আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নার্সিসাসের আয়না!

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে নিজ ভুবন-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠার খোরাক জোগাচ্ছে কি না, তা নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় বিশেষজ্ঞদের মাঝে বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল। আর এ সন্দেহের যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলেও সম্মতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। কানাডার গবেষকেদের দাবি, একটা মানুষ কতখানি আত্মকেন্দ্রিক, সেটা তার ফেসবুকের বন্ধুসংখ্যা এবং এর অন্যান্য ব্যবহার দেখে অনুমান করা সম্ভব।
কানাডার গবেষকেরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন যে, অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন, তাঁদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা জন্ম নেয় ও মনের জোর কমে যায়। গবেষকেরা তাই ফেসবুক ব্যবহারকে আয়নায় নিজের মুখচ্ছবি দেখার সঙ্গে তুলনা করেছেন।


সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে যাঁরা অতিরিক্ত সময় কাটান তাঁরা বাস্তবের বন্ধুদের সহমর্মিতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলার আদর্শ প্ল্যাটফর্ম। এতে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে বাস্তবের বন্ধুত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কমে যায়। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই ওয়েবসাইটের বন্ধুদের কাছে নিজেকে শুধু জাহির করার চেষ্টা করেন। সম্প্রতি ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।


কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোরায়া মেহদিজাদেহ ২৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে তাঁদের ফেসবুক ব্যবহারের আচরণের ওপর গবেষণা করেন। এ গবেষণার অধীনে স্বেচ্ছাসেবীদের নানা পরীক্ষা দিতে হয়। গবেষক সোরায়া দেখেছেন যে, পুরুষের মধ্যে যারা বেশি আত্মকেন্দ্রিক তাঁরা ফেসবুকে লিখিত পোস্ট দেন আর মেয়েরা নির্বাচিত ছবি পোস্ট করেন বেশি। তিনি গবেষণায় আরও দেখেছেন যে, যারা মানসিকভাবে দুর্বল, স্বাভাবিকের চেয়ে তাঁরা বেশি সময় ফেসবুক ব্যবহার করেন।
‘সাইবার-সাইকোলজি, বিহেভিয়র অ্যান্ড সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং’ নামের একটি সাময়িকীতে গবেষণা সংক্রান্ত এ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।


গবেষক সোরায়া বলেন, তাঁর এ গবেষণার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না। তাঁরা এ বিষয়ে ভিন্নমত জানাবেন। তবে এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে ২০১২ সালে ওয়েস্টার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছিলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে গ্রিক দেবতা নার্সিসাস আবার নতুনভাবে ফিরে আসছেন। গ্রিক পুরাণের বহুল আলোচিত অনেক চরিত্রের মধ্যে অন্যতম নাম নার্সিসাস।

তিনি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সৌন্দর্যের জন্য। কিন্তু ওই সৌন্দর্য তাঁর জীবনহানিরও কারণ হয়েছিল। পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিজের চোখ অন্যদিকে ফেরানোর সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই অবস্থাতেই মারা যান তিনি। আর তার থেকে নার্সিসাস ফুলের জন্ম।
এই নার্সিসাস থেকেই নার্সিসিজমের ধারণা এসেছে, যা মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মবাদ, আত্মগর্ব, আত্মশ্লাঘার বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে।

নার্সিসিজম বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সামাজিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপিত হয়েছে। কখনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা হিসেবে, কখনো বা মানসিক অসুস্থতা হিসেবে একে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছিলেন যে, ফেসবুকে ব্যাপকভাবে বাড়ছে নার্সিসিস্ট লক্ষণাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ সমস্যা প্রকটতর হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে এ গবেষণা বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নার্সিসাস-প্রভাবযুক্ত মানুষ বলে যাঁদের বিবেচনা করা হয়, ফেসবুকে তাঁদের বন্ধুসংখ্যা বেশি।

তাঁরা প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধুদের ট্যাগ করেন এবং তাঁরা নিয়মিতভাবে তাঁদের স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেন। এ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ধরনের মানুষ তাঁদের সম্পর্কে কোনো সমালোচনামূলক মন্তব্যের জবাব দেন খুবই আক্রমণাত্মকভাবে। তাঁরা ঘন ঘন নিজেদের প্রোফাইলের ছবিটি পরিবর্তন করেন আর গবেষকদের ধারণা, এসব আচরণগত বিষয়ের মধ্যে এমন কিছু খারাপ দিক আছে, যার ফলে ্এরা নিজেদের নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকেন এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। নিজের ভুবন-কেন্দ্রিক এসব কর্মকাণ্ড ক্রমেই তাঁদেরকে নার্সিসিস্ট ব্যক্তিত্বের দিকে নিয়ে যায়।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের সেই গবেষণার ফল আবারও নতুন করে পেলেন কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।


গবেষকেরা জানিয়েছেন, বর্তমানের এই তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুযোগে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো মানুষকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের অপার সুযোগ করে দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক তত্পরতার ক্ষেত্রেও বিশাল ভূমিকা রাখছে এই সাইটগুলো। তবে এগুলোর সার্থক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মনের ওপর এর প্রভাবের মতো অন্ধকার দিকগুলো নিয়েও আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, আদর্শিক জায়গা থেকে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহার করা উচিত, এ সাইটগুলো কখনও আত্মতৃপ্তির আয়না হিসেবে গড়ে তোলা ঠিক নয়। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।