আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেক্যুলার ইন্ডিয়া যা করেনি বাংলাদেশ তা করেছে: তসলিমা

হরিষে বিষাদ সূত্র- বার্তা ২৪.নেট ১৮ বছর পরে এবারের একুশে বইমেলায় তসলিমার নতুন বই ‘নির্বাসন’ প্রকাশিত হলো বাংলাদেশে। ঢাকায় বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগের দিনই ইনডিয়ার কলকাতায় বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান স্থগিত হয়। এমন পটভূমিতে টাইমস অফ ইনডিয়ার রাখি চক্রবর্তী’র সঙ্গে কথা বলেছেন তসলিমা নাসরিন। আবারো আপনার একটি বই বিতর্ক তৈরি করছে ... হ্যাঁ, আমার আত্মজীবনীর সপ্তম খণ্ড- ‘নির্বাসন’ এর প্রকাশনা কলকাতায় স্থগিত হয়েছে, কিন্তু পরদিনই মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে এটা সফলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমীর আঙিনায় লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন।

আমি খুব খুশী। বাংলাদেশ যা করলো, তা কিন্তু করার কথা ছিল সেকুলার-গণতান্ত্রিক ইনডিয়ার। আপনি কি বাংলাদেশে ফেরার আশা করেন? না। আমার বই দেশে প্রকাশিত হলো কি হলো না, তাতে তারা কিছু মনে করে না। এটা একটা অনুষ্ঠান মাত্র।

এর মানে এ নয় যে, বাংলাদেশী মৌলবাদীরা তাদের অবস্থান পাল্টেছে। তারা আমার দেশে ফেরা ঠেকাবে। তারা জানে যে সরকার আমার ব্যাপারে কঠোর। আমি মনে করি, তারা এটাও ভাবে নাই যে সরকার আমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে। শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া এমনকি গত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- কেউ আমাকে দেশে ফিরতে দেয়নি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদীদের ব্যবস্থা নেয়াসহ অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেনে শেখ হাসিনা। কিন্তু আমার জন্য কিছুই করেননি। ইসলামী মৌলবাদীরা আমাকে ‘ইসলামবিরোধী’ লেবেল লাগিয়েছে। সম্ভবত, আমাকে ফিরতে দিলে সরকার মনে করে যে তাদেরও ‘ইসলামবিরোধী’। ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশ আমার জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সাম্প্রতিক। একজন লেখকের জন্য এটা চরম অবিচার। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, কোনো একদিন নিশ্চয় আমি কলকাতায় ফিরতে পারবো। আপনার বইগুলো কি এখনো বাংলাদেশে প্রকাশিত হচ্ছে? গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশী প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি আমার সঙ্গে দেখা করেন। তাকে সব স্বত্ত্ব দিয়ে আমি একটি চুক্তি সই করেছি।

ঢাকায় ‘নির্বাসন’ প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে আমার প্রকাশকরা আমাকে এক কানাকড়ি রয়ালটিও দেননি। আমার বই বাংলাদেশে পাইরেটেড হয়ে বিক্রি হচ্ছে। এমন উদাহরণ আছে যে, লোকেরা আবর্জনা-মার্কা লেখা লিখে আমার নামে- প্রচ্ছদে আমার ছবি ব্যবহার করে ছাপিয়েছে। এসব আবর্জনা মার্কা লেখার জন্য আমি ক্ষতির শিকার হয়েছি, কিন্তু আমার প্রকাশকরা কোনো পদক্ষেপ নেননি, কিংবা আমার বইয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তারা লড়েননি।

ইনডিয়ায় নাগরিক আন্দোলন বাড়ছে। এখানে আপনার বইয়ের প্রকাশনা বাতিল হওয়ার পর বুদ্ধিজীবীরা কি এই বিষয়টি নিয়ে কোনো মতামত দিয়েছেন? কলকাতা বইমেলায় আমার বই প্রকাশ করেছে লেখক নবারুণ ভট্টাচার্য, কিন্তু বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও উদারপন্থীরা এ বিষয়ে নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। সম্ভবত তারা এটিকে ব্যক্তিগত বিষয় ধরে নিয়েছেন। আবার এরকম নাও হতে পারে। কমিউনিস্ট শাসন আমলে যারা আমাকে কলকাতায় এনেছিল এই সরকারের আমলে তাদের কাউকে আমি পাশে পাইনি।

আমার বই প্রকাশনা বাতিল হওয়ার পর একটি শব্দও তারা উচ্চারণ করেনি। আমি আগে থেকেই খেয়াল করেছি ভারতের বুদ্ধিজীবী ও উদারপন্থীরা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকে। তাই তারা রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলে। এদের মধ্যে যারা নিজেদের সেক্যুলার বলে দাবি করে তারা কেউ সেক্যুলার নন। হিন্দু ও মুসলিম চরমপন্থীদের আচরণের বিরুদ্ধে তাদের কখনো মুখ খুলতে দেখিনি।

