আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রিয় শিক্ষক

“সংশয়ে সংকল্প সদা টলে পাছে লোকে টাইন্যা ধরে”। কামিনী রায়ের “পাছে লোকে কিছু বলে” কবিতার চরণ দু’টো যে আদতে এমনটা নয়, তা আমরা, মানে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর তৎকালীন সব ছাত্ররাই কম বেশী জানতাম। তবুও আমাদের বিঞ্জান শিক্ষক আব্দুল কাদির স্যার বেশ এক প্রকারের অংগ ভংগি করে যখন এ লাইন দু’টো বলতেন তখন কাব্য বিকৃতির কথা কখনো মাথায় আসেনি। বরং তার এই ভিন্ন ধরণের উপস্থাপন যে দ্যোতনার সৃষ্টি করেছিল তা আমাকে পুরোপুরি নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছিল। পরের তিনটি বছর তিনি তার নানা কথার মধ্য দিয়ে আমার চারপাশের পরিচিত বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে নতুন করে ভাবিয়ে তোলার কাজটা বজায় রেখেছিলেন।

আর তাই আজও প্রিয় শিক্ষকের ধারণাটি মাথায় এলে প্রথমেই মনে পরে আব্দুল কাদির স্যারের কথা। সংকল্প তো স্বপ্নজাত। সেই সপ্ন নিয়েই নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিলেন আব্দুল কাদির স্যার। স্বপ্ন নিয়ে বলতে গেলে তিনি তার নিজের কথা বলতেন। বলতেন তার ছোটবেলার কথা।

তিনি জন্মেছিলেন কুমিল্লার কোন প্রত্যন্ত গ্রামের এক গরীব পরিবারে। সেখান থেকেই খুব কষ্টে শিষ্টে তিনি তার লেখাপড়ার কাজটি চালিয়ে ছিলেন। একটা সময় তার থাকার কোন জায়গা ছিলনা, তখন তিনি এক মসজিদের নিচে থেকেছেন। এসব কথা বলে তিনি আমাদের মত উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের সাথে তার নিজের শৈশবের তুলনা করে বলতেন, “আমি যদি অমন কষ্টে থেকেও আজ এই দেশের সবচেয়ে নাম করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হতে পারি তবে তোরা যারা এই স্কুলের ছাত্র, যারা আমার বাবা-মায়ের তুলনায় ঢের ধনী বাবা-মায়ের স্বন্তান তাদের স্বপ্ন কি হওয়া উচিত”? তো তার এই ধরনের প্রশ্নে অনেকের চোখে মুখে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলেও কেউ তখন কোন উত্তর করতে পারেনি। তারপর স্যার নিজেই বলতেন “তোদের তো অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখতে হবে।

তোরা হবি ক্যামব্রিস, অক্সফোর্ডের প্রফেসর”। তারপর তিনি ভবিষ্যৎবাণীর মত করে বলতেন, “আগামী বিশ বছর পরে পৃথিবীর চেহারাটা আর এমন থাকবে না, একদম ছোট হয়ে আসবে। তখন সকাল বেলাতে হয়ত তুই অক্সফোর্ডের কোন একটা ডিপার্টমেন্টে লেকচার দিলি, তারপর দুপুরে দিলি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর শেষে বিকেলের দিকে টোকিওর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তোদের স্বপ্ন হওয়া উচিত এমনই বিশাল আর সাথে থাকতে হবে স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় সংকল্প”। স্যারের আরো একটা বেশ মজার কথা ছিল।

তিনি প্রায়ই বলতেন “আমি তো আর আমি না। আমি মানেই সেখানে আসংখ্য মানুষের টানাপোড়েন। সেখানে সম্পূর্ণ পৃথিবীর উপস্থিতি। আর এখান থেকেই সৃষ্টি সংশয়ের”। তার এই কথা গুলো কি আমি ঐ সময়েই বুঝতে পেরেছিলাম না কি তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আজ দশ বছর পরে কিছুটা বুঝতে পেরেছি কিংবা আদৌ বুঝেছি কিনা তা আমি জানিনা।

তবে এইটুকু বুঝি যে একজন সংকল্পবদ্ধ মানুষের আশেপাশের মানুষগুলো শুধুমাত্র কটূক্তিই করে না সু্যোগ পেলে পেছন থেকে টেনেও ধরে। আর আমার এই বোধি লাভের জন্য আমি যার নিকট চিরকাল ঋণী হয়ে থাকব তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক আব্দুল কাদির স্যার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.