আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্বালানী খাত মূল্যায়ন : জোট সরকারের প্রথম তিন বছর(২০০২-২০০৪) আর মহাজোট সরকারের তিন বছর(২০০৯-২০১১)

জোট সরকারের শাসনামলের প্রথম তিন বছরের সঙ্গে বর্তমান মহাজোট সরকারের একটা তুলনামূলক চিত্র আজকের সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হলো। নিচের সারণির মাধ্যমে জোট সরকার ও মহাজোট সরকারের সময়ের পেট্রোবাংলার অর্জনের একটি তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপিত হলো (ছক দ্রষ্টব্য)। @ সাইসমিক কার্যক্রমসহ নূতন স্ট্রাকচার আবিষ্কার, অনুসন্ধান, ওয়ার্কওভার (পুরাতন বন্ধ কূপ সংস্কার করে উৎপাদনে নিয়ে আসা), উন্নয়ন (উৎপাদন) কূপ খনন; গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণসহ কয়লা ও কঠিন শিলা উৎপাদনের পরিসংখ্যানে স্পষ্টই দেখা যায় জোট সরকার ও মহাজোট সরকারের অর্জনের বিশাল ব্যবধান। @ জোট সরকারের অর্জন যে কোন ক্ষেত্রে মহাজোট সরকারের চেয়ে বেশি হতো, তবে তাদের সমালোচনা সঙ্গত বলে স্বীকার করে নেয়া যেত। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন।

যখন নিজেরা করতে পারেনি তখন গ্যাস নেই বলে সমালোচনা করা যথাযথ নয়। পেট্রোবাংলা এবং তার অধীনস্থ কোম্পানিতে আগের জনবলই নিয়োজিত আছে। শুধু আর্থিক সক্ষমতা দিয়ে গ্যাস সেক্টর পরিচালনার অভাব ছিল। @ বর্তমান মহাজোট সরকারে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা ও তার কোম্পানিগুলো গতিশীল হয়ে ওঠে। দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য এবং জাতির জনকের লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে’ অনুসন্ধান ও উৎপাদন কোম্পানি বাপেক্সকে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করা হচ্ছে।

একদিকে বাপেক্স ২-ডি ও ৩-ডি সাইসমিক সার্ভের মাধ্যমে নতুন নতুন স্ট্রাকচার আবিষ্কার করছে, অন্যদিকে আধুনিক রিগ ক্রয় করে খননকার্য সম্পাদনের মাধ্যমে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কারণেই বাপেক্স একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কোম্পানিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। @ মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বাপেক্স আড়াই দশকের অধিক পুরনো তিনটি রিগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পুরনো তিনটি রিগের সঙ্গে আরও তিনটি অত্যাধুনিক রিগ ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যেই নতুন দু’টি রিগ ড্রিলিং কার্যক্রম শুরু করেছে।

আশা করা যায়, আগামী বছরের শুরুতে আরও একটি রিগ দেশে এসে পৌঁছবে। @ ১৯৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণের পর বাপেক্সকে নিষ্ক্রিয় রেখে গ্যাস সেক্টরকে বিদেশী নির্ভরশীল করে তোলায় লিপ্ত ছিল। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য বাপেক্সকে ক্যারিড পার্টনার হিসেবে বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত করে পিএসসি স্বাক্ষর করা হয়। এখন বাপেক্স স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্থলভাগের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে বাপেক্স তথা পেট্রোবাংলা যে কোন কার্যক্রম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সক্ষম।

