আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবহেলা নয় সহযোগিতার হাত বাড়াও...

মাকসুদুল কবীর মন্ডল সোহেল একজন প্রশিকষনরত শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী, উন্নয়ন কর্মী এবং অনিয়মিত সাংবাদিক (ফিচার)…! আমি জানতে, শিখতে চাই..এবং তা অন্যের সাথে ভাগাভাগি (শেয়ারিং)করতে চাই। অবহেলা নয় সহযোগিতার হাত বাড়াও _______গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে - নীলফামারীতে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম _________________________________ নতুন বছরের শুরুতেই নবউদ্যোমে, সবিধাবঞ্চিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের গুনগত শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করার অঙ্গিকার নিয়ে দেশের অবহেলীত দারিদ্রপ্রবন উত্তর জনপদের জেলা নীলফামারীতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর অর্থায়নে ও লিওনার্ড চেশিয়ার ডিজএ্যাবিলিটি-এলসিডি এর কারিগরি সহায়তায় গণ উন্নয়ন কেন্দ্র-জিইউকে এর বাস্তবায়নে “প্রমোটিং রাইটস থ্র কমিউনিটি একশন: ইমপ্র“ভড একসেস টু ইনক্লুসিভ এডুকেশন ফর চিলড্রেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিস প্রজেক্ট” বাস্তবায়িত হচ্ছে। গণ উন্নয়ন কেন্দ্র এর মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজের পাশাপাশি সরকারের জাতীয় ও স্থানীয় সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি জেলার ছয়টি উপজেলায় পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার। জাতীয়সংঘ ১৯৪৮ সালে সর্বপ্রথম মানবাধিকার সনদে এ কথা ঘোষণা করে।

বাংলাদেশও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সবার জন্য শিক্ষার ডাকার ঘোষণাসহ আন্তর্জাতিক এবং সাংবাধানিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী সকল শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতির্পূবে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ সবার জন্য শিক্ষা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনেক শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের তালিকায় রয়েছে দরিদ্র শিশু, পথশিশু, মেয়ে শিশু, রোগে ও পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত শিশু, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু, কর্মজীবী শিশুসহ আরও অনেকে। তাইতো এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিদ্যালয়ের বাহিরে না রেখে শিক্ষার মূলধারায় এনে গুনগত শিক্ষা সুনিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আলাদা না করে মূলধারার শিক্ষায় এনে তাদের উপযোগী বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুষ্টির লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে শিক্ষাধারা প্রচলিত হয়েছে তা একীভূত শিক্ষা বা ইনকুসিভ এডুকেশন নামে পরিচিত। একীভূত শিক্ষা হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, যা প্রত্যেক শিশুর চাহিদা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী শিখন ও জ্ঞান অর্জনের প্রতিবন্ধকতা সীমিত অথবা দূরীকরণের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষার জন্য একীভূত শিক্ষা খুবই কার্যকর। একীভূতকরণ প্রকৃতপক্ষে কিছু বাস্তবসম্মত পরিবর্তন যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও ক্ষমতা সম্পন্ন সকল ধরনের শিশু আমাদের শ্রেণীকক্ষে তথা স্কুল সমুহে সাফল্যের সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারে। এই পরিবর্তনের ফলে, শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীই নয় স্কুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী-অভিভাবক, কমিউনিটি বা স্কুলের প্রশাসক সবাই উপকৃত হয়ে থাকেন।

গত জানুয়ারী ২০১২ প্রকল্প এলাকায় গণ উন্নয়ন কেন্দ্র-জিইউকে এর পরিচালিত প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধকতার ধরন অনুযায়ী বেশিরভাগ শিশুই বাক-শ্রবন, শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় জরিপে আরও দেখা গেছে, একই পরিবারে দুই থেকে তিন জন সন্তান প্রতিবন্ধী এবং পরিবারগুলি খুবই দরিদ্র। যাদের নুন আনতে পানতা ফুরানোর মতো আর্থ-সামাজিক অবস্থা। জেলার অধিকাংশ মানুষের যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাতের নিশ্চয়তা নেই সেখানে এইসব পরিবারের শিশুদের লেখাপড়া করানো যেন দূরহ ব্যাপার। উল্লেখ্য যে, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র-জিইউকে এর কর্মীদের নিরবিচ্ছিন্ন পরিশ্রমের ফলে প্রথমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সনাক্তকরণ করা হয়।

পরবর্তীতে তাদের নিকটবর্তী সরকারি ও রেজি: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে ভর্তী করা হয়। এখন ভর্তীকৃত শিশুদের প্রত্যেকের চাহিদা যাচাইসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যার ফলে এইসব আশাহত পরিবারগুলি নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। প্রকল্পের এই সময়কালে মূল যে কার্যক্রমগুলি বাস্তবায়িত হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এই বছরে ৭০০ জন (তিন বছরে ২১০০ জন) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে সনাক্তকরণের পর বিদ্যালয়ে অর্ন্তভূক্তি এবং তাদের প্রত্যেকের চাহিদা যাচাই ও পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা উপকরন-সহায়তা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, ১০০ জন শিক্ষককে (তিন বছরে ৩০০ জন) একীভূত শিক্ষার উপর প্রশিক্ষণ প্রদান, ৩৩ টি (তিন বছরে ১০০ টি) অভিভাবক গ্র“প গঠন, ১৭ টি বিদ্যালয় পুরোপুরি (তিন বছরে ৫০ টি) প্রতিবান্ধব উপযোগী করা, ৩৩ টি (তিন বছরে ১০০ টি) শিশু ক্লাব গঠন, শিক্ষক এবং শিশুদের সহায়তার জন্য ১০ টি রির্সোস সেন্টার স্থাপনসহ আরও যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হবে তার মধ্যে শিশুদের অভিভাবক, যতœকারি, এসএমসি সদস্য, কমিউনিটির গুরুপূর্ন ব্যাক্তিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যাক্তি ও শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারনা অন্যতম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে এ শিক্ষাদর্শন সকল শিশুর বিকাশের মধ্য দিয়ে মূলত বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করে তথা একটি কার্যকর বিদ্যালয় উপহার দেয় এবং সর্বোপরি একটি সুষম শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য গুরুপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল প্রশাসক, স্বেচ্ছাসেবক, কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি। তাই শিক্ষককে হতে হবে মেধাবী, পেশাজীবী মনোভাবাপন্ন । অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন, ধৈর্যশীল। স্কুল প্রশাসক ও কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবকদের হতে হবে আন্তরিক এবং শিক্ষার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। আর এর জন্য প্রয়োজন বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ, প্রয়োজনীয় রির্সোস সরবরাহ, আকর্ষণীয় ও উন্নত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধীবান্ধব শিক্ষা কারিকুলাম এবং কমিউনিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের ইতিবাচক সহযোগিতামূলক মানসিকতা।

লেখক পরিচিতি: মাকসুদুল করীর মন্ডল স্পেশাল এডুকেটর প্রমোটিং রাইটস থ্র কমিউনিটি একশন: ইমপ্র“ভড একসেস টু ইনক্লুসিভ এডুকেশন ফর চিলড্রেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিস প্রজেক্ট-গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, নীলফামারী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।