আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।
পাকিস্তানের শাহিওয়াল শহরের অধিবাসী মাওলানা গোলাম হুসাঁইন নয়ীমী একজন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অর্থাৎ সুন্নী আলেম ও চিন্তাবিদ ছিলেন। যিনি অক্লান্ত গবেষণা ও সত্য অনুসন্ধান পূর্বক শিয়া ইসনা আশারী মাযহাব গ্রহণ করেন। তাঁর মাযহাব পরিবর্তন করার পিছনে কারণ ছিল যে, এমন কিছু প্রশ্ন তাঁকে সর্বদা বিচলিত করে রেখেছিল যার সদুত্তর তিনি কোন সুন্নি মহা পন্ডিতের নিকট পান নি। আজ সে সমস্ত প্রশ্নগুলোই উপস্থাপন করা হল যা আজো কোন উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাঁর নতুন বিশ্বাস পোষণের কারণেই তাঁকে শহীদ হতে হয়েছে। আল্লাহ্ তাঁকে এর প্রতিদান দান করুন এবং তাঁকে বেহেস্তবাসী করুন। বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়ার লক্ষে কিছু ফুট নোট দেয়া হল।
প্রশ্ন-১।
ইতিহাস স্বাক্ষ যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন নবুয়াত ঘোষণা করলেন তখন মক্কার কোরায়েশগণ[১] বনী হাশিম গোত্রকে বয়কট (একঘরে) করে দিল।
তখন হযরত আবু তালিব সমগ্র গোত্রকে মক্কার অদূরে একটি স্থানে নিয়ে গেলেন, যা তার নিজস্ব সম্পত্তি ছিল এবং সেই স্থানের নামকরণ হয়েছে ‘শেব-এ আবু তালিব’ যেখানে তাঁরা তিন বছর পর্যন্ত কল্পনাতিত কষ্ট-কাঠিন্ন ও দূর্ভোগ সহ্য করেছেন[২]।
সেই মুহুর্তে হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমর (রাঃ) কোথায় ছিলেন? তারা তো মক্কাতেই ছিলেন, তাহলে তখন তারা রাসুল (সাঃ)-কে কেন সাহায্য করেন নি? তারা যদি ‘শেব-এ আবু তালিব’-এ রাসুল (সাঃ)-এর সাথে যোগ দিতে অপারগ ছিলেন, তাহলে এমন কোন প্রমান আছে কি যে সেই কঠিন দিনগুলিতে তারা রাসুল (সাঃ)-কে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা করেছে (বিশেষ করে খাদ্য-দ্রব্য ইত্যাদী সরবরাহ করে), যদিও তারা ভাল করেই অবগত ছিলেন যে কোরায়েশরা বনী হাশিমের প্রতি সমস্ত রকমের খাদ্য-দ্রব্য এবং লেন-দেনকে বয়কট করেছে?
প্রশ্ন-২।
রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের মাত্র ৬ মাস পরেই হযরত ফাতিমা যাহ্রা ইন্তেকাল করেন। অপর দিকে হযরত আবু বকর (রাঃ) ২ বছর ৬ মাস পরে ইন্তেকাল করেন এবং হযরত উমর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন ২৮ হিজরীতে, এতো পরে তাদের মৃত্যু হওয়ার পরও তারা রাসুল (সাঃ)-এর পাশেই দাফন হলেন, কিন্তু হযরত ফাতিমা যাহ্রা তাঁর পিতার পাশে দাফন হলেন না কেন? তিনি কি এমন ওসিয়াত করেছিলেন যে, তাঁকে তাঁর পিতার থেকে দূরবর্তী স্থানে দাফল করা হোক? তাই যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে কেন, অথবা মুসলমানগণ কি তাঁর দাফনে বাধা সৃষ্টি করেছিলেন? [৩]
প্রশ্ন-৩।
সাহাবাদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে রাসুল (সাঃ)-এর সাথে তার নৈকট্যের কারণে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে।
বিষয়টি যদি এমনই হয়ে থাকে তাহলে হিজরতের পরে রাসুল (সাঃ) তাকে সেদিন নিজের ভাই হিসাবে গ্রহণ করলেন না কেন, যেদিন তিনি সকল মোহাজের ও আনছারগণকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করছিলেন? পক্ষান্তরে, রাসুল (সাঃ) হযরত আলীকে এই কথা বলে বেছে নিলেন যে, “তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই”[৪] তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসুল (সাঃ)-এর এতো নিকটবর্তী এবং সর্বশ্রেষ্ট সাহাবা ঘোষিত হলেন?
