আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি পরিচ্ছন্ন এবং দিক নির্দেশনামুলক ভাষনের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ

যা ইচ্ছে তাই ..যাই লিখে যাই.. ইচ্ছে মতো ভাবনা ছড়াই... ভাবনা গুলোও এলো মেলো...পদ্য নাকি গদ্য হলো...কে জানে তা.... সে জানা নাই.. রাজনীতি বদলাবার পথে আসুন Begum Khaleda Zia February 24, 2012, 2:50 am শহীদের রক্তে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস ফেব্রুয়ারি। এই ভাষার মাসে আমি একুশের মহান শহীদদের পুণ্যস্মৃতির কথা স্মরণ করছি গভীর কৃতজ্ঞতায়, যাঁরা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বুকের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রাঙিয়েছিলেন। অকুতোভয় যে বীর তরুণরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়ে আমাদের জনমানসে আলাদা জাতিসত্তার বীজ অঙ্কুরিত করেছিলেন, আমি তাঁদের প্রতি জানাচ্ছি শ্রদ্ধা-বিনম্র অভিবাদন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ বেয়েই আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ দ্রুতলয় হয়ে উঠেছিল। এরপর জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে অপরিমেয় রক্তসিঞ্চন আমাদের চালিত করেছিল অধিকার থেকে স্বাধিকার হয়ে স্বাধীনতার দিকে।

১৯৭১ সাল আমাদের চিনিয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজেদের জন্য একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ। তবে এ নিয়ে রয়েছে নানান রকম কথা ও বিস্তর প্রশ্ন। যেমন - সংখ্যালঘুর কাছ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা অর্জন আরও আগেই সম্ভব ছিল কি? স্বাধীনতার জন্য আমাদের যত বেশি চড়া মূল্য দিতে হয়েছে, তা কি আরও সীমিত রাখা যেত? যুদ্ধের প্রাক্কালে পরিস্থিতির সম্যক ভয়াবহতা তখনকার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন কি? তারা কি পেরেছিলেন প্রজ্ঞা, সাহস, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও সময়োপযোগী প্রস্তুতি নিতে? কিংবা সেই ঘোর দুঃসময়ে আক্রান্ত ও দিশেহারা জাতি রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে বাস্তবসম্মত কোনো দিকনির্দেশনা পেয়েছিল কি? এসব বিতর্কের রেশ গত কয়েক দশকেও মিলিয়ে যায়নি। আমি মনে করি, অনাগত সময়ে রচিত পক্ষপাতহীন নির্মোহ ইতিহাস এই বিতর্কের যবনিকা টানবে। আর এর ফলে যার যা ভূমিকা, অবদান ও প্রাপ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সবাই অধিষ্ঠিত হবেন ইতিহাস-নির্ধারিত সঠিক অবস্থানে।

অনুগ্রহভাজনদের রচনা-প্রচারণা, রায় কিংবা সায় এবং মতলবি টিকা-টিপ্পনীকে সময়মত ইতিহাস তার আঁস্তাকুড়ে ঠাঁই দেবে। ঢাকা বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতিরও রাজধানী : ভাষার সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা অর্জন, জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এক অমিত গৌরবগাথা। আমাদের ঘরের পাশেই অহমীয় জনগোষ্ঠী তাদের নিজ ভাষার অধিকার কায়েমের জন্য বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছে। ইতিহাসের পৃষ্ঠাকে করেছে রক্তসিক্ত। তবু জাতি হিসেবে তাদের তুলনায় আমাদের সাফল্য অনেক বেশি।

আমাদের মহান জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মহানগরী আমাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রাজধানীই শুধু নয়, এই ঢাকা আজ বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিরও রাজধানী। দুনিয়ার বুকে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বাংলার সদর দফতর ঢাকা। আমরা ছাড়া এই গৌরবের আর কোনো শরিক কিংবা অংশীদার নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ হাসপাতাল আমি ধন্যবাদ জানাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে।

এই কেন্দ্রের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার আজ সমাপনী দিন। আজকের দিনে আমি আশা করি, এই প্রতিষ্ঠান আরও বিকশিত হবে। এই কেন্দ্র হবে জাতির মেধা ও মননশীলতা, চিন্তা ও কর্মের অগ্রসরমানতা এবং সেবা ও উন্নয়নের পথিকৃত্। এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় সমবয়সী। এই দেশের জন্ম হয়েছে যুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে।

