আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাঙামাটির মঘাছড়ির সোনার মেয়েরা

বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার... রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কের কাউখালি উপজেলাধীন ঘাঘড়া ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম মগাছড়ি। রাঙামাটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটি প্রধান সড়কের পাশেই অবস্থিত। মূল সড়ক থেকে দৃষ্টিসীমার মধ্যেই উঁচু একটি পাহাড়ে অবস্থিত একটি প্রাইমারি স্কুল। সুউচ্চ পাহাড়ে দুটি বটগছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে তিনটি ভবন নিয়ে অবস্থিত স্কুলটির নাম মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাংলাদেশের আর দশটি স্কুলের মতোই আটপৌড়ে,গতানুগতিক তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অবস্থানগতকারণে নান্দনিক।

দুটি দৃষ্টিনন্দন বটবৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ও ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মাত্র ৩০০ শিক্ষার্থীর এই স্কুলের শিক্ষক ছয়জন। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু গত ৩১ জানুয়ারি’ই বদলে গেলো এই স্কুলের ইতিহাস ! কারণ দেশের ৬০ হাজার ৭৭৬ টি প্রায় একই রকম প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে এই স্কুলের মেয়েরাই যে দেশসেরা তা প্রমাণিত হলো বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্নামেন্টে। এই বছরের চ্যাম্পিয়ন যে এই স্কুলের ছাত্রীদের ফুটবল টীম ! দুর পাঁড়াগায়ের মেয়েদের এই অর্জনে গর্বিত পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম। পেছনের কথা সরকারী কড়া নিদের্শ,তাই বঙ্গমাতা ফুটবল টূর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে দেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়,অধিকাংশই দায়সারাভাবে,কেউ কেউ ভীষণ সিরিয়াস।

এই সিরিয়াসদেরই একজন মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমা। নিজের শিক্ষার্থীদের তার চেয়ে ভালো কে আর চেনে। শুরু থেকেই তার বিশ্বাস ছিলো তার মেয়েরা অসাধারন কিছু একটা করতে পারবে ! সাথে ছিলেন স্কুলের সহশিক্ষক আর বিশেষ করে ক্রীড়া আর সংষ্কৃতি অন্তঃপ্রাণ ধারশমনি চাকমা। সাহস আর বিশ্বাসে আস্থা রেখে ছেলে এবং মেয়েদের দুটি বিভাগেই টীম দিলেও ছেলেরা উপজেলা পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েই বাদ পড়ে যায়। কিন্তু মেয়েরা যে অদম্য।

তারা উপজেলা-জেলা-বিভাগ অতিক্রম করে ৩১ জানুয়ারি ২০১২ তে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেতো ইতিহাসই তৈরি করলো। স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও দলের ম্যানেজার ধারশমনি চাকমা জানালেন,আমাদের মেয়েরা কারো কোন সহযোগিতা ছাড়াই একাগ্রতা,অধ্যবসায় আর নিজস্ব উদ্যোমের মাধ্যমে যে ফলাফল বয়ে আনলো তা বিরল। যেমন ছিলো খেলার ফলাফল শুরু থেকে জাতীয় পর্যায়ে ফাইনাল পর্যন্ত মঘাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা গোল দিয়েছে ৪৯ টি আর বিপরীতে গোল খেয়েছে মাত্র ২টি ! দলের পক্ষে সেরা গোলদাতা লাজুক টিনা চাকমাকে দেখে কিউ বিশ্বাস করবেনা,এই ছোট্ট মেয়েটা একাই দিয়েছে ১৮ টি গোল। ভীষন লাজুক টিনা জানালো,প্রতিপক্ষকে বেশি বেশি গোল দিতে তার একটু খারাপই লেগেছে। আর দলনেতা তিশা চাকমা সপ্রতিভ,দুরন্ত।

তার সোজাসাপ্টা কথা -‘ ইস্,বিবাড়িয়ার সাথে যদি ওই ২ টি গোল না খেতাম !’ । ফাইনালেই সবচে কম ব্যবধানে রংপুরের পালিছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে পরাজিত করেছে তারা। আর ইউনিয়ন থেকে জাতীয় প্রতিযোগিতা পর্যন্ত সবগুলো খেলায় প্রতিপক্ষরা তাদের কাছে হেরেছে আরো বেশি গোলের ব্যবধানে। বিভাগীয় পর্যায়ে কুমিল্লা,নোয়াখালি,চট্টগ্রাম,বিবাড়িয়া সবাই তাদের কাছে হেরেছে বড় ব্যবধানেই। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথমে রাজশাহী আর পরে রংপুরকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মঘাছড়ির মেয়েরা।

