আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় ইসলাম

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। ইসলাম শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নাগরিকদের জানমাল ও সম্মানের অধিকার প্রদান করে না, বরং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রভৃতি সংখ্যালঘু অমুসলিম নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। ইসলাম অমুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য মানবাধিকারও সংরক্ষণ করে। বিশ্বনবী (সা.) অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি বিশেষত্ব।

ইসলাম আরবভূমির বাইরে ও বিজিত অঞ্চলে একমাত্র শান্তিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যে ধর্মে তার শাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু অমুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যেও মুসলমানদের মানসিকতা কী হবে, তা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে ‘শিশুদের হত্যা করবে না। গির্জায় যারা (খ্রিষ্টান ধর্মযাজক) ধর্মীয় উপাসনায় জীবন উৎসর্গ করেছে, তাদের ক্ষতি করবে না, কখনো নারী ও বৃদ্ধদের হত্যা করবে না; গাছপালায় আগুন লাগাবে না বা গাছ কেটে ফেলবে না; ঘরবাড়ি কখনো ধ্বংস করবে না। ’ ইসলাম বিজিত দেশগুলোর সংখ্যালঘু অধিবাসীদের সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছে, ফলে তারা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে কখনো ইসলামি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়নি। ইসলাম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ের ধর্মযাজক বা পুরোহিতদের নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব এমনভাবে পালন করেছে, বর্তমানে যার নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

মহানবী (সা.) রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তদানীন্তনকালে মদিনায় বসবাসরত বনু নজির, বনু কুরাইজা ও বনু কাইনুকা গোত্রের পৌত্তলিক ও ইহুদি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কতগুলো নীতিমালার ভিত্তিতে চুক্তিবদ্ধ হন। ইসলামের ইতিহাসে এটি ‘মদিনার সনদ’ নামে খ্যাত। এ সনদের আলোকেই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আদর্শ ইসলামি সমাজ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। মদিনার সনদের উল্লেখযোগ্য প্রধান দিক ছিল ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমন্বয়ে একটি সাধারণ জাতি গঠন, যাতে সবার নাগরিক অধিকার ছিল সমান। কোনো সম্প্রদায় বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে সবার সম্মিলিত শক্তি দ্বারা প্রতিহত করবে।

সব সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না। যেমনিভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। ’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৬) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ‘মদিনা সনদে’ জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও মুসলিম সমভিব্যাহারে গঠিত মদিনার বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে প্রণীত ওই সনদে উল্লেখ ছিল, ‘মদিনায় ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক এবং মুসলিম সবাই এক দেশবাসী, সবারই নাগরিক অধিকার সমান।

’ সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বুকে এটিই ছিল প্রথম। মদিনার সনদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সমাজসংস্কার এবং সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ সনদ রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনে সাহায্য করে এবং নিয়ত যুদ্ধরত গোত্রগুলোর শহর শান্তিপূর্ণ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। এটা গৃহযুদ্ধ ও অনৈক্যের স্থলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। নবী করিম (সা.) মদিনার প্রত্যেক মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করেন।

জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মদিনার এ সনদ সমানাধিকার দান করে এবং এটা মদিনার মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলে। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক উইলিয়াম মুর যথার্থই বলেছেন, ‘মদিনার সনদে হজরতের অসাধারণ মহত্ত্ব ও অপূর্ব মননশীলতা শুধু তৎকালীন যুগেই নয়, বরং সর্বযুগের, সর্বকালের মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। ’ এভাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরবের শতধাবিভক্ত বিবদমান অমুসলিম গোত্রগুলোকে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের জানমাল ও সম্মানের নিরাপত্তা বিধান করেছিলেন। নবী করিম (সা.) চরম সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। তিনি চাইলেই মক্কার অমুসলিম পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে নির্মম নিষ্ঠুর প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন।

কিন্তু তিনি তা না করে তাঁর চরম শত্রু মক্কার ইসলামবিরোধী নেতাদের সর্বজনীন ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। আপন চাচার হত্যাকারীদেরও মাফ করে দিলেন। এ অপূর্ব ক্ষমার বিরল ঘটনার বিষয়ে ইসলাম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পাশ্চাত্য পণ্ডিত জন এসপোসিটো বলেন, ‘প্রতিশোধ গ্রহণ ও লুট করা এড়িয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করেন; শত্রুর প্রতি তরবারি ব্যবহার না করে তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ’ ইসলামের সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য একজন মুসলমানকে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি দয়া দেখানো উচিত। অমুসলিমদের সঙ্গে ন্যায় আচরণ করা, অভাবী ও নিরপরাধকে রক্ষা আর অনিষ্টের বিস্তারকে প্রতিহত করা দরকার।

অনিষ্ট বা অপকার হলো তা-ই, যা মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, আরাম, শান্তিকে বিনষ্ট করে। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার চারপাশে কী সামাজিক অনাচার ঘটছে, এ ব্যাপারে নির্বিকার থাকতে পারে না। সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় তথা মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ওপর আক্রমণ, হামলা, ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ করা জুলুম ও পাপ কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্যায় করে, তবে আমি কিয়ামতের দিন সেই মুসলমানের বিরুদ্ধে সাক্ষী হব। ’ (আবু দাউদ) ইসলামের ন্যায়বিচার দেশ, কাল বা মানুষ তথা মুসলিম-অমুসলিম ভেদে পক্ষপাতিত্ব করে না।

ইসলাম বিভিন্ন জাতি-গোত্রে বিভক্ত মানুষের বর্ণ-বৈষম্যের প্রাচীর ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই অসংখ্য মানুষ বর্ণবাদ বা জাতিগত সমস্যায় অবিচার ও নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন বর্ণ ও জাতির সৃষ্টির পেছনে উদ্দেশ্য হলো, যেন মানুষ একে অন্যকে জানতে পারে। অতএব, ইসলামের আলোকে সামাজিক শান্তি ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দেশে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সবাইকে মানবতার কল্যাণে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও সাম্প্র্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে। সুত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.