আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরান ঢাকায় কিছু টুকটাক অভিজ্ঞতা

মানুষ কিছু জানত না বলে সে জানার আগ্রহে ছিল ভরপুর,এখন মানুষ কিছু জানে বলেই সে অজানাকে পাঠিয়েছে বহুদূর পুরান ঢাকা- নামে,ঐতিহ্যে এবং প্রাচুর্যে পুরানো হলেও যেকোন মানুষের কাছে ইহা প্রতিদিন নতুনভাবে ধরা দেয়। ঢাকার ঐতিহ্য সম্পর্কে কখন যদি কিছু জানতে চান তাহলেপ্রথমেই চলে যান পুরান ঢাকায়। ওইখানকার হোটেল,রেস্তোরা থেকে শুরু করে প্রধান বাহন রিকশা,প্রধান পেশা ব্যবসা,প্রধান পোশাক সাদা লুঙ্গি-পাঞ্জাবি,আইকন খাবার রসালো পান-সব কিছুতেই খুজে পাওয়া যায় নিত্যনতুন সব অভিজ্ঞতা। গত এক মাস যাবত পুরান ঢাকায় চলাচল করে বেশ কিছু ব্যাপার এক দিকে যেমন জানছি তেমনি অন্যদিকে শিখছি এবং উপভোগ করার চেষ্টা করছি। আমার সাথে মিলিয়ে দেখুন ,দেখি আপনারাও আমার সাথে একমত কিনা।

প্রথমেই আসি পুরান ঢাকার প্রধান বাহন রিকশাকে নিয়ে,যারা আদি পুরান ঢাকাইয়া তারা হয়ত ভ্যাসপা নামক বাইক ব্যবহার করে যেটা কিনা বর্তমানে পালসার দ্বারা অপসারিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু পাশাপাশি ওইসব এলাকার আনাচে কানাচে রিকশা দেখা যাবেই। রিকশাওয়ালা এবং তাদের রিকশার মধ্যে আবার বেশ কিছু বৈশিষ্ট লক্ষ্য করা যায়। এই যেমনঃ ১/মতিঝিল থেকে মিটফোর্ডে বা অন্যকোন এলাকায় প্রায় ১২-১৪টি শাখাযুক্ত রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়। রিকশাওয়ালারা কেন জানি ১৩ টা রাস্তা অতিক্রম করার পর ১৪ নং রাস্তা ভুলে যায় তার কারন ১৪ নং রাস্তা আবার ৫-৬ তা প্রশাখাযুক্ত। ২/রিকশাওয়ালাদের মধ্যে ঐকতা বেশ ভাল ভাবেই দেখা যায়।

তার কারন ভাড়া জিজ্ঞেস করতে গেলে এত জোড়ে চিল্লায়ে ভাড়া বলে যে আশেপাশের বাকিরা সচকিত হয়ে যায় এবং বুঝতে পারে যে ওই মূহুর্তে ভাড়া কত হবে। ভাড়া না মিললে বলে,"আজকে আর বাসায় যাইতে পারবেন না"। এই কথা শুনে অন্যরা যা খুশি হয় না!!! ৩/গত ৩০ দিনে যে কয়টি রিকশায় করে চলাচল করেছি তার মধ্যে প্রায় ৮০% সঠিক জানে না যে নয়াবাজার কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। কেন রে ভাই?এই কথাটা রিকশায় উঠার আগে বললে কি হয়? ৪/পুরান ঢাকায় যাওয়ার সময় খাওয়াদাওয়া করে বের না হওয়াই ভাল। খাওয়াদাওয়া করলেও আগে মনে করে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে নিবেন।