প্রথম ঢাকা,প্রথম জয় এই স্কুলের ফুটবল টীমের ১৭ জন মেয়ের কেউই কোনদিন দেশের রাজধানী ঢাকায় যায়নি। জীবনে প্রথমবার ঢাকা শহর দেখেছে তারা। আশ্চর্য,প্রথমবার ঢাকা গিয়েই জয় ছিনিয়ে আনার বিস্ময় এখনো তাদের চোখেমুখে। কেমন দেখেছে ঢাকা,এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের মুখে উত্তর-‘কত্ত বড় শহর,খালি মানুষ আর মানুষ,বড় বড় বিল্ডিং,লাখ লাখ গাড়ী ! ’ ঢাকা শহর দেখে বিস্মিত এই শিশুদের ভালোবাসা অবশ্য অর্জন করতে পারেনি রাজধানী ঢাকা । তাইতো ঢাকা নিয়ে সবপ্রশংসা নিমিষেই শেষ হয়ে যায় শেষ উত্তরে-‘যেখানে যেতে চাই,শুধু দেরি হয়ে যায়,গাড়ীর ভীড় (যানজট),ধোঁয়া,কেউ কারো সাথে কথাও বলেনা,আর খালি মশা আর মশা,রাতে মশার জ্বালায় ঘুমোতে পারতামনা,এর চেয়ে আমাদের মঘাছড়ি,রাঙামাটি’ই অনেক ভালো,অনেক সুন্দর।

’ বোঝা গেলো,রাজধানী ঢাকার নিয়নের আলো সাময়িকভাবে সবুজ পাহাড়ের এই কোমলমতি শিশুদের মুগ্ধ করলেও ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে পারেনি। যে গল্পে চোখ ভিজে আসে চোখে টলটল জল নিয়ে প্রধানশিক্ষক বীরসেন চাকমা জানালেন, নিজের দুঃখের কথা, বেদনার কথা। জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পড়ে থাকা দুটি ফুটবল চেয়েও পাননি। ন্যূনতম সহযোগিতাও করেনি রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ঘাগড়া এলাকার মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসাই তার মেয়েদের এতোদূর নিযে এসেছে বলে বিশ্বাস তার।

স্কুলের কোন মাঠ নেই। তাই প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের ঘাগড়া স্কুল মাঠে প্রতিদিন গাড়ীতে করে মেয়েদের নিয়ে যেতেন প্রাকটিস এর জন্য। এইভাবে কিছুদিন চলার পর প্রতিদিনের গাড়ী ভাড়ার ব্যয় বহন করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের স্বজনদের সহযোগিতা নিলেন। মেয়েদেরকে ২/৩ জন করে তুলে দিলেন ওই এলাকার স্বজনদের বাসায়। খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন নিজেই,কারো কাছ থেকে চেয়ে নিলেন চাল,আবার কারো কাছ থেকে অন্য উপকরণ ! শারীরিক পরিশ্রমের খেলা ফুটবলে যে পরিমাণ খাদ্য খেলোয়াড়দের খাওয়ানে উচিত তাও খাওয়াতে পারেননি।

এইভাবেই জাতীয় পর্যায়ের জন্য তৈরি করলেন সন্তানতুল্য মেয়েদের। একদিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে ২ টি বল চেয়ে না পেলেও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এলাকার দরিদ্র মানুষই নিজেরা চাঁদা তুলে বা কিনে দিয়েছেন ৪৭ টি বল ! সাধারন মানুষের এই ভালোবাসায় মুগ্ধ বীরসেন জানালেন-সমাজের বিত্তবানরা নয়,এইসব সাধারন মানুষই আমার মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সবচে বড় অনুপ্রেরণা। জানালেন,এমনকি ফাইনালের আগে প্রতিপক্ষ দলের এলাকার মন্ত্রী, সাংস্দরা নিজেরা এসে ক্রীড়াপল্লীতে নিজ নিজ এলাকার ছেলেমেয়েদের খোঁজ খবর নিয়েছে কিন্তু আমাদের পার্বত্য এলাকার এতো গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রী থাকলেও কেউ একজনও আমাদের খবর নেয়নি। মেয়েরা মন খারাপ করে দেখতো আর আমার কাছে জানতে চাইতো,আমাদের খবর নিতে কেউ আসেনা কেনো-কিন্তু কি আর জবাব ছিলো আমার কাছে ! আর ক্রীড়াপল্লীতে এক রাতে ডাইনিং-এ মেয়েদের সবাইকে নিয়ে খেতে বসেছেন,কিন্তু মেয়েরা সবাই খাওয়ার আগেই খাবার শেষ,কি আর করা,অগত্যা,ওই রাত না খেয়েই ঘুমুতে গেছেন অভুক্ত মেয়েদের নিয়ে। সেই স্মৃতি এখনো কষ্ট দেয় তাকে।

