আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্তিত্বের অন্তরালে: ৩ - ২

আমার কিন্তু স্বপ্ন দেখতে আজও ভাল লাগে। ওর চোখের টিউমারটা বেড়েই চলছে। মেরুন বোরখার ডান পাশটা ছিড়ে গেছে। খুব ভালো ভাবেই ছিড়েছে। ভালো করে খেয়াল করলে ভিতরের জামা দেখা যায় তাই সা্রাদিন ডান কাধে সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখে।

মেয়ে হিসেবে অরনী খুবই লক্ষী। কে জানে রুবাইয়াতের কোন পুণ্যের বিনিময়ে আল্লাহ তার মত মেয়ে রুবাইয়াতের ভাগ্যে নসিব করেছে। একদম খরচ করতে চায় না কারন জানে রুবাইয়াতের পকেটের অবস্থা। কতবার রুবাইয়ার ঠিক করেছে ওর চোখের টিউমারটার জন্য এলোপ্যাথি ডাক্তার দেখাবে কিন্তু অরনী রাজি হয়নি। কেন রাজি হয়নি তাও রুবাইয়াত জানে।

নানা ছুতো খুজে এড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা। তাই এখন মালিবাগে হোমিও ট্রিটম্যান্ট চলছে। এক সময় অরনি টিউশনি করত। নিজের খরচ নিজেই বেয়ার করত। কিন্তু রুবাইয়াতের পিড়াপিড়িতেই ছেড়েছে তা।

মেয়ে মানুষ এত পরিশ্রম করবে তা সে ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু টাকা ছাড়া যে আর চলছে না। এভাবে ছিড়া বোরখা পড়ে আর কতদিন। একটা সময় রুবাইয়াতের ভালোই ইনকাম ছিলো। তিনটা টিউশনি তার পাশাপাশি লেখা লেখি করে ও কিছু টাকা আয় করত সে।

তাই অরনী কে টিউশনি করতে মানা করেছিল সে। ভারি কাজ পুরুষ মানুষের জন্য। মেয়ে মানুষ কি এত পরিশ্রম করতে পারে? তখন রুবাইয়াত অরনীকে একটা বোরখা কিনে দিতে চেয়েছিলো-শর্ট বোরখা। রুবাইয়াতের অনেক পছন্দ। সাথে একটা জিন্স।

কিন্তু অরনীর কড়া নিষেধাজ্ঞা আগে চাকরী পান তারপরে বাজে খরচ। বেকার রুবাইয়ার তাই আনমনে বিরবির করতে থাকে, “ঠিক আছে তোমার এখন ছেড়া বোরখা পড়েই ঘুরা উচিত। আমি চাকরী পাব তারপর তোমার ছেড়া বোরখায় সুতো লাগবে। মেয়ে মানুষ বেশি বুঝলে এই এক সমস্যা। তখন বাজে খরচ না করে আমি দিল্লির কুতুব মিনার বানিয়ছি না ব্যাংকে আমার টাকার পাহাড় জমেছে?” শালার গাধা আমি একটা।

রুবাইয়াত নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে। পাশের বন্ধুদের ব্যাংকে হাজার হাজার টাকা আর ওর একটা ব্যাংক একাউন্ট ও নেই। কারন তার কাছে মনে হয় ব্যাংক পুজিবাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমার টাকা নিয়ে আমারদেশের মানষকে ঋণ দেয় আবার তাদের কাছ থেকে চড়া হারে সুদ নেয়। বাধ্য হয়েই উৎপাদনকারীর উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।

কারন তাকে চক্রব্রৃদ্ধি হারে বাড়া সুদসহ আসল জমা দিতে হয়। বেড়ে যায় উৎপাদিত পণ্যের দাম। পকেট ফুটো হয় আমার আর আমারদেশের মধ্যবিত্তের। আর উচচবিত্তের মাণুষেরা আস্তে আস্তে গড়ে তোলে পুঁজির পাহাড়। কারন ব্যংকে তাদের গচ্ছিত টাকা সুদে আসলে বাড়তে থাকে।

