আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইনডিয়ান আধিপত্য মজবুত করার বছর: শফিক রেহমান

ছাত্র বাংলাদেশের অধিকাংশ সচেতন মানুষ রায় দেবেন ২০১১ ছিল ইনডিয়ান আধিপত্য মজবুত করার বছর। কারণ, আওয়ামী সরকারের বিদায় ঘটলে নতুন সরকার হয়তো ভালো ইকনমিক ম্যানেজমেন্ট দিতে পারবে। আওয়ামী সরকারের বিদায় ঘটলে নতুন সরকার হয়তো বিচার বিভাগকে সৎ ও সুস্থ করতে পারবে ও সেই উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করতে পারবে। কিন্তু ২০১১-তে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ইনডিয়ার ট্রানজিট সুবিধা এবং ইনডিয়াতে ঘোষিত টিপাইমুখ বাধ প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সহজে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুক্ত হতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন দেশ বিক্রি হয় নি, দেশ বিক্রি করা যায় না।

তারা ঠিকই বলছেন। আসলে, দেশ বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে এবং এভাবে দেশ যে দেয়া যায় তার প্রমাণ বহন করছে ২০১১-তে ঘটে যাওয়া নিচের ঘটনাগুলো। ট্রানজিট নিয়ে মিথ্যাচার এক. আশুগঞ্জ পর্যন্ত জলপথে ইনডিয়ান মালামাল আগেই আসছিল। জানুয়ারি ২০১০-এ নতুন দিল্লিতে শেখ হাসিনা যে ৫০ দফা চুক্তি করে এসেছিলেন তার ভিত্তিতে ২০১১-তে শুরু হয় আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত স্থলপথে ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দান। সেপ্টেম্বর ২০১১-র প্রথম সপ্তাহে ইনডিয়ান প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফর পর্যন্ত আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা উচু স্বরে দাবি করে আসছিলেন বাংলাদেশ কোনো ট্রানজিট ফ্যাসিলিটি ইনডিয়াকে দেয়নি।

তারা এটাও বলছিলেন তিস্তার পানি পেলে তার বিনিময়ে ট্রানজিট দেয়া হবে। এই প্রস্তাবের প্রচারকবৃন্দ মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়েছেন। বস্তুত মনমোহন সিং আসার আগেই স্থল ট্রানজিট ফ্যাসিলিটি দেয়া হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজে সেপ্টেম্বর মাসে আশুগঞ্জ-আখাউড়া গিয়ে এই ভয়াবহ সত্যটা উপলব্ধি করি এবং দৈনিক নয়া দিগন্তে এ বিষয়ে একটি সুদীর্ঘ রিপোর্ট করি নেড়িকুকুরের মাধ্যমে। থ্যাংক ইউ নেড়িকুকুর।

আমি ছবিসহ পাঠকদের জানাতে পারি আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলপথে অন্তত:পক্ষে ষোলটি কালভার্টের পাশে বালি ও সিমেন্টের বস্তা ফেলে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে এবং সেখান দিয়ে ১৩০ চাকা বিশিষ্ট ইনডিয়ান আর্টিকুলেটেড ট্রাক অতিকায় সাইজের কার্গো নিয়ে গিয়েছে ত্রিপুরায় নির্মিতব্য পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়াতে তিতাস নদীর দু’টি অংশে একইভাবে ট্রাক চলাচল করলেও এক পর্যায়ে তিতাস প্রতিরোধ করে। ইনডিয়ান ট্রাকের সম্মুখ অংশ তিতাসে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন ইনডিয়ানরা প্রায় ৬০-টি অতিকায় কার্গো বাংলাদেশে রেখে দিতে বাধ্য হয়। ট্রানজিট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়।

এই কার্গো ইনডিয়াকে অবশ্যই নিতে হবে ত্রিপুরাতে। নইলে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব হবে না। ধারণা করা হচ্ছে এই শীতে যখন তিতাস ক্ষীণস্রোতা হয়ে যাবে তখন এসব কার্গো নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার ফলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কি পেয়েছে? উত্তর, কিছুই না। নট এ সিংগল ডলার।

সিপিডি-র ইকনমিস্ট রেহমান সোবহান বলেছিলেন, ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিংগাপুর হয়ে যাবে (২১.০১.২০০৯)। তার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। কিন্তু রেহমান সোবহান লজ্জিত নন। অনুতপ্ত নন। বরং আজ (৩০.১২.২০১১) সকালে সিপিডি, প্রথম আলো, দি ডেইলি স্টার ও আইন সালিশ কেন্দ্র আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে রেহমান সোবহান ইংরেজিতে যে দীর্ঘ (প্রায় ৭,০০০ শব্দ বিশিষ্ট) কি-নোট ভাষণ দিয়েছেন তাতে ইনডিয়া তিনি নিজেকে অতি অল্প কথা ও অস্পষ্টতার আড়ালে রেখেছেন।

