আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমুদ্রে অয়েল ট্যাংকারে লাইটার অপারেশন এবং কিছু ঘটনা ১।

জীবন চলা মানে প্রতিক্ষন জীবনান্তের দিকে এগিয়ে চলা বাংলাদেশে দুই ধরনের তেল আমদানী করা হয় একটা ক্রুড অয়েল অন্যটি ফিনিসড অয়েল । ক্রুড অয়েল আনা হয় বিরাট বিরাট ট্যংকারে এগুলিকে বলাহয় সুপার ট্যংকার । এই ট্যাংকারগুলি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় আসতে পারেনা পানির গভীরতা কম বিধায় । তাই এগুলি কুতুবদিয়ার কাছে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে বাংলার জ্যোতি/ বাংলার সৌরভ নামক ১৩/১৪ হাজার টনি ট্যংকার জাহাজ দিয়ে খালি করা হয় । আবার মাঝারি ধরনের পঞ্চাশ ষাট হাজার টনি জাহাজ দিয়ে পেট্রল, অকটেন, ডিজেল,কেরোসিন, এবং জেটএ-১ আমদানী করা হয় ।

শেষোক্ত তেলটি বিমানের জ্বালানি এবং এটি আসলে কেরোসিন তেল । এই জাহাজ গুলি পতেঙ্গা এংকোরেজে এলেও পোর্টে ঢুকতে পারেনা কারন এগুলির ড্রাফট ( ওয়াটার লেভেল থেকে জাহাজের যে অংশ টুকু পানির নীচে তলিয়ে থাকে ) থাকে ১২/১৪ মিটার কিন্তু বঙ্গপোসাগরের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় সময় ভেদে স্প্রীং টাইডে বা নীপ টাইডে পানির গভীরতা থাকে ছয় থেকে নয় মিটার । তাই ঐ ট্যংকার গুলিকে লাইটার অপারেশনের মাধ্যমে কিছুটা খালী করা হলে ওগুলো ভেসে ওঠে তখন রিভার মাউথ দিয়ে কর্ণফূলী নদীতে আনা যায় এবং পোর্টে বার্থিং করা যায় । এসব কাজে আর্ন্তজাতিক কিছু নিয়ম কানুন এবং চুক্তি থাকে যা পালন করতে না পারলে জরিমানা দিতে হয় । যেমন 'নোটিশ অব রেডিনেস' ওরা এ্যংকর ড্রপ করেই এটা জারী করে কোন কোন সময় দুষ্ট ক্যাপ্টেন এ্যংকর ড্রপ পজিশনে পৌছাবার দুই ঘন্টা আগেই নোটিশ অব রেডিনেস জারী করে রাখে।

এতে কার্গো রিসিভারের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হয় । কারন এন,ও,আর জারী করার ছয় ঘন্টার মধ্যে লাইটার অপারেশন শুরু করতে হয়। আবার লাইটার অপারেশন শুরু করলে ৭২ ঘন্টা বা ঐ সময়ের কাছাকাছি হাই টাইডের মধ্যে অপারেশন শেষ করতে হবে (কারন সর্বোচ্চ জোয়ারে পানির গভীরতা বেশী থাকে ) অন্যথায় টাইড মিস করলে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয় । সাধারনত লাইটার অপারেশনে ৩/৪ টা কোষ্টাল ট্যংকার এনগেজ করাহয় । একটা লোড নিয়ে গিয়ে খালি করে আসতে আসতে বাকিগুলি লোড হত এবং সাইক্লিক অর্ডারে চলতে থাকতো ।

এই অপারেশন চলা কালীন প্রায়ই নাওয়া খাওয়া ঘুমের কোন হদিশ থাকেনা । বিদেশী জাহাজের খাবার মুখে রুচেনা বেশিরভাগ সময় চা কফি রুটি স্ন্যাক্স এর উপর দিয়েই পার করতে হয় । একবার একটা জাহাজে এরকম লাইটার অপারেশনে গিয়েছি জাহাজের ক্রুরা সব কোরিয়ান । কাজের ফাকে সেলুনে বসে টিভি দেখছি আর কফি পান করছি হঠাৎ ক্রু দের মধ্যে একটা উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম বিষয় টা কি বুঝতে পারছিলামনা আবার জিজ্ঞাসাও করতে পারছিনা অনাহুতো নাক গলানোটা উচিৎ নয় জেনে । ( আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য সমস্যা নেই কারন আমরা অপরিচিতের হাড়ীর খবরও জিজ্ঞাসা করতে পারি অনায়াসে ২ মিনিটের পরিচয়েই ।

বিদেশীদের বেলায় সেটা সম্ভব নয় । ) এর মধ্যে দেখলাম একজন একটা ক্যামেরা নিয়ে দৌড় দিলো বুঝলাম বিষয়টা মারাত্নক কোন ঘটনা নয়, কারন এইসব অয়েল ট্যাংকারে আসল ভয় হচ্ছে অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা । শেষ পর্যন্ত কৌতুহলের কাছে পরাজয় স্বীকার করে দেখতে বেরোলাম ঘটনা কি ? দেখলাম অনেক দূরে আকাশ থেকে একটা মেঘ পানিতে নেমে এসেছে এবং ওটাকে পিছনের দৃশ্যপট হিসেবে ব্যবহার করে ক্রুরা পটাপট ছবি তুলছে । আমি একটুক্ষন দেখে লিফটে করে ব্রীজে চলে এলাম বাইনোকুলার দিয়ে দেখার জন্য । চোখে বইনোকুলার লাগিয়ে এডজাষ্ট করার পর এক লাফে দৃশ্যটা নাকের ডগায় চলে এল ।

দেখলাম প্রচন্ড বেগে একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে পানি ঘুরছে ( ভোর্টেক্স ) এবং পানি আকাশে উঠে যাচ্ছে । পানির একটা স্তম্ভ তৈরী হয়েছে । ভয় লাগলো কারন আসলে এটা একটা সমুদ্রে ঘটা টর্নেডো । আমরা প্রায়ই খবরে দেখি যেখান দিয়ে টর্নেডো বয়ে যায় সেখানের সব কিছু নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যায় । অনেক জায়গায় টিউবওয়েলও উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে ।

আমেরিকায় এটাকে টুইষ্টার বলে এর কেন্দ্রে প্রায় আড়াইশো মাইল বেগে বাতাস ঘুরতে থাকে এবং যেদিক দিয়ে যায় সেদিকের ঘরবাড়ী গাড়ীও উড়িয়ে নিয়ে যায় । ( ডিসকভারি বা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের কল্যানে এগুলো আমরা প্রায়ই দেখে থাকি )  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।