আমি ব্যাংকে টাকা রাখছি মানে আমিও এ শোষনের সাগরে জল ঢেলে দিচ্ছি। ধুর মহাসাগরে একবালতি জল ঢাললেই কি আর রেখে দিলেই বা কি? এ পুঁজিবাদি অর্থব্যবস্থায় রুবাইয়াতের মত একটা চুনুপুটির ব্যংক একাউন্ট থাকলেই বা কি আর না থাকলেই বা কি? যে নিজের বউয়ের ইজ্জত-সম্মান বাঁচাতে তার ছেড়া বোরখায় একটা সূতা জড়াতে পারে না তার মত কাপুরুষের মুখে এত বড় বড় কথা মানায় না। নিজেকে খুবি অথর্ব মনে হয় রুবাইয়াতের। এইতো সেদিন বিক্সায় ঝাকুনি খেয়ে চোখ থেকে চশমাটা খুলে চাকার নিচে পরে ভেঙে যায়। তখন থেকে অরনী আর চশমা পরে না।

অরনী বাড়ির বড় মেয়ে। বাবা চাকরী থেকে রিটারমেন্টে গিয়েছেন। ছোট আরো দুই বোনকে নিয়ে সংসা্র খুটিহীন। ওর বাবা মা চাইছেন ওকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে সংসারের একটা অবলম্বন ঠিক করতে। এমন সময় অরনী কাউকে না জানিয়ে সারাজীবনের জন্য বিশ্বাস করে হাত ধরেছে আমার মত দায়িত্ব জ্ঞানহীন এক লেখকের।

মাঝে মাঝে রুবাইয়াতের ইচ্ছে করে লেখা লেখি ছেড়ে দিয়ে সাইফুরস পড়ে একটা চাকরী নিয়ে নেয় ব্যংকে। কিন্তু নিজের স্বাধীন চিন্তা গুলোকে এভাবে বিকিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না তার। কিন্তু আর বেশিদিন বোধহয় পারবো না সে। এমন সময় রুবাইয়াতের মোবাইলটা কেপে উঠল। চিন্তার পাহাড় থেকে পড়ল সে।

অরনীর ম্যাসেজ, “কি খোদাই বাবু, চেহারাটা তো ভুলেই যাচ্ছি। একটু আসবেন? আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে”। এখানে অরনীর প্রতিভার জুড়ি নেই। সে কিছুদিন পরপর রুবাইয়াতের একটা নতুন নাম দেয়। আজ দিয়েছে খোদই বাবু।

রুবাইয়াতের মুখ খোদাই করা পাটার মত। অসংখ্য জলবসন্তের দাগ দুই গালে আর কপালে। তাই হয়ত নতুন নাম দিয়েছে খোদাই বাবু। এসব নিয়ে রুবাইয়াতের কোনো মাথাব্যাথা নেই। অরনীর ভালো লাগলেই হলো।

রুবাইয়াত ফোন করলো অরনীকে। - কি সোনাবউ হঠাৎ জরুরী তলব? - আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। - কেন? - জানি না। - ছবি দেখো। আমার অনেক ছবি আছে না তোমার কাছে? - আসেন না, এরকম করছেন কেন? - নাহ তোমার সাথে দুষ্টামি করছিলাম।

কোথায় আসব? - কেন আমাদের জায়গায়। - ইস জায়গাটা যেন কিনে নিয়েছো? - হুম। - আচ্ছা আসছি। কার্জন হলের কাঠ গোলাপ গাছের তলাটা রুবাইয়াতের অনেক প্রিয়। মূলত কার্জন হলটাই তার কাছে অনেক ভালো লাগে অরনীকে নিয়ে বসার জন্য।

নিজেকে যেন কেমন রাজা রাজা মনে হয়। বিকেলটা কাঠ গোলাপ গাছের নিচে কাটিয়ে সন্ধ্যা হলে গিয়ে বসে শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে। একদমই বাদশাহী বাদশাহী অনুভূতি। মাগরিবের আযান দিলে অরনী আস্তে আস্তে হাটতে থাকে পুকুর পাড়ের দিকে আর এই ফাকে রুবাইয়ার সাইন্স ক্যাফেটেরিয়ার উলটা দিকের ভাঙা চুড়া দুইতলা মসজিদটাতে মাগরিবের নামায পড়ে আসে। অরনী ও নামায পড়ে তবে যখন রুবাইয়াতের সাথে দেখা করতে আসে তখন কাযা পড়তে হয়।

