আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্গালির ইলিশ প্রীতি

বেহেশতে ইলিশের উল্লেখ নেই বলে সেখানে যাবার কণামাত্র বাসনা আমার নেই। না চমকাবেন না। কোন ধার্মিক মানুষ আমাকে আবার যা তা বলে গালিও দিয়েন না। এটি সত্যি আমার ধর্মেকের্মে আগ্রহ নেই, কিন্তু এই কথাটি আমার না। এটি বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

এবার মূল গল্পে আসি। আমার নিজের ইলিশপ্রীতি ভয়াবহ। সুযোগ পেলেই আমি ইলিশ মাছ কেনার চেষ্টা করি। মাছে মাছে এই ইলিশ মাছ খাবারা জন্য আমরা গভীর রাতে দলবেধে গাড়ি নিয়ে কিংবা মোটরসাইকেলে মাওয়া ছুটে যাই। ইলিশ মাছঅ আমার খুব পছন্দ।

আমারা বাবা সরকারি কর্মকর্তা। বাবার পোষ্টিং চট্টগ্রাম। বঙ্গোপসাগরের কাছেই আমাদের সরকারি বাসা। আমার মনে আছে- আমি যখন স্কুল পড়ি ক্লাস ট্রু-থ্রিতে এটা ৯১-৯২ সালের কথা এবং আরো পরেও দেখেছি সাগরে হাজার হাজার ইলিশ ধরা পড়ছে। তখন আমাদের ওইখানে ইলিশের কেজি ছিলো ১০ কিংবা ২০ টাকা।

আমাদরে বাসায় সবসময় মোটামুটি ইলিশ থাকতো। তবে তখনও আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিলো না। তাই মাছ কেনা হতো আর ভেজে-রান্না করে নানাভাবে খাওয়া হতো। বাসায় যখন ইলিশ ভাজা হতো সেই গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো পুরো বাসায়। সকালে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার সময় হাত তেলে ভরে যেতো।

৯৫ সালে আমাদের বাসায় ফ্রিজ আসে। এরপর মোটামটি সবসময় ইলিশ থাকতো। এসএসপি পাস করার পর আমি চট্টগ্রাম ছাড়ি। তবে যখুনি ছুটিতে বাসায় যেতাম মা আমার জন্য জন্য ইলিশ রেখে দিতেন। তবে যতোই তিন গেছে ইলিমশর স্বাদ-সুবাস কমেছে।

২০০২ সাল থেকে আমি ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাইরে খাবার সময় আমি দোকানে প্রথমেই জানতে চাইতাম ইলিশ আছে কিনা। থাকলো আর দ্বিতীয় আইটেম কি আছে জানতে চাইতাম না। হল ছাড়ার পর ২০০৯ সালে বাসায় উঠি। মাসে দুই-তিবার আমি বাজার যাই।

বাজারে গেলে আমার প্রথম কাজ ইলিশ আছে কিনা দেখা। সামর্থ্য অনুযায়ী ইলিশ পেলে আমি একসাথে ১০-১২ টা কিনে নিয়ে আসি। দোকানাদাররা এখন আমাকে চেনে। তাই বড় ইলিশ এলে তারাই আমাকে খব্র দেয়। যাই হোক, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ইলিশের দাম নাকি আকাশছোয়া।

তারপরেও সবাই ইলিশ কিনছে। আমি যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করছিলাম ইলিশের সাথে পহেলা বৈশাখের সম্পর্ক কি? হাতের কাছে যে বইপত্র ছিলা তাতে এই সম্পর্ক নিয়ে কিছু না থাকলেও ইলিশের নানান গুণ-কীর্তণ আছ। এর মধ্যে রসিক লেখক সৈদয় মুজতবা আলীল এই লেখাটি আমার দারুণ পছন্দ হলো এবং আমার ইলিশপ্রীতি আরো বাড়লো। সৈয়দ মুজবতা আলী তাঁর ছোটগল্প আড্ডায় লিখেছেন-‌‌‌‌"ইলিশ বস্তুটির প্রতি আমার মারাত্মক দুর্বলতা আছে। বেহেশতের বর্ণণাতে ইলিশের উল্লেখ নেই বলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে সেখানে যাবার কণামাত্র বাসনা আমার নেই"।

(সেরা রম্যরচনা-পৃষ্ঠা-৬০, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশ করেছে বইটি। ) কি সাহসী লেখা। এ যুগের হুজুররা নিশ্চয়ই তাকে কাফের ঘোষণা করতেন এই লেখা দেখে। বিশেষ করে আমিনী। যাই হোক, মুজতবা আলীকে ধন্যবাদ।

শাবাশ সৈয়দ মুজতবা আলী। শাবাশ বাঙ্গালির ইলিশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.