আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয়ের ৪০ বছর ও তরুণের ভাবনা

"আমার কোন অঞ্চল নেই,নেই কোন সীমারেখা,যেখানে মানুষ আছে সেখানে আছে আমার আত্নীয়তা" মহান বিজয়ের চার দশক আমাদের দোর গোড়ায়। একাত্তরের আঠার বছরের যে উদয়মান যুবক নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। আজ আর বয়স আঠান্ন। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে তাদের বয়স অতিক্রম করেছে। এই অতিক্রমের ক্রমান্বয়ে বাঙ্গালীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

আর যারা বেঁচে আছে তারা নিদারুন অবহেলায়, অযত্নে আর্থিক দৈন্যতায় দিনাতিপাত করছে। অন্যদিকে সতীর্থদের করুণ পরিণতি দেখে মুক্তিযোদ্ধা তাদের পরিচয় গোপন করে। নীরবে নিভৃত্যে ভাবে এ জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম? বীর মুক্তিযোদ্ধা বখাটের হাতে নির্মম ভাবে খুন হয়,ভিক্ষা করে বেড়ায় অলিতে গলিতে, কখনো রাজাকারের কাছে। রাজাকারের গাড়িতে পবিত্র লাল সবুজের পতাকা ঘৃণায় লজ্জায় মৃয়মান। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র দাবীদার ক্ষমতাসীন দল যুদ্ধপরাধীদের বিচারের নামে কালক্ষেপন করে, পারলে আগামীবার ক্ষমতায় আসার অন্যতম ইশতেহার নিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার চক্রান্ত।

২০০৮ এর নির্বাচনে যে তরুণের একমাত্র শ্লোগান ছিল আমাদের জম্ম একাত্তরে হয়নি তাই মুক্তির সংগ্রামে অংশ নিতে পারিনি। তাই এই নির্বাচন আমাদের জন্য একাত্তরের মুক্তির সংগ্রামের মত চ্যালেঞ্জ কিন্তু আজ সেই তরুণদের ¯^cœ নিয়ে চিনিমিনি খেলা হচ্ছে । বর্তমানে তরুণদের দাবী দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিতে কলঙ্ক মুক্ত করা। আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বের ডিসেম্বর কেমন ছিল? কি আশা নিয়ে সেদিনের যুবক নিজের জীবন উৎসর্গ করে ¯স্বধীকার আন্দোলন করে নিজের মাতৃভূমিকে হানাদার মুক্ত করেছিল। যারা সেদিনের যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছিল তাদের আত্না হয়ত শান্তি পাবেনা আজকের বাংলাদেশের অবস্থা দেখে।

এখন অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের বলতে শুনি আজকের এ বাংলাদেশের জন্য তারা নিজের জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধে যায়নি। সেই ডিসেম্বরে বাংলার মানুষের চোখে ছিল স্বপ্ন, এই ডিসেম্বরে দুঃস্বপ্ন । স্বপ্ন ছিল টিক্কা-ফরমান -নিয়াজিদের জালেমি দুঃশাসন দূর হবে। পাকিস্তানি সেনারা মাথা নিচু করে ফিরে যাবে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের এ দেশীয় দালাল সহযোগিদের ঠাই হবে কারাগারে।

তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া তবে তীক্ষ্ন ছুরি। যারা খুন ধর্ষণ প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত তাদের হবে সর্বোচ্চ শাস্তি। প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। দেশে আর কোন ২২ পরিবারকে মাথা তুলতে দেওয়া হবে না। ইসলামকে নিয়ে আর ব্যবসা বাণিজ্য হবেনা।

ধর্ম থাকবে ধর্মের মর্যাদা নিয়ে ধর্মের জায়গায় পাবেনা ধর্মান্ধতা প্রশ্রয়। বাংলাদেশ একটি নামমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। হবে আধুনিক ধর্ম নিরেপক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। সেদিন যুব সমাজের মধ্যে বিলাসিতার লেশমাত্র ছিল না। অধিকাংশেরই জামা ছিল একটি ভাগ্যবান অনেকের ছিল দুটি।