কারন বাংলাদেশে এখনো পুরুষের জন্য যত বেশি মসজিদের ব্যবস্থা আছে মেয়েদের জন্য তার সিকিভাগ ও নাই। যদিও সরকার চাচ্ছে মুসলিম নারীরা বাইরে বের হয়ে স্বাবলম্বী হোক। অবশ্য এইসব নিয়ে কখনো কোনো মেয়েকে অন্দোলন তো দূরে থাক একটা কথা বলতেও দেখা যায় নি। মুসলিম মেয়েদের শত বছরের সংস্কার এটা যে মুসলমানের ঘরে মেয়ে হয়ে জন্ম নিলেই তাকে একটা পর্দা টানিয়ে তার পিছনে বন্দি করে ফেলতে হবে নিজেকে। স্বামীর মনোরঞ্জন করার জন্য একটা তুলতুলে বালিশ হতে হবে তাকে।

আর কিছু হবে অতি প্রগতি বাদী যারা অনেক প্রশ্নের জবার না পেয়ে নিজেকে পর্দার বাইরে বের করে এনে পুরুষের ভোগ্য পণ্যে পরিনত করবে। সমাজের লম্পট পুরুষেরা তাকে নানা আদর্শের কথা বলে দিনরাত ব্যবহার করে যখন তাকে ফেলে দেবে তখন সে হয় আত্মহত্যা করবে নয়ত নারী অধিকারবাদী অন্দোলন করে পুরুষের বিরোদ্ধে ঘ্ৃণা ছড়িয়ে নিজের মনের ঝাল মেটাবে। সমাজে নারী ও পুরুষের ভালোবাসা পূর্ণ সহ অবস্থানকে নষ্ট করে তাদের কে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেবে। তাই মুসলিমদের সহজ সমাধান সমভ্রান্ত মুসলিম মেয়ের বাইরে যাওয়ার কি দরকার? কিন্তু যে মেয়ের স্বামী,বাবা বা উপার্জনক্ষম ভাই নাই তার কি হবে তা তারা জানে না। তারা বাজার করতে গেলে নামায কোথায় পড়বে? ফলে নামায নিয়ে তাদের ও মাথা ব্যাথা নেই কারন পড়ার জায়গা নেই আর আলেমদের ও তাদের নিয়ে মাথাব্যাথা নেই কারন কয়জন সত্যিকার মুসলিম মেয়েই আর বাজারে যায়? আমাদের দেশের আবার এটা এক কালচার গাড়ি না ভাঙলে কোনো কিছু সরকারের চোখে পড়ে না।

আর মসজিদের দাবিতে কে গাড়ি ভাঙবে? নামায পড়লে তো আর টাকা পাওয়া যায় না। এটাই সবচেয়ে চিন্তার বিষয় মাণুষের আবেগ-অনুভূতি ক্রিষ্টি কালচার সব কিছু টাকা দিয়ে নির্ধারিত হচ্ছে। এক সময় এই উপমহাদেশের সবচেয়ে দামি ভাষা ছিল আরবী-ফারসী। কারন আরবী-ফারসী পড়লে মোঘল শাষকদের দরবারে কাজ পাওয়া যেত। পাশাপাশি উর্দুর প্রচলন ও ছিল।

কিন্তু এখন আমাদের দেশে সবচেয়ে বেকার ভাষা হচ্ছে এ গুলো। উর্দু, ফারসি আর আরবী ভাষা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পছন্দের তালিকায় সবার নিচে। সবাই সাইফুর রহমান স্যারের কাছে ছুটছে আই ই এল টিস বা টুফেল এ ভালো স্কোর করার জন্য। হায়রে বাঙালি নিজের ভাষাকে কখনো প্রতিষ্ঠিত করতে শিখলি না। মোঘল আমলে শিখলি আরবী-ফারসি, ইংরেজ আমলে ইংরেজি আর পাকিস্তান আমলে উর্দু।

এখনকার হাইব্রিড জেনারেশন আবার ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিও শিখে। কথা বলে হিন্দিতে আবার ফেসবুক স্ট্যাটাসও দেয়। পুরো ফেব্রুয়ারী মাস জুড়ে শহীদ মিনার গুলো ধোয়া মোছা চলে, একুশে বইমেলা হয়, সবাই বাংলা বই কিনে ভাব নিয়ে ফেবু স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য বা পারিবারিক লাইব্রেরীতে সাজিয়ে রাখার জন্য। কারন এ ডিজুস জেনারেশনের সময় কই আমাদের মত অখ্যাত লেখকদের বই পড়ার। তারা তো সবাই ব্যাস্ত চুলের স্টাইল চেঞ্জ আর হার্ডডিক্সে নতুন পর্ণ ছবি কালেশনে।

