আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মহত্যা

সুন্দর, তুমি এসেছিলে আজ প্রাতে...

আত্মহত্যার দায়ভার কাউকে দিয়ে যাওয়া যায় না, এ দায় নিজের। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে এর উত্তর একমাত্র ঐ ব্যক্তিই দিতে পারে যে আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যাকৃত ব্যক্তি আসলে না থাকে মাটিতে, না পাতালে আর না থাকতে পারে আকাশে…অতএব… …হে বন্ধু, বিদায়…আমার সর্বনাশ তাই যে আমি আমার মধ্যে নাই… আমি কেন আত্মহত্যা করলাম, তার জবাব দিতে আমি বাধ্য নই তারপরও না বলে পারছি না। আমি আর দশটা সাধারন মেয়ের মতই জীবনযাপন করছিলাম, শুধু একজন মানুষ আমার এই পরিণতির জন্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দায়ী। তাকে ঠিক দায়ী করা যায় কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে, কারন তাকে আমি বড় ভালোবেসেছিলাম কিন্তু সে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি, তবে একেবারে যে জন্মের মত অবহেলা করেছে তাও না।

সে যার ভক্ত ছিলো আমিও তার ভক্ত হতে চাইতাম কিন্তু সে যাকে ভালোবাসতো আমি তাকে ঘৃনা করতাম, আমি তাকে শুধু আমার করে পেতে চেয়েছিলাম, এই ছিল আমার অপরাধ, আর এই জন্যে আমি আত্মহত্যা করলাম । আমি কলেজ পাশ দেবার প্রথম বছরের মাথায় স্থানান্তরিত হলাম রাজধানীতে, বেশি বেশি আলো আমার বেশি দিন সহ্য হয়নি, বেশি প্রান চাঞ্চল্য আমাকে হাঁপিয়ে তুলতো, আমাকে আমার জন্মশহরই টানতো বরাবর, কিন্তু সেখানে গিয়ে যে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে তা জানা ছিলো না। যখন বলবো বলে ঠিক করেছি তখন কিছুই গোপন করবো না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও আমার মন কিন্তু মধ্যবিত্ত ছিলো না, আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাবা মা ভাই বোন কে নিয়ে সচ্ছল একটা আধুনিক জীবনের। আধুনিকতার প্রথম ধাপ হিসেবে পোষাক, প্রসাধন আর প্রণয়ী আমার কাছে প্রাধান্য পেল… প্রথম যেদিন মদ গিললাম, আমার কিছু মনে নেই, শত হলেও রাজধানীর হাওয়া বলে কথা তার উপর বন্ধুদের অনুরোধ, সাথে নুতন অভিজ্ঞতার শিহরন, কৈশোরে দাদির পানের বাটা থেকে জর্দা সহযোগে পান যেমন লেগেছিল।

প্রণয়ীর কাছে কুমারিত্ব অবসান তেমন অত্যাশ্চর্যের বিষয় না হলেও কিছুটা খটকা লেগেছিল বৈকি, হাজার হোক মফস্বলের মেয়ে আমি! নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিলাম শুধু প্রণয়ীর সান্তনা বাক্যে, আমার তার সংসার হবে, ভালো কথা। শিহরনের পর শিহরন বয়ে যেতে লাগলো শরীরের উপর দিয়ে, আর সেই শিহরন শেষ হলো আমার উদরে কিছু একটার জান্তব উপস্থিতিতে। রাজধানীর বেশি বেশি আলোর মধ্যেও চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম। যথারীতি প্রণয়ীর প্রত্যাক্ষান এবং স্বপ্ন-ভ্রুণভঙ্গ আর তারপর জন্মশহরে প্রত্যাগমন। সময়ের মতো এমন পাষন্ড সন্ত্রাসী বোধহয় এ জগতে খুব কমই আছে যা সব কেড়ে নেয়, মস্তিষ্ক পর্যন্ত ধুয়ে ফেলে।

যাকে বন্ধু বা সাথী বলে পাবো বলে সেই আশাহত মুহূর্তে কল্পনাও করিনি সেই বিস্মৃত কলেজ সহপাঠী আমাকে নুতন জীবনে আহবান জানালো, কিন্তু বন্ধু হয়ে, প্রনয়ী নয়…আমি যেন সমস্ত অন্তর দিয়ে তাকে আশা করলাম, “বন্ধু নও তুমি আমার জীবন-বন্ধু হও…” , যে আমি, নজরুল সঙ্গীত কোনোদিনও বুঝিনা…তার ভালোলাগার বিশ্লেষনে আর স্বকন্ঠের গায়কীতে আমার সেই গান অনন্তের মনে হলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি মোনালিসাকে খুশি করতে যে অর্কেস্ট্রেশনের আয়োজন করতো যেন সে আমাকে সেই ভাবে উদ্ভাসিত করে তুললো…কিন্তু মোনালিসা থোড়াই মৃত কাঠ-ফলক থেকে নিংড়ে বেরিয়ে আসতে পারতো তার স্রষ্ঠার কাছে সমস্ত সপ্নীল রঙ সহ! আমার যেন সেই অপারগ মোনালিসা দশা হলো…আমার হৃদয়তন্ত্রী গেয়ে উঠলো… “তুমি কিছু বোঝো? কিচ্ছু বোঝো না; বুকের ভেতর বাঁজো, হয়ে পাঁজর ভাঁঙা বাঁজনা” তার বন্ধু মহলে রব উঠলো…দুজনকেই আজকাল একসাথে দেখা যায়, গভীর কোনো খাল খনন হচ্ছে নিশ্চয়…আমি ভাবলাম, খাল নয় নিদেনপক্ষে যদি একটা নালাও কাঁটতে পারি তাহলেই খুঁশি। কেমন করে নিজেকে সমর্পণ করি তার উপর এই ভাবনা আমাকে তাড়া করতে লাগলো প্রতি মুহূর্তে কিন্তু যখন সময় এলো তাকে বলার, সে বন্ধুদের প্রতিনিয়ত কটাক্ষ আর দূরগতা স্বপ্রণয়ীর ভাবনায় এতই ক্ষিপ্ত যে আমার উপর তার কোনো ভ্রুক্ষেপমাত্র হলো না, আমি স্পষ্টতঃই প্রত্যাক্ষাত হলাম আবার…কোনো পার্থক্য চোখে পড়লো না আমার জীবনের দুই দুটো প্রত্যাক্ষা্নের মধ্যে। তার চোখে চেয়ে শীতল অগ্নিদৃষ্টিতে বললাম,”তুমি তো কবি, আমার কথা যেন কোথাও লিখো না আর শোনো আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সময় হলে জানতে পাবে”। এত বড় শাস্তি আমি তাকে দিতে চাইনি কিন্তু স্বপ্ন-ভঙ্গের দুঃখ আমাকে বললো,”তুই কোথায় দাড়িয়ে আছিস? তাকিয়ে দেখ, তোর পায়ের তলায় কোনো মাটি নেই”… সত্যিই, যখন আত্মহত্যা করলাম, আমার পায়ের নিচে শুধুই শূন্যতা…

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.