প্যান্টের প্রয়োজন বোধ করেনি অনেকেই পাজামাতেই চলে যেত। আজকের মতো ভোগবাদ ও বিলাসিতা সেই ডিসেম্বরে থাকলে পাকিস্তানি দখলদারদের পরাভূত করা সম্ভব হতো না। আজকের তরুণরা হতাশায় নিমজ্জিত। সরকার কথিত অন লাইন ব্যবসার নামে ইউনিপে-টু-ইউ, স্পীক এশিয়া সহ তরুণদের সাথে প্রতারণা করে তরুনদের মেধা মননকে ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে কোটি তরুণের অংশ গ্রহনে শেয়ার বাজার যখন চাঙ্গাভাবে চলছে তখনি ক্ষমতাসীন দলের রাঘবোয়াল সেই খাতকে ধ্বংস করে লুটেপুটে নিয়েছে।

ঘরে ঘরে চাকরি দেবার কথা বলে বেমালুম ভুলে গেছে বর্তমান সরকার তার অঙ্গীকার। গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যত্ন করে তরুণদের ডেকেছিল সেই ডাক বিফলে যায়নি। ভোটারদের বেশির ভাগই ছিল তরুন এবং তাদের ভোটেই মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছিল। কিন্তু সেই বিজয়ের সুফল তারা পায়নি। সন্ত্রাস দখলদারি শিক্ষাঙ্গনে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, তরুণী নিগ্রহসহ নানাবিধ সমস্যা তাদের অনেকেই হতাশ।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা তাদের ভরসা দিতে পারছেনা। সরকার শেয়ার কেলেঙ্খকারীর হোতাদের বিচার না করে তাদের এসইসিতে পদ দিয়ে পুরুস্কৃত করেছে। অন্যদিকে জনগণের টাকায় প্রণোদনা সহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়ে সরকার দ্বিতীয়বারের মত তরুণদের প্রতারণা করেছে । ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণেরাই ছিলেন মোট ভোটারদের প্রায় তিন ভাগের একভাগ। মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের একভাগ ও ১৫-৩৪ বছর বয়সী তরুণ।

ভোটারের অনুপাত আর জনসংখ্যার অনুপাতে তরুণদের এই প্রাধান্যকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এই তরুণরাই একদিন প্রশিক্ষিত সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা যদি জানতো তাদের সেই ত্যাগে আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে তথা ২২ পরিবার হতে ২২ লক্ষ পুঁজিবাদী পরিবার প্রতিষ্ঠা হবে তারা এ ভুলটি করতো না। আজ মহান বিজয়ের ডিসেম্বর মাসে বখাটদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক জিন্নাত আলী। মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম ও তার একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার দাবী নিয়ে বিজয়ের মাসে পথে পথে ঘুরেছেন কবি রুবি রহমান।

আর কতো মুক্তিযোদ্ধা নিগ্রহ হলে তাদের অর্জন সার্থক হবে। আধুনিক ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে তরুণদের উঠে দাড়ানোর ইতিহাস অনেক। ৫২ হতে ৭১ পর্যন্ত আমাদের ইতিহাসের প্রধান চরিত্র এই তরুণরাই। সমপ্রতি আরব জাগরণ থেকে শুরু করে ওয়াল ষ্ট্রিট আন্দোলন মূলত তাদের সৃষ্টি। এই জাগরিত তরুণদের অবক্ষা করে কখনো কোন সুফল আসবেনা।

এই তরুণদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। যে দেশে তরুণরা হতাশগ্রস্থ সেদেশে কখনো সুখী হতে পারেনা। বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা টিপাঁইমুখ বাধ। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সফল চুক্তি না হলে বাংলাদেশ মরুভুমি সহ ভয়াবহ বির্পজয়ে পড়তে পারে, কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদল উল্লেখ্যযোগ্য আলোচনায় না বসে কাঁদা ছুড়াছুড়িতে ব্যস্ত। আমাদের ধারণা ভারতের বিরাজভাজন হলে ক্ষমতার যাওয়ার পথ বাধাগ্রস্থ হতে পারে, তাই তারা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেনা।

যেখানে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ায় পথে যেখানে বিরোধীদল সহ কথিত বুদ্ধিজীবি ও সুশিল সমাজের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ। যে মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে তাদের সে বাংলাদেশ যেন হারাতে বসেছে সংগ্রামের গৌরব। তাই এখন তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা রাজনীতিবিদদের অন্যতম দায়িত্ব। লেখক : সাবেক সভাপতি আজকের প্রজন্ম কেন্দ্রীয় পরিষদ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.