আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন জেনে নেই- মুমিন এবং মুত্তাকীর গুণাবলী

আমি মনে প্রাণে একজন মুসলিম। ঘৃণা করি ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিকদের এবং ধর্ম ব্যবসায়ী ছাগু তথা উগ্রবাদীদের। ক্যঁচাল পছন্দ করিনা । । প্রথম পর্বের লিন্ক (২য় পর্ব) لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, এতীম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে।

আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেজগার। সুরা বাকারা আয়াত ১৭৭ তাফসিরঃ এই আয়াতে মোটামুটিভাবে মৌলিক পুণ্যকাজ, মৌল রীতিনীতি এবং সঠিক আকিদা বিশ্বাস বিধৃত হয়েছে। আবু যার (রাঃ) হইতে পর্যায়ক্রমে মুজাহিদ.আব্দুল করিম,আমের ইবনে শফী,উবায়দুল্লা ইবনে আমর,উবায়েদ ইবনে হিসাম আল হালাকী,আবু হাতিম ও ইমাম ইবনে আবু হাতীম বর্ণনা করেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হলো ঈমান কাকে বলে? এর জবাবে রাসূল (সাঃ) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন “লাইসালবির্রাআনতুয়াল্লু য়ুজুহাকুম” তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হলে তিনি তিনি এই আয়াত আবার পাঠ করলেন। তৃতীয়বার প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন “যার কারণে তোমার অন্তর নেক কাজে খুশি হবে এবং বদ কাজে নাখোশ হবে। ” আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, মুমিনগণকে প্রথম বায়তুল মুকাদ্দাসকে কিবলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

অতঃপর যখন কা’বাকে কিবলা করার নির্দেশ আসলো তখন কিছু মুমিন এবং আহলে কিতাবগণের একদলের অন্তরে সংশয় সৃষ্টি হলো এই পরিপ্রেক্ষিতে আয়াত নাজিল হয় ইহাতে এই পরিবর্তনের রহস্য বর্ণিত হয়েছে তা এই যে, আসল উদ্দেশ্য তো আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের আনুগত্য করা এবং তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলা। সুতরাং কিবলার ব্যাপারে যখন যেরূপ নির্দেশ আসে তা পালন করতে হবে। এতেই পুণ্য, পরহেজগারি ও ঈমানের পূর্ণতা নিহিত। ইহা অপেক্ষা পূর্ব কিংবা পশ্চিম কিবলা আঁকড়াইয়া থাকার কোন পুণ্য নাই। কারণ আল্লাহর নির্দেশ ও শরীয়তের বিধানের বাহিরে কোন ইবাদত হয়না।

তাই আল্লাহ বলেন- ”লাইছাল বির্রাআনতুয়াল্লু য়ুজুহাকুম কিবলাল মাসরিকি অলমাগরিবি অলাকিন্নাল বির্রা মান আমানাবিল্লাহি অল ইয়াওমিল আখির” আল্লাহ তালা ঈদুল আজদাহর কুরবানি সম্পর্কে বলেনঃ ”লাইয়নালাল্লাহু লাহুমুহা ওদিয়ামুহা ওলাকিইয়ানালুহুত তাকওয়া মিনকুম। ” অর্থাৎ কুরবানির গোশত, শোণিত আল্লাহর দরবারে পৌছায় না। তাঁর আকাশে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। আলোচ্য আয়াত থেকে ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আওফি বর্ণনা করেন-তোমরা শুধু নামাজ পড়বে,অন্যান্য হুকুম আহক্বাম পালন করবেনা এতে কোন পুণ্য নাই। এটা তো ছিল মক্কা থেকে মদিনায় আসার আগ পর্যন্ত হুকুম।

