আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজাইরা কেস না আজাইরা প্যাচাল?

মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীকে জেরা নিজস্ব প্রতিবেদক খ্যাতিম্যান আলেম জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে আজ জেরা শুরু করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। শার্ষিনা মাদরাসা থেকে মাওলানা সাঈদীকে বহিষ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম জানান তিনি ওই মাদরাসা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জমা দেয়া জব্দকৃত চারটি আলামতের ছবির ফটোকপি কিভাবে করা হয়েছিল সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের সময় ব্রিফকেসে ভরে ফটোকপি মেশিন নিয়ে যান তাদের এলাকায়। গত ৭ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুরের মাহবুবুল আলম হাওলাদার আদালতে প্রথম সাক্ষ্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শার্ষিনা মাদরাসায় আলেম কাসে পড়াকালে জামায়াতের ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে।

আজ মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারকে জেরা করেন। আইনজীবী : মাওলানা সাঈদীর প্রাইমারী পড়াশুনা বিষয়ে আপনি কিছু জানেন? সাক্ষী : শুনেছি শার্ষিনা মাদরাসায় তিনি পড়াশুনা করেছেন। আইনজীবী : কোন সালে তিনি ভর্তি হন? সাক্ষী : জানিনা। আইনজীবী : কত সাল পর্যন্ত তিনি শার্ষিনায় পড়েছেন? সাক্ষী : স্বাধীনতার আনুমানিক সাত আট বছর আগে শেষ করেছেন। আইনজীবী : কোন কাসে সেখানে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন? সাক্ষী : জানিনা।

আইনজীবী : কোন কাস পর্যন্ত তিনি সেখানে পড়েছেন জানেন? সাক্ষী : আলেম। আইনজীবী : মাদরাসাটি আপনার বাড়ি থেকে কতদূর? সাক্ষী : ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর দিকে। আইনজীবী : শার্ষিনা মাদরাসায় কখনো গিয়েছেন? সাক্ষী : না। আইনজীবী : তখন মাদরাসার অধ্যক্ষ কে ছিলেন? সাক্ষী : খেয়াল নেই। আইনজীবী : তার কোনো সহপাঠীকে চেনেন? সাক্ষী : না।

আইনজীবী : উপর বা নিচের কাসের কাউকে চেনেন? সাক্ষী : না। শার্ষিনা মাদরাসা সম্পর্কে আরো কিছু প্রশ্ন করা হলে এক পর্যায়ে সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেন, তিনি শার্ষিনা মাদরাসা সম্পর্কে কিছুই জানেননা। এরপর আইনজীবী আবার তাকে জেরা শুরু করেন। আইনজীবী : আপনি ওই দিন সাক্ষীর সময় বলেছিলেন জামায়াতের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে তদন্তে প্রমানান্তে মাওলানা সাঈদীকে বহিষ্কার করা হয়। তদন্তে কারা ছিল? সাক্ষী : জানিনা।

আমি বিষয়টি এলাকার লোকজনের কাছে যা শুনেছি তা বলেছি। আইনজীবী : সাঈদীর বিরুদ্ধে আপনি পিরোজপুরে প্রথম যে মামলা করেছেন তাতে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। সাক্ষী : সত্য। আইনজীবী : আপনি আল্লামা সাঈদীকে জনসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মাদরাসা থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সাক্ষী : সত্য নয়।

আইনজীবী : যে বাড়িতে আপনি বসবাস করেন সেটা দালান? সাক্ষী : সেমিপাকা। আইনজীবী : কতদিন আগে বাড়িটি বানিয়েছেন? সাক্ষী : ছয়-সাত বছর ধরে বাস করছি। আইনজীবী : বাড়িটি কিনেছেন না উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন? সাক্ষী : বাড়ির জমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আর বাড়িটি আমি নির্মাণ করেছি। আইনজীবী : ৭/৪/২০০৪ সালে আপনি পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছিলেন একজন বেকার অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাহায্যের আবেদন চেয়ে।

বিষয়টি কি সত্য? সাক্ষী : সত্য। আইনজীবী : দরখাস্তে আপনি বলেছিলেন আপনি একজন অসহায় বেকার মুক্তিযোদ্ধা। এ পর্যায়ে আদালত হস্তক্ষেপ করে বলেন, দরখাস্তের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। তখন আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় প্রশ্ন করা জরুরি। তখন আদালত আসামি পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা এ বিষয়গুলো আদালতে আগে জমা দেননি কেন।

তখন অ্যডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা মাত্র বিষয়গুলো হাতে পেয়েছি। তখন অ্যডভোকেট মিজানুল ইসলাম এগুলো জমা দেয়ার জন্য একদিন সময় চান। রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলিদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলে আদালত বলেন আজই জমা দেন এবং আগামীকাল আবার জেরা শুরু করা হবে বলে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করেন। এর আগে আদালতে জমা দেয়া জব্দকৃত আলামতের ছবি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাক্ষী মাহবুবুল আলমকে। আইনজীবী : আলামতগুলো কোথায় আছে? সাক্ষী : মানিক পসারীর বাড়িতেই ছিল।

