আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আকাশ এত মেঘলা

প্রচন্ড শব্দে কানে তালা লাগার অবস্থা । আশেপাশেই কোথাও বিদ্যুৎ চমকালো । সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে , অঝোর বৃষ্টি । দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবেনা এটা ডিসেম্বর মাস । ঝোরো হাওয়ার তোড়ে রাস্তার ধারের গাছগুলোর ভেঙ্গে পড়ার জোগাড় ।

হাউজিং এস্টেস্টের এই দিকটা অনেক ফাকা , বড় বড় মাঠ আর প্রচুর গাছপালা । ধবধবে সাদা ৪ তলা বাড়িটা থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে আছে আফিফ । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিনতলার বারান্দাটার দিকে । বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কাঁচের মত করে এসে বিঁধছে চামড়ার ওপর , ঠান্ডাতে অনেকটা নীল হয়ে গেছে । কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা হবে ।

আবছা হয়ে আসছে চারপাশ । তারপরও কেমন যেন একটা ক্ষীণ আলো চারিদিকে ছেয়ে আছে । ঠান্ডায় অনেকটা জমে যাওয়া হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করল আফিফ । এই কয়েনটা আফিফের একটা সঙ্গীর মত হয়ে গেছে । গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওর একটা হাস্যকর পাগলামোতে পরিণত হয়েছে এটা , কিছু হলেই কয়েনটা শুন্যে ছুড়ে দিয়ে টস করছে ।

নিজের কিছু ছেলেমানুষী দেখে নিজেই হাসে আফিফ । অনেকটা নিজের লাকের সাথে গ্যাম্বল করা মনে হয় ওর কাছে । যেন কয়েন যা ডিসাইড করবে তাই হবে । টসের পড় দেখল হেড পড়েছে । অস্ফুট স্বরে গলা থেকে একটা আওয়াজ বের হয়ে আসল আফিফের , " ও আসবে ।

" ফোনটা বের করল আফিফ । মনে হচ্ছে মেসেজটা পড়ার সময় চলে এসেছে । মেসেজটা ওপেন করল , একটা মাত্র লাইন লেখা তাতে । মাথা তুলে আবার দেখল বারান্দাটার দিকে । অপেক্ষা করছে অনিন্দিতার সেই পাগলপারা চেহারাটা দেখার জন্য ।

অপেক্ষার উত্তেজনায় যেন ওর নিশ্বাস আটকে আসছে । মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে আসছে তিন মাস আগের এক মেঘলা সকালে দেখা অনিন্দিতার হাসিটা ... আফিফ , অন্যধাঁচের একটা ছেলে । জগতের সবকিছু নিয়েই ওর আগ্রহ আছে আবার কিছু নিয়েই আগ্রহ নেই । সবসময় সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা রাখতেই পছন্দ করে । আফিফ ওর মনের মধ্যে যেন আরেকটা জগত তৈরী করেছে ।

নিজের মত করে গড়া নিজের সেই জগতটা একান্তই ওর , কারও সেখানে ঢোকার অনুমতি নেই । এমনটা না যে বন্ধু নেই , নিঃসঙ্গ একাকী জীবন ওর । অনেক বন্ধু আছে । অনেকসময় বিকালের চায়ের আড্ডাটা জমিয়েও রাখে ও । ফটোগ্রাফির ভয়ংকর শখ ।

সবসময় নিজের মনের ইচ্ছাগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে চায় । একটা সাধারন টিনেজার ছেলেই বলা চলে ওকে । শুধু একটা জিনিসেই ভয় , দায়িত্ব । রেস্পন্সিবিলিটি থেকে কেন জানি সবসময় পালাতে চায় । মনে হয় ওর স্বাধীনসত্ত্বাকে বাধা দিবে এই রেস্পন্সিবিলিটি ।

মেয়েদের কাছ থেকে আফিফ সবসময়ই ১০০ হাত দূরে থাকে । গার্লফ্রেন্ড তো দূরের কথা এমনকি মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক বন্ধুত্বটাকেও ওর কাছে " পাহাড়সম " রেস্পন্সিবিলিটি মনে হয় । অদ্ভুত এই ছেলেটার জীবন ঠিকই চলছিল , স্বাভাবিক , নিজের মত , ঠিক একদম যেমনভাবে ও চায় তেমন । কিন্তু তখনি অনিন্দিতা আসল , আফিফের "অনিন " । অনিন্দিতাকে প্রথম দেখে কলেজে ।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টিভেজা একটা দিনে দেখে । প্রথম দেখাতেই পাগল । অনিন্দিতা , অলওয়েজ হ্যাপি টাইপ মেয়ে । ডিজুসের থিমটা যেন একে নিয়েই বানানো । সবসময় বন্ধু , আড্ডা , গান ।

