আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবহেলা



সাদিয়া আজ অনেক খুশি, এই মাত্র সে জানতে পারল তার কানাডার ভিসা হয়েছে । তার এতদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সেই কবে থেকেই তার ইচ্ছা ছিল হাইয়ার স্টাডিস এর জন্য দেশের বাইরের কোন একটা ভালো ভার্সিটি তে ভর্তি হবে। কত বাধা বিপত্তি এর সামনা সামনি ই না তাকে হতে হয়েছে এর জন্য। একা একটা মেয়ে বিদেশ গেলে সবাই কি বলবে, কিভাবে থাকবে, একা একা থাকলে খারাপ হয়ে যাবে এমন কত কিছুই না শুনতে হয়েছে তাকে।

মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে দেখেই যেন তার অপরাধ, সাদিয়া কখনোই দমে থাকেনি। আজ তার ভাই যদি বাইরে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেত তাহলে কেউ কিচ্ছু বলতনা। সাদিয়া ফুল স্কলারশিপ পেয়েছে টরন্টো ইউনিভার্সিটি তে, সে সবাই কে দেখিয়ে দিবে, মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়ার জন্য কোন অবহেলা সে সহ্য করেবেনা। আজ ভিসা টা হাতে পাওয়ার পর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিলো তার, এ কান্না দুঃখের না।

চকিতেই তার গত মাসের একটা ঘটনা ভেসে উঠে চোখের সামনে।

কাউসার এর সাথে তার রিলেশন প্রায় চার বছরের। সেই কাউসার ও যখন বলা শুরু করলো তুমি একটা মেয়ে তুমি কেন এতদুরে যাবা একা একা? এটা আমি মেনে নিবনা।
সাদিয়া আর কিছু শুনতে চায়নি, প্রিয় মানুষ টার কাছেও যদি একজন মানুষ হিসেবে সে স্বীকৃতি না পায় তাহলে আর এই সম্পর্কের মানে হয়না। একজন মেয়ে হওয়ার আগে সে একজন মানুষ, একটা ছেলে যদি একা একা হাইয়ার স্টাডিস এর জন্য বিদেশে যেতে পারে তবে সে কেন পারবেনা? এটার কারন কি সে একটা মেয়ে? অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিল সে কাউসার কে। কিন্তু কাউসার মেনে নিতে পারেনি আর সাদিয়ার ও কিছু করার নেই মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি যার কাছে থেকে পাচ্ছেনা তার সাথে সে কিভাবে সারা জীবন থাকবে? সাদিয়ার ভাইয়া আর বাবা তার বাইরের যাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আপত্তি না করলেও তার মা একদম বিপক্ষে ছিল।

উনার একটাই কথা অবিবাহিত মেয়ে একটা বিদেশ যাওয়া যাবেনা। সাদিয়া দুই হাতে কান বন্ধ করে নেয় এসব কথা শুনলে।

বাসায় কলিং বেল টা দিতেই বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন। সাদিয়া আগেই ফোন করে তার ভিসা এর খবর টা জানিয়ে দিয়েছিল। বাসায় এসেই শুনে সকাল থেকে তার মা খাওয়া দাওয়া করছেন না।

বাসায় কারো সাথে কথাও বলছেন না। সাদিয়া তার মায়ের রুমে গেলো দেখে তার মা মন খারাপ করে শুয়ে আছেন। সাদিয়া তার মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ায়। আম্মা তুমি যদি এখনো মন খারাপ করে থাক তাহলে আমি যেতে পারবোনা, তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না । এই বলে সাদিয়া তার পাসপোর্ট টি তার মায়ের সামনে রেখে চলে যেতে থাকে রুম থেকে।


সাদিয়ার মা পিছন থেকে সাদিয়া কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন
-আম্মা আমি যাব না তো , তুমি আর কেদনা।
- নারে মা তুই কানাডায় যাবি । আমাকে মাফ করে দে মা , এই সমাজে থাকতে থাকতে আমি ও যে কখন তোকে একটা অবলা মেয়ে বলে ভাবতে শুরু করেছিলাম আমার জানা নেই। সবার আগে তুই যে একটা মানুষ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি নিজেও কখনো মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি রে মা, সারা জীবন সংসারে রান্না বান্না করেই আমার জীবন শেষ হয়ে গেলো।

এভাবে থাকতে থাকতে আমি ও ভেবে নিয়েছিলাম তুই ও তোর জীবন এভাবে পার করে দিবি। তুই যা মা তুই পড়তে কানাডায় যা , সবাইকে দেখিয়ে দে মেয়ে হয়ে জন্মালেও তুই পারবি...... তুই পারবি সব জয় করতে। সাদিয়া কিছু বলতে পারেনা, শক্ত করে তার মা কে জড়িয়ে ধরে রাখে । মা তুমি দেখে নিও আমি পারব, আমি তোমার মেয়ে মা...... আমি সব জয় করতে পারব।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।