আইনজীবী : আলামতগুলো আপনার কাছেই ছিল এ ওয়াদা আপনি করেছিলেন জিম্মানামায়? আপনি আলামত মানিক পসারীর কাছে রেখে জিম্মা নামার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেন, এ জাতীয় প্রশ্ন করতে পারেন কিনা তা আমরা যাচাই করে দেখছি। তখন আদালত, আসামীপক্ষের আইনজীবী ও প্রসিকিউটরদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বিতর্ক চলে। এরপর আবার জেরা শুরু হলে সাক্ষী মাহবুবুল আলম বলেন, তিনি শর্ত ভঙ্গ করেননি। আইনজীবী : আলামত মানিক পসারীর বাড়িতে রেখেছিলেন তা কি আপনি দেখেছেন? সাক্ষী : হ্যাঁ।

আইনজীবী : সাঈদীর বিরুদ্ধে আপনি ও আলমগীর পসারী এর আগে দু’টি মামলা করেছিলেন? সাক্ষী : আমি একটি মামলা করেছি। সেও করেছে বলে জানতে পেরেছি। আইনজীবী : মামলার পরে আপনারা দু’জনে একুশে টিভি ও এটিএন বাংলায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন? সাক্ষী : সঠিক মনে নেই। আইনজীবী : জব্দকৃত মালামালের তালিকা করতে হবে এ খবর কে কখন দিল আপনাকে? সাক্ষী : আমার উপস্থিতিতে বলা হয়। আইনজীবী : কে বলল? সাক্ষী : তদন্ত কর্মকর্তা।

আইনজীবী : কখন দিল? সাক্ষী : ১১টা কি ১২টা হবে। আইনজীবী : তারিখ? সাক্ষী : ৮ মে। আইনজীবী : প্রথম কার আলামত জব্দ করা হয়? সাক্ষী : সম্ভবত মানিক পসারী। আইনজীবী : কত সময় লাগে? সাক্ষী : ১৫-২০ মিনিট। আইনজীবী : আলমগীর পসারীর জন্যও অনুরুপ সময় লাগে? সাক্ষী : ১০-১৫ মিনিট আইনজীবী : আপনি জব্দকৃত আলামতের যে তালিকা দেখালেন তাতে দু’টিরই সময় ১১টা লেখা আছে? সাক্ষী : এখনোতো তাই বললাম।

১১টায় বলেছি। আইনজীবী : জব্দকৃত তালিকা কি প্যাকেট করা লেভেল জড়ানো ছিল? সাক্ষী : না। আইনজীবী : আলমগীর পসারী ও মানিক পসারীর মধ্যে কে বড়? সাক্ষী : মানিক পসারী। আইনজীবী : আলামত হিসেবে যে টিন জমা দেয়া হয় সে টিনে পোড়া দাগ ছিল কথাটা সত্য নয়? সাক্ষী : সত্য নয়। আইনজীবী : এ আলামত মামলার কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে।

সাক্ষী : সত্য নয়। আইনজীবী : তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম খানের বাড়িতে কখন যায়? সাক্ষী : ১২টার দিকে। আইনজীবী : সেলিম খানের স্বাক্ষরযুক্ত আলামতের যে ছবি জমা দিলেন তা আসল ছবি নয় ফটোকপি। সাক্ষী : সত্য। আইনজীবী : অন্য ছবিগুলোও ফটোকপি।

সাক্ষী : সত্য। আইনজীবী : ছবি যখন তোলা হয় তখন ফটোকপি মেশিন ছিল? সাক্ষী : হ্যাঁ। তারা নিয়ে গিয়েছিল। আইনজীবী : ফটোকপি মেশিনটা কার বাড়িতে রাখা ছিল? সাক্ষী : তাদের কাছে ছিল। তদন্ত কর্মকর্তার ব্রিফকেসে ছিল।

জেরার এক পর্যায়ে জব্দকৃত মালামালের একটি ছবির ফটোকপি সাক্ষীর হাতে দেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। ছবিটি দেখিয়ে তাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়। আইনজীবী : জব্দকৃত আলামত কোন সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তা লেখা নেই ছবিতে। সাক্ষী : না, সূত্র লেখা নেই। আইনজীবী : কোন জায়গা থেকে জব্দ করা হয়েছে তাও লেখা নেই।

সাক্ষী : লেখা নেই। আইনজীবী : কার কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে তাও লেখা নেই। সাক্ষী : না লেখা নেই। আইনজীবী : সাক্ষীদের কোনো নাম ঠিকানাও লেখা নেই ছবিতে। সাক্ষী : না লেখা নেই।

আইনজীবী : জব্দকৃত জিনিসের বর্ণনাও লেখা নেই। সাক্ষী : না লেখা নেই। আইনজীবী : জব্দকৃত তালিকা কে তৈরি করল তাও লেখা নেই। সাক্ষী : না নেই। আইনজীবী : পোড টিন, পোড়া কাঠ ও আলমগীর পসারীর পোড়া ঘরের আরো যে ছবি জমা দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রেও উপরের কথাগুলো প্রযোজ্য? সাক্ষী : হ্যাঁ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।