আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দর্শক

দর্শক হিসাবে আমরা সর্বভুক। আমরা সব কিছু দেখি। দেখি বলতে যে সুধু চোখ বুলিয়ে ক্ষান্ত হই তা নয়, বরং আমাদের চার পাশের কিঞ্চিতকর ও অকিঞ্চিতকর প্রায় সকল ধরনের ঘটনা প্রবাহ আমরা বেশ উপভগ করি। চোখের ব্যায়ামও হয়, সময়ও কাটে, After All ভাল লাগে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা কি দেখি।

আসলেই কি তাই? এর চেয়ে কি আনেক স্বাভাবিক শোনায় না যদি বলা হয় আমরা কি দেখি না? ধরা পড়া পকেট মারের গনপিটুনি, দোকান পাটে বা রাস্তায় হিজড়া সম্প্রদায়ের আচানক আক্রমণ, নানাবিধ গোপন রোগের প্রকাশ্য চিকিৎসার ক্যানভাস, প্রাইভেট কারের পিছনে অন্য গাড়ি বা রিকশা কর্তৃক ঠোক্কর জনিত কারনে সৃষ্ট ঘটনা এসবের কোনওটাই কি আমাদের দৃষ্টিসীমার পাশ দিয়ে গলে যেতে পারে? এরূপ দর্শনীও ঘটনাসমুহ খুঁজে বের করার চেয়ে বরং আমাদের চোখে দর্শনীও নয় এমন ঘটনা খুঁজে পাওয়াই বোধ করি অধিক দুরহ। আর কারন দুর্বোধ্য হলেও বাস্তবতা এই যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এসব ঘটনা কোনও অংশে কম যায়না। খুব সহজেই এইসব ঘটনাবলি দর্শক সংখ্যায় যেকোনও Art Film-কে হার মানায়! এ যেন দেখে চোখ জুড়ায় না। এক পলকে একটু দেখা, আরও একটু বেসি হলে ক্ষতি কি? সুতরাং এই সারমর্মে সহজেই উপনীত হওয়া যায় যে আমরা দর্শক, জাত দর্শক। তবে দর্শক হিসেবে আমাদের আত্মচর্চা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।

জগত বিখ্যাত দর্শক হওয়া সত্তেও মাঝে মাঝে আমরা দ্রষ্টব্য বিসয়-বস্তু কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ি। এমনই এক পরিস্থিতিতে এ লেখার জন্ম। আর সেই পরিস্থিতি থেকে কনও রকমে নাক বের করে দম নেয়ার চেষ্টা করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। আমাদের দর্শক স্বত্বা যে সুধু পথ ঘাটেই তার আত্মপরিচয় প্রদর্শন করে থাকে তা কিন্তু নয়। ঘরে ঘরে এক অতি আচানক বস্তু আমাদের এই স্বত্বাকে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত ভাবে পুষ্টি যুগিয়ে যাচ্ছে।

এই বস্তুর নাম Television। এই বস্তু যে আমরা সুধু দেখি তাই নয়, আমরা ইহা খাই। রবীন্দ্রনাথ এ যুগে বেঁচে থাকলে হয়ত Television সম্পর্কে লিখতেন_ “ইহা আমার দর্শনীয় বস্তু নয়, ইহা আমার খাদ্য। “ এর পর ঘটনা সামান্য, তবে কথা সামান্য না হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। আজ এই Television’এর কল্যাণে যা দৃষ্টি গোচরে আসলো তা হল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ নামক ক্রীড়া যজ্ঞের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

এই অনুষ্ঠান নিয়ে দুটি কথা বলতেই আজ কলম ধরা। মতান্তরে দম নেয়ার চেষ্টা। আদতে এই যজ্ঞ হলো Result of Public Demand. Public চায়, তাই এত আয়োজন। গুনিজন বলেন, “Public যদি চায় তবে ছাগ বিষ্ঠাকেও প্যাকেটজাত করে বুন্দিয়া বলে চালিয়ে দাও। চলবে।

“ এই হলো Responds of Public Demand. Public বুঝেনা। তারা খায়। আরও দাও আরও দাও বারে বারে চায়! যাই হোক, এই BPL নিয়ে আজ কোনও কথা নয়। কথা এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে। আমরা দর্শকরা আবার কোনোকিছুর সবটা নিয়ে কথা বলতে পারিনা।

এত বলতে গেলে দেখব কখন? তাই এই অনুষ্ঠানের মাথার অংশ বাদ। বুক, পেট বরাবর দু-চারটে কথা বলার আছে তাই বলি। কথায় বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। এই যজ্ঞে আমন্ত্রিত কতিপয় Band তারকা যেন এই সত্যকেই প্রতিয়মান করার উদ্দেশ্যে আত্মনিমগ্ন ছিলেন। সেই পুরনো চাল- ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে সেই তুমি কেন এত অচেনা হোলে......... etc. etc. শ্রদ্ধেয় Band তারকাবৃন্দ পুরনো চাল ভাতে বাড়ে বৈকি, কিন্তু একই চাল দিয়ে যুগ যুগ ধরে ভাত রান্নার প্রয়াস কি হাস্যকর না? সবাই যেখানে নতুনের আহ্বানে বগল বাজাতে বাজাতে ছুটছে সেখানে এক-আধটু নতুন চালের ভাত হলে মন্দ কী? Public খাক আর নাই খাক অন্তত এইটুক তো প্রমান হয় আপনারা এখনও পারেন।

আসলে ধিকি ধিকি আগুন আর কত জ্বালিয়ে রাখা যায়? এবার আসা যাক Tele-খাদ্যর সর্বোত্তম নিদর্শন প্রসঙ্গে। হিন্দি গান! এও ছিল। থাকবে না কেন? আমরা তো জাত দর্শক। এইসব খাই তো! কিন্তু এই মহান ভাষার মাসে, ত্যাগের গান দিয়ে সুরু করে মাননীয় সাংসদ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ ও মাননীয় রাষ্ট্রপতির সামনে শেষমেশ যদি এই হয় তাহলে কি দর্শকদের মান থাকে? আমাদের শরীরের যেখানেই সুড়সুড় করুক না কেন আমরা চুলকে নি। কিন্তু সবার সামনে চুলকাই কি? সুকান্ত বলেছেন “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।

” ক্ষুধা যেখানে হিন্দি গানের সেখানে গদ্য পদ্য সবই ফাঁকে থাকবে সেই তো স্বাভাবিক। হিন্দি গান খাও-দাও, ফুরতি কর। আর কি করবে? নাচবে? নাচো। আজ বাদ কাল হয়তো আমাদের স্লোগান হবে “বাঁচতে হলে নাচতে হবে” কিন্তু আমরা তো দর্শক। নিজের নাচ নিজে দেখার জন্য কেউ কি নাচে? না নাচা উচিৎ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।