আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীতের কুয়াশায় বসন্তের ছোয়া

আমি ঘুমিয়ে যাবার আগে আরও অনেকটা পথ যেতে চ..... কনকনে শীতের মাঝে খুব সকালে বাড়ী থেকে বের হলাম । অনেক টা পথ । গাজীপুর থেকে ঢাকা এসে অফিস করব। এর থেকেও বড় কথা বাড়ী থেকে দশ কিলো সি এন জি তে এসে গাড়ীতে। মনে করতেয় ভয় হচ্ছিল।

আজ একটু বেশীই কোয়াশা। চারপাশের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল সারা প্রকৃতি আজ কোয়াশার চাদর মুরি দিয়ে ক্লান্তীতে জিমিয়ে পরেছে। বেলা ভাড়ছে তারপর ও সূযে'র দেখা নেই। মনে হচ্ছে কোয়াশা আরও বাড়ছে।

মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বৃষ্টি পরতেছে। রাস্তায় জনমানব নেই বললেই চলে। ঘন কোয়াশার বুক চিরে আমার প্রাইভেট সি এন জি টা খুব আস্তে আস্তেই চলছিল। দুই কিলো কাচা রাস্তা পাড় হয়ে পাকা রাস্তায় ওঠতেই কে যেন পিছন থেকে ডাকল । মৃদু কন্ঠে আমাকে অনুরোধ করল 'আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি'।

কোয়াশার মাঝে স্প্ট দেখা যাচ্ছিল না। ভাল করে তাকি্য়ে দেখলাম কাল বোরকা পরা ভদ্র মহিলা। কোন কিছু না ভেবেই তাকে ওঠতে বললাম। আমি প্রতি রবি বারই খুব সকালে বাড়ী থেকে অফিস করি গত এক বছর এর ব্যতিক্রম হয় নি। তার পরও আজ কেন জানি অন্য রকম লাগছিল।

আমার অন্য রকম মনে হবার অবশ্য কারন ও ছিল। আজই প্রথম কোয়াশা এবং একটু একটু বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি অনেক মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে অফিস করেছি কিন্তু এই প্রথম কোয়াশা আর একটু একটু বৃষ্টি সাথে অসহ্য ঠান্ডার মাঝে অফিস করতে যাচ্ছি। পাশে একজন ভদ্র মহিলা এটাও প্রথম। প্রাই দশ মিনিট পাশাপাশি বসা দুজন মানুষ।

খুব কাছাকাছি কিন্তু আমি তাকে চিনি না। চিনার চেস্টাও করি নি । এক বার মনে হচ্ছিল তার পরিচয় টা জানা যেতে পারে। আবার মনে হল কি দরকার অপরিচিত মানুষের সাথে আগ বারিয়ে কথা বলতে যাবার। অপরিচিত ঐ মানুষটার সাথে কথা বলার অদম্য ইচ্ছা টা কে দমন করে আমার সি এন জি ড্রাইভার কে প্রশ্ন করলাম আর কতক্ষন লাগবে।

সে বলল অনেক কোয়াশা ৩০ মিনিটের মত লাগবে। ত্রিশ মিনিট অনেক বেশী সময় মনে হচ্ছিল বিশেষ করে একজন ভদ্র মহিলার সাথে আর ও ত্রিশ মিনিট বসে থাকতে হবে। হঠাৎ করে একটা ভয়ংর জিনিস আবিস্কার করলাম। আমার মনে হচ্ছে আমার শরির থেকে কেমন যেন মিষ্টি একটা ঘ্রাণ বেশে আসতেছে। রজনী গন্ধা আর বেলী ফুলের মিশ্রন এর ঘ্রান।

আমি রবি বারে কখনই বডিস্প্রে করি না । আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ঘ্রাণ টা কোথা থেকে আসতেছে। খুব ভাল করে বুঝতে চেষ্টা করলাম ঘ্রাণ টা কিসের। আমার আর বুঝতে বাকি থাকলানা । আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম ঘ্রাণ টা আমার পাশে বসা ভদ্র মহিলার শরির থেকেয় আসতেছে।

এত মাযাবী গন্ধ কিভাবে একজন মানুষের হতে পারে এর আগে কখনো অনুভব করি নি। সময়ের সাথে সাথে ঘ্রাণের তীব্রতা কেবলই বাড়তেছিল আর আমি যেন মাতাল হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল ঐ ভদ্র মহিলা ইচছা করেই আমাকে মাতাল করতে এত মায়াবী বডিস্প্রে করেছে। অসহ্য ঘ্রাণ । মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাচ্ছি।

সবকিছু ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। কি ভয়ংকর অনুভুতি বলে বুঝাতে কষ্ট হচ্ছে। আমি একবার টেরা চোখ করে দেখতে চেষ্টা করলাম ঐ ভদ্র মহিলাকে। বোরকা পরা তাই মুখ দেখা যাচ্ছিল না। হাতের দিকে তাকাতেই বুক টা কেপে ওঠল।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল কিভাবে একজন মানুষের হাত এত সুন্দর হতে পারে। কচি লাউয়ের ডগা যখন সকালের মৃদু রোদে অসহ্য সুন্দর ভংগিতে বেরে ওঠে ওনার হাতের আঙ্গুল গুলো ঠিক তেমন মনে হচ্ছিল। কিছুতেই চোখ সরাতে পারছিলাম না। কেন যেন মনে হচ্ছে হাজার বছর ধরে তাকিয়ে থাকি ঐ কচি হাত দুটুর দিকে। চোখ টা ব্যথা হয়ে গেছে।

এই প্রথম মনে হল পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে টেরা চোখে কারউ দিকে তাকিয়ে থাকা। নিজের প্রতি প্রচন্ড অভিযোগ জন্মাতে লাগল। আমার অবচেতন মন আমাকে বার বার বলতে লাগল "কিসের এত অহংকার তোমার? কেন এত নিজেকে ছোট মনে হবার ভয়? কেন এত দুভর্লতা ? কি এমন খতি হবে একজন অপরিচিত ভদ্র মাহিলার সাথে একটু কথা বললে?এটা কি তোমার ভদ্রতা নাকি সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে না নিতে পারার ব্যর্থতা ? এই কনকনে শীতের মাঝে বসন্তের মৃদু রজনী গন্ধার ঘ্রানের বিনিময়ে না হয় একটু কথা বল "অনেক চেষ্টা করেও মনে হচ্ছে হেরে যেতে হবে অবচেতন মনের কাছে। প্রচন্ড খুভ অথবা অভিযোগ হতে লাগল ঐ ভদ্র মাহিলার প্রতি । কিসের এত অভিমান ? কি এমন খতি হবে আমার সাথে একটু কথা বললে?কেন এত লজ্জা তার ? আমি পরাজয় মেনে নিলাম আমার অবচেতন মনের কাছে।

অনেক কষ্টে জমিয়ে রাখা হাজারও কথার মাঝ থেকে কিছু কথা বলতে সাহস সঞ্চার করলাম মনের মাঝে। কথা গুলো মনের মাঝেই রয়ে গেল। বুঝতে পারলাম আমি চলে এসেছি। অনেক দিন হয়ে গেছে। আমি অনেক বেশী হতাশ।

আমার না বলা কথা গুলো আমাকে আরও বেশী হাতাশ করে দেয় সবসময় ... খুব বেশী। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।