জয়ী মেয়েরা ! ওরা একেকজন একেক ক্লাসে পড়ে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার জন্য দীর্ঘদিন একসাথে থাকায় ওরা সবাই যেনো বন্ধুই হয়ে উঠেছে। একসাথে দলবেঁধে ছুটোছুটি,হৈ হুল্লা,আর উচ্ছাস যেনো জানান দিচ্ছেলো-‘বিজয়ীরা এমনই হয়’। আশ্চর্য অনেক মিল তাদের। সবারই প্রিয় খেলোয়াড় আর্জেন্টাইন তারকা ‘মেসি’।

আর জাতীয় পর্যায়ে প্রিয় খেলোয়াড় সাবিনা। আর সবারই ইচ্ছে ফুটবলে একদিন জাতীয় দলে খেলার। জয়ী দলের খেলোয়াররা হলো তিশা চাকমা,পিয়ারি তংচঙ্গ্যা,রুনা তংচঙ্গ্যা,আয়না চাকমা,নদী চাকমা,সিবলিকা তালুকদার,শিল্পা চাকমা,মাউচাই মারমা,চাথ্ইুমা মারমা,রনি চাকমা,নিংচানা মারমা,উনুচিং মারমা,মুনা মারমা,উইনুচিং মারমা,হ্লানুমা মারমা,চম্পা মারমা,রুমা আক্তার,ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন ধারশমনি চাকমা আর প্রশিক্ষক শান্তিমুনি চাকমা ও সুইহ্লামং মারমা। খেলার কারণে জীবনে প্রথমবারের মতো দীর্ঘসময় বাড়ীর বাইরে থাকা এই মেয়েরা মন খারাপ হতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জানালো-একদম না,কারণ আমাদের হেডস্যারই ছিলো,আমাদের বাবা এবং মা । তিনি সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন।

নানা মজার মজার কথা বলে আমাদের মন ভালো রাখতেন। তার কারণে বাড়ীকে খুব বেশি মিস করিনি। দলের কেউ গোল্ডেন বল বা গোল্ডেন বুট না পেলেও নিজেদের প্রাপ্তিতে উচ্ছসিত তারা। একটি দুঃখ ! বীরসেন চাকমা তার মেয়েদের শুরু থেকেই অনুপ্রাণিত করেছিলেন ‘তোমার চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরষ্কার নিতে পারবে’এমন উজ্জীবনী বার্তা দিয়ে। কিন্তু মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হলো ঠিকই কিন্তু পুরষ্কার প্রদান করলেন প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রী আফসারুল আমিন।

মেয়েদের কাছে যেনো কিছুটা ছোটই হলেন এই শিক্ষক। জানালেন-এমন জাতীয় আয়োজনে যদি প্রধানমন্ত্রী নিজে ছোট্ট এই শিশুদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন,তাহলে তারা আরো অনেক বেশি উজ্জীবিত হবে। তিনি পরবর্তী আয়োজনে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধও জানিয়েছেন। একজন ফিরোজ আহম্মেদ ভদ্রলোক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারলেননা বীরসেন। কিন্তু একটি মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার তথ্য জানিয়ে বললেন-মানুষ নয়,যেনো অবতার হয়েই এসেছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী এই ফিরোজ আহম্মেদ।

যখন আমাদের পাশে কেউ নেই তখন এই ভদ্রলোক আমাদের জন্য কিইনা করেছেন। ঢাকার প্রতিটি খেলায় উপস্থিত ছিলেন। মেয়েদেরকে প্রতিটি গোলের জন্য দ্ইু হাজার টাকা করে পুরস্কার দিয়েছেন। আমাদের জন্য অনেক টাকাও খরচ করেছেন এই ভদ্রলোক। মেয়েরা কৃতজ্ঞ চিত্তে জানালেন এই অচেনা আংকেলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা।

অচেনা এই ভদ্রলোক ঢাকা থেকে চলে আসার সময় একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিলেন বীরসেনকে,তাতে সেই ভদ্রলোক সম্পর্কে যতটুকু জানা তিনি বাংলাদেশ বধির ক্রিকেট এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও এশিয়া বধির ক্রিকেট ফেডারেশন এর সহসভাপতি। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডের সাসেক্স ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। আবার একই সাথে রাঙামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উগা প্রু মার্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বীরসেন জানালেন-চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ের খেলার সময় এই ভদ্রলোক আমাদের পুরো টীমকে দুইবেলা নিজের বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছেন। অচেনা পিয়া,চেনা দুঃখ জয়ী দলের উচ্ছসিত পোষাক পড়া মেয়েদের সাথে প্রতিবেদক যখন কথা বলছিলেন তখন হঠাৎ খেয়াল করলেন দুরে একটি মেয়ে একা দাড়িয়ে,একটু অস্বাভাবিক,চোখ তার জল ছলছল। সেদিকে তাকাতেই দলের মেয়েরা তাকে ডেকে আনলো।