প্রশ্ন-৪।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কিতাবাদি হযরত আয়েশা, হযরত আবু হুরায়রা এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ)-এর রেওয়ায়েত দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে আছে। কিন্তু হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হুসাইন-গণ হতে অতি সামান্যই রেওয়ায়েত হয়েছে, এমনটি কেন? ঐদিও রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করেছেন যে, “আমি জ্ঞানের শহর ও আলী তার প্রবেশদার”, এতদসত্বেও হযরত আলী কি রাসুল (সাঃ)-এর সাহাবাদের মধ্যে উপরে বর্ণিত সাহাবীদের তুলনায় কম জ্ঞানী বা কম মর্যাদাবান ছিলেন?
প্রশ্ন-৫।
যদি হযরত আলী এবং প্রথম তিন খলিফার মধ্যে কোন ব্যবধানই ছিল না, তাহলে তিনি উক্ত তিন খলিফার খেলাফত আমলে সংঘটিত যুদ্ধগুলোতে কেন অংশগ্রহণ করেন নি, যদিও কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর একটি আবশ্যিক দায়ীত্ব (তথা ফরজ)? তিনি সেই সময়ে বিষয়টিকে যদি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না করে থাকেন তাহলে তিনি নিজের খেলাফত আমলে জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফ্ফিন এবং জঙ্গে নাহারওয়ানের যুদ্ধে তরবারী কোষমুক্ত কেন করলেন?
প্রশ্ন-৬।
যদি (যেমনটি সর্বদাই অভিযোগ করা হয়ে থাকে) সংখ্যালঘু শিয়ারাই ইমাম হুসাইনের হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ট ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’-এর আসুসারীগণ তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলন না কেন? যদিও তারা সংখ্যাগরিষ্ট ছিলেন এবং তাদের লক্ষ লক্ষ লোকবল ছিল, সেই সংকটময় মুহুর্তে তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন?
প্রশ্ন-৭।
রাসুল (সাঃ)-এর মৃত্যুসজ্জায় তাঁর কর্তৃক কাগজ-কলম চাওয়ার বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করে হযরত উমর (রাঃ) কর্তৃক “হাসবুনা কিতাবাল্লাহ”[৫] কথাটি বলা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবুও রাসুল (সাঃ)-কে ‘প্রলাপ বকার’ অপবাদ দেয়ার জন্য হযরত উমর (রাঃ) কেমন পুরস্কার পাবেন?[৬]
প্রশ্ন-৮। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির হেদায়েতের জন্য ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসুল প্রেরণ করেছিলেন। কোন নবী ও রাসুলের ক্ষেত্রে এমন কোন নজীর আছে কি যে, তাঁর সাহাবীগণ তাঁর কাফন-দাফনে শরীক না হয়ে তাঁর খলিফা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন? যদি এমন কোন নজীর নাই থাকে তাহলে সর্বশেষ ও সকল নবীদের সরদার হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সাঃ)-এর সাহাবাগণ এমন পথ কেন বেছে নিলেন?[৭]
প্রশ্ন-৯। “আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রসুলগণ তাদের যাবতীয় কিছু উম্মতের জন্য সদকা হিসাবে রেখেগেছেন”- এই কথাটির দলিল-প্রমান কোথায়? আর তাঁরা যদি তেমনটি করেই থাকেন তাহলে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণ তাঁর রেখে যাওয়া যাবতীয় কিছু ইসলামী রাষ্ট্রের নিকট হস্তান্তর করলেন না কেন অথবা ইসলামী রাষ্ট্র তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে নিল না কেন, যেমনটি হযরত ফাতিমা যাহ্রার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন? আবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আনুসারীগন রাসুল (সাঃ)-এর স্ত্রীগণকেও ‘আহলে বাইতের’ অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য করে থাকেন, অথচ আহলে বাইতের জন্য ‘সদকা’ হচ্ছে ‘হারাম’, তাহলে তারা সদকার মালগুলোকে কেন নিজেদের দখলে রেখেছিলেন?