সবসময় যেন চার্মিং মুডের একটা অরা নিজের চারপাশে নিয়ে ঘোরে । আশেপাশের ম্যাড়ম্যাড়ে দুনিয়াটাকে যেন মুহূর্তেই রঙিন করে ফেলতে পারবে । দুজন একই কলেজে পড়ে , ক্লাসমেট । কিন্তু সেকশান আলাদা । অনিন্দিতাকে আফিফ প্রথমে কলেজেই দেখে ।

কিন্তু সরাসরি কখন কথা হয়নি ওদের । দুইজন দুইজনের পরিচিত হয়ার পড়েও সরাসরি কথা বলেনি কখন , কেমন যেন এড়িয়ে যায় একে অপরকে দেখা হলে । ওদের আড্ডাটা পুরোটাই হয় ফেইসবুক আর মেসেঞ্জারে । প্রথম দেখার পরই আফিফের দুনিয়াটা আপসাইড ডাউন হয়ে যায় । হন্যে হয়ে অনিন্দিতাকে ফেইসবুকে খুঁজে আফিফ ।

শেষপর্যন্ত যখন অনিন্দিতাকে খুঁজে পায় তারপর নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করা শুরু করে ও । যে ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলাটাকেও বিরক্তিকর বলে মনে করত সেই আফিফ সময় অসময়ে ফেইসবুকে অনলাইন থাকা শুরু করে । ও জানে না কেন কিন্তু অনিন্দিতার পাঠানো প্রত্যেকটা স্মাইলি আর আদর করে ডাকা "Moron" নামটা আফিফকে প্রত্যেকবার ধাক্কা দেয় । এভাবেই ওদের গল্প এগিয়ে যেতে থাকে । সবকিছু বেশ ভালই চলছিল ।

সারাদিন নিজেদের মত আর রাতের বেলা আড্ডা , নিজেদের মধ্যে খুনসুটি , স্মাইলি চালাচালি , রাজ্যের সবকিছু নিয়ে আলোচনা , দুইজনের দুইজনকে পচানো , রাগ ভাঙ্গানো , নিজেদের সব সিক্রেটগুলোও শেয়ার করে ফেলে । অসম্ভব একটা বিশ্বাস আর নির্ভরতা একে অপরের উপর । বলা চলে বেস্ট ফ্রেন্ড । কিন্তু আফিফের মনে হল যত সময় যাচ্ছে ও তত বেশি অনিন্দিতাকে ভালোবেসে ফেলছে । কিন্তু নিজের ভেতর থেকেই আরেক সত্ত্বা প্রশ্ন করে এটা কি আসলেই ভালোবাসা নাকি স্রেফ বন্ধুত্ত ? কোন উত্তর পায়না ও ।

মাঝে মাঝে মনে হয় প্রোপোজ করে ফেলবে । দুজন দুজনকে জানে , চেনে , ভালোলাগা-মন্দলাগা সবই জানে । তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমস্যাটা ভয় । আফিফের কেন জানি ধারনা ও যদি অনিন্দিতাকে প্রপোজ করে তাহলে রিজেক্টেড হবে । অসম্ভব সুন্দর বন্ধুত্তটাও আর থাকবে না ।

" থাক না , চলছে চলুক । ভালোই তো আছি । " ভাবে আফিফ । একরাতে বারান্দায় কোলে ল্যাপটপ নিয়ে আফিফ ওয়ার্ডপ্যাড খুলে টাইপ করতে থাকে --- হয়তবা হ্যা ... হয়তবা না ... হয়তবা কোনদিন তার হাসির শব্দ আমার হবে ... হয়তবা না ... হয়তবা কোনদিন তার চুলের গন্ধ আমি শুঁকব অমাবস্যা রাত্রির শেষ প্রহরে ... হয়তবা না ... হয়তবা কোনদিন তার হাতের উষ্ণ স্পর্শটা আমার হবে ... হয়তবা না ... হয়তবা কোনদিন তার কোলে মাথা দিয়ে খোলা আকাশের নিচের জোছনাটা আমার হবে ... হয়তবা না ... হয়তবা তার চোখের সবটুকু মায়া আমার হবে ... হয়তবা না ... দূর আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটার দিকে তাকিয়ে অজান্তেই হেসে আফিফ ," আমি জানি এগুলোর কোনটাই হবেনা । এই স্বপ্নটাকে শুধু শেষ রাতের একাকী তারারাই পছন্দ করে ।

