আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাফে দেশকে প্রথম(১৯৯৯) স্বর্ণ এনে দেওয়া আলফাজ আহমেদের অবসর!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ একে বলতে হয় কচ্ছপ ও খরগোশের দৌর প্রতিযোগীতার মত। কাঠমন্ডুতে সর্ব প্রথম সাফ গেমস ১৯৮৪ সালের ফুটবলে আমাদের বাংলাদেশই ফেভারিট ছিল। ঐ সময় এমিলি, যোশী, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, খোরশেদ বাবুল, চুন্নু সব তারকা পরিপূর্ণ ফুটবলার আমাদের ছিল। রাউন্ড রবিন লীগে স্বাগতিক নেপালকে (সম্ভবত) ৪-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের অনেক উচ্চ ভেবেছিলাম। অনেকটা ইশপের খরগোশের মতই নেপালকে আমরা কচ্ছপ মনে করেছিলাম।

পরিণতি ফাইনালে এই নেপালের কাছেই (সম্ভবত) ১-০ গোলে হেরে গেলাম। চুন্নুর এক স্বাক্ষাৎকারে পড়েছি যে নেপালকে বাংলাদেশ খুব হাল্কা ভাবে নিয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় সাফ গেমস ১৯৮৫তে ঢাকায় ফাইনালে ভারতের কাছে টাইব্রেকারে পরাজয়। ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদে ফাইনালে স্বাগতিক পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে পরাজয়। আবার ১৯৯৩ সালে ঢাকায় রাউন্ড রবিন লীগে নেপালের কাছে ১-০ গোলে পরাজয়।

এর জন্য ব্রাদার্সের আরিফুর রহমান মুন দায়ী ছিল। পেনাল্টি বক্সের কাছেই খামখেয়ালি ভাবে পাস দিতে যেয়ে নেপালী ষ্ট্রাইকারের কাছেই বল তুলে দিয়েছিল। এরপর ১৯৯৫ সালে মাদ্রাজ সাফ গেমসে ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে যাই। তো এই ভাবেই সাফ গেমস ফুটবলে স্বর্ণ জিততে বার বার বলতে চরম ভাবে ব্যার্থ হচ্ছিলাম এরপরেই আসে ১৯৯৯ সাল। আবার সেই প্রথম ভেন্যু কাঠমন্ডু।

এখানেও যেন শংকা ও কৌতুক ভর করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল দলের উপর। ঐ দলে আজকে অবসর নেওয়া আলফাজ আহমেদ ছিলেন। কৌতুক এই জন্যেই যে মালদ্বীপকে ১৯৮৫ সালের ঢাকায় এই সাফ গেমসে রাউন্ড রবীন লীগে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যাবধানে যাকে পরাজিত করেছিলাম সেই মালদ্বীপই ১৯৯৯তে ২-১ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়। মনে হয় এই কারণেই আমাদের ফুটবল দল তেতে উঠে। তারপর রাউন্ড রবীন লীগ হতে সেমিফাইনালে উঠে মুখোমুখি হয় ভারতের।

ভারতকে আমরা প্রথমবারের মত এই টূর্নামেন্টে যূক্ত হওয়া গোল্ডেন গোলের নিয়মে হারিয়ে ফাইনালে উঠি। বাংলাদেশের পক্ষে গোল করেছিল সাইজুদ্দিন টিপু। গোলটা প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে আচমকা শটে ভারতীয় কিপারকে বোকা বানিয়ে ছিল! এরপরে আবার সেই নেপাল। ১৯৮৪এর ফাইনাল এবং ১৯৯৩তে আপসেটের শিকার হওয়া বাংলাদেশ কি পারবে নেপালকে হারাতে? কারণ ততদিনে নেপাল একটি পরিণত ফুটবল দল যারা ২ বার সাফ গেমসে স্বর্ণ জিতে(১৯৮৪ ও ১৯৯৩)। তাই এবার নেপালই ফেভারিট।

গোর্খা ও পাহাড়ী হিসেবে তারা খুবই পরিশ্রমী। অনেক দম। আক্রমণ আবার রক্ষণভাগ সবই ভালই সামাল দিত। ঐ সময়ে নেপালের হড়ি খাড়কা বিপদজনক খেলোয়াড় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সমান তালে নেপালের সাথে লড়ে।

অনেক জোরাল আক্রমণ করেও আমরা গোল করতে ব্যার্থ হচ্ছিলাম। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষের দিকে এই আলফাজ আহমেদ আলতো টোকায় গোল করে বসেন। বাংলাদেশ ১ নেপাল ০। পরে দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল অল আউট ফুটবল খেলে একের পর এক আক্রমণ করেও আমাদের ডিফেন্ডার এবং কিপার বিপ্লব ভট্টাচার্যে দৃঢ়তায় ব্যার্থ হয়। ঐ ম্যাচে বিপ্লবও একাধিক নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন।

বস্তুত এটাই নেপালকে হতাশ করে। শেষে অতিরিক্ত ৩ মিনিটের জায়গায় ৫ মিনিট দিয়েও নেপাল হার এড়াতে পারেনি। ফলে আলফাজের ঐ গোলে ৮৪তে ব্যার্থ হওয়া বাংলাদেশ ঐ দশারথ ষ্টেডিয়ামেই প্রথমবারের মত সাফে স্বর্ণ জিতে আমাদের হতাশা কাটায়। একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমি আলফাজ আহমেদের কাছে চির কৃতজ্ঞ! আজকে তিনি ফুটবলার হিসেবে বিদায় নিচ্ছেন তার জন্য কষ্ট পাচ্ছি। তবে আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আলফাজ আহমেদকে দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও সুখে রাখেন, আমিন!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।