আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেতিবাচকতা এবং ভাষার ব্যবহার

‘আমার দ্বারা কি বিসিএস সম্ভব? প্রিলিতে যে কঠিন প্রশ্ন আসে! আবার প্রাইভেট জবে তো অনেক স্মার্ট হতে হয়, প্রচুর ইংলিশ জানতে হয়, আমিতো কিছুই পারিনা! আমার দ্বারা কিছুই হবে না’- কথা গুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া একজন হতাশাগ্রস্থ ছাত্রের। পারিনা, পারবনা, হবেনা, সম্ভব না ইত্যাদি হাজারো নেতিবাচক শব্দের ব্যাবহার আমরা প্রায় শুনে থাকি। খুব সহজেই কি কি পারি না এর লিষ্ট আমরা করতে পারি, কিন্তু কি কি পারি তা বলতে গেলে থেমে যাই। মাথার মধ্যে এই যে নেতিবাচকতা, সে স¤পর্কেই আজকের এই লেখা। নেতিবাচক চিন্তা বিভিন্নভাবে আমাদের ক্ষতি করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচকতা মারাত্বক হুমকি। বিষন্নতা, চাপ, এনগজাইটি, অপারগতা, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, কাজকর্মে অনীহা, নিজের স¤পর্কে খারাপ বা নিচু ধারনা, নিজেকে ছোট মনে হওয়া, হীনমন্যতায় ভোগা ইত্যাদি নানা রকম মানসিক অসুস্থতার অন্যতম কারণ মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া এই নিরব ঘাতক নেতিবাচকতা। কিভাবে ডেভলাপ করে এটা? ছোটবেলায় পরিবার বা স্কুলে নিজের সম্মন্ধে নেতিবাচক কমেন্ট বা মুল্যায়ন, পর্যাপ্ত পরিমান প্রশংসা বা স্বীকৃতির অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের মধ্যে নেতিবাচকতার তৈরি হয়। আমাদের সমাজে, বিশেষকরে বাবা-মাদের মধ্যে নেতিবাচক মুল্যায়ন খুব বেশি দেখা যায়। আমার এক ছাত্রের মা ২০ টির মধ্যে ২ টি শব্দের বানান ভুল করার কারণে তার ৭ বছরের ছেলেকে অনেক বকাঝকা করল।

অথচ সে যে ১৮ টি জটিল বানান পারল, তার জন্য একটি বারের জন্যও তাকে কোন প্রশংসা করলনা। ছোট্ট এই শিশুটির নিজের সম্মন্ধে কি ধারনা হবে? মনোবিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থ মানসিক স্বাস্থের জন্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক মুল্যায়নের অনুপাত হওয়া উচিৎ ৫:১। অর্থাৎ প্রতিটি ১ টি নেতিবাচকতার বিপরীতে অন্তত ৫ টি ভালো মুল্যায়ন দরকার। নেতিবাচক চিন্তার অন্যতম উৎস হল নেতিবাচক ভাষার ব্যাবহার। যার কথায় যত নেতিবাচক শব্দ, তার মধ্যে তত বেশি নেতিবাচকতা দেখা যায়।

কিভাবে? নেতিবাচক শব্দের মাধ্যমে কোন কাজকে ব্যাখ্যা করলে সেটি অনেক বেশি কষ্টকর বা চাপমুলক মনে হবে। যেমন-কোন কাজকে আমরা যদি 'কঠিন' বা 'অসহনীয়' না বলে বলি 'চ্যালেনজিং' বা 'পরীক্ষা' তাহলে কাজটি নিঃসন্দেহে অতটা কঠিন লাগবেনা যতটা আমরা ভাবছিলাম। 'আমার দ্বারা এটা সম্ভব না', বা 'আমি কখনই এটা করতে পারবনা' ইত্যাদি বাক্য ব্যাবহারে বিফলতার সম্ভনাকেই বাড়িয়ে দেয়। নেতিবাচকভাবে না বলে বরং প্রশ্ন করা যেতে পারে। দুটি বাক্যের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুনঃ 'আমি কখনই এটা করতে পারব না' এবং 'আমি এটা কিভাবে করব?' কোনটি বেশি আশাব্যাঞ্জক? মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আমাদের ব্যাবহৃত শব্দ এবং ভাষা আমাদের অভিজ্ঞতাকে রাঙিয়ে তোলে।

নিজের সাথে নিজের যে কথোপকথন তার মধ্যে নেতিবাচকতা থাকলে ভালো করার সম্ভাবনা কমে যায়। বিষন্নতা বা চাপ কমাতে সেলফ টক অনেক বেশি অবদান রাখে। হ্যা বোধক চিন্তা এবং কথা আমাদেরকে অনেক সাহায্য করবে নেতিবাচকতার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে। সমষ্ঠিগতভাবেও আমরা প্রায় নেতিবাচক শব্দ ব্যাবহার করি। যেমন- আমরা অবহেলিত জাতি, তৃতীয় বিশ্ব , অলস বাঙ্গালী, আমাদের দ্বারা কখনই উন্নতি হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

নিজেই নিজেকে অবহেলিত না ভাবলে অন্যরা অবহেলা করার সুযোগ কি পাবে? নেতিবাচকতা দূর করব কিভাবে? আপনার ব্যাবহৃত শব্দ এবং ভাষার প্রতি খেয়াল রাখুন। যখনই কোন নেতিবাচক চিন্তা আসে তা পরিক্ষা করে দেখুন, আদৌ তা সত্য কিনা যা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একটি ডায়েরিতে লিখতেও পারেন দিনে কতবার এবং কতরকম নেতিবাচক চিন্তা আসছে। এরপর, ধীরে ধীরে এসব নেতিবাচকতাকে ইতিবাচক শব্দ, ভাষা এবং মুল্যায়নের মাধ্যমে দূর করার প্রয়াস চালাতে পারেন। যাদের মাথায় প্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তা আসছে, এর থেকে বের হতে কষ্ট হচ্ছে তারা একজন কাউন্সেলিং বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সহযোগিতা নিতে পারেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।