প্রশ্ন-১০।
আমরা পবিত্র কোরআনে পাঠ করে থাকি যে, “কোন মুমিনকে কেহ ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম যেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং তার প্রতি আল্লাহ্র গজব ও লানত বর্ষিত হবে এবং তার জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
” [সূরা নিসা, আয়াত-৯৩]। ইতিহাস স্বাক্ষ যে, সিফফিন ও জমল যুদ্ধে প্রায় ৭০ হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিলেন, এমতাবস্থায় হত্যাকারীদের অবস্থান কোথায় হবে? উক্ত আয়াতের বক্তব্য তাদের ক্ষেত্রেও কি প্রযোজ্য হবে না? তারা তাদের যুগের খলিফার বিরোধিতা করেছিল এবং ফিতনা সৃষ্টি ও হত্যা জজ্ঞের জন্য দায়ী, বিচারের দিনে তাদের অবস্থা কি হবে?
প্রশ্ন-১১।
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, “আর মদীনাবাসীদের মধ্যে অনেকেই কঠিন মুনাফেকীতে লিপ্ত, (হে রাসুল) তুমি তাদেরকে জান না আমি জানি। ” [ সুরা তাওবাহ, আয়াত -১০১ ]।
উক্ত আয়াতটি প্রমান করে যে, রাসুল (সাঃ)-এর জীবদ্দশাতেই মুনাফিকদের সংখ্যা অনেক ছিল, তাহলে রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তারা কোথায় চলে গেলেন? ঐতিহাসিকদের তথ্যানুযায়ী রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর মুসলমানগণ দু’দলে বিভক্ত হয়েগিয়ে ছিলেন, একটি বনু হাশিম ও তাদের ভক্তবৃন্দ এবং অপরটি ছিল ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ভক্তবৃন্দ, তাহলে এদের মধ্যেকার কোন দলটি মুনাফেকীতে লিপ্ত ছিল?
প্রশ্ন-১২।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতে ৪টি মূল নীতি হল, কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস। তাহলে উক্ত ৪টি মূল নীতির কোন একটি বিষয়ও কি রাসুল (সাঃ)-এর খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বনু সকীফাতে উপস্থাপন করা হয়েছিল কি?
প্রশ্ন-১৩।
মনোনীত কোন খলিফার বিরোধিতা করা যদি স্বধর্ম বা স্বপক্ষ্য ত্যাগ করার সমান হয়ে থাকে, আর ঐ খলিফা যদি মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদও হয়ে থাকে তবুও তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হবে। [৮] তাহলে ঐ সমস্ত বিদ্রোহিদের কি হবে যারা খোলাফায়ে রাশেদার ৪র্থ খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল?
প্রশ্ন-১৪।
বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মূলনীতি তো এটাই যে দু’টি দল যখন একই বিষয়ে দাবী উত্থাপন করে তখন যে কোন একটি অবশ্যই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
কিন্তু দু’টি দলই সত্যবাদী হতে পারে না। এই নীতি অনুসারে জমল ও সিফফিন যুদ্ধে হত্যাকারী এবং নিহত উভয় পক্ষ কি জান্নাতবাসী হবেন? অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বক্তব্যানুযায়ী উভয় পক্ষই সত্যের উপর প্রতিষ্টিত ছিলেন!