বাস্তবতা বহু আগেই স্বপ্নটাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলেছে । " কি মনে হল হঠাত মনে হল ওয়ার্ডপ্যাডের কথাগুলো স্ট্যাটাস আপডেট করে দিল । প্রায় সাথে সাথে লাইক পড়ল অনিন্দিতার আর সাথে সাথেই চ্যাটে নক -কিরে moron ? কার উপ্রে ক্রাশ খাইলি ? -তোর সতীনের উপ্রে :p -আমার সতীন !! হাহ !! তোর মত স্টুপিডরে আমি জামাই বানামু ? দূরে গিয়া মর :p -ওরে আমার পেনেলোপে ক্রুজ রে !!! কি মনে করিস নিজেরে ? - হাহ !! তোর ওই ক্রাশআলীর চেয়ে মিলিয়ন টাইমস বেটার আমি -স্বপ্ন দেখ :p কিছুটা সময় পার হয় । একটু পড় আনিন্দিতা আবার নক দেয় আফিফকে - ওই moron তুই কি সিরিয়াসলি কারো উপর ক্রাশ খাইছিস ? - মে বি , মে বি না - হারামজাদা আমি সিরিয়াস > - আমিও সিরিয়াস অনিন - নাউ দ্যাটস ইন্ট্রেস্টিং !!! লজ্জাবতী কলাবতী আফিফের তাহলে একটা মেয়েকে পছন্দ হইছে !!! - আমারে কি গে লাগে নাকি যে মাইয়া পছন্দ হবে না ?? -অম্মা তুই গে না ?? আমি তো ভাবছিলাম গে ... :p - সবাইরে তোমার নিজের মত হোমো মনে হয় ? - হাহাহা । বাদ দে , তা কার উপরে ক্রাশ খাইছিস ক - জানিনা -জানিনা মানে ? হুম বুঝছি তুই কায়া উপ্রে ক্রাশ খাইছিস - ধুর ওই ছেমড়ির উপর কে ক্রাশ খায় ? তাছাড়া ওই মাইয়া আমার টাইপ না - তা স্যারের কোন টাইপের মেয়ে পছন্দ ?? - আলাদা ... অফ ট্র্যাকের ... যাকে দেখেই মনে হবে যে She's Different - বাপপ রে ... ডর খাইছি !!! :p - হুম চ্যাটটা অনেকটা এখানেই শেষ ।

বেশ অনেকক্ষণ পর আফিফের কি মনে হল ফেইসবুকে একটা মেসেজ পাঠালো অনিন্দিতাকে - ধরে নে মেয়েটা তুই তাহলে তুই কি বলবি ? মেসেজটা পাঠানোর পর আফিফের মনে হল যে ভুল করে ফেলছে , বড়সর ভুল । কিন্তু কেমন যেন একটা স্বস্তি কাজ করছে ভেতরে , যেন একটা পাথর নেমে গেল । হাল্কা মনে হচ্ছে নিজেকে । আবার একই সাথে অন্যরকম একটা অস্থিরতা অনুভব করছে । অনিন্দিতা ফেইসবুকে লগইন করে ভোর বেলার দিকে , ঠিক ভোর না ভোররাত বলাই ভালো ।

ফেইসবুকের ইনবক্সে আফিফের দেখা মেসেজটা দেখে অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে যায় । নাহিয়ানের কথাটা আফিফকে কখন বলা হয়নি । হয়ত বলা হবেও না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা মেসেজ লিখে অনিন্দিতা । এই প্রথম অনিন্দিতা আফিফকে এসএমএস দেয় ।

ফোন নম্বর থাক্লেও কেউ কাউকে কখন কল করেনি , কোন মেসেজও পাঠায়নি কোনদিন । আস্তে আস্তে মেসেজটা টাইপ করে অনিন্দিতা । খেয়াল করে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে । ভোরের স্নিগ্ধতা চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকে , কুয়াশায় চাদরে ছাওয়া চারপাশ । সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আফিফ ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পায় একটা মেসেজ , অনিন্দিতার কাছ থেকে আসা ।