আপনি যদি হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, ইহুদি চরমপন্থীদের সমানভাবে সমালোচনা না করেন বা তাদের বিরুদ্ধে না রুখে দাঁড়ান তবে আপনি উদারপন্থীও নন, সেক্যুলারও নন। কোনো উদারপন্থী মকবুল ফিদাকে সমর্থন করেন কেউবা আবার রুশদিকে সমর্থন করেন। জয়পুর সাহিত্য উৎসবেও আসতে না পারায় উদারপন্থীরা রুশদিকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তারা নিশ্চুপ কেনো? এর কারণ কি এটাই ধরে নেব যে, সে একজন পুরুষ এবং ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন। আপনি কি মুসলমানদের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পেয়েছেন? পূর্ব বাংলায় (বাংলাদেশ) আমার অসংখ্য বন্ধু আছে তারা সবাই মুসলমান, তারা সবসময় আমার পাশেই ছিলেন।

২০০৫ সালে কলকাতায় আমি ‘ধর্মমুক্ত মানবতাবাদী মঞ্চ’ উন্মুক্ত করেছিলাম। এটি ছিল সেসব মুসলমানের জন্য যারা যুক্তিবাদী ও আধুনিক। মুসলমান সমাজে নাস্তিক হওয়াটা কোনো সহজ কাজ নয়। এর জন্য একজন মানুষকে পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। মানুষ যখন ক্ষুদ্র জাতির অংশ হিসেবে পরিচিত হয় তারা তখন অনেক বেশি রক্ষণশীল আচরণ করে।

মুসলমানরা যারা তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামী নিয়ে বলতে চেয়েছিল সেই মঞ্চে তারা সেগুলো বলেছিল। কী করে সময় কাটান? আমি আমার সময়ের বেশিরভাগ লেখালেখি করে কাটাই, পড়াশোনা করি এবং আমার বিড়াল মিনুর সঙ্গে খেলি। কলকাতার বন্ধুরা আমাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসেন। আমি সেখানকার আড্ডাগুলো মিস করি। মার্চে আমি ওয়াশিংটনে যাচ্ছি সেক্যুলার মানবতাবাদীদের একটি সমাবেশে অংশ নিতে।

হোয়াইট হাউজের সামনে এ সমাবেশ হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমেরিকাকে শতভাগ সেক্যুলার হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। ১৮ বছর পরে এবারের একুশে বইমেলায় তসলিমার নতুন বই ‘নির্বাসন’ প্রকাশিত হলো বাংলাদেশে। ঢাকায় বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগের দিনই ইনডিয়ার কলকাতায় বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান স্থগিত হয়। এমন পটভূমিতে টাইমস অফ ইনডিয়ার রাখি চক্রবর্তী’র সঙ্গে কথা বলেছেন তসলিমা নাসরিন।

আবারো আপনার একটি বই বিতর্ক তৈরি করছে ... হ্যাঁ, আমার আত্মজীবনীর সপ্তম খণ্ড- ‘নির্বাসন’ এর প্রকাশনা কলকাতায় স্থগিত হয়েছে, কিন্তু পরদিনই মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে এটা সফলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমীর আঙিনায় লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন। আমি খুব খুশী। বাংলাদেশ যা করলো, তা কিন্তু করার কথা ছিল সেকুলার-গণতান্ত্রিক ইনডিয়ার। আপনি কি বাংলাদেশে ফেরার আশা করেন? না।

আমার বই দেশে প্রকাশিত হলো কি হলো না, তাতে তারা কিছু মনে করে না। এটা একটা অনুষ্ঠান মাত্র। এর মানে এ নয় যে, বাংলাদেশী মৌলবাদীরা তাদের অবস্থান পাল্টেছে। তারা আমার দেশে ফেরা ঠেকাবে। তারা জানে যে সরকার আমার ব্যাপারে কঠোর।

আমি মনে করি, তারা এটাও ভাবে নাই যে সরকার আমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে। শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া এমনকি গত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- কেউ আমাকে দেশে ফিরতে দেয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদীদের ব্যবস্থা নেয়াসহ অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেনে শেখ হাসিনা। কিন্তু আমার জন্য কিছুই করেননি। ইসলামী মৌলবাদীরা আমাকে ‘ইসলামবিরোধী’ লেবেল লাগিয়েছে।

সম্ভবত, আমাকে ফিরতে দিলে সরকার মনে করে যে তাদেরও ‘ইসলামবিরোধী’। ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশ আমার জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সাম্প্রতিক। একজন লেখকের জন্য এটা চরম অবিচার। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, কোনো একদিন নিশ্চয় আমি কলকাতায় ফিরতে পারবো।