প্রশ্ন-১৫।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “সে সত্ত্বার কব্জায় আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসমই করে বলছি যে, এই ব্যক্তি (আলী) এবং তাঁর শিয়াগণ (অনুসারীগণ) কিয়ামতের দিনে সফলকাম হবেন। ”[৯] অপর দিকে, এমন কোন হাদীস আছে কি যেখানে রাসুল (সাঃ) নিশ্চয়তা প্রদান করে বলেছেন যে, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম হাম্বলের অনুসারীরা জান্নাতে যাবে?
প্রশ্ন-১৬।
হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় হযরত আয়েশা (রাঃ) সর্বক্ষণ তার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে হত্যা করার জন্যও উস্কানী যুগিয়েছেন।
[১০] অথচ এ আবার কেমন করে সম্ভব হল যে তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার পর হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দাবী উত্থাপন করলেন যে, “উসমানের হত্তাকারীকে ফাঁসি দিতেই হবে”? অতঃপর তিনি হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মক্কা ত্যাগ করলেন এবং বসরা নগরী থেকে তার অভিযান পরিচালনা করলেন কেন? তার উক্ত সিদ্ধান্তটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর সত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ছিল না কি হযরত আলীর বিরুদ্ধে তিনি যে বিদ্বেষ পেষণ করতেন সেটারই বহিঃপ্রকাশ?
প্রশ্ন-১৭।
হযরত আয়েশার (রাঃ) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা যদি কুফুর হয়ে থাকে তাহলে আমরা তার হত্যাকারী সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করব?[১১]
প্রশ্ন-১৮।
সাধারণতঃ বলা হয়ে থাকে যে, সাহাবাগণ ছিলেন বীর-বিক্রম, উদার প্রকৃতির ও জ্ঞান সম্পন্ন এবং তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই তাদের জীবন অতিবাহিত করেছেন। আমরা যদি তাদের বীরত্ব সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানতে হবে যে, সবচাইতে স্বনামধন্য সাহাবী হযরত উমর (রাঃ) বদর, অহুদ, খন্দক, খায়বার এবং হুনাইন যুদ্ধে কতজন কাফিরকে হত্যা করেছেন? কতজন মুশরিককে তিনি তার খেলাফত আমলে হত্যা করেছেন? আমরা যদি অনুসন্ধান করি যে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি অস্বীকার করেছিল এবং হুদায়বিয়া সন্ধির পূর্বে রাসুল (সাঃ)-এর আদেশ উপেক্ষা করে বলেছি যে, “মক্কার কাফেরদের মাঝে আমার কোন সুভাকাঙ্খী নাই বরং উসমানের অনেক শুভাকাঙ্খী এবং আত্মীয়-স্বজন আছে?”[১২]
প্রশ্ন-১৯।
সিহাহ্ সিত্তার মধ্যে আছে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আমার পরে ১২ জন খলিফা হবেন।
”[১৩] তারা কারা? আমরা বিশ্বাস করি যে উক্ত ১২ জন ইমাম রাসুল (সাঃ)-এর আহলে বাইত থেকে হবেন। অথচ মোল্লা আলী ক্বারী হানাফীর দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত হাদীস অনুযায়ী ১২ জন খলিফার তালিকার মধ্যে ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়াকে ৬ষ্ঠ খলিফা বলে গণনা করা হয়েছে। [১৪] সত্যিই কি রাসুল (সাঃ) এমন এক পাপিষ্ট ব্যক্তির নাম ঘোষণা করতে পারেন? অথচ আমাদের নিকট আরো এটি হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। ”[১৫] এমতাবস্থায় আমাদের জন্য অতিব জরুরী হয়ে গেছে যেন আমরা অনুসন্ধান করি যে উক্ত ১২ জন খলিফা কারা?