মেসেজটা কেন জানি দেখতে ইচ্ছা করছেনা আফিফের । অজানা ভয় নাকি অন্য কিছু । ডিসিশান নিল যে মেসেজটা পড়বেনা । কখনোনা । একটা মেসেজ না দেখলে কি হয় ? হাইড করে দিল মেসেজটাকে ।

আজ মডেল টেস্ট আছে কোচিং এ পুরা কন্সেন্ট্রেশান দিল সেটাতে । কিন্তু কেন যেন কিছুতে মন বসাতে পারল না । খচ খচ করছে ভেতরটা । একটা অস্বস্তি গ্রাশ করছে ওকে । সন্ধ্যার দিকে ফেইসবুকে বসল আফিফ ।

দেখল কোন মেসেজ আসেনি , নোটিফিকেশানগুলোতেও অনিন্দিতার নাম নেই । একটা শান্তি পেল , মানে অনিন আর ফেইসবুকে লগইন করেনি । স্বাভাবিকভাবেই ব্রাউজ করতে থাকল । অপেক্ষা করছে ও , অনিনের জন্য । বেশ রাতের দিকে অনিন্দিতা লগইন করল , ওকে নক দিতে বেশ কুন্ঠা বোধ করল আফিফ ।

তাও শেষমেশ নক দিল । অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই । - ওই অনিন , সারাদিন মরছিলি কই ?? কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই । কিছুক্ষন পর আবার চ্যাটে নক দিল , একই অবস্থা , রিপ্লাই নেই । বোধহয় ঘুমায় গেছে - নিজেকে বোঝাল আফিফ ।

কিন্তু টিকারে অনিন্দিতার একটার পর একটা এক্টিভিটি দেখাচ্ছে । তাহলে কি ইগ্নর করছে অনিন ওকে ?? শীতের রাতেও ঘামতে শুরু করেছে আফিফ । ব্যাপার না , হয়ত খেপে আছে কালকের ঘটনার জন্য । কিন্তু তারপরও রিপ্লাই তো দেওয়া উচিত - ভাবছে আফিফ । অনিন্দিতার কাছ থেকে আর কোন রিপ্লাই এলনা , তারপরের দিন , তারপরের দিন ।

এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল । দেখতে দেখতে মাস । আফিফ কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে , যেন জীবনটাকে শুষে নিচ্ছে কেউ । কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেয়না , হাসেনা , ফটোগ্রাফি করেনা , বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়না । পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে , নিজের বানানো জগতটাও যেন ক্ষুদ্র হয়ে আসছে ।

নিজের একান্ত জগতটাও অপরিচিত আজ । বোধহয় এটাকে ডিপ্রেশান বলে হয়তবা না । আফিফের কেবল একটা জিনিসই মনে হচ্ছে , পৃথিবীটা ধূসর হয়ে গেছে । কোন রঙ নেই , গন্ধ নেই , শব্দ নেই । এর মধ্যে আফিফ সিগারেটও ধরেছে ।

নাহ , ভাব দেখানোর জন্য না , ব্যাথা দূর করার জন্য না । ও সিগারেট খায় সিগারেটটা পোড়া দেখার জন্য । আগুন কিভাবে শলাকাটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে দেখে । প্রতিবার সিগারেটে টান দিলে আগুনটা আরো দ্রুত শলাকাটাকে পোড়ায় , আস্তে আস্তে শেষ হয় পুরো সিগারেট । যেন ওর জীবনটা পুড়ে যাচ্ছে ।

দেখতে বেশ লাগে ওর । একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে আকাশে মেঘ , ঘন মেঘ । কালো হয়ে আছে চারপাশ । বৃষ্টিও পড়ছে । ঠান্ডায় গা কেঁপে কেঁপে উঠছে ।

আফিফের খুব ইচ্ছা হল আজ অনিন্দিতাকে দেখবে । শেষবারের মত ওই মায়াকাড়া চেহারাটা দেখবে ,শেষবার বাতাসে এলোচুলগুলো ওড়া দেখবে ,শেষবার দীঘির কালো পানির মত টলটলে চোখজোড়া দেখবে । আচ্ছা কোনদিন অনিনের কন্ঠটা শোনা হয়নি ওর কন্ঠটা কেমন ? - আফিফ ভাবতে থাকে । কি মনে হল কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে । আজ অনিনকে দেখবে , যে করেই হোক অনিনকে দেখবে ।

