আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মহত্যা

বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। নির্বিকার রাত, নিস্তব্ধ মেঘনা। পাড়ে দাঁড়ানো বিজলী বাতির ছায়াগুলো জলের উপর আপন মনে খেলা করে। যান্ত্রিক আর্তনাদে মেঘনা সেতুর উপর দিয়ে ছুটে চলে ঘুমহীন বাস-ট্রাকের দল। পাথুরে দৃষ্টি ফেলে আপন মনে কালো পথের দিকে চেয়ে থাকে ড্রাইভার্।

আরোহীরা ঘুলে ঢুলে ঢুলে পড়ে। ঘুমকাতুরে চোখে এক যাত্রী চোখ বাড়ালো বাসের কাচেঁর জানালার ওপাশে। ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। চাঁদনী রাত, ব্রিজের উপর যদি পরী বা পেত্নী কিছু একটা এসে দাঁড়ায় তবে সেটা খুব বেশী অস্বাভাবিক হবে না। শোনা যায় পরীরা চাঁদের আলো খেতে কুহিস্তান থেকে বাঙ্গলাদেশে চলে আসে।

ঘুমের আবেশে মাতাল যাত্রীটির মাথায় কিন্তু এসব কিছুই আসেনি। সে ভেবে নিয়েছে পাগলী টাইপের কেউ। পতিতাও হতে পারে। রাতের ঠান্ডা বাতাস ঝাপটা মারে মুখে। কানের পাশে ঝুলে থাকা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।

প্রতিবার গাড়ি যাওয়ার সময় ব্রিজটি থরথর করে কাঁপছে। ব্রিজটি কি তার মত ভয় পাচ্ছে। জোর হাতে আরো শক্ত করে ব্রিজের রেলিং চেপে ধরে নিরুপমা। নিরুপমা রায়। মৃত্যুকে তার খুব ভয় করছে।

তার মরতে ইচ্ছে করছে না। আজ কয়েকদিন সে অনেক ভেবেছে। কিন্তুর মৃত্যুর মত এত আপন কেউ কাউকে আর খুঁজে পেল না। মেঘনার কালো জলের উপর সে অর্থহীন দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে। গর্ভে তার প্রেমিকের ঊথিত কামনার প্রোথিত অবদান।

যে দিনটি তার কাছে ছিল এতদিন অনেক অনেক আনন্দের, অনেক স্মৃতিময় সেই দিনটি আজ তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে লোকটিকে সে সবার থেকে আপন ভেবেছিল- বাবা মা ভাইদের সবার থেকে খুব বেশী আপন, যা জন্য সে ক্লাস ফাঁকি দিত, ভালবাসার গল্প মাখা কল্পনার জাল বুনত। পার্কের বেঞ্ছে বসে কাটাত ঘন্টার পর ঘন্টা। লোকটা তো খুব বেশী খারাপ মানুষ ছিলনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি করছে কেমিস্ট্রিতে।

একটু রাগী স্বভাবের ছিল। কিন্তু নিরুর সাথে কখনো রাগারাগী করত না। নিরুরু উরুতে মাথা রেখে শুয়ে থাকত সে ঘাসের সবুজ বুকে। নিরুতে দেখাত, শোনাত ভালবাসার সোনালী সুদিনের স্বপ্ন। টোনাটুনির সংসারে শুধুই তারা দুজন।

রুপকথার গল্পের আবছায়া ডানা মেলত নিরুর কল্পনায়। যৌবনের তাড়নায় তারা ছুটছিল লাগামহীন বল্গা হরিনের মত। প্রেমিকের হাত ধরে নিঃশংক চিত্তে তাই নিরু যেতে সাহস করেছিল তার মেসে। ছেলেটির রুমমেট অনুপস্থিত ছিল। আদিম উনমত্ততায় মাতোয়োরা দুজন নিজেদের বাহডরে সুখ খুঁজেছিল।

ঘামে ভিজে সপসপে হয়ে যাওয়া নিরুর ঘনঘন শ্বাস পড়ছিল। সে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেল। কয়েকটা মাস কিভাবে কেটে গেল। কিভাবে পার হয়ে গেল সে বুঝতে পারল না। যেদিন সে জানল তার দেহের মাঝে আরো একজনের উপস্থিতি, খুব ভয় পেয়ে গেল সে।

ভালবাসার চেনা লোকটা অচেনা হয়ে গেল। মা কাঁদতে কাঁদতে শাড়ীর আঁচল ভিজিয়ে ফেললেন। বাবা গম্ভীর মুখে সারারাত বারান্দায় বসে থাকলেন। বড় ভাই তাকে কোনদিন তার গায়ে ফুলের টোকা দেয় নাই। সেই বড় ভাই আজ তার মুখে জুতো খুলে ছুয়ে মারলেন।

দুনিয়াটাই তার কাছে হঠাত অচেনা লাগছে। গভীর রাতে মা নিরুর ঘরে এল। সবাই মিলে এবরশন করার সিদ্ধান্তে এসেছে। কিন্তু নিরুর ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। কোথাও নেই সে।

না বাথরুমে, না বেলকনিতে। তাকে কেউ বের হতে তো দেখেনি। নিরু দাঁড়িয়ে আছে মেঘনা ব্রিজের মাঝ বরাবর। নিরু রেলিং এর উপর উঠে দাঁড়াল। বাবা মা ভাই তাকে হাসপাতালে, আত্মীয়ের বাইতে খুঁজে ফিরতে লাগল।

কয়েকদিন বাদে প্রথম আলোর শেষ পাতায় একটা খবর বেরল। মেঘনার মোহনায় জলে ফুলে ফেঁপে ওঠা একটা মেয়ের লাশ ভেসে উঠেছে। পুলিশ সন্দেহ করছে কোন দুষ্কৃতকারীদের দল মেয়েটিকে ধর্ষন করার পর হত্যা করে মেঘনায় ভাসিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় বিরোধীদলীয় নেতা দাবী করতে লাগল, এই সরকারের আমলে আইন শৃংখলার খুব অবনতি হয়েছে। খুন-ধর্ষন বেড়েই চলেছে।

সরকারের উচিত ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দ্রুত আগাম নির্বাচন দেয়া। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.