আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সন্তান হত্যার বর্ণনা দিলো লিজা

‘পর পুরুষের মনোরঞ্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আড়াই বছরের শিশুপুত্র মাহিন। তাই দ্বিতীয় স্বামীর পরিকল্পনায় দু’জনে মিলেই গলাটিপে হত্যা করেছি তাকে। ’ গতকাল মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এভাবেই নিজ গর্ভের সন্তান হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পাষণ্ড মাতা লিজা আক্তার। আদালতের কাছে সে বলেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার সামনেই আমার দ্বিতীয় স্বামী হৃদয় হোসেন ওরফে মামুন বাচ্চাটিকে হত্যা করেছে। প্রথমে সে প্রচণ্ড জোরে মাহিনের মুখ-মণ্ডলে থাপ্পড় মারে।

ওই আঘাতে বাচ্চার নাক ও কান দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর তাকে গলাটিপে হত্যা করে দরজায় তালা লাগিয়ে দু’জনেই বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এর আগে ডেমরা থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লিজা জানায়, আমার প্রথম স্বামী মিন্টু। তার সঙ্গে ঘর করেছি পাঁচ বছর। ওই সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিল মাহিন।

কিন্তু নানা অপবাদ দিয়ে মিন্টু আমাকে তাড়িয়ে দেয় তার সংসার থেকে। এরপর পরিচয় হয় হৃদয় হোসেন ওরফে মামুনের সঙ্গে। বুক বাইন্ডিং এর চাকরির কথা বলে সে আমাকে বউ হিসেবে ঘরে তোলে। আগের স্বামীর সন্তানকেও গ্রহণ করে। কিছুদিন পরেই বেরিয়ে পড়ে তার আসল চেহারা।

বুঝতে পারি- সে আসলে বুক বাইন্ডার নয়, মক্ষিরাণীর দালাল। এরপর শুরু হয় অন্ধকার জগতের পালা। মাঝে-মধ্যেই নিয়ে যায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। আমাকে বাধ্য করে পর পুরুষের মনোরঞ্জনে। তার নির্যাতন ও প্ররোচনায় শুরু করি টাকার বিনিময়ে শরীর খাটানোর কাজ।

রাতভর পর পুরুষের মনোরঞ্জনে সময় কাটাই। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় শিশুপুত্র মাহিন। তার কারণে মাঝে-মধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাকে বাসায় রেখে গেলেও বিপদ। সঙ্গে নিয়ে গেলেও বিড়ম্বনা।

বাচ্চা সঙ্গে থাকলে খদ্দেরের মন পাওয়া যায় না। নিজের কদরও থাকে না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো আমার স্বামী। নির্যাতন করতো সন্তানকে। এ সন্তান কাছে রাখলে আমাকেও ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় সে।

সে আরও বলে- মাহিনকে সরিয়ে দিলে তাদের সংসার ভাল চলবে। বেশি টাকা আয় করা যাবে। তাই তাকে হত্যার জন্য নানাভাবে প্ররোচনা দিতে থাকে। লিজা পুলিশের কাছে আরও বলে- ঘটনার আগের রাতে আমার স্বামী তার পরিকল্পনা জানায়। বলে, শিশুটিকে গলাটিপে হত্যার পর দরজায় তালা লাগিয়ে বাইরে বের হয়ে যাবি।

পরে বিকালের দিকে ঘর খুলে তাকে দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবি। বলবি- খাট থেকে পড়ে গিয়ে আমার বাচ্চা মারা গেছে। ডেমরা থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর তার বাবা হৃদয় হোসেন ওরফে মামুন ও মা লিজা আক্তারকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলার আসামি হিসেবে লিজা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নিজের বাচ্চাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে।

পরে আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি বলেন, এখন তার পলাতক স্বামী মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই খুনের সব রহস্য জানা যাবে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সোর্স লাগানো হয়েছে। পলাতক হৃদয় ও গ্রেপ্তার লিজা-দু’জনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ডেমরা থানাধীন বামৈল গ্রামের আবদুস সালামের বাড়ির তালাবদ্ধ একটি ঘর থেকে মাহিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.