একই রণাঙ্গনে যুদ্ধাহত স্বাধীনতা-যোদ্ধাদের চিকিত্সা ও সেবা দেয়ার সুমহান প্রত্যয়ে 'বাংলাদেশ হাসপাতাল' নামে স্থাপিত হয়েছিল গণস্বাস্থ্যের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান। বিগত ৪০ বছরে এই রাষ্ট্রকে পেরুতে হয়েছে অনেক চড়াই-উত্রাই। একইভাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পথও গত চার দশকে সবসময় কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বর্তমান, ভূত-ভবিষ্যত্ এবং ভাগ্য, পরিণাম ও পরিণতি একই সূত্রে বাঁধা। আর তাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে বিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করা যাবে কি-না তা নিয়ে আমার কিছুটা সংশয় রয়ে গেছে।

আমি তাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বলব, এই দেশ ও জাতির বর্তমান এবং ভবিষ্যেক নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করে তোলার কাজে আপনাদের সবার আন্তরিক প্রয়াস নিবেদিত করতে হবে। স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধারণ করে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেই কেন্দ্রটি কোনোক্রমেই রাষ্ট্রীয় স্বার্থ, জনকল্যাণ ও জাতীয় মর্যাদা থেকে বিযুক্ত থাকতে পারে না। দেশ-জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা অনেকদিন ধরেই একটি আওয়াজ তুলেছি। সেটা হচ্ছে: দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও এই স্লোগানের রাজনৈতিক পরিভাষা অবিকল গ্রহণ করার কথা আমি বলছি না। কিন্তু এই স্লোগানের অন্তর্নিহিত যে নির্যাস ও কঠিন সত্য, আমি আশা করি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটি কর্মী তা মর্মে মর্মে অনুধাবন করবেন এবং নিজেদের চিন্তা ও কর্মে তার প্রতিফলন ঘটাতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হবেন।

আমরা বড়ই দুর্ভাগা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল এক আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে। আশা ছিল, আমাদের রাষ্ট্রটি পরিচালিত হবে আধুনিক গণতান্ত্রিক দর্শনের ভিত্তিতে। মানুষ ফিরে পাবে তার মৌলিক অধিকার। ক্ষুধার খাবার ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি, শীত ও লজ্জা নিবারণের পোশাক, রোগ-শোকে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যসেবা, শুদ্ধ পানি, নিরাপদ বাসস্থান, শিক্ষা ও বিনোদনের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হবে না। অনাহার, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর করালগ্রাসে তারা অসহায় মৃত্যুবরণ করবে না।

প্রতিটি নাগরিকের থাকবে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের অধিকার। প্রবলের উত্পীড়নে দুর্বল ও শক্তিহীনেরা বঞ্চিত হবে না স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থেকে। মানুষ পাবে সামাজিক সুবিচার। জনগণের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র জালিমশাহীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না। আমাদের স্বপ্ন ছিল, প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে অভিন্ন লক্ষ্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা জাতীয় সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে মাথা তুলে দাঁড়াব।

বাংলাদেশ হবে শান্তি ও সম্প্রীতির জনপদ। স্বাধীনতা আমাদের সামনে খুলে দেবে অমিত সম্ভাবনার স্বর্ণালি দরজা। আমাদের সেই মহত্ স্বপ্ন আমরা কি গত ৪০ বছরে স্পর্শ করতে পেরেছি? স্বার্থের সংঘাত, হানাহানি, সংকীর্ণতা, ক্ষমতার মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, দম্ভ, জিঘাংসা বার বার জাতির স্বপ্নকে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার স্বপ্নের ঘাতকদের মহিমা দেয়ার রাজনৈতিক প্রচারণা অনেক সময় আমাদের ঠেলে দিয়েছে বিভ্রান্তির অন্ধকারে। চোরাবালিতে বার বার পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্থপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আছেন। তিনি জানেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে বাংলাদেশের কাউকে স্বাক্ষর করতে দেয়া হয়নি। আগরতলা থেকে বাংলাদেশে আসার পথে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটিকে রহস্যজনক গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ভূপাতিত করার কথা তিনি ভালো জানেন। কারণ সেই হেলিকপ্টারে মুক্তিফৌজের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল এম. এ. রবসহ অন্যদের সঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ নিজেও ছিলেন। জাতি হিসেবে আমরা বড়ই দুর্ভাগা।

