আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বসবাস

নিজেকে সাধারণ ভাবতেই আমার বেশি ভাল লাগে। সকল সাধারণের প্রতি আমার আকর্ষণ প্রবল। অসাধারণ সব কিছুকে আমি এড়িয়ে চলি। আরেকটা দুপুর গড়িয়ে গেল। তেমন কিছুই করা হল না।

বলতে গেলে সকাল থেকে পুরো সময়টাই নষ্ট হয়েছে। অনেক কিছু করার প্ল্যান ছিল। সব ভেস্তে গেছে। মাঝে মাঝি ভাবি এক আর করা হয়ে যায় আরেক। নিজের ইচ্ছায় না, বড় মামার ইচ্ছায়।

এই মানুষটা আমাকে শান্তি দিল না। অলসের হাড্ডি একটা। নিজে তো কিছুই করে না, সব কিছু আমাকে দিয়ে করাতে চায়। সকাল থেকে তার আদেশ পালন করতে করতে আমার অবস্থা কেরোসিন। ঘুম থেকে উঠার পর সেই যে সকালের নাস্তা করলাম, তার পর আর বিশ্রাম নেই।

তার চুলে কলপ লাগাতে হবে, তার কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে, দুপুরের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে, আর সবই করতে হবে আমাকে। ছুটির দিনে হালকা পাতলা লেখালেখি করার অভ্যাস। তাও হল না এই মানুষটার জন্য। অনেক আগে থেকেই তার বাসা ছেড়ে ভাগতে চাইছি। কিন্তু সুযোগের অভাবে তাও হয়ে ওঠেনি।

আব্বা আম্মাকে যে তিনি কি বুঝিয়েছেন আল্লাহ্‌ মালুম। আব্বা আম্মাকে যখন বললাম যে বড় মামার মন মানসিকতা আমার মন মানসিকতার সম্পূর্ণ বিপরীত; যেমন, তিনি কৃপণ আমি খরুচে, তিনি অলস আর আমি......, তিনি একরোখা আর আমি......, তিনি রাজনীতি করেন আমি করিনা, তিনি স্বৈরাচারী আর আমি গণতন্ত্রমনা ইত্যাদি, সুতরাং তার সাথে বসবাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না, তখন আব্বা আম্মা আমাকে উল্টো বুঝানো শুরু করলেন যে মাথার উপরে একটা ছাদ থাকা জরুরী। এই বয়সে নাকি শাসন করার মত একজন থাকা দরকার। কি আর বলবো, হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ করেই মাথাটা খারাপ হয়ে গেল।

কাউকে কিছু না জানিয়েই নিজে নিজে একটা বাসা ঠিক করে ফেললাম। এভাবে আর কতদিন! আমি সব করতে পারি কিন্তু নিজের আত্মমর্যাদা কে বিসর্জন দিতে পারি না। আমার নিজস্ব একটা জগৎ আছে। সেই জগৎ আমি অন্যের জন্য উৎসর্গ করতে পারি না। সেই জগতে বিচরণ হবে শুধুই আমার।

সেখানে নিত্যদিনের ঝুটঝামেলা থাকবে না। সকালে ঠিক সময়ে নাস্তা করতে হবে, দুপুরের জন্য চুলায় রান্না চড়াতে হবে, ঘর গুছাতে হবে এসব মেয়েলী চিন্তা সেখানে থাকবে না। সেখানে শুধু একটাই চিন্তা থাকবে; লেখালেখি। বাসা ঠিক করার পর থেকে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। এখন আমার মনে হঠাৎ হঠাৎ রঙিন স্বপ্নের উদয় হয়।

আমার নতুন বাসায় লেখালেখির সরঞ্জাম থাকবে, ছবি আঁকার সরঞ্জাম থাকবে, ছোট খাট একটা লাইব্রেরী থাকবে, বন্ধুদের নিয়ে মাঝে মাঝে জমিয়ে আড্ডা হবে, গান বাজনা হবে, মামার পছন্দের রান্নাগুলো আর করতে হবে না, নিজের পছন্দ মত রান্না হবে, আরও কত কি!! সামর্থ্য যখন আছে তখন নিজের মত করে নিজের চারপাশটাকে সাজাতে সমস্যা কোথায়?? এমন ভাল কিছু চিন্তা করতে করতে কিছু দুশ্চিন্তাও মনে দানা বাঁধে। যেমন, অতিরিক্ত স্বাধীনতা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দেবে নাতো? জীবনের মূল উদ্দেশ্য থেকে আমি ছিটকে পড়বো নাতো? মামাকে এভাবে একা ফেলে আমার যাওয়াটা কি ঠিক হবে? আমি যখন থাকব না তখন মামা কি সব একা সামলাতে পারবে? সুচিন্তা দুশ্চিন্তা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে। আমি কোন স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না। কেন যেন মনে হয় আমি যা করছি ঠিকই করছি। দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙাটা যে কোন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের জন্য সব চেয়ে জরুরী।

না পারলে ব্যক্তিত্ব বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। দুনিয়াতে আমরা সবাই দুদিনের জন্যই আসি। এই দুদিনের সার্থকতা হল বসবাসে। সুখে শান্তিতে বসবাস। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।