আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প

কিছু না। বিকেল বেলায় শামসুন্নার হলের ঝুপড়ি ও তার আশেপাশের হতাশার মোড়, ভিসি হিল, রিসার্চ সেন্টার জায়গাগুলো প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বরাদ্দ থাকে । কিছু বিশেষ প্রজাতির আঁতেলও বসে আড্ডা মারে এসব জায়গায় । অনেকটা অনুরোধে রাইসমিল গেলার অবস্থা নিয়ে হাসান গিয়ে বসলো ঝুপড়ির এক কোনে । সুমি দেখা করবে বলো গোঁ ধরেছে ।

বাধ্য প্রেমিক হাসান বেশ আয়েশ করেই সিগারেট ধরালো । এখানে একা একা বসে সিগারেট টানলে পাবলিক ভিন্ন চিন্তা করতে পারে । এই ঝুপড়িতে কেউ সাধারনত একা আসে না । মিনিট দশেক অপেক্ষার পর হাসান আবার সিগারেট ধরালো । "রুম থেকে নেমে আসতে এতক্ষন লাগে ।

ধুর, বিরক্তিকর । " এর ফাঁকেই সুমি এলো । আজ সুমিকে অন্যরকম লাগছে । শাড়ি পড়েছে । ঠোটে গাঢ় করে লিপস্টিক মেখেছে ।

কপালে লাল টিপ । আজ কি তবে বিশেষ কোন দিন ? জন্মদিন ! না, সেটাতো ১২ই সেপ্টেম্বর । তবে আজ কি ? সুমি হাসানকে এভাবে সিগারেট হাতে দেখবে বলে আশা করেনি । ছেলেটার চেহারায় একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে । তার হাতে সিগারেট একদমই মানায় না ।

তার ওপর সুমি এত যত্ন নিয়ে সাজগোজ করলো আর হাসান অবাক নয়নে তাকে দ্বিতীয়বার দেখলো না । সুমি কিছুটা আশাহত । তবু আজ সে এমন কিছু বলবে না যাতে ঝগড়া হতে পারে । খানিক চুপ থেকে স্মিত হেসে সুমি বললো, এই তোমার প্রিয় রং কি ? - কোন বিশেষ রং নাই । এটা তো সময় সময় বদলায় ।

- মানে কি ? একটা বিশেষ রং থাকে না ? যেমন ধরো, আকাশ যখন নীল হয়, তখন দেখতে কতো না ভালো লাগে । হাসান খেয়াল করলো সুমি আজ নীল রংয়ের শাড়ি পড়েছে । সুন্দরি মেয়েরা যখন কাওকে উদ্দেশ্য করে সাজগোজ করে তখন তাদের প্রসংশা করা সেই বিশেষ ব্যক্তিদের অবশ্যই কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে । হাসান খুব ভালো প্রশংসা করতে পারে না । হাসান বললো, এই ধরো তোমাকে গোলাপ দেব ভাবতেছি।

তখন প্রিয় রং লাল । আর যখন রাস্তায় সিগনালে পড়ি তখন কি লাল পছন্দ হবে ? - ফাজলামো কর ? মাথা নেড়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দেয় হাসান । এরপর দুজনেরই হাসি । সুমি বেশ আহ্লাদ করেই কথা বলে । প্রেমে পড়লে মেয়েরা একটু বেশীই আহ্লাদী হয়ে যায় ।

এই কথা সেই কথা, কথা বলেই চলছে সুমি । হাসানের অস্বস্তি বেড়েই চলছে । আজ কি তবে কোন বিশেষ দিন ? বেচারী সুমি ! কত শখ করে শাড়ি পড়েছে, সেজেছে এত যত্ন নিয়ে । সুমির কথা ভেবে বেশ কষ্ট হচ্ছে হাসানের । ধুর, কিছুই মনে থাকেনা ।

সুমি হয়তো ভেবেছে লাল গোলাপ কিংবা কোন গিফট নিয়ে আসবো ? আচ্ছা, রিকশায় ঘুরলে কেমন হয় । "সুমি, চল আজ রিকশায়ঘুরি" । বলার সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল সুমি । এখন যেমন প্রেমিক প্রেমিকারা পার্ক কিংবা ফুচকা চটপটির দোকানে ভিড় করেনা, তেমনি তারা এখন রিকশায়ও চড়েনা । সুমির গানের গলা ভালো ।

রিকশায় বসে তাকে গান করতে বললে কেমন হয় ? আজ তার মুড ভালো । বললে হয়তো রাজী হয়ে যাবে । "সুমি, একটা গান শোনাবে ?" হাসানের অস্বস্তির ব্যাপারটা সুমিও খেয়াল করেছে । খানিক বোকা বোকা লাগছে হাসানকে । ছেলেটার মধ্যে তেমন কোন হিরোইজম নাই ।

চেহারাটাও বোকা বোকা । এখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই বেশ মায়া হচ্ছে সুমির । মনে হচ্ছে, ইস এমন করে যদি দুজন পাশাপাশি বসে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতাম ! সুমি গান ধরল- "কেন মেঘ আসে হৃদয় আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না... মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাইনা ?" রিকশায় চড়ে দোলা স্মরনী হয়ে ল ফ্যাকাল্টির সামনে দিয়ে ঘুরে আবার হলের সামনে ফিরলো তারা । ঝুপড়ির কোনে একটা বেঞ্চিতে বসে সুমি বললো, গাধু ভুলে গেছ আজকের দিনের কথা ? সাতপাঁচ না ভেবে হাসান আলতো করে হাত রাখলো সুমির হাতে । অনেকটা শান্ত স্বরে বললো, দ্যাখো আমি অত কিছু জানিনা ।

অত দিনক্ষন, অত আয়োজন । তুমি শুধু পাশে থেকো । তবে প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত আমার কাছে বিশেষ দিন, বিশেষ মুহুর্ত হয়ে থাকবে । হাসান তাকালো সুমির দিকে । সুমির চোখ ছলছল করছে ।

দুফোটা জল নিমেষেই গড়িয়ে পড়লো । শেষ বিকেলে কারো চোখে জল দেখতে ভালো লাগেনা । তবে এ জল অন্য কিছু । ভালোবাসার পবিত্র আবেগ থেকে নিঃসৃত অশ্রুকনা পৃথিবীর পবিত্রতম জল। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.