আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটার তালিকা এবং এক বালিকা

এ শহর ছেড়ে আমি পালাব কোথায় বালিকার নাম_'আব্বারে ডাক দিলাম কিন্তু। ' ওমা, এটা আবার কেমন নাম! মানুষের নাম আবার 'আব্বারে ডাক দিলাম কিন্তু' হয় নাকি! আমরা জানি সবাই এ টাইপের বিস্ময় প্রকাশ করছেন। আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কারো এলাকায় এ জাতীয় নামওয়ালা মানুষ না থাকলেও আমার এলাকায় আছে। তবে যে নামটা বললাম, এটা কিন্তু ওই বালিকার মা-বাবার দেওয়া নাম না। এমনকি সার্টিফিকেটের নামও না।

এ নাম দিয়েছে এলাকার বড় ভাইরা। ইঁচড়ে পাকা বালিকা হওয়ায় সবাই কম-বেশি তার সঙ্গে মশকরা করার চেষ্টা করে। তবে মশকরা করার সময় বালিকার পক্ষ থেকে কোনো অনীহা কিংবা আপত্তি না থাকলেও যখনই জিজ্ঞেস করা হয় তোমার নাম কী, অমনি সে বলে ওঠে_আব্বারে ডাক দিলাম কিন্তু। বালিকার ধারণা, তার নাম জেনে গেলে পাড়ার দেয়ালে দেয়ালে অমুক প্লাস তমুক লিখে রাখা হবে। নাম না জানলে লেখার চান্সও পাবে না।

যত্তসব অ্যাডভান্স ভাবনা। সাড়ে ৯ বছর বয়সে যদি এত গভীর ভাবনা ভাবে, তাহলে এলাকার বড় ভাইরা যাবে কোথায় বলুন। যেহেতু নাম জিজ্ঞেস করলেই সে এটা বলে, অতএব তারা ধরে নিতেই পারে এটাই তার নাম। এরপর থেকে তারা এই বালিকাকে দেখলেই বলে_এই 'আব্বারে ডাক দিলাম কিন্তু', একটু এদিকে আস তো! বালিকা বুঝতে পারে তাকে টিজ করা হচ্ছে। তাই সে আশপাশে ঢিল জাতীয় কিছু না পেয়ে শুকনো জৈবসার ছুড়ে মারে তাদের দিকে।

কোনো বাংলা ছবিতেও এমন দৃশ্য কখনোই দেখা যায়নি। কেউ নায়িকার নাম জিজ্ঞেস করলে সে তার বাবাকে ডাক দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে, এমন প্রমাণও নেই। এতে খুব ভালোভাবেই প্রমাণিত হয় সে নিজেকে যতই বালিকার চেয়ে বয়স্ক কিছু মনে করুক না কেন, আসলে সে খাঁটি বালিকা। যাই হোক, পাড়ার যে ছেলেরা সাধারণত তাকে খেপায়, এক দিন তাদের চেয়ে ভদ্র চেহারার দুজন লোক দেখা গেল বাড়ির বাইরের আমতলায়। বালিকা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তাদের উদ্দেশে দৌড় দিল।

কিন্তু লোক দুটির কাছাকাছি পেঁৗছুতেই তার ইঁচড়েপাকা ভাবটা স্পষ্ট হয়ে উঠল। বড় আপুরা যেভাবে ছেলেদের সঙ্গে ভাব নিয়ে কথা বলে, সেও সেভাবে ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল_কাকে চাই? লোক দুটি তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো জিজ্ঞেস করল_এটা কি তোমাদের বাড়ি? বালিকা তার বড় আপুদের মুখে শুনেছে ছেলেদের নাকি বাড়ি চেনাতে নেই। তাহলে তারা বাড়ির সামনে সব সময় এসে ঘুরঘুর করে। বালিকা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল_না। ওই দুই ব্যক্তি আর কোনো প্রশ্ন না করে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

