আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকার কি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে সন্ত্রাস মনে করেন না?

বাংলা আমার দেশ

ইংরেজিতে বলতাম, দে লিভড হ্যাপিলি এভার আফটার, অতঃপর তাহারা সুখে বসবাস করিতে লাগিলো। বাংলায় কাহিনীর শেষে বলা হয়, আমার কথাটি ফুরোলো নটে গাছটি মুড়োলো! ‘প্রায় দশ বছর লেখালেখি করলাম, ভাবলাম রাজনৈতিক সরকারের আমলে অনেক সমস্যা বা ইস্যু থাকে লেখারও শেষ থাকে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছে, এবার খান্তি দেবো। অন্তত তিনটি মাস পুরোপুরি বিশ্রাম। নতুন সরকার এলে তখন অবস্থা বুঝে, তাদের মতিগতি হালচাল পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে আবার কলম ধরা যাবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো, তারপর হা হতোস্মি, যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন, লেখার বিষয় যে আরো বেড়ে গেলো। এ যে দেখছি রাজনৈতিক সরকারেরও বাড়া। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতা ভোগ করে, কিন্তু অনেক দায়-দায়িত্বও তাদের নিতে হয়। জবাবদিহিতা থাকে, কৈফিয়ত দিতে হয়। ভুল কাজের মাশুল গুনতে হয়, উল্টাপাল্টা কাজ করলে আন্দোলন হয়, হরতাল হয়।

এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, সন্ত্রাস বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, আগের মতোই বোমা ফাটছে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বলছেন আমরা কি করবো। সন্ত্রাস নিয়ে শুধু একটুখানি কৈফিয়ত দিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো হানাহানি করে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটিয়েছে, তাঁরা অসহায়। তারপর যদি মনে হয় কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে তারা গররাজি, এমনকি নিস্পৃহ মনোভাব দেখান তা হলে অবস্থাটি কি দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ আমলে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছিলো বলে অহরহ অভিযোগ শোনা গেছে। সরকারি দলের ব্যক্তিদের ও তাদের পরিজনদের যে বদনাম ছড়িয়েছিলো সেসব না হয় বাদই দিলাম।

তবে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিলো। সে জন্য আওয়ামী লীগ নামক ক্ষমতাসীন দলটিকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই সমালোচনার জের আজো চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণ সন্ত্রাস করার জন্য যতোখানি নয়, তার দ্বিগুণ সমালোচিত হয়েছেন সন্ত্রাস দমনে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার জন্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে।

বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেউ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নন। তাদের বাহ্যত রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। তারপরও তাদের দুর্বলতা বা পরোক্ষ প্রশ্রয়ে কেউ সন্ত্রাস করছে কিনা সেই প্রশ্নটিই সামনে এসে গেছে। তাঁরা সরাসরি হয়তো জড়িয়ে নেই, প্রসাসনকে ওলট-পালট করে বেছে বেছে বিভিন্ন স্থানে যাদের বসিয়েছেন তাদের কথা বলছি। দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অপারগতা কতোখানি আর কতোখানি রয়েছে নিস্পৃহতা তাও ভেবে দেখতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই এক ধরনের সন্ত্রাস মাথাচাড়া নিয়ে উঠেছিলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান তার উল্লিখিত বক্তব্যে পরোক্ষ জানিয়েছেন সব রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী আছে। ওরা সবাই মিলে সন্ত্রাস করলে তারা কি করতে পারেন, এ ধরনের মনোভাবের কারণটি বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের অসহায়ত্ব সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে রাজি আছি, কিন্তু তাদের দূরদৃষ্টির অভাব, দুর্বলতা কোনো কারণেই মেনে নেবো না। কারণ জনকণ্ঠে আমি তিন মাস আগে এ ব্যাপারে তাদের সাবধান করে দিয়েছিলাম।

পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর হামলা শুরু হয়েছিলো। এই হামলা অবশ্য প্রতিশোধমূলক মনে হতে পারে। পাঁচ বছর যারা মার খেয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা ভেবেছে, এবার যাবে কোথায়? এই প্রতিশোধস্পৃহা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ অস্বাভাবিক মনে করছি না। তবে এজন্য তারা নিজেরা ক্ষমতা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতো। কিন্তু এর ফলে যে একটি ভিন্ন রকমের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার খেয়াল করেননি।

তারা অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়, এ ধারকা মাল ওধার নিতে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যে আসল কাজটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী দমনে প্রথম থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা ভাবনার সময় পেলেন না। একদল সন্ত্রাসী মাঠ খালি করে গেলো, আরেকটি দল তা দখল করে নিলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে চেয়ে দেখলেন। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলেন। অথচ তাদের দায়িত্ব ছিলো, দল নির্বিশেষে সকল সন্ত্রাসীর কবল থেকে মাঠ মুক্ত রাখা। যে কাজটি সেই সময়ে করলেন না এখন বলছেন, আমরা কি করতে পারি।

তখন জনকণ্ঠে লেখার মাধ্যমে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলাম, ‘সামাল দেন। তা না হলে সব দল একসঙ্গে পাল্টা মারামারি শুরু করলে হাত পা ছেড়ে দিয়ে শুধু অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকবেন। ’ তারা ভুলে গেলেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা পাল্টিয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করে তাদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে পক্ষপাতহীনভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। ‘অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো কাজ করবেন না’ এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। এখন অনুরাগ বা বিরাগ দেখাচ্ছেন তা বলবো না, তবে উভয় বস্তুই শিকেয় তুলে রেখেছেন।

অথচ অঙ্গীকার যা-ই করুন সন্ত্রাসীদের প্রতি ‘বিরাগ’ থাকলে অন্যায় হতো না। দেখা যাচ্ছে, তাও নেই এবং এই কারণে সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছে। নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাস দমন করতে না পেরে এখন বলছেন ‘আমরা কি করবো?’ অনুরাগ তাদের থাকার কথা সংখ্যালঘু, নারী ও উপেক্ষিত গোষ্ঠীর প্রতি। আজ সর্বত্র সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। এই অপকর্মটির সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি যে জড়িত তা তারা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না।

জনকণ্ঠের শিরোনাম ‘গানপয়েন্টে সংখ্যালঘুরা!’ মন্তব্য করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করতে পারেনি। যদি কেউ প্রশ্ন করেন, তারা পারেননি নাকি করছেন না? সংখ্যালঘুদের ভোট যে নির্বাচনের ফলাফলে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা জেনেই বিশেষ দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না?’ প্রথম আলো দুই কলাম শিরোনামে প্রশ্ন করেছে, ‘সংখ্যালঘুরা কি ভোট দেবে না?’ একটি বিস্তারিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাবনা-২ আসনে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে। বাগেরহাটে হিন্দুদের বাড়ির ভেতর বন্ধ করে রেখে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ভোলায় লুটপাট হচ্ছে, চট্টগ্রামেও হিন্দুদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার হুমকি এখনই শোনা যাচ্ছে। এদিকে টেলিভিশনে, সংবাদপত্রের পাতায় আর সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান ও নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতিদিন আÍসন্তুষ্টির সঙ্গে বলছেন, ‘আমরা সকলের ভোট দেয়া নিশ্চিত করবো।

