আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‌'বিয়া' নামের দিল্লিকা লাড্ডু

চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি... বিয়া। আমাগো দেশের মানুষের জন্য অনস্বীকার্য এক পর্ব। জন্মের পর থাইকাই মন্তব্য চলতে থাকে। 'আহ! মাইয়াডা তো সুন্দর হইছে, যাউক বিয়া দিতে কোন সমস্যা হইবো না। ' অথবা 'দেখছোনি, কুলসুমের মাও তোমার বড় পোলার বৌ এইডা কি মাইয়ার জন্ম দিসে? এক্কেরে কালা।

বড় হইলে কেমনে যে বিয়া দিবো?' এই বিয়া নিয়া খালি মাইয়া না পোলার বাপও চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ভুইলা যায়। ঝন্টুর বাপ ঝন্টুর মারে বলে, 'পোলার বিয়া দিয়া ঘরে খালি বউ আনলে তো হইবো না, লগে নগদ নারায়নও থাকন চাই, বুচ্ছো ঝন্টুর মা?' 'হ। আমি বুচ্ছি, কিন্তু তোমার পোলায় বুঝলেই অয়। ' ‌'ক্যান, পোলায় বুঝবো না ক্যান? ওরে জন্ম দিসি না?' 'ঠিকই কইছো, ট্যাকার শব্দ শুনলে তুমি জন্ম দেও আর না শুনলে আমি দেই। ' 'এই তো কিয়ের মইধ্যে কি? এইখানে তোমার বাম পাডা না ঢুকাইলে অয় না?' 'না হয় না ঢুকাইলাম, তোমার পোলা তো হুনছি আবুইল্যার মাইয়ার পিছে লাইন দিসে।

' 'কি আমার পুলার চোখ পড়ছে ঐ ফকিন্নির উপরে?' 'হ। এর লাইগাই কইতাছি, তোমার পোলায় বুঝলেই আয়। ' 'শোন ঝন্টুর মা, তোমার পোলারে সাবধান কইরা দিবা, ওই মাইয়ার পিছে লাইন দেওন য্যেন ছাইড়া দেয়, না হইলে কিন্ত ওরে বাড়ি থাইক্যা বাইর কইরা দিমু। রাস্তায় রাস্তায় ঘুইরা খাওন লাগবো কইলাম...' ঐদিকে সুমাইয়া এইবার ক্লাস নাইনে-এ উঠছে, গায়ে গতরেও বাড়ন্ত। বয়সের চেয়েও দেখতে বড় লাগে।

মায়ে কয়, 'দুইদিন পর মাইয়ারে বিয়া দিতে হৈব, এইডা কি তোমার মাথায় রাখছোনি সুমাইয়ার বাপ?' 'কি যে কও, আমাগো মাইয়া তো এখনও ছুডো' 'আর ছুড়ো আছে, তেমার মাইয়ার উপ্রে যে পাড়ার পোলাপাইনের চোখ পড়ছে' 'আরে এই বয়সে এট্টু এইরম হয়' 'আমার কিন্তু ভাল লাগতাছে না, হেইদিন সেকেন্দারের পোলারে দেখলাম আমাগো বাড়ির সামনে ঐ আম গাছটার নিচে খাড়ায়া আছে' এইবার সুমাইয়ার বাপের মাথায় চিন্তার রেখা দেখা গেল। সে ভাবে সেকেন্দার লোকটার লোভ হৈল টাকার, সে তো পোলা-মাইয়ার মনের কথা বুজবো না। এইদিকে ট্যাকা পয়সা দিয়াও তার লগে পাল্লা দেওয়া তার নিজের পক্ষে সম্ভব না। তাইলে কি মাইয়ারে ঘরের মইধ্যে আটকায়া রাখতে হৈব। এ ছাড়া আর উপায় কি? আর সুমাইয়া ভাবতাছে, 'পড়ালেহা আর ভাললাগে না।

আব্বায় ক্যান যে বিয়াশাদীর কথা কয় না। এর চাইয়া বিয়া দিয়া দিলে বাইচা যাইতাম। ' এই কথা শুইনা বান্ধবী রহিমা কইলো, 'তুই তো দেখতে শুনতে সুন্দর আছস, পোলারাও তো দেখি পিছে পিছে ঘুরে, তর বিয়া তো সহজেই হইয়া যাইবো। কিন্তু...' 'কিন্তু, কিন্তু কিরে রহিমা?' 'কিন্তু আমার লেহাপড়া শিখাই কিছু করণ লাগবো, আমার চেহারা দেইখ্যা তো কেউ বিয়া করবো না। ' 'মাইয়া মানুষ লেহাপড়া শিখা কি করবি?' 'ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার না হৈতে পারি, একটা ছুডো চাকরি তো পামু, তাইতে আমার চইলা যাইবো।

' বিয়া নিয়া এইসবই আমাগো সমাজের চিন্তা-ভাবনা। যে পোলার বাপের ট্যাকা পয়সা নাই সেই পোলা লেহাপড়া করে, আর যে মাইয়ার রূপ নাই, দেখতে সুন্দরী না; সেই মাইয়ারা লেহাপড়া করে। আর গুলা বইসা থাহে বাপের ট্যাকার শ্রাদ্ধ করার লাইগা। কিন্তু এই বিয়ার চিন্তা যেমনে পাবলিক সবসময় করে তেমনে তো আর কিছু নিয়া করে না। কি ঠিক না? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।