আমারা আমাদের নিজেদের জাতি সত্বার সাথে দিনরাত বাইমানি করি তবুও নাকি আমরা দেশ প্রেমিক। - এই মুর্খ পন্ডিত কি ভাবছেন এমন করে? - ওফ তুমি! আচমকা গা কেঁপে উঠল রুবাইয়াতের। - কেন ভূত দেখছেন মনে হচ্ছে? - না বাঁচালে। বাজে একটা জিনিস চিন্তা করে খুবি মেজাজ গরম হচ্ছিল। - কি ওবামা কেন ইরাকে বোমা হামলা করলো? নাকি প্রধান মন্ত্রী কেন সিগারেটের উপর টেক্স বাড়িয়ে বীয়ার বিক্রি ওপেন করে দিলো? সারাদিন তো আপনার মাথায় এই সব হাবিজাবি চিন্ত ঘুরে।

- না, এসব কিছু না তুমি বুঝবে না। - হুম আমি মেয়ে মানুষ আমার এতো বুঝে কাজ নেই। এই নেন খান। - কি? - নুডুলস। - ওফ দাও দাও।

খুব ক্ষিধে লেগেছে। - নেন শুরু করেন। - প্রথমে তুমি খাবে। - না। - এই নাও।

- ছিঃ এতো মানুষের সামনে আমাকে গালে তোলে দিচ্ছেন মাণুষ দেখলে কি বলবে? - তাতে আমার কি? আমার সোনা বউ কে আমি যা ইচ্ছে তাই করবো। - কয়েক সেকেন্ডের জন্য চুপ হয়ে যায় অরনী। তারপর বলে না এখন না আগে বাসা নেনে তারপর আমি আর হাতে খাব না। আপনি আমাকে প্রতি রাতে গালে তোলে খায়িয়ে দেবেন বলেন? - ইস শখ কত। তুমি কি আমার মেয়ে নাকি? - না তো কি? আপনি চাকরী পেলে প্রতিদিন আমার জন্য একটা বেলুন কিনে আনবেন বলেন? - তুমি বেলুন দিয়ে কি করবে? - আমার ভালো লাগে।

সত্যিকার অর্থে ছোট কাল থেকেই খুব শখ ছিলো বেলুনের। ইলারা সব সময় উড়াতো গ্যাস ভর্তি বেলুন। ছেড়ে দিলেই আকাশে উড়ে যেত। প্রথম প্রথম অনেক বায়না ধরতাম কিন্তু আব্বা কখনো কিনে দিতো না। তারপর আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম আব্বা কেন কিনে দেয় না।

তারপর আর আব্বার কাছে কিছু চেয়েছি বলে মনে নেই। এমনকি ইদের জামাটা ও না। মেয়েরা যা বাবার কাছে পায় না তা তার বরের কাছে চায় আর যদি বরের কাছে ও তা না পায় তো আস্তে আস্তে তাদের চাওয়ার মনটা মরে যায়। বলেন আপনি আমাকে বেলুন কিনে দেবেন? - আচ্ছা, আর কি কি করতে হবে? - সুন্দর করে মাথা আচড়ে দিতে হবে; চুল বেধে দিতে হবে; কুচি দিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিতে হবে; গালে তোলে খায়িয়ে দিতে হবে; অফিসে যাওয়ার সময় আর অফিস থেকে ফিরে আমার চোখে চুমু খেতে হবে। - আর কি কি করতে হবে।

- আর আপনার বদ মেজাজ কমাতে হবে; ঝগড়া করে যা তা বলা যাবে না। - আর - আর কিছু করতে হবে না রাক্ষসের ছা কোথাকার। পুরো এক বাটি নুডুলস একবারে শেষ করে ফেলেছে আর আমাকে দিয়েছে মাত্র এক চামচ। - অহ আমার মনে ছিলো না। - হুম খাবার পেলে আপনার তো আর এই দুনিয়ার কথা কিছুই মনে থাকে না।

আমি সব সময় দেখেছি এটা। কিছু পেলেই আপনি চোখ বন্ধ করে গিলতে থাকেন একবার জিজ্ঞেস ও করেন না আমি খেয়েছি কিনা। - জিজ্ঞেস করার কি আছে? মেয়ে মাণুষ রান্নাঘরের প্রাণী। যখন ইচ্ছে হবে রাধবে আর যখন ইচ্ছে হবে খাবে। - আমার মাঝে মাঝে আপনার গলা চেপে ধরতে ইচ্ছে করে।

