আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওরা জামায়াত নেতার ভিআইপি পরীক্ষার্থী!

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৮০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক স্কুলঘরে এবং সংলগ্ন একটি ক্ষেতে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা বা আশপাশের কেউ নন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারযোগে পরিবার-পরিজনসহ হাজির হয়েছেন তাঁরা। পুরো আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে পৌর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির, উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফ আহম্মেদের নেতৃত্বে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট ২০-২২ লাখ টাকার চুক্তিতে এসব বহিরাগত ও অবৈধ পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র বোর্ড থেকে বের করেছে মারুফ আহম্মেদের যোগসাজশে। তারাই পরে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার পাঁচ-ছয়টি বিদ্যালয়ের নামে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় গফরগাঁও কেন্দ্র থেকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। এখানে অবৈধ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। জামায়াত নেতা মারুফ আহম্মেদ অবশ্য এসব বিষয় অবলীলায় স্বীকার করেছেন। সঙ্গে এমন দম্ভোক্তিও করেছেন, 'যান, যা লেখার লেখেন।

শিক্ষামন্ত্রী, বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সবাই এ ব্যাপারে অবগত আছেন। ' রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়েই কথা হলো ঢাকার উত্তর বাড্ডার গৃহিণী লিজা আক্তারের সঙ্গে। লিজা জানান, তাঁর ছেলে ইসরাত হাসান শুভ ঢাকার জহুর একাডেমীর ছাত্র। প্রায় ২২ হাজার টাকার চুক্তিতে তাঁর ছেলে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় গফরগাঁও কেন্দ্র থেকে অংশ নিচ্ছে। একই বিদ্যালয়ের নামে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থী ইসরাত হাসান শুভ, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর সাবিকুন নাহার, গাজীপুরের এনামুল, হালুয়াঘাটের বিশ্বজিৎ পাল, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির লিমন মিয়া_কেউই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফ আহম্মেদ ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষকের নাম জানে না।

তারা জানায়, কোনোদিন তারা রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেনি। টেস্ট পরীক্ষায়ও অংশ নেয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রৌহা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীও পাস করেনি। বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণীর কোনো শিক্ষকও নেই। পাঁচটি শ্রেণীর জন্য এখানে সাকল্যে ১২টি বেঞ্চ রয়েছে।

অথচ চলতি এসএসসি পরীক্ষায় রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে ১০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। আবদুল মান্নান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের সবাই এলাকায় অপরিচিত ও বহিরাগত। এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে গতকাল বুধবার হলে গিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়েও নানা অনিয়ম চোখে পড়ে। দূর-দূরান্তের এসব পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পরও হলে উপস্থিত হতে দেখা যায়। ছফির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থী ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা মেহেদী হাসান রনি হলে আসে পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর।

সে জানায়, ট্রেন দেরি করায় তারও দেরি হয়েছে। এ জন্য সময়মতো পরীক্ষার হলে সে হাজির হতে পারেনি। কেন্দ্রে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফ আহম্মেদের কোনো দায়িত্ব না থাকলেও পরীক্ষা চলাকালে বহিরাগত ছাত্রদের কক্ষে তাঁকে বেশ তৎপর দেখা গেছে। জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেট জামায়াত নেতা মারুফ আহম্মেদের যোগসাজশে ভুয়া পরীক্ষার্থী, রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর শুরু ২০১১ সালে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুই শতাধিক ভুয়া পরীক্ষার্থী জড়ো করে গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন স্কুলের নামে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের পুরো প্রক্রিয়াটিই সারা হয়েছে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে। আর পুরো প্রক্রিয়াটিই দুই বছর ধরে চলছে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ তালুকদার এ ব্যাপারে বলেন, 'রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১০ সালে দশম শ্রেণীতে কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় বিনা মূল্যের সরকারি বই সরবরাহ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ২০১০ সালের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরই এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা।

সে ক্ষেত্রে হঠাৎ করে রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ে এত পরীক্ষার্থী কোথা থেকে এলো, তা আমার জানা নেই। ' রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারুফ আহম্মেদ বলেন, 'আমার বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে ১৭ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসব পরীক্ষার্থী আমার বিদ্যালয়ের নামে চাপিয়ে দিয়েছে। এরা বোর্ডের ভিআইপি পরীক্ষার্থী, না নিয়েও উপায় নেই। ' গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব এ টি এম মোস্তাফিজুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, 'গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এ উপজেলার আবুল হাসেম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।

এবার রৌহা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ' গফরগাঁও পরীক্ষা কেন্দ্র কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুল হাসান লিটন এ ব্যাপারে বলেন, এসব পরীক্ষার্থী নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও বোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.