দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী! ডিজিটাল যুগ, ঘড়ির কাটায় ঢং ঢং শব্দ না করেই বেজে উঠল রাত বারোটা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অফিসিয়াল তারিখ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১২। দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কগুলোতে পরে গেল অসম্ভব চাপ, কারন আজ ভালোবাসা দিবস। শুরু হল উইশ,শুভকামনা বা মনের কথা জানানোর এক অসম প্রতিযোগিতা।
ঠিক এই সময়ে রুম নাম্বার ৩০৫ এর চিত্র।
সাদমান,যুবায়ের,হাফিজ আর শিমুল নামধারী চারটা তরুণ তুর্কী এই রুমের বাসিন্দা। আগামী কাল LAPLACE TRANSFORMS ক্লাস টেস্ট। সকলে ব্যস্ত ম্যাথ বইয়ের সাথে যুদ্ধ করতে। হঠাৎ শিমুল খেয়াল করলে বাকি তিন বন্ধুর চিত্ত কেমন যেন চঞ্চল হয়ে উঠল। মোবাইলের ভ্রাইব্রেশনের কারনে বইটা ছুড়ে ফেলে কম্বলের তলায় ঢুকে গেল যুবায়ের।
শুরু হল ফিসফাস ফিসফাস। সাদমান হঠাৎ করে উসাইন বোল্টের চেয়ে একটু কম গতিতে রুমের বাহিরে ছুটে গেল, কারন সেই মোবাইলের রিংটোন। আর হাফিজ সেতো আকাশ পাতাল এক করে দিল বহু কষ্টে কিনা স্ক্র্যাচ কার্ডটার খুঁজে। খুঁজে পাওয়ার পর এভারেস্ট জয়ের হাসি এবং যথারীতি লেগে গেল।
হঠাৎ শিমুলের মনে পড়ল ওহ আজতো তথাকথিত ভ্যালেন্টাইন ডে।
কিছুক্ষণ পর পড়া বাদ দিয়ে তার মনটাও আনচান হয়ে উঠল। তাকিয়ে রইল বন্ধুদের দিকে। তার জীবনেও তো ২২ টা বসন্ত আসল কিন্তু কিছুই তো হল নাহ, কিসের অভাব তার? লম্বা চওড়া , রেজাল্ট ফাস্ট ক্লাস তারপরও কিছু হয় না ক্যান??
কি করতে হবে তাকে একটা সামান্য উইশ পাওয়ার জন্য???
ঘণ্টা খানিক পর সফল অভিযান শেষে বাকি তিন বন্ধু যখন অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে তখন দেখতে পেল শিমুলের মন মরা ভাব টা। অভিজ্ঞ পোলাপান একেকজন, নিমিষেই বুঝে গেল কাহিনী কি। তিনজনে দিতে আসল সান্ত্বনা।
হাফিজ বলল,”চিন্তা করিস নাহ রে, তোর হবে”। “রুমের তিনজন যখন উইশ পেয়েছে তুইও পাবি” সাদমানের কথা। “আর তুই তো রাতে মোবাইল অফ করে রাখিস, আজ যাই হোক অন করে রাখ, কিছু তো হবেই” যুবায়েরের পরামর্শ।
যাই হোক মোবাইল অন করে বিছানায় শুয়ে থাকল শিমুল। মন থেকে LAPLACE উড়ে গিয়ে ভ্যালেন্টাইন বাসা বেধেছে।
কিছুক্ষণ পর বেজে উঠল মোবাইল, অজানা নাম্বার, শিমুল দেরি না করে ধরে ফেলে, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল “হ্যালো”? “দোস্ত সরি ডিস্টার্ব করার জন্য, আচ্ছা ১২ নাম্বার প্রবলেমটা কি করে সলভ হবে বলে দে নাহ” শিমুল বুঝতে পারল বন্ধু নয়ন। মনে মনে ধুস শালা বলে অংকটা সলভ করে দিল।
আবার অপেক্ষা, ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছে। এইবার বেজে উঠল ফোন, আরে এতো মিনার নাম্বার, মিনা শিমুলের পরিচিত মেয়ে। তাহলে এই মেয়েই কি... ভাবতে ভাবতে ফোনটা ধরল।
আবার কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে “হ্যালো”, “শিমুল ভাই মিনা বলছি, একটু হেল্প করেন নাহ। আপনাদের বড় ভাই রায়হানের নাম্বারটা দেন না। ” নাম্বার দেওয়ার পর শিমুল,”কিন্তু কিসের জন্য মিনা”? “ওমা আপনি বুঝেন নাহ,উইশ করব তাকে” বলেই ফোন কেটে দিল মেয়েটা। ধরণী দ্বিধা হও ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল শিমুল।
২০ মিনিট হয়েছে কিনা মোবাইলে এসএমএসের তীব্র আওয়াজ।
এক নিমিষেই ঘুম ছুটে গেল শিমুলের। এই বার নিশ্চয়। কিন্তু এসএমএস টা দেখে পায়ের রক্ত চিড়িক দিয়ে মাথায় উঠে গেল। এয়ারটেলে ম্যাসেজ, ভালোবাসা দিবসে আপনার প্রিয়জন কে পাঠাতে পারেন......” এয়ারটেলের মা বাপ তুলে গালি দিতে ইচ্ছা হল তার কিন্তু ভদ্র মন বাধা দিল।
রাত বেশ গভীর, সবাই ঘুমাতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঠিক সেই মূহুর্তে বেজে উঠল শিমুলের ফোন। শিমুল ভাবল আর ধরব না। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ বাজার পর মনে হল জীবনে চান্স একবারই আসে, নিশ্চয় বলেই ফোনটা ধরল। নিজে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে
-হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে
-হ্যা হ্যা হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন
-কেমন আছো তুমি?
কি জবাব দেবে শিমুল, আবেগে যেন বাকরুদ্ধ, খুশিতে ঝলমল চোখ। হঠাৎ আবার সুরেলা কণ্ঠে
-কি ব্যাপার সুমন কথা বলছ নাহ কেন?
-আমি আমি শিমুল বলছি
-ওহ একদম সরি আমি, ভুল করে চলে গেছে।
কেটে গেল লাইনটা।
হয়ত সারাদিনে সত্যি কোন উইশ আসত শিমুলের কাছে, মন থেকে দিত কেউ একটা কল কিন্তু সে উপায় তো নাই কারন ৩০৫ নাম্বার রুমে ঢুকলেই দেখতে পাবেন এক পাশে পরে রয়েছে শিমুলের তিন টুকরা হয়ে যাওয়া সেলফোনটা।
© Ashiqur Rahman Amit
[কারো প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোন বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয়না. যে কোন দিনই যথেষ্ট। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।