বাবা-মা ভর্তি হতে দিলেন না,ভর্তি হলাম আইইউটিতে। পড়ালেখার মাত্রাতিরিক্ত চাপের কারণে আমার অনেক স্বপ্নের দিকে মনোনিবেশ করতেই পারলাম নাহ, এক পর্যায়ে বাস্তবতা মেনে নিয়ে সব স্বপ্ন ছেড়ে পড়ালেখায় মন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু গত দুই বছর ধরে তা কোনভাবেই পারছিনা, জীবনের চরম হতাশা যাকে বলে হয়তো সেই পর্যায়েই চলে এসেছি।

ভাবছেন এসব কাহিনীর সাথে "গুম" এর কি সম্পর্ক ? সম্পর্ক আছে বলেই লেখার অবতারণা। শুনেছি, মানুষ যখন চরম হতাশায় থাকে তখনি নাকি সুইসাইড প্রবণতা জেগে উঠে। বলতে পারেন আমার মধ্যেও মাঝে মাঝে মধ্যে সেই চিন্তা উঁকিঝুঁকি মারে। বাবা-মার অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েও জীবনের কোন গতি ই করতে পারছিনা ভেবে কষ্ট টা একটু বেশিই। তাই চিন্তা করে দেখলাম যদি এই পর্যায়ে গুম হয়ে যাওয়া যায় খারাপ কি? একসময়কার ভিলেন যদি গুমের কারণে এখন হিরো হয়ে যেতে পারে তাহলে আমি ই বা কম কিসে? ছাত্ররা দুর্ঘটনায় মারা গেলেই হয়ে পড়ে মেধাবী ছাত্র, আমিতো সেখানে হয়ে যাবো মহামেধাবী।

এই প্রক্রিয়ায় যদি বিখ্যাত হওয়া যায় দোষ কী বলেন? দেশের ছাত্রসমাজ যদি আমার এই গুম হওয়াতে তাদের মধ্যে যদি চেতনার উদ্ভব হয় !! বার্ড ফ্লু তে আক্রান্ত এই সমাজ যদি আমার মতন একজন সাধারণ মানুষের "গুমে" একটু যদি রোবটিক শক্তি পায়, খারাপ কি? আবেগিক আর বিবেগিক শক্তি এ জাতি হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই ! ব্যক্তি থেকে এবার জাতিসত্বায় আসি। আমার হতাশা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও জাতিকেন্দ্রিক হতাশায় যে জাতি ডুবছে না তার গ্যারান্টি-ই-বা কী? যখন একের পর এক (বুয়েট, জাবির পর আজকে থেকে কুয়েটে টিচারদের স্ট্রাইক শুরু হয়েছে) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশাসনিক দলীয়করণের কারণে অচল হয়ে যাচ্ছে আর বাকিগুলোতে তো পেশী শক্তি আর অস্ত্র শক্তির মহড়া চলে তখন ছাত্রসমাজের হতাশ না হয়ে কোন উপায় আছে কি? পিতা সকল বেলায় সন্তানকে আদর করে বেরিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় ফিরে আবার আদর করতে পারবেন কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই তখন সন্তানকুল হতাশ হবেনা তার কী গ্যারান্টি? যখন একজন বাসড্রাইভারের ধার করা গাড়ি আর বিধাতা কতৃক দেয়া জীবন দুটোই পুড়ে যায় পিকেটারদের হাতে তাদের কী হতাশা জাগবেনা? সদ্য বিবাহিতা তরুণী যখন বিয়ের কিছুদিনের মাথায় তার বরকে হারিয়ে ফেলে ক্রসফায়ারের মাঝে তখন তাদের মধ্যে কী হতাশা জাগবেনা? এরকম সহস্র উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে এমনিতেই ভাসে, কার এইসব হতাশা যে চরম হতাশায় রূপ নিবেনা তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? শিরোনামের প্রাসঙ্গিকতা অনেক পরে হলেও এখন ঠিক ই চলে এসেছে, আজ আমি হয়তো ব্যক্তগত হতাশা থেকে কথাটা লিখেছি,আমাকে না হয় কেউ আটকিয়ে ফেলবে একা বলে, কিন্তু যদি পুরো জাতির মধ্যে যখন চরম হতাশা বাসা বাধবে তখন? আমার মত আরো অনেক "আমি" একত্রে একই কথা বলবে তখন? প্রশ্ন রইলো সকলের কাছে, কবিগুরুর একটি লাইন খুব মনে পড়ছে, "মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে মানবের তোরে আমি বাঁচিবার চাই" জন্মের খাতিরেই মানুষ নয়,কর্মের খাতিরে মানুষের তরে !!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.