আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকা আইনে আছে প্রয়োগে নেই

কাগজে-কলমে শোভা পাচ্ছে নিত্যপণ্যের মূল্য তালিকার সরকারি নিদের্শনা। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ নেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোন শহর কিংবা হাট-বাজারের তালিকার অস্তিত্ব নেই। গত রোজার আগে ও পরে মূল্য তালিকা টাঙানোতে বাধ্য করতে সরকার ছিল তৎপর। ফলে ওই সময় বাজারের কিছু দোকানে তার অল্পবিস্তর দেখা মেলে।

তবে গত ক’মাস ধরে মূল্য তালিকা কোথাও টাঙাতে দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সযত্নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও আইন অমান্য করছেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৩৮ নং ধারা অনুযায়ী মূল্যতালিকা টাঙানো না হলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও মূল্য তালিকা টাঙানোর ব্যাপারে কড়া নির্দেশ রয়েছে সংসদীয় কমিটিরও। কিন্তু এসব নির্দেশ বা আইনের শাস্তির বিধান; কিছুর তোয়াক্কা করছেন না নিত্য খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা।

এমনকি আইন প্রয়োগেও সংশ্লিষ্টদের খুব বেশি উদ্যোগ নেই। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা সংসদীয় কমিটির বাজার তদারকির কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। পরিদর্শনেও যাওয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ঈদুল আজহার আগে সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাজার পরিদর্শন করা হয়। এ সময়ও দলটি ব্যবসায়ীদের মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮শে ডিসেম্বর সংসদীয় কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং তালিকা টাঙানোর ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করার তাগিদ দেয়া হয়। বাজারে মূল্য তালিকা না থাকায় এক পণ্য ভিন্ন দোকানে ভিন্ন দাম নেয়া হয়। চিনির কেজি কোথাও ৫৬ টাকা আবার কোথাও ৫৮ টাকা। তালিকা না থাকায় ক্রেতাদের প্রকৃত দাম জানা সম্ভব হয় না। কাওরানবাজারে কেনাকাটা করতে আসা হাসিবুর রহমান নামের এক ক্রেতা এ বিষয়ে বলেন, তালিকা থাকলে দোকানগুলোতে দামের অমিল থাকতো না।

যে যার মতো দাম হাঁকানোরও সুযোগ পেতেন না। রাজধানীর কাওরানবাজার, হাতির পুল, নিউ মার্কেটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো হচ্ছে না। কেন টাঙানো হচ্ছে না? দোকানদাররা টাঙাচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারদর প্রতিদিন এক থাকে না। ওঠানামা করে। তাছাড়া অনেক পণ্য মাঝে-মধ্যে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমেও বিক্রি হয়।

তাই ওটা টাঙানোর খুব গুরুত্ব থাকে না। কাওরানবাজারের মুদির দোকানি আবদুল মনাফ (৪৫) বলেন, যেভাবে দাম ওঠানামা করে, তাতে প্রতিদিন দোকানদারের পক্ষে তালিকা সংশোধন সম্ভব নয়। তবে মূল্য তালিকা যে অনেক দোকানে নাই তাও নয়। থাকলেও সেটি টাঙানো হয় না। অভিযান শুরু হলেই টাঙানো হয়।

পুরনো তালিকা দিয়ে ওই সময় পরিদর্শন দলকে ধোঁকা দেয়া হয়। কারণ দলটি তালিকা টাঙানো আছে কিনা তাই দেখা হয়। কিন্তু তাতে কি লিখা, দাম কত লিখা তা খুঁটিয়ে দেখা হয় না। ফলে এক তালিকা দিয়ে মাসের পর মাস চালানোর অভিযোগ খোদ ব্যবসায়ীদেরই। ক্রেতারা বলেন, সংশোধন না হওয়ায় বাজারের প্রকৃত দামের সঙ্গে তালিকার মিল পাওয়া যায় না।

কাওরানবাজারের সততা, ইফাত, কুমিল্লাসহ অনেক দোকানেই মূল্য তালিকা আছে। কিন্তু তা টাঙানো হয় না। তবে তালিকার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বাজারের গেইটে প্রতিদিন বড় বোর্ডে তালিকা টাঙানোর কথা। প্রায় প্রত্যেক বাজারেই বোর্ড আছে।

কিন্তু খুব কমই তা সংশোধন করা হয়। সপ্তাহে দু’ থেকে তিন দিন দাম পাল্টানো হয় তালিকার। কাওরানবাজারের কিচেন মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, যেখানে সিটি করপোরেশন নিজেই নিয়মিত তালিকা সংশোধন করে না। সেখানে ব্যবসায়ীরা কি করবেন? আগে আইন ও নিদের্শনা দানকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সচেতন হওয়া দরকার। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.