প্রশ্ন-২০।
আল্লাহর আইনকে কেউ কি পরিবর্ত করতে পারে? পবিত্র কোরআন ধাপে ধাপে ঘোষণা দিয়েছে যে, “আর কোন মুমিন নর ও নারীর অধিকার নাই যে, আল্লাহ্ ও রাসুল যে বিষয়সে ফয়সাল দিয়ে দিয়েছেন তারা সে বিষয়ে কোন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিবে।
আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করবে, নিশ্চয়ই তারা সুস্পষ্ট রূপে বিপথগামী। ” (সুরা আহযাব-৩৬)।
উক্ত আয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে হয়, তাহলে হযরত উমর (রাঃ) তারাবীহ নামাজ কেন চালু করলেন, এক বৈঠকে তিনি তালাক দেয়া বৈধ এবং ফজরের আযানে ‘আস্ সালাতু খায়রুম মিনান নাউম’[১৬] বাক্যটি কেন চালু করলেন? আল্লাহ্র আদেশের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে তিনি কোন অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছিলেন?
[১] কোরায়শরা একটি লিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সম্মেলন আহবান করে, যেখানে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে তারা বনু হাশিম ও বনু আব্দুল মোতালেবের সাথে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের বিবাহ দিবে না এবং তাদের সাথে কোন প্রকার ক্রয়-বিক্রয় করবে না। তারা এ ব্যাপারে একটি লিখিত অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে পরস্পর কসম করেছিল যে তারা উক্ত চুক্তিকে কঠোরভাবে মেনে চলবে। তারপর তারা উক্ত চুক্তি পত্রটি কাবা গৃহের অভ্যন্তরে ঝুলিয়ে রাখে যাতে উক্ত শর্তাবলীকে পালনের ক্ষেত্রে তারা পরস্পর আরো অধিক ব্রতী হয়।
কোরায়েশরা যখন এই সিদ্ধান্তা গ্রহণ করল তখন সমস্ত বনু হাশিম এবং বনু আব্দুল মোতালেব হযরত আবু তালিবের সাথে মিলিত হয়ে তারই একটি উপত্যকায় গিয়ে অবস্থান নেন। কিন্তু আবু লাবাহ আব্দ আর উজ্জা বিন আব্দুল মুত্তালি বন হাশিমকে ত্যাগ করে আবু তালিবের বিপক্ষে কোরায়েশদের সাথে যোগ দিয়েছিল। উক্ত চুক্তির কার্যকারিতা দুই অথবা তিন বছর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। যতদিন উক্ত দুই গোত্র পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিল ততদিনে ‘শেব-এ আবু তালেব’-এ অবস্থানকারীদের নিকট কোন খাদ্য-দ্রব্য অথবা সাহায্য পৌছাতে দেয়া হত না, তবে আত্মীয়তার কারণে কেরায়েশের কিছু শুভাকাঙ্খী খুবই গোপনীয়তার সাথে কিছু সাহায্য করত। [দ্রঃ তারিখে তাবারী, খঃ ৬, পৃঃ ৮১, ইংরেজী অনুবাদ ডব্লিউ মন্টগুমরী ও এম ভি ম্যাডোনাল্ড ]
[২] তাঁদের প্রতি উক্ত দিনগুলি খুবই কষ্টদায়ক ছিল এবং অনেক সময় তাঁরা কদলী গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন।
[ সিরাতুন্নবী, -শিবলী নোমানী, খঃ ১, পৃঃ ২১৮, ইংরেজী অনুবাদ তৈয়্যব বখশ্ বদায়ুনী ]
[৩] [দ্রঃ সহীহ আল বুখারী, -ইংরেজী, খঃ ৫, হাদীস নং-৫৪৬ ]
[৪] তারিখে খোলাফায়ে রাশেদা, জালালউদ্দীন সুয়ূতী রচিত ইংরেজী অনুবাদ আব্দুস সামাদ ক্লার্ক, পৃঃ ১৭৭ (ত্বাহা পাবলিশার্স)।