তিনি মাত্র ১২০টি শব্দে ইনডিয়া-বাংলাদেশ বিষয়ে তার বক্তব্য রেখেছেন : India is not only one of our major trading partners but is also an upper riparian to Bangladesh as the source of 58 of our principal rivers. Given Bangladesh’s Indian-centric geography, our increasing economic links and the extraordinary economic opportunities becoming available to Bangladesh now that India has, after all these years, finally provided us with duty free access for our exports, we need to develop a strategic vision for defining our relations with India. This relationship is too important to be kept hostage to the shifting sands of our party politics. Designing such a strategy demands a process of public consultation and would eventually need to be backed by all political parties so that India-Bangladesh relations are addressed as a national rather than a party issue. (ইনডিয়া শুধু যে আমাদের প্রধান ট্রেডিং পার্টনারদের অন্যতম, তা নয়। বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৮ নদীর পানির উৎস মুখেও তাদের অবস্থান। বাংলাদেশের ভূগোল ইনডিয়া কেন্দ্রিক। ইনডিয়ার সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগ বাড়ছে। এখন আরো সুযোগ বাংলাদেশের বাড়ছে।

কারণ, এত বছর পরে ইনডিয়া আমাদের রফতানিকে বিনা শুল্কের সুবিধা দিয়েছে। তাই আমাদের প্রয়োজন, ইনডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করার জন্য একটি স্ট্র্যাটেজিক ভিশন বা সুদূরপ্রসারী কৌশলী পরিকল্পনা। পরিবর্তনশীল দলীয় রাজনীতিতে এই দুই দেশের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ করলে চলবে না। এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ডিজাইন করতে হলে পাবলিকের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং পরিশেষে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেতে হবে। ইনডিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ককে দলীয় ইসুর ভিত্তিতে নয়, একটি রাজনৈতিক ইসু রূপে বিবেচনা করতে হবে।

) রেহমান সোবহানের অসম্পূর্ণ তথ্য লক্ষ্য করুন, রেহমান সোবহান ফৃ ট্রানজিট ফ্যাসিলিটি, তিস্তার পানি শেয়ার, ফারাক্কায় প্রতিশ্রুত পানি, টিপাইমুখে বাধের বিপদ সম্ভাবনা, এসব কিছুই বলেননি। তিনি ইনডিয়াতে বিনা শুল্কে বাংলাদেশের রফতানি সুবিধা দেয়ার কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশের কোন রফতানি সেটা তিনি বলেন নি। এ বিষয়ে পড়ুন সাপ্তাহিক বুধবার (১৪.০৯.১১)-এ এমএম মুসা-র রিপোর্টের প্রথম অংশ : সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে এসে ৪৬ ধরনের পণ্যকে বিনা শুল্কে ভারতে প্রবেশাধিকারের একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়া হলেও রফতানিকারক সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নির্ধারিত শুল্ক ছাড়াও ইনডিয়া বাংলাদেশী পণ্য সে দেশের বাজারে প্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের অনির্ধারিত শুল্ক আরোপ করে থাকে।

ইনডিয়াতে সাধারণত বেসিক ডিউটি বা নির্ধারিত শুল্ক ৯ থেকে ১৫ শতাংশ। তবে এর সঙ্গে যোগ করা হয় ৫ থেকে ৭ ভাগ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ থেকে ২০ ভাগ কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ৯ থেকে ১৫ ভাগ স্পেশাল কাউন্টারভেলিং ডিউটি, ১ শতাংশ এডুকেশন ডিউটি এবং ১ শতাংশ অবকাঠামো শুল্ক। সাধারণত তৈরি পোশাক, পাটজাতপণ্য, জামদানি শাড়ি, ইলিশ, সুপারি, নিটওয়্যারসহ বাংলাদেশের প্রচলিত পণ্যের ওপর এসব শুল্ক আরোপ করে ইনডিয়া। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ইনডিয়া সরকার শতভাগ কটন গার্মেন্টস পণ্যের ওপর কাউন্টারভেলিং ডিউটি বাড়িয়েছে। আগে এ শুল্ক ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ আদায় হতো, এখন আদায় হচ্ছে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।

কৃত্রিম সুতায় তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আগে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক নেয়া হতো, এখন তা বাড়িয়ে আদায় হচ্ছে সাড়ে ১৯ শতাংশ। জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ ও নেপালের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশে অশুল্ক বাধা তেমন নেই। তবে ইনডিয়াতে রফতানির বেলায় রয়েছে হাজারো বাধা। এমনকি ব্যবসায়ীরা ইনডিয়াতে ভিসা পেতেও অনেক সময় সমস্যায় পড়ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এক দিকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আশ্বাস, আর অন্য দিকে পণ্য প্রবেশে বাধা এ দ্বৈতনীতিই অনুসরণ করছে ইনডিয়া।

বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন সুবিধা বিদ্যমান থাকায় প্রায় সব ক্ষেত্রেই ইনডিয়ান পণ্যের আধিপত্য বিরাজ করছে। চাল, ডাল, চিনি, পেয়াজ, কৃষি বীজ, আদা, রসুন, শিল্পের কাচামাল থেকে শুরু করে সব পণ্যই আসছে ইনডিয়া থেকে। উপায়ও তেমন নেই। তবে যত সহজে এসব পণ্য আমদানি হয়ে থাকে, বাংলাদেশ থেকে তত সহজে কোনো পণ্যই রফতানির কোনো সুযোগ নেই ইনডিয়াতে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা সাফটাও কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন http://shafikrehman.com/home/details/120 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.