নয় মাস ধরে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, অঙ্গ হারিয়ে যখন স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনলো, তখন সেই গৌরবের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলো। কেবল ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করার সুযোগ পেলেন। আজ এই কথাগুলো এ কারণে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় বিকাশের ধারাকে বুঝতে হলে এর সূচনালগ্নের নানামুখী অনিয়ম ও কূটচাল সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তা না হলে বিভ্রান্তির ঘেরাটোপে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বার বার বিঘ্নিত হবে। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে আমরা দেখেছি, প্রতিবেশী বন্ধুদের পরামর্শে কীভাবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও স্বাতন্ত্র্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল। আমাদের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষাকে ভিনদেশী স্বার্থের পরিপূরক বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের লুণ্ঠিত সম্পদের ভাগ আমাদের দেয়া হয়নি। পরিবেশ-প্রতিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, শস্যসহ প্রাকৃতিক সম্পদ-বিনাশী অঘোষিত যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।

সেই অন্তহীন যুদ্ধের অসহায় শিকার জাতি হিসেবে আমরা আজও হচ্ছি। শুধু তা-ই নয়, সীমান্তে সরাসরি চলছে বেসামরিক বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রাণসংহার। এই দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেও চলছে কেবল একতরফা দেয়ার পালা। বিনিময়ে কোনো কিছুই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণকে এসব অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তির ব্যাপারে রাখা হচ্ছে পুরোপুরি অন্ধকারে।

একটি দেশপ্রেমিক, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, স্বাধীন, জাতীয় স্বার্থের সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তির আর কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা নেই। অপরিগার্য এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা সংগ্রামের পথে রয়েছি। সব শ্রেণী-পেশার দেশপ্রেমিক নাগরিকরা এই সংগ্রামে একাত্ম হলেই কেবল জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আগামীতে কারা দেশ চালাবে, কারা সরকারে যাবে - সেটা বড় কথা নয়। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের দীক্ষা দিয়ে গেছেন : 'ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।

' আজ দেশের স্বার্থ অরক্ষিত, জনগণের স্বার্থ বিপন্ন। কাজেই জনগণের রায়ের প্রতিফলনের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার বদলের রুদ্ধ দুয়ার খোলার জন্য আজ প্রয়োজন সম্মিলিত জাতীয় অভিযাত্রা। তাহলেই দুর্যোগ, দুর্বিপাক, দুঃসময় কেটে যাবে। শুধু হতাশার কথাই নয় : আমি আজ শুধু হতাশার কথাই বলতে আসিনি। বাংলাদেশের চার দশকে প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না এলেও আমাদের প্রাপ্তি ও অর্জনের ঘরে জমার অংক একেবারে ক্ষুদ্র নয়।

একদলীয় ও সামরিক স্বৈরশাসনের ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। ফলে এদেশে ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে স্বৈরশাসন জারি রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংবাদমাধ্যমকে প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ করা এখন দুষ্কর। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকেও খর্ব করতে আশ্রয় নিতে হয় নানামুখী অপকৌশলের। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন এই চার দশকে হয়েছে।

তৈরি পোশাকসহ আমাদের রফতানিমুখী শিল্পখাত বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার, গড় আয়ু, পুষ্টিমান। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। মহামারী ও অনেক ঘাতক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

এই স্বল্প পরিসরে ৪০ বছরের অর্জন-চিত্র বিস্তারিত তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে উন্নয়ন ও জাতীয় অর্জনের বিশদ বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন খুব বেশি পড়ে না। দেশের মানুষ তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই উপলব্ধি করতে পারেন দেশ কতটা এগিয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে আমি সগৌরবে এই দাবি করতে চাই যে, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে যা কিছু উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তার প্রায় সবটাই বিএনপির হাতেই হয়েছে। মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল-ত্রুটি, ব্যর্থতা ও সীমাবদ্ধতা নিশ্চয়ই ছিল কিন্তু আমরা জেনে-শুনে কোনো অন্যায় কখনও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না ইনশাল্লাহ্।

সুযোগ পেলে, আগামীতে জনগণ আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরা অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে নতুন সম্ভাবনায় ভরিয়ে তুলতে সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করব। আগামীর কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাপক কাজ আমরা শুরু করেছি। সময়মত দেশবাসীর সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তা বিস্তারিত প্রকাশ ও প্রচার করব। আমাদের এই পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিশিষ্ট নাগরিক, চিন্তাশীল ব্যক্তি, পেশাজীবীসহ দেশপ্রেমিক জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। আমরা সবার মতামতের ভিত্তিতে নীতি, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণে বিশ্বাস করি।