- ধরো না। তোমার নরম হাতে ধরে আর কিবা করবে? - হুম আমি আগেই জানতাম পুরুষ মাণুষ হারামির জাত। বিয়েটা একবার করতে পারলেই হয়। - হুম, বউ তো পায়ের স্যান্ডেল লা্গলে লাগলো না লাগলে নাই। - আপনি একটা হারামির হারামি।

- আচ্ছা রাগলে তোমার নাক লালা হয় কিভাবে? আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রাকটিস করেছি কিন্তু আমার হয় না। - হবে তবে নাক না গাল। যদি আমি এখন এক ঘা বসিয়ে দেই। - মারবে আমাকে? তুমি আমাকে মারতে পারবে? - এরকম করুণ ভাবে তাকাবেন না আমার খারাপ লাগে। - তাহলে তুমি বললে কেনো আমাকে থাপ্পর মারবে? - না আমি তো রাগ করে বলে ফেলেছি।

- তাই বলে যা ইচ্ছে তাই বলবে? - ছিঃ আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি কখনো আপনার গায়ে হাত তোলতে পারি? আর আপনিও না হয়েছেন একটা বদের হাড্ডি। কথায় কথায় খালি আমাকে রাগান। - রাগলে যে তোমার নাক লালা হয়ে যায়। তখন তুমি প্ৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী।

- তাই? সত্যি বলছেন? - হুম, এক বিন্দুও মিথ্যা নেই এতে। - আপনার আমাকে কেমন ভালোলাগে? - অনেক। - উহ অনেক না ছাই। তাহলে আমি যে আজ কতো কষ্ট করে আই লাইনার আর লিপ লাইনার দিয়ে আসলাম আপনি তো একবার চেয়ে দেখলেনো না। - তুমি তো এগুলো ছাড়াই সুন্দর।

তো এগুলো দাও কেন? - থাক আর নিজের দোষ ঢাকতে হবে না। আমি জানি আপনি এ জগৎ সংসার উদাসীন লোক। তাই আপনার কাছে এইসব আশাও করি না। - তাইলে সেজে আসছো কেনো? - ওমা আমার মানুষের সামনে আমি সেজে আসব না তো আসব কার কাছে? - হুম, কিন্তু সেজে এসে লাভ কি? আমার কাছে তো সবই সমান। - কিন্তু আমার কাছে তো না।

আমি তো আপনাকে দেবো আমার সর্বোচচ সৌন্দর্যটা। আমার সকল ঐশ্বর্য যখন আপনার হাতে তোলে দিতে পারব তখনিতো পূর্ণতা আসবে আমার নারী জীবনে। - তুমি এতো সংসারী কেন, মনি? - সব মেয়েই সংসারি, সংসার করতে না জানলে আবার কিসের মেয়ে মানুষ? - তার মানে কি মেয়েরা শুধু সংসা্র করার জন্যই জন্মায়? - কেন, পুরুষের কেন জন্মায়? - পুরুষের কত কাজ। - কত কাজ না ছাই। যত কাজই করেন রাতে তো আপনি আমারই তাই না? - হুম তো কি হয়েছে? - কিছু হয়নি মূর্খ পন্ডিত।

সেটাই তো সংসার। আপনি সা্রাদিন, সকল ব্যস্ততার মাঝে আমার জন্য ভালোবাসা বহন করবেন আর দিনান্তে আমি স্পর্শ করে সে ভালোবাসায় পূর্ণতা দেব। আপনারা পুরুষেরা তো মূলত বাহক আর আমরা মেয়েরা ধারক। আপনি পরম ভালোবাসায় আমার মধ্যে যে বীজ বুনে দিবেন আমি সেটা ধারন করব, প্রশব করব আর লালান পালন করব। - বাহ খুব সুন্দর করে বললে তো সম্পর্কটা।

- আচ্ছা সম্পর্ক জিনিসটা মূলত কি জানেন? আমার কয়েকদিন ধরে খুব আবাক লাগছে কিছুদিন আগে ও আমি যাকে সহ্য করতে পারতাম না এখন সেই আমার জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান মানুষ। - সম্পর্কটা আসলে কিছু না একটা ফাঁদ। - ফাঁদ মানে? - ফাঁদ মানে ফাঁদ। জীবনের কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে তুমি যেখানে জড়িয়ে পড়বে আর বের হতে পারবে না। একটার পর একটা দায়িত্ব বাড়তে থাকবে আর কমতে থাকবে তোমার জীবন খাঁচার পরিধি।