বাসা থেকে বের হয়ে কেমন যেন একটা শান্তি এসে ভর করল ওর উপর । অন্যরকম একটা স্বস্তি । সারাটা দিন হেটে বেড়াল । কোথায় কোথায় হাটল নিজেই জানেনা । হিমশীতল আবহাওয়ায় , ঝরের মধ্যে হাটছে , অজানা রাস্তায় ।

বিকেলের দিকে হাটতে হাটতে অনিন্দিতার বাড়ির সামনে চলে এল । ঠিকানাটা আগে থেকেই জানা ছিল ওর । আজকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ঐদিন অনিন্দিতা কি এসএমএস দিয়েছিল । আজো দেখা হয়নি ওটা । কিন্তু ভাবল না থাক দেখবে না ।

ধবধবে সাদা ৪ তলা বাড়িটা থেকে দাড়িয়ে আছে আফিফ । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিনতলার বারান্দাটার দিকে । বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কাঁচের মত করে এসে বিঁধছে চামড়ার ওপর , ঠান্ডাতে অনেকটা নীল হয়ে গেছে । কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা হবে । আবছা হয়ে আসছে চারপাশ ।

তারপরও কেমন যেন একটা ক্ষীণ আলো চারিদিকে ছেয়ে আছে । ঠান্ডায় অনেকটা জমে যাওয়া হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বের করল আফিফ । এই কয়েনটা আফিফের একটা সঙ্গীর মত হয়ে গেছে । গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওর একটা হাস্যকর পাগলামোতে পরিণত হয়েছে এটা , কিছু হলেই কয়েনটা শুন্যে ছুড়ে দিয়ে টস করছে । নিজের কিছু ছেলেমানুষী দেখে নিজেই হাসে আফিফ ।

অনেকটা নিজের লাকের সাথে গ্যাম্বল করা মনে হয় ওর কাছে । যেন কয়েন যা ডিসাইড করবে তাই হবে । টসের পড় দেখল হেড পড়েছে । অস্ফুট স্বরে গলা থেকে একটা আওয়াজ বের হয়ে আসল আফিফের , " ও আসবে । " ফোনটা বের করল আফিফ ।

মনে হচ্ছে মেসেজটা পড়ার সময় চলে এসেছে । মেসেজটা ওপেন করল , একটা মাত্র লাইন লেখা তাতে । মাথা তুলে আবার বারান্দাটা দেখল আফিফ । নাহ , কেউ নেই । ফোনটা নিয়ে এবার ফোন করল অনিন্দিতাকে ।

জীবনে প্রথম বারের মত ফোন করছে অনিন্দিতাকে , প্রথমবার ওর কন্ঠটা শুনবে আফিফ । হয়তবা শেষবারও হবে এটা । রিং হচ্ছে । ওপার থেকে ফোনটা ধরল একজন । - হ্যালো আফিফ চুপ , একদম নিশ্চুপ ।

এতটা সুন্দর কন্ঠ কেন হতে হবে ?- ভাবছে আফিফ - কিরে মরা , কেমন আছিস ? - আফিফ ?? - হুম - কই তুই ? - তোর বাড়ির নিচে ফোনটা সাথে সাথে কেটে দেয় অনিন্দিতা । আবার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে আফিফ । হঠাত খেয়াল করে বাড়ি থেকে একজন বের হচ্ছে । আবছা আবছা বোঝা যায় । কাল রঙ এর সালোয়ার কামিজটায় অনন্যসাধারণ লাগে অনিনকে ।

অনিন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে । আফিফ তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টিতে । দেখছে , কেবল দেখছে । কখন যেন চোখ থেকে এক ফোটা আশ্রু গড়িয়ে নামে । গলাটা ধরে আসে ।

মনের ভেতরে যত কথা আছে সব এসে যেন জমা হয় গলার কাছে । কতক্ষণ তাকিয়ে আছে ও জানেনা । ২ মিনিট , ৫ মিনিট , ১০ মিনিট , জানেনা । সময়ের খেই হারিয়ে ফেলেছে ও । উল্টাদিকে ঘুরে আস্তে আস্তে হাটা শুরু করে ।

এক ধাপ দুই ধাপ অনিন্দিতার সাথে করা সব চ্যাট মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে , সেই হাসিগুল , সেই আড্ডাগুলো , ঝগড়াগুলো , ফাইজলামি সব ... অনিন্দিতা একদিন ওকে বলেছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হচ্ছে মেঘলা আকাশ , কাল অন্ধকার মেঘলা আকাশ । আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে আফিফ - আজ আকাশটা অনেক মেঘলা , অনেক । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।