আপনার বইগুলো কি এখনো বাংলাদেশে প্রকাশিত হচ্ছে? গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশী প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি আমার সঙ্গে দেখা করেন। তাকে সব স্বত্ত্ব দিয়ে আমি একটি চুক্তি সই করেছি। ঢাকায় ‘নির্বাসন’ প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে আমার প্রকাশকরা আমাকে এক কানাকড়ি রয়ালটিও দেননি। আমার বই বাংলাদেশে পাইরেটেড হয়ে বিক্রি হচ্ছে।

এমন উদাহরণ আছে যে, লোকেরা আবর্জনা-মার্কা লেখা লিখে আমার নামে- প্রচ্ছদে আমার ছবি ব্যবহার করে ছাপিয়েছে। এসব আবর্জনা মার্কা লেখার জন্য আমি ক্ষতির শিকার হয়েছি, কিন্তু আমার প্রকাশকরা কোনো পদক্ষেপ নেননি, কিংবা আমার বইয়ের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তারা লড়েননি। ইনডিয়ায় নাগরিক আন্দোলন বাড়ছে। এখানে আপনার বইয়ের প্রকাশনা বাতিল হওয়ার পর বুদ্ধিজীবীরা কি এই বিষয়টি নিয়ে কোনো মতামত দিয়েছেন? কলকাতা বইমেলায় আমার বই প্রকাশ করেছে লেখক নবারুণ ভট্টাচার্য, কিন্তু বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও উদারপন্থীরা এ বিষয়ে নিয়ে নিশ্চুপ ছিলেন। সম্ভবত তারা এটিকে ব্যক্তিগত বিষয় ধরে নিয়েছেন।

আবার এরকম নাও হতে পারে। কমিউনিস্ট শাসন আমলে যারা আমাকে কলকাতায় এনেছিল এই সরকারের আমলে তাদের কাউকে আমি পাশে পাইনি। আমার বই প্রকাশনা বাতিল হওয়ার পর একটি শব্দও তারা উচ্চারণ করেনি। আমি আগে থেকেই খেয়াল করেছি ভারতের বুদ্ধিজীবী ও উদারপন্থীরা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকে। তাই তারা রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলে।

এদের মধ্যে যারা নিজেদের সেক্যুলার বলে দাবি করে তারা কেউ সেক্যুলার নন। হিন্দু ও মুসলিম চরমপন্থীদের আচরণের বিরুদ্ধে তাদের কখনো মুখ খুলতে দেখিনি। আপনি যদি হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান, ইহুদি চরমপন্থীদের সমানভাবে সমালোচনা না করেন বা তাদের বিরুদ্ধে না রুখে দাঁড়ান তবে আপনি উদারপন্থীও নন, সেক্যুলারও নন। কোনো উদারপন্থী মকবুল ফিদাকে সমর্থন করেন কেউবা আবার রুশদিকে সমর্থন করেন। জয়পুর সাহিত্য উৎসবেও আসতে না পারায় উদারপন্থীরা রুশদিকে ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে।

কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তারা নিশ্চুপ কেনো? এর কারণ কি এটাই ধরে নেব যে, সে একজন পুরুষ এবং ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করেন। আপনি কি মুসলমানদের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পেয়েছেন? পূর্ব বাংলায় (বাংলাদেশ) আমার অসংখ্য বন্ধু আছে তারা সবাই মুসলমান, তারা সবসময় আমার পাশেই ছিলেন। ২০০৫ সালে কলকাতায় আমি ‘ধর্মমুক্ত মানবতাবাদী মঞ্চ’ উন্মুক্ত করেছিলাম। এটি ছিল সেসব মুসলমানের জন্য যারা যুক্তিবাদী ও আধুনিক। মুসলমান সমাজে নাস্তিক হওয়াটা কোনো সহজ কাজ নয়।

এর জন্য একজন মানুষকে পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। মানুষ যখন ক্ষুদ্র জাতির অংশ হিসেবে পরিচিত হয় তারা তখন অনেক বেশি রক্ষণশীল আচরণ করে। মুসলমানরা যারা তাদের ধর্মীয় গোঁড়ামী নিয়ে বলতে চেয়েছিল সেই মঞ্চে তারা সেগুলো বলেছিল। কী করে সময় কাটান? আমি আমার সময়ের বেশিরভাগ লেখালেখি করে কাটাই, পড়াশোনা করি এবং আমার বিড়াল মিনুর সঙ্গে খেলি। কলকাতার বন্ধুরা আমাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসেন।

আমি সেখানকার আড্ডাগুলো মিস করি। মার্চে আমি ওয়াশিংটনে যাচ্ছি সেক্যুলার মানবতাবাদীদের একটি সমাবেশে অংশ নিতে। হোয়াইট হাউজের সামনে এ সমাবেশ হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমেরিকাকে শতভাগ সেক্যুলার হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.