আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় বসবাস

প্রথমবার আমি ঢাকায় থাকতে আসি ১৯৭২ সালে। স্বাধীনতার পরপরই বাবা মনস্থ করলেন আর চাকুরী নয়, স্বাধীনভাবে ব্যবসা করবেন। চলে এলেন ঢাকা। বাসা নেয়া হলো টয়েনবি সার্কুলার রোডে। দোতলা বাসার জানালা দিয়ে তাকালে বঙ্গভবনের বাগান আর পুকুরটি দেখা যেতো।

বয়স অত্যন্ত কম থাকায় তখন একা কোথা্ও যা্ওয়া সম্ভব ছিল না, বাবা-মার সাথেই মাঝে মধ্যে যা বাইরে যাওয়া হতো। সত্যি বলতে কি ভাসা ভাসা কিছু দৃশ্যাবলী ছাড়া ঐ সময়ের ঢাকাবাসের তেমন কোন স্মৃতি আমার নেই। ঢাকায় অবস্থানও তেমন প্রলম্বিত হয়নি কেননা বাবা ব্যবসায়ে সুবিধা করতে পারছিলেন না, অংশীদারের সাথে বনিবনাও হচ্ছিল না। বছর দেড়েক ঢাকা অবস্থানের পর আমরা নিজস্ব জেলাশহরে ফিরে যাই। এসএসসি পাশের পর আমি আবার ঢাকায় থাকতে আসি।

ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। প্রাথমিকভাবে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠি। হোস্টেলে সীট পেলে সেখানে চলে যাব এই আশায় বেশ দুরের বাসা হতেই সকাল-সন্ধ্যা বাসে কলেজ যাতায়াত করতে থাকি। প্রায় স্বাধীন আর একা একা চলাচলের উপযুক্ত হওয়ায় ঢাকা শহর ঐ সময় চষে ফেলেছিলাম। মধুমিতা আর অভিসারের মর্নিংশোতে তখন আমার ও কলেজবন্ধুদের হাজিরা ছিলো নিয়মিত।

দুর্ভাগ্যবশতঃ এসএসসিতে আমার প্রাপ্ত নম্বর প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য কম থাকায় ঢাকা কলেজ হোস্টেলে সীট মেলেনি। এখন কি পদ্ধতি জানিনা, প্রাপ্ত নম্বরের নিম্নক্রম ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হতো তখন। আটমাসের মত ঢাকা অবস্থানের পর আমি আবার নিজের জেলাশহরে ফিরে গিয়ে ওখানকার একটি কলেজে ভর্তি হই। দ্বিতীয়বারের মত ভেস্তে গেল আমার ঢাকাবাসের পরিকল্পনা। এইচএসসি পাশের পর তৃতীয়বারের মত ঢাকায় থাকতে আসি।

স্নাতক-স্নাতকোত্তর লেখাপড়া আর কর্মজীবন সবই ঢাকায়। ঢাকা এবার আর আমাকে ফেরায়নি। দুইযুগের বেশী অতিক্রান্ত হয়ে গেছে ঢাকায় বসবাসের। বলা যায় কালের সাক্ষী হয়ে থাকলাম সময়ের বিবর্তনে ঢাকানগরী কিভাবে ক্রমশঃ পশ্চাদপসরণ করেছে তা দেখে দেখে। পরিবেশ, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলুন; আর বাসিন্দাদের মানসিকতা, নাগরিক মূল্যবোধ বলুন; সবক্ষেত্রেই ঢাকা আর আমরা ঢাকাবাসীরা পেছনদিকেই গিয়েছি।

এখন মনে হচ্ছে ঢাকা যদি আমাকে তৃতীয়বারেও ফিরিয়ে দিত আর যদি আমি জেলাশহরে স্থিতু হতাম তাহলে কতইনা ভালো হতো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।