মাঝে মাঝে তোমার দম বন্ধ হয়ে আসবে মনে হবে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে যাই যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে। কিন্তু তোমার সম্পর্ক গুলোই আটকে রাখবে তোমাকে। কিন্তু এ সম্পর্কের বাধন আর কতোদিন? মানব আত্মা এক স্বাধীন অবিনশ্বর সত্বা। এ সম্পর্কের পার্থিব খাঁচায় কয়দিন বন্দি থাকবে বলো? - ধুর বড্ড কঠিন কথা বলছেন আজ। - হুম, তুমিই তো প্রসঙ্গ তোললে।

- আই আপনার নখ এতো বড় হয়েছে কেন? উফ একটা ছেদারের হাড্ডি। নখটা ও কেটে নিতে পারেন না? - মনে থাকে না যে। - তা থাকবে কেন? মনে মধ্যে তো সারাদিন বৈরাগী ডুগডুগি বাজায়। - সেটা আবার কেমনে হয়? - এতো কিছু বুঝতে হবে না হাত দেন এদিকে। এতো বড় নখ নিয়ে খাওয়া দাওয়া করেন ডাইরিয়া করে না? - তুমি আছো না ডাইরিয়া হলেই বা কি? - আমি বুঝি ডাক্তার? - হুম মনের।

মন ভালো থাকলে শরীরের সব কলকব্জা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। - দেখি চোখে ময়লা, দাতে পাথর জমেছে; জিন্স কাচেন না তো মনে হয় দুই মাস; নাকের লোম বের হয়ে আছে; আফ্রিকার জঙ্গলের বন মাণুষ একটা। - বন মানুষ না মন মানুষ। তোমার মনের অভয় অরণ্যে এ মানবের বাস। - হয়েছে এইসব চাপাবাজি করতে হবে না কবে এইসব পরিষ্কার করবেন? - কাল - আপনার এ কাল কখনো আসবে না।

- তা তো জানোই তাইলে বলো কেন? - বলি কারন চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? শুন্তে শুনতে যদি গাধা মানুষ হয়। - লাভ নাই প্রেমে পরলে মানুষ গাধা হয় আর যে এমনিতেই গাধা প্রেমে পরলে সে কি হবে তা ভেবে দেখেছো? - আমাদের তো প্রেম শেষ। - শেষ মানে? - শেষ মানে শেষ। বিয়ে করে ফেললাম না? - তো? - বিয়ে মানেই তো প্রেমের সফল সমাপ্তি। - ও আচ্ছা তাই? - হুম।

রুবাইয়াত তার বাম হাতটা রাখলো অরনীর কাথে আর ডান হাতে টেনে নিলো কোলের উপর রাখা অরনীর বাম হাতটা। অরনী খুব সুন্দর মাহেদি পরে। হলের মেয়েরা ওর পিছে পিছে ঘুরে মেহেদি পরার জন্য। - কি মেহেদি পরেছো সোনা? - হুম, ভালোলাগছে না? অরনী নিচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। এটা ওর অভ্যাস।

রুবাইয়ার তার কাধে হাত রাখলেই সে বাধ্য বিড়ালের মত মাথা নিচু করে নিজেকে সমর্পন করে রুবাইয়াতের কাছে। আরো বেশি আদর পাওয়ার জন্য মাথা পেতে দেয় তার বুকে। - হুম খুব ভালো লাগছে। তুমি এতো সুন্দর করে মেহেদি পরো কি করে? - সত্যি আপনার ভালো লাগে? - অনেক, হাত ধরলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করে না। - ধরে থাকেন ছাড়তে বলেছে কে? - কেমন যেন একটু লজ্জা লজ্জা লাগে না? - হুম আমার ও লাগে।

ছাড়েন। - না একটু ধরে থাকি। - থাকেন, আপনি আমার হাত ধরে থাক্লে আমি আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব ভুলে যাই। মনে হয় যেন আমার হাত ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেছে। সময় থেমে গেছে।

সবকিছু স্থির আর নিশ্চল হয়ে গেছে আর এ স্থিতির প্রৃথিবীতে একমাত্র গতিময় সত্বা যেন আপনি আর আমি। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।