আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গরীবের কপালে বিয়া নাই

হ য ব র ল কথামালা আজকে সন্ধায় এক ফ্রেন্ড এর বিয়ে । জানুয়ারি মাসে আরো দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বিয়ে । কিছুক্ষন পর দাওয়াত খাওয়ার জন্যে বের হব । একে একে মোটামুটি সব ব্যাচমেটেরই বিয়ে হয়ে গেল , বাদ আছি অমরা গুটিকয়েক হতভাগারা । আই ইউ টি থেকে ৩ বছর ৮ মাসে ব্যচেলর ডিগ্রি নিয়ে যখন পাশ করলাম তখন আমার বয়স সবে ২২, জেনুইন সেটা ২০০৬ সালের কথা ।

পাস করে চাকুরির জন্য মুড়ি মুড়কির মত সিভি বিলানো ছিল তখন একমাত্র কাজ , চিন্তাভাবনাটা এমন ছিল যে চাকুরি পাব আর এরপর বিয়েশাদীর ব্যবস্থা অটোমেটিক হয়ে যাবে । বাপ মা আত্মীয় স্বজন নিশ্চয়ই হুমড়ি খেয়ে পড়বে আমাকে বিয়ে করানোর জন্য । চাকুরিও হল প্রায় মাস ছয়েক পর । চাকুরি করছি তো করছি কিন্তু কারো মধ্যে কোন ভ্রুক্ষেপ দেখতে পেলাম না । গ্রামের লোকজনের মধ্যে ফরমালিটি ব্যাপার স্যাপার একটু কম থাকে , গ্রামে গেলে তারা মাঝে মাঝে তাগদা দিত যে ছেলে তো চাকুরি করে, বিয়াশাদী করাবেন না ? কথা মাটিতে পড়ার আগেই বাপ আর মা সাথে সাথেই বলে উঠত, না না ,আরে ও তো এখনও ছোট , এখনও বিয়ার বয়স হয় নাই ।

আমি মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেও ভেতরে ভেতরে অবস্থা । জীবনে প্রেম করি নাই , তাই ছাত্রজীবনেও কোন মৌজ মাস্তি করতে পারি নাই । ছোট বেলায় বাপ মা শিক্ষা দিছে খবরদার মেয়েদের সাথে মিশবা না , ছেলেদের জন্য মেয়েদের মত ভয়ংকর ব্যাপার আর নাই । লেখাপড়া চলাকালে মেয়েদের সাথে ভুলেও মেশা যাবে না । লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হও , বিয়ের সময় মেয়েরা এমনিতেই হুমড়ি খেয়ে পড়বে ।

বেকুব আমি এইগুলা বিশ্বাসও করছি । মেয়েদেরকে এভয়েড করতে করতে এখন এমন অবস্থা যে এখনও কোন মেয়ের দিকে রোমান্টিক মুডে তাকাতে পর্যন্ত পারি না যা হোক চাকরি করতে থাকলাম । দিন যায় , মাস যায়, বছর যায় , মাঝে চাকুরি বদল হয় কিন্তু কারো মধ্যে আমার বিয়া শাদী নিয়ে কোন চিন্তা দেখি না । লাজুক হওয়ায় মুখ ফুটে বলতেও পারি না ভাই আমার বিয়ার বয়স হইছে , তোমরা কিছু একটা কর । সহায় খালি পর্ন সাইট আর দুখানা হাত আর ফেসবুকে অন্যদের চেন্জড রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসে লাইক মারা হচ্ছে একমাত্র কাজ ।

বন্ধুদের মধ্যে যারা স্টুডেন্ট লাইফ থেকে প্রেম পিরিত করছে তারা পাশ করার সাথে সাথেই বিয়া করে ফেলছে । চিন্তা করে দেখুন কি ঘোর অন্যায় ! তারা বিয়ার আগেও মজা নিল আবার তারাতারি বিয়ে করে এদিক দিয়েও মজা নিল । আর যারা প্রেম করি নাই তাদের আগেও লস আবার পরেও লস । আর অলরেডি তাদের অনেকেই বাচ্চা কাচ্চাও নিয়ে নিছে । বছর যেতে যেতে ৫ বছর চলে গেল ।

ইচ্ছা ছিল ২৫ বছরের আগেই বিয়া করব , তারপর ৪/৫ বছর খালি ফূর্তি , এরপর বাচ্চা কাচ্চা । কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক , এখন বয়স ২৮ এর কাছাকাছি , আর এতদিনে এসে বাপ মা কেবল পাত্রী খোঁজা আরম্ভ করছে । এখানেও চরম হতাশাজনক অবস্থা গত কয়েক মাসে যতগুলা সিভি দেখছি সবগুলার অবস্থাই অথৈবচ । কারো সাথে মিট করতে পারলাম না এখন পর্যন্ত । অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে আগামী ২/২.৫ বছরের আছে পছন্দসই পাত্রী খুজে পাবো কিনা সন্দেহ ।

তাহলে দেখুন অবস্থা ২২.৫ বছর বয়সে পাশ করে ৭ বছর চাকুরি করার পর ৩০ বছর বয়সে বিয়ে !!!! আর এরেন্জড ম্যারিজের মত ভূয়া সিস্টেম আর নাই । অভিবাবকদের সাথে পাত্রী দেখার মত বিব্রতকর সিচুয়েশন পৃথীবিতে আর দ্বিতীয়টি নাই , সত্যি বলছি, জঘন্য ! আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অভিভাবকরা মেয়ের বিয়ে নিয়ে যতটা টেনশনে থাকে ছেলেদের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই উদাসীন, বিশেষ করে মায়েরা । তাদের চোখে ছেলেরা কখনও বড় হয় না , তারা যত দেরিতে পারেন তত দেরিতে ছেলেকে বিয়ে করাতে চান । যারা এখনও স্টুডেন্ট আছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ আমার মত ভুল যদি করতে না চান তাহলে নিজ উদ্দোগে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিন । নিজের কথা আসলে নিজেকেই ভাবতে হবে , অবশ্য নিজেকে যদি বঞ্চিত করতে চান তাহলে আলাদা কথা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।