আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামের দাওয়াত বহনকারীর দৈনন্দিন কার্যাবলী

ইসলামের দাওয়াত বহনে উদ্বুদ্ধ একজন যখন চিন্তা করে দেখবে যে কত শ্রেষ্ঠতম বিষয় সে বহন করছে, কত বড় আমানত সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে, তখন এ কাজের জন্য নিজেকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করা তার অন্যতম কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আর নিজেকে এজন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে তার দৈনন্দিন কাজগুলোকে এ লক্ষ্য অর্জনের উপযোগী করে সাজাতে হবে। ইসলামের দাওয়াত বহনকারীরকে উপলব্ধি করতে হবে যে তাঁর বহনকৃত বিষয়টি কত ভারী। এটাও তাকে বুঝতে হবে যে কত বড় বড় বাধা রয়েছে এ পথে যেগুলো অতিক্রম করে তাকে গন্তব্য পৌঁছতে হবে। একজন দাওয়াত বহনকারীকে নিজের বর্তমান অবস্থা ও দূর্বলতাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে; নিজের কোন্ কোন্ বিষয়গুলোকে ঠিক করতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনে আরো কতটুকু সামর্থ্য ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে তাকে তা চিহ্নিত করতে হবে।

তার প্রতিদিনের কাজের তালিকায় ঐ কাজগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে যেগুলো তার বর্তমান দুর্বলতা ও অদক্ষতাগুলো কাটিয়ে ইসলামের দাওয়াত বহনে ক্রমান্বয়ে তাকে অধিকতর যোগ্য করে তুলবে। নিম্নের বিষয়গুলোকে সাধারণভাবে একজন দাওয়াত-বহনকারী তার দৈনন্দিন কাজের অন্তর্ভূক্ত করতে হবেঃ প্রথমতঃ প্রতিদিনই আল্লাহ্’র (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে সে সদা সচেষ্ট থাকবে। এর মানে হচ্ছে, ব্যক্তিগত জীবনে শারী’আহ্’র সমস্ত ফরযগুলো নিষ্ঠার সাথে পালন করা, হারামগুলো পুরোপুরি বর্জন করা এবং যথাসাধ্য নফল ইবাদত করা। দ্বিতীয়তঃ তাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কুর’আন তেলাওয়াত করতে হবে। এই কুর’আনের বাণী সে অন্যের কাছে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে, একে সে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, সে নিজেই যদি কুর’আন পাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে তাহলে কীভাবে হবে? এছাড়াও দাওয়া-বহন করতে গিয়ে সমাজে যে বাধা, অপমান ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হয়, যে মানসিক যাতনা তৈরী হয় কুর’আন পাঠে তা অপসারিত হয়।

কুর’আন অন্তরকে প্রশান্ত করে। তার উচিত হবে কুরআনকে অর্থসহ পড়া, এর অর্থ নিয়ে চিন্তা করা এবং তাফসীর অধ্যয়ন করা। তৃতীয়তঃ অবশ্যই তার দৈনন্দিন কাজের অন্যতম অংশ হবে বাস্তবে এই দাওয়াতকে আরেকজনের কাছে পৌঁছে দেয়া, আরো কার কাছে নেয়া যায় তার সুযোগ অনুসন্ধান করা। পরিচিত-অপরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়, কর্মস্থলের সহকর্মী প্রত্যেকের কাছে কীভাবে এই দাওয়াত নিয়ে যাওয়া যায় এ সুযোগ খুঁজে বের করতে সে সদা সচেষ্ট থাকবে। ইসলামের আহ্বানকে সমাজের কাছে নানা উপায়ে পৌঁছে দেয়ার চিন্তাই তার সারাদিনের প্রধান চিন্তা হওয়া উচিত।

চর্তুথতঃ তাকে অবশ্যই প্রতিদিনকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরাখবর জানতে হবে এবং এর ভিত্তিতে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশেষণ দাঁড় করাতে হবে। এটা এজন্য যে, তার পুরো কাজটাই রাজনৈতিক কাজ যার অংশ হচ্ছে জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের দূর্বল করে ফেলা এবং ইসলামের শত্রুদের মুখোশ উম্মোচন করে দেয়া। এই কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব হবেনা যদি না সে তাদের প্রতিদিনকার নিত্য নতুন অপকর্ম, জুলুম এবং জনগণের ব্যাপারে তাদের ক্ষতিকর পরিকল্পনা সমূহের ব্যাপারে সর্বশেষে সংবাদের খোঁজ না রাখে। ফলশ্রুতিতে, সে জনগণের সাথে ঐভাবে জনসংযোগ করতে পারবেনা যা দিয়ে সে জনগণকে শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে এবং তাদেরকে দ্রুত আন্দোলনে নামাতে পারে। উপরন্তু, এর ফলে সে যথা সময়ে যথোচিত কাজ সমাধা করতেও ব্যর্থ হবে এবং এমন সব সুযোগ হারিয়ে ফেলবে যার সদ্ব্যবহার করতে পারলে অল্প সময়েই সে তার দাওয়াত ও আন্দোলনকে এক ধাপে অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারতো।

তাকে মনে রাখতে হবে যে, রাজনীতিতে একটা মাত্র দিনও অনেক লম্বা সময় যাতে পিছিয়ে পড়া যাবেনা কখনোই। পঞ্চমতঃ তার দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ থাকবে ইসলামী জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য। কেননা ইসলামী জ্ঞান ছাড়া অন্যের কাছে সঠিকভাবে ইসলামকে পৌঁছানো অসম্ভব। তাই নির্ভরযোগ্য ইসলামের বিভিন্ন শাখায় নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করবে এবং এটা দিয়ে তার দাওয়াত ও প্রচারকে সমৃদ্ধ করবে। ষষ্ঠতঃ প্রতিদিন রাতে সে শোয়ার পূর্বে একটি সময়কে নির্দিষ্ট করে নিবে যখন সে তার সারাদিনের সমস্ত কাজগুলো হিসাব-নিকাশ করবে।

কী তার করার কথা ছিল কিন্তু করেনি, কোন কাজটি করেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি, কোন কাজে ভুল-ত্রুটি বা চিন্তার অভাব বা অলসতা ছিল, ব্যক্তিগত ইবাদতে কি কি ত্র“টি হয়েছে এসব সে খুঁজে বের করবে এবং পরবর্তী দিন কীভাবে এসবকে ঠিক করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করবে। এভাবে সে উত্তরোত্তর তার কাজে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “ধ্বংস তার জন্য যার আজকের দিন গতদিনের চেয়ে উত্তম নয়। ” এই হচ্ছে একজন দাওয়াহ-বহনকারীর দৈনন্দিন জীবন। এ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়ার জন্য তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দাওয়াহ বহনকারীদের অর্থাৎ সাহাবাদের (রা.) দৈনন্দিন জীবনকে অধ্যয়ন করতে হবে।

তাঁরা এরূপই ছিলেন। আর আমরা যদি অনুরূপ ভাবে আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো সাজাই তাহলে তাঁরা যেমন দুনিয়াতে ইসলামকে বিজয়ী করে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং আখেরাতে পুরস্কৃত হবেন - আমরাও একইভাবে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মান লাভ করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ্। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.