আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে ডিসিসি নির্বাচন করতে চায় না আ.লীগ

আমি বাংলার গান গাই আগে থেকেই ডিসিসি নির্বাচন না করার পক্ষে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, জনমতের বিপক্ষে ঢাকাকে দু’ভাগ করার পর থেকে সরকারের প্রতি রাজধানীবাসীর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভাষ্যমতে, নগরবাসীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তারা ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করেছে বলে প্রচার করলেও ঢাকার জনগণ তা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, সিটি করপোরেশনের বিরোধী রাজনৈতিক দলের মেয়র থাকায় কেবল রাজনৈতিক কারণেই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে ভাগ করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে ঢাকার সাধারণ জনগণ সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি।

তাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হলে জনগণের ওই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হবে—এমন ধারণা সরকারের মধ্যে তখন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এমন চিত্র উঠে এসেছে। দল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে নেয়া মাঠপর্যায়ের রিপোর্টও একই ধরনের। জানা গেছে, ঢাকা সিটি বিভক্তি ও প্রশাসক নিয়োগের সময় থেকেই সরকার নির্বাচন না করার পক্ষে ছিল। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ না নিলে রাজনৈতিক কারণে ঢাকা ভাগের অভিযোগটি জনগণের কাছে সত্য বলে প্রমাণ হয়ে যাবে—যার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ‘লোকদেখানো’ তফসিল ঘোষণা করিয়েছে।

সরকারের মধ্যে আগে থেকেই এক ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে—যে কোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকে স্থগিত করে দেয়া। কমিশনের প্রতি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদের রিট ও উচ্চ আদালতের আদেশ তারই একটা অংশ কি না, তা নিয়ে এখন হিসাব শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রকাশ্যে দলের মধ্যে ব্যাপক তোরজোর দেখা গেলেও ভেতরের খবর ভিন্ন। গত সোমবার নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঢাকা সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার পরদিন সিনিয়র পাঁচজন নেতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন। সূত্র জানিয়েছে, ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা নিজেই মন্তব্য করেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়।

’ পরদিন বুধবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ঢাকা সিটি করপোরেশন অধীন নির্বাচনী এলাকার সংসদদের নিয়ে যে বৈঠক করেন, সেখানেও একই ধরনের বক্তব্য উঠে আসে। পানি-বিদ্যুত্-গ্যাস সঙ্কটের কথা তুলে ধরে ঢাকার সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, এই মুহুর্তে নির্বাচন হলে ফলাফল আমাদের পক্ষে আসা কঠিন হবে। ঢাকার অন্য সংসদ সদস্য তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এদিকে বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে শেখ হাসিনা ঢাকার মেয়র প্রার্থী হিসেবে উত্তরে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদ নেত্রী শিরিন আক্তার আর দক্ষিণে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ শীদ তার পছন্দের বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের কাছে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। রাজনীতির পীঠস্থান ঢাকার রাজনীতি নিয়ে দলীয় সভানেত্রীর এ ধরনের অভিব্যক্তিও জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

যেখানে ঢাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিজ দলীয় মেয়র নির্বাচিত করতে আওয়ামী লীগের মরিয়া হওয়ার কথা, সেখানে শেখ হাসিনার মুখে উল্টো সুর। এদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তিন বছর ধরে মেয়র প্রার্থী হওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এলেও সর্বশেষ পরিস্থিতিতে তিনি কিছুটা পিছটান দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পরদিন মায়া তার সমর্থিত নেতাকর্মীদের জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না—যদিও গতকাল তিনি অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যাপক শোডাউন করে মেয়র পদের মনোয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তফসিল ঘোষণা হলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত সরকার আটকে দেবে বলে শুক্রবার বিএনপি নেতা ব্যারস্টার মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন হলে বিএনপি জিতবে এবং তা আঁচ করতে পেরে নির্বাচন বানচালের কলাকৌশল করছে ক্ষমতাসীন দল।

দু-এক দিনের মধ্যে এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে বলেও তিনি ওইদিন মন্তব্য করেন। মওদুদ বলেন, ডিসিসির নির্বাচন একটি দলনিরপেক্ষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিএনপি যাদের সমর্থন জানাবে, তারাই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। সেজন্য এই নির্বাচন বানচাল করতে সরকার নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির ও কলাকৌশল করছে। বিরোধী দলের এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে ওইদিনই ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, ষড়যন্ত্র তিনি (মওদুদ) কোথায় দেখছেন? তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার লক্ষ্যে আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি।

আমরা এরই মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের কর্মসূচি নিয়েছি। আমরা টানা তিনদিন ঢাকার সব এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তাদের জন্ম স্বৈরতন্ত্রে। তারা কোনো নির্বাচন বিশ্বাস করে না।

তারা স্থানীয় নির্বাচন কেন, যে কোনো নির্বাচনইে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজেন। ডিসিসি নির্বাচন বন্ধের আইনি পদক্ষেপ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, আদালত এবং নির্বাচন কমিশন দুটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আদালতের নোটিশের জবাব নির্বাচন কমিশনই ভালোভাবে দিতে পারবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.