রাস্তা ঘাটে কে জানে কখন কি হয় ঝাকুনির ঠেলায় ৫/পুরান ঢাকাগামী রিকশাওয়ালাদের উচিত তাদের বাহনে সীট বেল্ট ব্যবহার করা নাহলে কোন একদিন হয়ত দেখবে যে রিকশা ঠিকই লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে কিন্তু পিছনে যাত্রী নেই ৬/গালাগালির দিক দিয়ে তারা কোন অংশে কম না। পিছন থেকে,সামনে থেকে,ডান থেকে,বাম থেকে যেখান থেকেই অন্য রিকশা অভারটেক করুক না কেন গালি তাকে শুনতেই হবে তা সে রাস্তায় যতই জ্যাম থাকুক না কেন। ৭/রিক্সাওয়ালারা নিজের রিক্সাকে ফেরারি গাড়ি মনে করে। চান্স পাইলেই এমন টান দেয় যেন মনে হয় তার স্বজনদের কেউ ইমার্জেন্সিতে আছে এরপর আসি হোটেল রেস্তোরা গুলোর দিকে। হোটেলগুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম।

এই যেমনঃ ১/হোটেলগুলাতে তিনজনের বেশি চা খেতে গেলে যে কোন একজনকে গ্লাসে করে খেতে হবে ২/খাবারের অর্ডার দেওয়ার জন্য ওয়েটার কে কমপক্ষে ১০-১২ বার "মামা " বলে ডাকা লাগে। নিজের আপন মামাকেও কেউ মনে হয় এতোবার মামা ডাকে নি। ৩/ওয়েটাররা টিপস নেওয়ার জন্য আর ওয়েট করে না। কত টাকা টিপস দরকার তা আগেই কেটে নেয় ৪/এক ওয়েটারের কাজ আরেক ওয়েটার কেন জানি করতে চায় না। কিছু আনতে বললে কথা না শুনার ভান করে চলে যায়।

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো যে আসলে কোথা থেকে শুরু আর কোথায় গিয়ে শেষ তা এখনও আমি বুঝে উঠতে পারি নাই। মতিঝিল থেকে নয়াবাজারে প্রায় ১৫ টার মত রাস্তা দিয়ে গিয়েছি। সব ক্ষেত্রেই রিকশাওয়ালাকে একবার করে থেমে দেখতে হয়েছে যে এরপর কোন রাস্তা দিয়ে যাবে। এমনও দিন গিয়েছে যেদিন আমি আর রিকশাওয়ালা দুইজনি মিলে ঠিক করেছি যে এরপর কোন রাস্তা দিয়ে যাবো। রাস্তা গুলো এমন চিপা যে দুটি রিকশা পাশাপাশি চলতে পারবে না কিন্তু তবুও চলছে।

মাঝে মাঝে রিকশাওয়ালা আমাকে অপশন দিয়ে বলে যে আমি কোন রাস্তা দিয়ে যেতে চাই। রাস্তাঘাটের অবস্থা এখনও আমাদেরকে গ্রাম্য এলাকার কাচাপাকা রাস্তার কথা মনে করিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় যে ঝাকুনি খেতে হয় তাতে পেটের খাবার অটো গিয়ারে হজম হয়ে যায়। জ্যাম যদিও সব জায়গারি একটা অনিবার্য অংশ তবুও সেখানে ছোট ছোট কারনে জ্যাম লাগে। এই যেমনঃ ছোট ছোট গলিগুলোতে জেনে হোক বা না জেনে হোক দুটি রিকশা ঢুকলেই জ্যাম লাগে।

সেই জ্যাম আবার চলে যায় মেইন রাস্তা পর্যন্ত। পুরান ঢাকার একেবারে গোড়ার বিষয় যেমন খাবার দাবার,মানুষের ব্যবহার,বাসস্থান এসব নিয়ে বলব না কেননা এগুলো আমাদের ভাললাগার একটা অংশ। কিছু কিছু অভিজ্ঞতা সবার সাথে প্রতিদিনই হয় আবার কিছু কিছু অভিজ্ঞতা মানুষের চাওয়া হয়ে দাড়ায়। আমি এখন সেটারই অপেক্ষায় আছি। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বেচে থাকুক হাজার বছর ধরে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।