জানালো-তাদের মধ্যে সবচে ভালো খেলে পিয়া। প্রাকটিসেও ছিলো। কিন্তু তার ধর্মভীরু পরিবার তাকে খেলতে দেয়নি। পিয়ার কাছে জানতে চাইলেই মাথা নীচু করে চোখের টলটল জলেই জানিয়ে দিলো তার বন্ধুরা মিথ্যে বলেনি। চোখ মুছতে মুছতে জানালো,বাবা-মা আমাকে একা একা যেতে হবে বলে যেতে দেয়নি।

প্রধান শিক্ষক বীরসেন জানালেন-‘এই মেয়েটি সবার চেয়ে ভালো খেলে,মাত্র তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া এই মেয়েটির বাবা-মাকে আমি অনেক বুঝিয়েছি,কিন্তু তবু তারা মেয়েকে ছাড়েনি। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এখন তারা বুঝেছে,তারা ভুল করেছে। আমার বিশ্বাস আগামীবার তারা পিয়াকে খেলার সুযোগ দিবে। ’ কিন্তু আমাদের সমাজে পিয়াদের সংখ্যা যে এখনো অনেক বেশি,এই দায় কার ? রাষ্ট্র আর সমাজ কি এই দায় এড়াতে পারবে ? অভিভাবকদের বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গী স্কুলের পাশেই বাড়ী মোঃ আনোয়ারের। তাদের নিজের সন্তানও এই স্কুলের শিক্ষার্থী।

দূর্ঘটনার কারণে ক্র্যাচে ভর দিয়েই স্কুলে এলেন আনোয়ার। জানালেন-আমরা আমাদের এই মেয়েদের জন্য পুরো এলাকার মানুষ আজ গর্বিত। আমাদের মেয়েরা যে অহংকার আর সম্মান বয়ে নিয়ে আসলো তা কিভাবে শোধ করতে হবে আমরা জানিনা। তিনি বলেন-এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই অশিক্ষিত এবং নিন্মআয়ের। তাই প্রথমে আমরা এই ব্যাপারটা বুঝতেই পারিনি।

পরে যখন ধীরে ধীরে এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছে তখন সবার দৃষ্টিভঙ্গীই বদলে গেছে। তিনি বলেন-আমাদের এই স্কুলতো দুরের কথা,আমাদের গ্রামেও কোনদিন কোন সাংবাদিক আসেনি,আজ আমাদের মেয়েদের কারণে আপনারা এলেন। এক লক্ষ টাকার চেক ! বিজয়ী হিসেবে প্রত্যেকে আলাদা করে একটি করে পদক,আর স্কুল একটি পদক প্রাপ্তির পাশাপাশি নগদ এক লক্ষ টাকা পেয়েছে তারা। কিন্তু এই টাকা কি কাজে ব্যবহৃত হবে এখনো ঠিক করা হয়নি। প্রধানশিক্ষক বীরসেন চাকমা জানালেন-স্কুল পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষা অফিসের সাথে আলোচনা করেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কেউ জানেনা ! মঘাছড়ির মেয়েরা সারাদেশ জয় করে ফেললেও এই সম্পর্কে জানেনা খোদ রাঙামাটির শহরের মানুষজনই। মূল শহর থেকে দূর মফস্বলের পাড়া গাঁয়ের একটি স্কুল এতোবড় একটি কান্ড করে ফেলল অথচ খোদ রাঙামাটি শহরে এর কোন প্রভাব বা প্রতিক্রিয়াই নেই। জানেনা স্থানীয় সংবাদ কর্মীরাও। স্কুলের শিক্ষক আর ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেলো এই প্রতিবেদক ছাড়া আর কোন সাংবাদিকও যায়নি তাদের কাছে। এই মেয়েদের এখনো কেউ সংবর্ধনাও দেয়নি।

তবে দৃঢ়চেতা প্রধানশিক্ষক বীরসেন চাকমা জানালেন-কেউ সংবর্ধনা না দিলেও আমি আমার মেয়েদের সংবর্ধনা ঠিকই দিবো। কাউখালি উপজেলাবাসী বা মঘাছড়িবাসীর ব্যানারে হলেও। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.