[৫] [দ্রঃ সহীহ আল-বুখারী, খঃ ৭, হাদীস নং-৫৭৩ ]
[৬] [দ্রঃ সহীহ আল-বুখারী, খঃ ৭, হাদীস নং-৭১৬ ]
[৭] সাহাবাগণ রাসুল (সাঃ)-এর কাফন-দাফনের চেয়েও খলিফা নির্বাচন করাকে অধিক গুরুত্বপূর্ন বিষয় বলে জ্ঞান করে ছিলেন। [ দ্রঃ মোল্লা আলী ক্বারীর শারহে ফিহে আকবর, পৃঃ ১৭৫, প্রকাশক-মুহাম্মদ সঈদ এন্ড সন্স, কোরআন মঞ্জিল, করাচি ]
[৮] এটি ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের বক্তব্য, যা তিনি ইয়াজিদকে সমর্থনের ক্ষেত্রে নিজের সাফাই হিসাবে ব্যক্ত করেছিলেন।
[৯] তফসীরে দূররে মনসুর- হাফিজ জালালউদ্দিন সুয়ুতী, আয়াত নং ৯৮ঃ ৮।
[১০] ইতিহাস সাক্ষ্য যে তিনি হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে বলেছিলেন যে, “ঐ বৃদ্ধ নাসালকে হত্যা করে ফেল, সে কাফের হয়েগেছে।
” [ দ্রঃ তারিখে ইবনে আসীর, খঃ ৩, পৃঃ ২০৬, লিসানুল আরব, খঃ ১৪, পৃঃ ১৪১, আল-আকদ্ অল-ফরিদ, খঃ ৪, পৃঃ ২৯০ এবং শরহে ইবনুল হাদীদ, খঃ ১৬, পৃঃ ২২০-২২৩ ]
[১১] হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে হযরত মোয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান হত্যা করেছিলেন। [ দ্রঃ তারিখুল ইসলাম, লেখক নজীব আবদী, খঃ ২, পৃঃ ৪৪ ]
[১২] আল্লামা শিবলী নোমানীর আল-ফারুক, খঃ ১, পৃঃ ৬৬, ইংরেজী অনুবাদ মুহাম্মদ সেলিম (আশরাফ পাবলিশার্স)।
[১৩] লোকজনার মোয়ামেলাত/জীবন যাত্রা ততদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ১২ জন ইমামের শাসন পূর্ণ হবে না এবং তারা সকলেই হবেন কোরায়েয়শ বংশ থেকে। [ দ্রঃ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৪৮৩, ইংরেজী অনুবাদ আব্দুল হামীদ সিদ্দিকী ]
[১৪] শরহে ফিকহে আকবর -মোল্লা আলী ক্বারী, পৃঃ ১৭৫ [ প্রকাশক, মুহাম্মদ সাঈদ এন্ড সন্স, কোরআন মঞ্জিল, করাচি ]
[১৫] শরহে ফিকহে আকবর -মোল্লা আলী ক্বারী, পৃঃ ১৭৫ [ প্রকাশক, মুহাম্মদ সাঈদ এন্ড সন্স, কোরআন মঞ্জিল, করাচি ]
[১৬] আল্লামা শিবলী নোমানীর আল-ফারুক, খঃ ২, পৃঃ ৩৩৮, ইংরেজী অনুবাদ মোঃ সেলিম (আশরাফ পাবলিশার্স)।
পাকিস্তানের শাহিওয়াল শহরের অধিবাসী মাওলানা গোলাম হুসাঁইন নয়ীমী একজন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অর্থাৎ সুন্নী আলেম ও চিন্তাবিদ ছিলেন।
যিনি অক্লান্ত গবেষণা ও সত্য অনুসন্ধান পূর্বক শিয়া ইসনা আশারী মাযহাব গ্রহণ করেন। তাঁর মাযহাব পরিবর্তন করার পিছনে কারণ ছিল যে, এমন কিছু প্রশ্ন তাঁকে সর্বদা বিচলিত করে রেখেছিল যার সদুত্তর তিনি কোন সুন্নি মহা পন্ডিতের নিকট পান নি। আজ সে সমস্ত প্রশ্নগুলোই উপস্থাপন করা হল যা আজো কোন উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর নতুন বিশ্বাস পোষণের কারণেই তাঁকে শহীদ হতে হয়েছে। আল্লাহ্ তাঁকে এর প্রতিদান দান করুন এবং তাঁকে বেহেস্তবাসী করুন।
বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়ার লক্ষে কিছু ফুট নোট দেয়া হল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।