আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবাসে শুক্রবার রাত

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা আঙ্গুল কেটেই ফেললাম। বছর তিনেক আগে এমনটা একবার হয়েছিল। বেশ কিছু দিন মাংস কেটে কেটে ছুরিটা ভোতা হয়ে গিয়েছে। ঢাউস আকারের পেয়াজের উপর চাপ দিতে গিয়ে পেয়াজটিই ফস্কে গেল। কিন্তু আপাত নিরীহ, ভোতা হয়ে যাওয়া ছুরিটি আঙ্গুলের মাংস তুলে নিতে দেরি করেনি।

রান্না ঘরে ফোটায় ফোটায় রক্ত পড়ছে, পানির ধারা দিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছেনা। দৌড়ে শোবার ঘরে গিয়ে পুরনো স্যুটকেস হাতড়ে তুলো বের করে হাতে চেপে ধরলাম। ততোক্ষণে কাগজে, কাপড়ে রক্তের ছোপ, মনে হবে খুন হওয়া বাড়ি। এত রাতে একটু জীবাণুনাশকের জন্য কার কাছে হাত পাতা যায়? অগত্যা এক হাতে তুলো পেচিয়ে সেই হিংস্র চাকু ধরেই কাটাকুটি শুরু, অবশ্যই আরো সাবধানে। কী রান্না করা যায়? গাজর কুচি, বাধাকপি, ক্যাপসিকাম দিয়ে একটা ভাজি।

তার আগে তেলে বেশ ক'টা কাটা মাশরুম ভেজে নেয়া। হলুদ, লবণ আর মরিচের পেস্ট হলেই, কড়া জ্বালে পানি শুকিয়ে ভাল ভাজি করা যায়। রাইস কুকারের উপরের জালিতে স্যামনের ফিলে, একটা ডিম। ভাতের সাথে সিদ্ধ হয়ে গেলেই ভাজি সহ পেট ভরে যাবে। কাল বাজারের ফর্দ তৈরি করতে হবে।

দৈ, ডিম, কর্ন ফ্লেক্স, কোল স্ল'র সালাদ, বাধাকপি । হট ডগের সসেজ হলে ভাল হতো। অসময়ে খাবার জন্য কিছু কুকি, ক্র্যাকারস! এক টিন সুমাত্রার কফি। ফ্রিজে যা আছে সেগুলোর গতি করা দরকার। টুনা মাছের টিন গুলো খালি করে একটা টাকি মাছের ভর্তা গোছের কিছু, ভেজে ভেজে বাদামি করে ফেলা।

স্প্যাগেটি গুলো তেল-পানিতে সিদ্ধ করে তুলে রাখতে হবে, কিছু ফল মূলের বিস্বাদ সস মাখিয়ে খাবার জন্য। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটা আপেল, পেটের এ মহৌষধটা অনেক দিন ধরেই ঘরে নেই। আপেলের সরবত ছাড়া অন্য কিছু রুচেনা। শরীর চলেনা বলে গরু, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলি। এ দেশে খাবারের উপরেও ভোক্তাকে ২.৫% হারে ট্যাক্স দিতে হয়! সপ্তাহান্তে দুটো দিন।

নষ্ট করা যাবেনা। ঘড়ি ধরে, ঘন্টা হিসেব করেই কাজ করতে হবে। রান্নার ফাঁকে অস্থিরভাবে পায়চারি করি, রাত জেগে কাজ এগিয়ে নেবার জন্য দু' মগের সমপরিমাণ কফির পানি চাপাই। কেটলিতে শো শো শব্দ শুরু হয়। কাগজ, কলম নিয়ে পুরনো নথিগুলো আগলে বসি।

বসার ঘরের আলোটাও অল্প লাগে, নতুন বাতি কেনা দরকার। আচ্ছা মধু দিলে কাটা ক্ষত সারেনা? দিয়ে দেখা দরকার! কাপড় গুলো এলো মেলো হয়ে পড়ে আছে, গুছিয়ে ক'টা কয়েন হাতে নিয়ে লন্ড্রিতে যেতে আলসেমি লাগছে। কাজ আগে করে এগিয়ে নিতে হবে, শেষ মুহূর্তের জন্য বসে থাকা যাবেনা। এক পাশে চালু ছোট নেটবুকটা নির্বাক হয়ে পড়ে আছে। তুলোর নিচে কাটা আঙ্গুলের দশা দেখতে মনটা উশ খুশ করতে থাকে।

শুধু শুধু একটা আঙ্গুলের জন্য কাজে বিরতি, আমি তো ফাঁকি দেবার লোক না। বাথরুমে ঢুকেই বেহুশে "শাওয়ার হোল্ডারটা" ভেঙ্গে ফেললাম। বাড়ি ওয়ালা নির্ঘাত বড় অঙ্কের জরিমানা করবে। আজ রাতটা অপয়া, ঘুমিয়ে যাওয়াই উচিৎ। তারপরেই মনে পড়ে রাইস কুকার, ভাজি, কফির কেটলি, কাপড়, কাগজ, কলম, দাঁত ব্রাশ করার কথা।

সারাদিন কাজ করে ক্লান্তিতে ঘুম ভেঙ্গে আসে। বাতি নেভানোর মত শক্তি হবে তো? আঙ্গুলের ক্ষতটা সারানো দরকার | খুব শীঘ্রই! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।