মদিনায় আসার পর আল্লাহ তা’য়ালা বিবিধ ফরজ এবং দণ্ডবিধি নাযিল করেন এবং কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করেন। রাসূল (সাঃ) এর মাদানি জীবনে কিবলা পরিবর্তনের আদেশ পান আল্লাহর পক্ষ থেকে। বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে বায়তুল্লাহকে কিবলা করা হয়। যারা মুমিন,মুত্তাকী তারা সাদরে গ্রহণ করেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সঃ) এর মাধ্যমে যা কিছু বিধান আসে তা তারা মেনে নেন মূলত তাদেরই মুত্তাকী হিসাবে বলা হয়েছে। মুত্তাকীর সংজ্ঞা আল হাসান ও রবী ইবনে আনাস হতে অনুরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে মুজাহিদ বলেন- “আল্লাহর আনুগত্যর যে প্রেরণা অন্তরে ঠাঁই নেয় তাহাই পুণ্য।

” যিকাহ বলেন- “ফরজ কার্যাবলী যথাযথভাবে পালন করার নামই পুণ্য ও তাকওয়ার পরিচয় ”অলাকিন্নাল বিররামান আমানা বিল্লা” আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ছুফিয়ান আস সাওরি বলেন- উক্ত আয়াতে যে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে সবগুলি পুণ্য কাজ। যে ব্যক্তি এই এই সকল গুণে গুণান্বিত হয়েছে সে পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে প্রবিষ্ট হয়েছে। সে সকল কল্যাণের চাবিকাঠি হস্তগত করেছে। উক্ত কাজসমূহ হলো-আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস,আল্লাহ ও রাসূলের মধ্য দৌত্যের দায়িত্ব পালনকারী ফেরেশতাগণের অস্তিত্বে আস্থা স্থাপন,আল কিতাবে বিশ্বাস। অর্থাৎ আসমান হতে আম্বিয়া কিরামের উপর অবতীর্ণ সকল কিতাবে বিশ্বাস যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে শেষ রাসূলের প্রাপ্ত সর্বোত্তম গ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে।

পরন্তু এটাও বিশ্বাস করা আল-কুরআন যার অপর নাম ’মুহায়মিন’ অর্থাৎ পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়ন। ইহা সকল কল্যাণের ভাণ্ডার এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সকল সৌভাগ্য ইহাতেই নিহিত রয়েছে। এমন কি এই কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে পূর্বের সমস্ত কিতাব বাতিল হয়ে গিয়েছে। হযরত আদম (আঃ) হতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী রাসূলকে সত্য বলে জানা। এইগুলি হলো ঈমান-আক্বিদার পূর্ণ কাজ।

যিনি এগুলো বিশ্বাস করেন তিনি মুমিন(বিশ্বাসী) আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে মারফু হাদিসে বলা হয়েছে- “সর্বোত্তম দান হলো সুস্থ-সবল অবস্থায় সম্পদের প্রচণ্ড মায়া ও ধনী হওয়ার উগ্র বাসনা লইয়া দারিদ্র্যর আশংকা থাকা সত্ত্বেও দান করা। ” এ সম্পর্কে সুরা বাকারার প্রথমাংশের কয়েকটি আয়াতের উদ্ধৃতি দিলাম। ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য, 2:3 to top الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে 2:4 وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।

আর আখিরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। 2:5 أُولَٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। তাফসির ৫ নং আয়াতের তাফসিরে বলা হয়েছে- আল্লাহ পাকের বাণী উলাইকা অর্থ পূর্বোক্ত গুণাবলী যথা অদৃষ্ট বস্তুতে ঈমান, সালাত কায়েম, আল্লাহ প্রদত্ত রুজি বিতরণ, রাসূল (সাঃ) এবং পূর্ববর্তী রাসূলদের উপর অবতীর্ণ কিতাব সমূহে ও আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন। হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক কাজ করার শক্তি ও গুণাবলী অর্জন করা। মুত্তাকীর জন্য উক্ত গুণাবলী অপরিহার্য।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কুরান বুঝার তৌফিক দান করুন। রাসূলের আদর্শ মেনে চলার তাওফিক দিন। মুত্তাকী হওয়ার তাওফিক দিন এবং বর্তমান যুগে ফিৎনা থেকে আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। আমীন তথ্যসুত্র-তাফসিরে ইবনে কাছির (ইসলামী ফাউন্ডেশন) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.