’ অথচ এতসব ঘটনার কোনো প্রতিবিধানের খবর পত্রিকার পাতায় পড়িনি। আইন থাকলেও সংখ্যালঘুদের হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। মহিলা ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার তো কোনো বক্তব্য দিলেন না। সাম্প্রদায়িক ঘটনা কি সন্ত্রাস নয়? এ নিয়ে তবে তাদের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে না কেন? দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরেছেন, এমন দাবিটি কি পরবর্তী আমলে বিশ্বাস করতে পারবেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি তাদের তখন করা হবে তা হচ্ছে, ‘আপনারা কি সত্যি সত্যি এসব বন্ধ করতে পারেননি, কিংবা বন্ধ করার উদ্যোগ নেননি?’ তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করেন নির্বাচনকে প্রভাবান্বিত করার উদ্দেশ্যেই সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা হচ্ছে। শুধু সন্ত্রাস নয়, সাম্প্রদায়িক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব তাদের।

এ জন্য তারা কি ব্যবস্থা নিলেন তা কি জনগণ জানতে ও বুঝতে পারবে না? ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রায় সবাই সব ধরনের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। এর মাঝে কিছু প্রশংসনীয় কিছু সমালোচিত হয়েছে। অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিচ্ছেন, সরকারি জমি মুক্ত করছেন, বুড়িগঙ্গার তীর পরিস্কার করার সাময়িক উদ্যোগ নিলেন। কোনো রাজনৈতিক দল এই কাজগুলো করতে পারতো না। কিন্তু আরো যে কাজ ছিলো যা রাজনৈতিক সরকারের দৃষ্টি এড়ায় না তা কি তত্ত্বাবধায়ক ক্ষমতাসীনেরা জানেন? চাঁদপুর শহর পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, কোনো উপদেষ্টা সেখানে ছুটে গেলেন না।

সদরঘাটে যাওয়া যদি প্রয়োজনীয় মনে করে থাকেন তবে চাঁদপুর শহরে একদিন ঘুরে আসাটা তার চেয়েও জরুরী ছিলো। সন্ত্রাসী ধরার জন্য ফেনীর মাস্টারপাড়া ঘেরাও করতে হয়েছে, বাগেরহাটে সন্ত্রাসী আটজনকে খুন করে গেলো যারা তাদের বিরুদ্ধে সেনা-বিডিআর অভিযান হলো না। প্রশাসনে থেকে কেউ ক্ষমতার আপেক্ষিক ব্যবহার করবেন, ক্ষমতা প্রয়োগের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা মনের মাঝে উঁকি দেবে, এমনটি যাতে না হয় সেজন্যই তো একটি অরাজনৈতিক, এমনকি ব্যাহত অগণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণ সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন ভাবতে হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটির জন্ম হয়েছে যে কারণে ও উদ্দেশ্যে তা কি বদলে যাচ্ছে? পুরো ধারণাটিই পাল্টে যাচ্ছে? তত্ত্বাবধায়ক হোক আর রাজনৈতিক দলীয় হোক, সিভিলিয়ান সরকারই দেশ চালাবে এটাই সবার মৌলিক ধারণা। সেই সরকার চালানোর জন্য তাদের নিজস্ব লোকবল আছে।

রয়েছে লেজিসলেচার বা সংসদ, জুডিশিয়ারি বা বিচারব্যবস্থা এবং এক্সিকিউটিভ বা নির্বাহী বিভাগ। তত্ত্বাবধায়ক আমলে লেজিসলেচার নেই কিন্তু বাকি দুটি রয়েছে। তৃতীয়টি তথা নির্বাহী বিভাগ রয়েছে পুরো ক্ষমতা ও পরিপূর্ণ কাঠামো নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক আমলে কি এক্সিকিউটিভ ব্যর্থ হয়ে গেলো? তত্ত্বাবধায়কের সিভিলিয়ান সরকারের অযোগ্যতার কারণেই কি আজ সেনাবাহিনীকে মাঠে নামাতে হচ্ছে? একবার সবাই কল্পনা করুন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপি সরকার যদি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সশস্ত্রবাহিনীকে আহ্বান জানাতো কি হুলস্থূল কাণ্ডই না বেধে যেতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিএনপি আগে যা-ই বলুক এখন বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা খুব ভাল।