ইতোমধ্যেই, বাপেক্স তার দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ দু’টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সম্মাননা পেয়েছে। @ বর্তমানে বাপেক্সের পাঁচটি রিগ সক্রিয় আছে। ৩৪ বছরের পুরনো একটি রিগ কৈলাশটিলার ৪নং কূপ ওয়ার্কওভারের কাজ করছে। পাশাপাশি নতুন ক্রয়কৃত আরও একটি রিগ সালদা নদীর ১নং কূপ ওয়ার্কওভারের কাজ করছে। এ বছর কাপাসিয়া, শ্রীকাইল ও সুনেত্রসহ তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আল্লাহ সহায় হলে গ্যাস প্রাপ্তি সাপেক্ষে ওই সব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটি উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে। খনন কাজে অনিশ্চয়তা, স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পেট্রোবাংলার অনেক কাজই আশানুরূপ সময়ে সম্পন্ন হয় না। তাই দেশের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যে ব্যবধান এ বছরেই পূরণ করার কথা ছিল তা হয়ত পিছিয়ে আগামী বছর যাবে। @ বাপেক্সের পাশাপাশি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি পূর্বের স্থবিরতা কাটিয়ে বর্তমানে বেশ গতিশীল ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। ইতোমধ্যেই হাটিকুমরুল-বনপাড়া-নাটোর-রাজশাহী সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে রাজশাহী পর্যন্ত গ্যাস পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

এ ছাড়াও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপার এবং মনোহরদী-ধনুয়া পাইপলাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বনপাড়া-ভেড়ামারা-খুলনা, বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ, আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ, মহেশখালি-চট্টগ্রাম এবং বিবিয়ানা-ধনুয়া পাইপলাইনের কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। সেমুতাং-চট্টগ্রাম, সুন্দলপুর-মাইজদী সঞ্চালন পাইপলাইন, রাজশাহী নগরীর বিতরণ পাইপলাইন বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও ধনুয়া-নরসিংদী ও চাঁদপুর পাইপলাইনের কাজ শীঘ্র সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রচুর রিভার ক্রসিংয়ের মাধ্যমে বড় বড় পাইপলাইন নির্মাণের কার্যক্রম সম্পাদন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

@ প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একমাত্র জ্বালানি হওয়ায় তা সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যেই সুসংবদ্ধ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। সঞ্চালন পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সহজেই গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। সে বিবেচনায় আমদানিনির্ভর তরল জ্বালানি সরবরাহের ক্ষেত্রে তার পরিবহন খরচ তো আছেই তদুপরি তা বাষ্পীভূত হওয়াসহ সিস্টেম লসের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে তরল জ্বালানি সরবরাহ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। সকল দিক বিবেচনায় এনে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং আশা করা যায় আগামী আগস্ট ২০১৩ মাসের মধ্যেই এলএনজি আমদানি করে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে। @ মহাজোট যেদিন ক্ষমতায় আসে সেদিনের গ্যাস উৎপাদন ছিল ১৭১৩ মিলিয়ন ঘনফুট, আর আজকের উৎপাদন (১৪ মার্চ) ২০৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট।

অর্থাৎ প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে। পেট্রোবাংলা গত তিন বছরে ৫০৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। যদিও সঞ্চালন পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী মাসে মুচাই কম্প্রেসর চালু হলে গ্যাস উৎপাদন অনেকগুণ বেড়ে যাবে। @ পেট্রোবাংলা এবং তার অধীনস্থ কো¤পানিগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।

একটি দেশ যখন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যায় তখন তার জ্বালানি চাহিদাও বেড়ে যায়। অনেক সময় গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ প্রযুক্তিগত কারণেই একই গতিতে অগ্রসর করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি কোনভাবেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে প্রবৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবেই দেখা দরকার। কারণ, দেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলেই তো জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। পেট্রোবাংলা যথাসাধ্য দেশের উন্নয়নে মানুষের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করবে।

তাই সকলকে ধৈর্যসহকারে সরকারের প্রতি আস্থা রেখে সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা প্রয়োজন। সকলের সার্বিক সহযোগিতা পেলে গ্যাস সেক্টর তার লক্ষ্য অর্জনে শীঘ্রই কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। সূত্র: চেয়ারম্যান, পেট্রোবাংলা, ২০১২ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.