গেটের কাছে গিয়ে বলল, বাড়িতে কেউ আছেন? এবার বালিকার বাবা বেরিয়ে এলেন ভেতর থেকে। আপনারা? আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে এসেছি। বালিকার বাবা খুশি হলেন। একটু দূরে বালিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, এই রোকেয়া, দুটি চেয়ার এনে দে তো! বালিকার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। অতি মেকআপের পর চেহারা যেমন হয়, ঠিক তেমন।

হাতেনাতে ধরা পড়লে সবার চেহারাই কম-বেশি এমন হয়। সে চেয়ার আনার জন্য যখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একজন বলল_কী ব্যাপার, তুমি না এইমাত্র বললে এটা তোমাদের বাড়ি না? বালিকা কী উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে ঝট করে বলে ফেলল_মনে ছিল না। বালিকা দুই বারে দুটি চেয়ার এনে দিল। দ্বিতীয়বার যখন এলো তখন একজন জিজ্ঞেস করল_কী নাম তোমার? সঙ্গে সঙ্গে সেই মুখস্থ কথাটা বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে_আব্বারে ডাক দিলাম কিন্তু। বাবা তখন ভেতর বাড়িতে।

ভাগ্য ভালো তার কান পর্যন্ত পেঁৗছায়নি। লোক দুটো খুব ভালো করেই বুঝতে পারল, বালিকা তেমন একটা সুবিধার নয়। তাই তারা তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে তার বাবার সঙ্গে কথা বলতে লাগল। তারা তখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছিল। ভোটার হলে কী কী সুবিধা, এসব কথাও চলে এলো কথা প্রসঙ্গে।

কথাগুলো আড়াল থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনল বালিকা। শুনতে দেরি, কিন্তু তার মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসতে দেরি হলো না। মুডের জন্য যে কারো সঙ্গে কথা বলতে চায় না, সে হঠাৎ করেই হেসে হেসে কথা বলতে লাগল লোক দুটোর সঙ্গে। বাবা তখন কী কাজে যেন আবার বাড়ির ভেতরে গেছেন। তো বালিকা বলল, আমি গতবার ভোটার হই নাই।

এবার হতে চাই। শুনে তো লোকদ্বয়ের আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। বাচ্চাটা বলে কি! এ বয়সে ভোটার হবে? কিন্তু বালিকা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে লাগল_আমাকে দেখতে বাচ্চা মনে হলেও ভোটার হওয়ার বয়স হইছে। আপনেরা আমার নাম লেখেন। একজন প্রশ্ন করল_তোমার বয়স কত? বালিকা এবার বড় আপুর মুখ থেকে শোনা একটা ডায়লগ ঝেড়ে দিল_মেয়েদের বয়স জানতে নেই।

কিন্তু বয়স না বললে তো ভোটার বানানো যাবে না। আচ্ছা, তুমি কোন ক্লাসে পড়? বালিকা এবার আর কোনো মুখস্থ উত্তর খুঁজে না পেয়ে চুপ থাকল। নিজের ক্লাসটাও বলতে চাচ্ছে না এ জন্য, যেহেতু ক্লাস ফোরের কথা শুনে তাকে ভোটার না করার আশঙ্কা শতভাগ। এর মধ্যে বাবা চলে এলেন। এসে যখন দেখতে পেলেন মেয়ে ভোটার হওয়ার জন্য জেদ করছে তখন বললেন_ভোটার হলে তুই যখন ভোট দিতে যাবি তখন তোর নখে এক ধরনের কালি লাগানো হবে, যা সহজে উঠবে না।

বালিকা বলল_না উঠুক। সমস্যা কী! বাবা বললেন_কালি না উঠলে তোর আঙুলের নেইলপলিশ সেই যে নষ্ট হবে, আর ঠিক হবে না। মেয়ে এবার ভেতর বাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল_তাইলে ভোটার হওয়ার দরকারই নেই। View this link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.