তারা সবই ভাল কাজ করছে। এখানকার ওসি ওখানে পাঠিয়ে, ডিসিকে ওএসডি করে সব ঠিকঠাক করে ফেলেছে। তারাই বলছে, তাড়াতাড়ি সেনাবাহিনী নামান। সরাসরি কিন্তু বলছে না, ‘একটি সিভিলিয়ান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। এখন কাজটি সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত তরা হোক।

’ প্রেসক্লাবে অবশ্য একজন অনুজ সাংবাদিক ঠাট্টা করে বললেন, ‘এরপর বলবে না তো এরা সরকার চালাতে পারছে না, সেই ব্যবস্থাটিও তাদের হাতে তুলে দেয়া হোক। ’ আমি কিন্তু কথাটি পুরোপুরি ঠাট্টা বলে গ্রহণ করতে পারলাম না, হকচকিয়ে কথাটি ভাবতে বসলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা না করে তিন মাস সেনাবাহিনীর হাতে সব ক্ষমতা তুলে দিলে কেমন হয়, এমনটিও যদি কেউ বলেন, তখন কি হবে? আর কেউ না হোক ব্যারাকে জন্ম নেয়া দলগুলো হয়তো এতে আপত্তি করবে না। আমার সব ভাবনা আপাতত স্থগিত রাখলাম। আমার মূল বক্তব্যটিই শেষ করার আগে জানিয়ে দিতে চাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে।

শুধু ক্ষমতা ভোগ করে যাবেন, এখানে-ওখানে হম্বিতম্বি করবেন, এর-ওর কথায় দু’একটি পদক্ষেপ নিয়ে দাপট দেখাবেন, অথচ দায়িত্ব নেবেন না তা কিন্তু হয় না। বাগেরহাটে বোমা বিস্ফোরণে আটজন মারা গেছে, এই দায়ভার তাদের নিতে হবে। কোনো বিশেষ দলের সন্ত্রাসীদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে, তাদের ভোট প্রদান নিশ্চিত করার ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন, কেন এমন ধারণার সৃষ্টি হবে? এইসব অভিযোগের ব্যাপারে এখন আর রাখঢাক করার কিছু নেই। এখন যেমন বলা হয় অমুক সরকারের আমলে এতজন সন্ত্রাসের কারণে মারা গেছে, ভবিষ্যতে তাদের শাসনকালের ইতিহাসে এইসব ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকবে। বলা হবে খালেদার আমলে এমন হয়েছে, হাসিনার আমলেও হয়েছে, একটি অরাজনৈতিক লতিফুর রহমান সরকারের আমলেও রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাস হয়েছে।

সেই সরকার নিয়োজিত প্রশাসন কোথাও কোথাও সন্ত্রাসীদের পরোক্ষে মদদ দিয়েছে অথবা সন্ত্রাস দমনে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে। সর্বোপরি, অনেক কিছুই করেছে, অনেক কাজই করেনি। তবু বলবো, এতো কিছুর পরেও একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ, পক্ষপাতহীন, সর্বোপরি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে পারলে তাদের সব দোষ খণ্ডিয়ে যাবে। এজন্য শুধু ক্ষমতায় থেকে এর সকল সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করলেই হবে না, সংশ্লিষ্ট সকল দায়ভার নিতে হবে। যদি তা না পারেন, এখন না হলেও নির্বাচনের পরে তো বটেই ব্যর্থতার হ্যাপা সামলাতে হবে।

আর দুদিন পরেই নির্বাচন, তাই তত্বাবধায়কদের নিয়ে নির্বাচনপূর্ব ভাবনায় এখানেই ইতি, লেখালেখির ক্ষ্যান্তি ঘটলো। নির্বাচনের পর তাদের নিয়ে আর লেখালেখি করতে হবে না, এই কামনা করি। নির্বাচনের পর তারা ‘লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার’ নিশ্চিন্ত শুধু নয়, নিরাপদ জীবন যাপন করুন এই আমার একান্ত প্রার্থনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.