আজকের এ সভায় আমি আপনাদের কথা দিতে পারি যে, বর্তমান সরকার দেশ ও গণবিরোধী যেসব ভূমিকা পালন করে চলেছে, আমরা কখনোই সেগুলো অনুসরণ করব না। আমরা প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করব না। আমরা সুশাসন ও সামাজিক সুবিচার কায়েম করব। মিডিয়া ও বিচার বিভাগকে আমরা সত্যিকার অর্থেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেব। আমরা শক্তিশালী ও কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলব।

প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। আমরা যুগের চাহিদার আলোকে নির্বাচন ব্যবস্থা, সংসদ ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার করব। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিক ও কর্মমুখী সংস্কার করা হবে।

শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি মান উন্নয়নের ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশে-বিদেশে গড়ে তোলা হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। আমরা জানি, গণতন্ত্র একটি পরিশীলিত শাসন-পদ্ধতি। শিক্ষা, সচেতনতা ও সহিষ্ণুুতা ছাড়া যুক্তিনির্ভর ও সংবেদনশীল এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে না। আমরা সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব।

যানজটমুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। নারীর ক্ষমতায়ন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে অসাম্প্রদায়িক একটি সুষম সমাজ গঠনের উদ্যোগ আমরা নেব। সব ধর্মের মূল্যবোধের প্রতি সম্মান বজায় রেখে ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থনে দেশ থেকে সব ধরনের উগ্রবাদ কঠোরভাবে দমন করা হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত্ উন্নয়ন পরিকল্পনায় ভূমির অপব্যবহার রোধ করা হবে। হরাইজন্টাল ডেভেলপমেন্টকে নিরুত্সাহিত এবং ভার্টিক্যাল ডেভেলপমেন্টকে উত্সাহিত করা হবে।

রাজনীতিকে বদলাবার পথে আসুন : গত কয়েকদিনে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষ আপনাদের অনুষ্ঠানমালায় বক্তব্য রেখেছেন। তারা দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত্ নিয়ে তাদের ভাবনা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ রাজনীতিকদের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করিয়েছেন। আমি তাদের কারও কথার প্রতিবাদ করতে চাই না। বহুমাত্রিক সমাজে সব নাগরিকেরই নিজ নিজ মত স্বাধীনভাবে প্রকাশের অধিকার রয়েছে।

আমি শুধু বিনয়ের সঙ্গে বলব, সব রাজনীতিবিদকেই এক কাতারে দাঁড় করালে সবার প্রতি সুবিচার করা হয় না। রাজনীতিবিদরা কে কী করেছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। বাংলাদেশের সব ভালো-মন্দের মধ্যেই রয়ে গেছে রাজনীতিবিদের কীর্তি ও অপকীর্তি। আর তাই অশুভকে বর্জন করে শুভ, সুন্দর ও কল্যাণকে বেছে নেয়ার মতো মানসিকতা সবারই থাকা উচিত। আধুনিক বিশ্বে রাজনীতি ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার কথা কল্পনা করা যায় না।

বিরাজনীতিকীকরণের কুফল আমরা দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে, এমনকি সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশেও দেখেছি। রাজনীতিই রাষ্ট্র, সমাজ ও জনজীবনের প্রায় প্রতিটি দিক ও দিগন্তকে স্পর্শ ও প্রভাবিত করে। তাই রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠানো কিংবা বর্জন করার চিন্তা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজের কথা হচ্ছে, রাজনীতিকে সুন্দর করা, কল্যাণমুখী করা, সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থাপন করা, জনস্বার্থের অনুকূল করা, সহনশীল করা, পরিশীলিত করা এবং মেধা ও যুক্তিনির্ভর করা। এই কাজ আচমকা করা সম্ভব নয়।

একক ব্যক্তি কিংবা দলও এ কাজ করতে পারবে না। এর জন্য চাই সবার সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রয়াস। তবে মেধাবী, সত্, দক্ষ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক মানুষ যদি রাজনীতিবিমুখ না হয়ে এ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেন, তাহলে রাজনীতিকে দ্রুত আরও শুদ্ধ করা সম্ভব হতে পারে। আমি ভালো মানুষদের বলব, নিরাপদ দূরত্বে থেকে রাজনীতির সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা করা খুবই সহজ। আপনারা রাজনীতিকে বদলাবার, রাজনীতিকে আরও সুন্দর করার কঠিন পথে আসুন।

তাহলেই দেশের জন্য সত্যিকারের ভালো কাজ করা হবে। আমরা আগামীতে সুযোগ পেলে ভালো ও যোগ্য মানুষদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করে দেশের কাজে লাগাতে চাই। সে লক্ষ্যে আজ আমি আপনাদের আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলাম। আজ এ পর্যন্তই।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.