আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রায় পুরোটাই সত্যি

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! আজ আমার খুবই ভালো লাগছে। খুবই ভালো। এত ভালো আগে কোনোদিন লেগেছে কিনা সন্দেহ। মনে হচ্ছে, যে পৃথিবীর শুধু ধূসর রূপটাই এতদিন আমার দৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিল, তা আজ অপার্থিব রঙে রঙিলা হয়েছে। মনে হচ্ছে, মানুষ হিসেবে জন্মে যে অস্বাভাবিক অনুতাপে এতদিন দগ্ধ হয়েছি, তা আজ বেহেস্তের সুবাস হয়ে আমার দেহমন রাঙ্গিয়ে দিয়েছে।

মনে হচ্ছে, জীবন কোন অর্থহীন চাহিদা পূরণের নাট্যমঞ্চ নয়, এটি আজীবন উপভোগ করার মত সত্যিকারের সম্পদ। আমি স্পষ্ট কল্পনা করতে পারছি, আমার পাঠকরা আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তির সাগরে পতিত হয়েছেন। তারা মাথা চুলকে ভাবছেন, কি হইসে এই লোকের? মাথামোথা কি খারাপ হয়া গেসে? নাকি ব্যাটা নতুন প্রেমে পড়সে? নাকি কিছু ভুংভাং খাইসে? না প্রিয় পাঠক, আমার কিছুই হয় নি। আমার মাথা খারাপ হয় নি, আমি এল এস ডি খাই নি, আমি কবি হাবার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে আপনাদের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনে বিরক্তির উদ্রেক ঘটাতে আসি নি, আমি যে বাংলায় এ প্লাস পেয়েছি তা চিৎকার করে সবাইকে জানাতে আসি নি। আমি প্রেমে পড়ি নি, প্রেমও আমার উপরে পড়ে নি, কোন স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে আমার জন্য ফুলের মালা গাঁথে নি, যে মুখের দিকে তাকিয়ে হাজার মৃত্যু হাসিমুখে বরণ করে নিতে পারব সেই মুখের সাথে আজ আমার দেখা হয় নি।

আমার কিছুই হয় নি। সত্যি বলছি, আমার কিছুই হয় নি। তবে আমি যা লিখেছি, সত্যি কথা লিখেছি। আমি কোন সাহিত্যিক নই, তাই মিথ্যা বলতে পারি নি। আমি কোন মোসাহেব নই, তাই অতিরঞ্জন করতে পারি নি।

আমি কোন জাদুকরও নই, শূন্য থেকে কিছু অলীক বিভ্রম সৃষ্টি করে সবাইকে ধোঁকা দেবার স্বভাব আমার নেই। আমার শুধু একটা মন আছে, আমি শুধু আমার মনের কথাটাই লেখার চেষ্টা করেছি। আমি জানি আপনারা প্রশ্নে প্রশ্নে আমাকে বিদ্ধ করছেন, কেন লিখেছ এসব? কি ঘটেছে তোমার জীবনে? নাকি এতক্ষণ ধরে এমনিই নাচালে আমায়? উত্তরে আমি বলব, হ্যাঁ, কিছু একটা সত্যিই ঘটেছে আমার জীবনে। যে জীবন ক্ষুদ্র, যে জীবন অর্থহীন, যে জীবন দুঃখ-ক্লান্তি-জরা জর্জরিত, যে জীবনের কাছ থেকে পালানোর জন্য প্রতিনিয়ত শয়ে শয়ে মানুষ সিগারেটের ধোঁয়ায় বা মদের গেলাসে বা পরকীয়ার উল্লাসে নিজেকে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও ভুলে থাকার চেষ্টা করছে, সেই জীবনে সত্যিই কিছু একটা ঘটেছে আমার। আচ্ছা, একটু ভিন্ন কথায় আসি।

যে মানুষটা জানে যে সে আর কদিন পরেই মারা যাবে, সে কি শেষ মুহূর্তে জীবনটা উপভোগ করে নেবার চেষ্টা করে? নাকি সে তখনই মারা যায়, হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়াটা হয়ে যায় শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা? একটা মানুষ যখন জানে যে সে মারা যাবেই, সে কি মৃত্যুর সাথে যুদ্ধে হার স্বীকার করে নেয়? আমরা যখন জানি যে একটা মানুষ মারা যাবেই, আমরা কি তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টা করি না? করি। আমাদের যদি বলা হয় যে এই মানুষটা আর এক মাস পরেই মারা যাবে, তাও আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। যদি বলা হয় সে দশ মিনিট পরে মারা যাবে, তাও আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। এমনকি যদি স্পষ্ট বোঝাও যায় যে লোকটা এখনি যে কোন সময় মারা যেতে পারে, তবুও আমরা শেষ মুহূর্তে তার পিপাসা মেটানোর একটা হাস্যকর চেষ্টা করি, তার মাথাটা কোলের উপর রাখি, যেন শেষ মুহূর্তে মানুষের স্পর্শ পেয়ে সে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে। এ জাতীয় ছোট ছোট কিছু অনুভূতি এখনও আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট রয়ে গেছে বলেই আমরা মানুষ।

************ ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া। একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। প্রাথমিক অবস্থায় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট না করলে যাতে মৃত্যু নিশ্চিত। এই রোগে একুশ দিন পর পর রোগীকে প্লেটলেট দিতে হয়, না, তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য নয়, তাকে আর ক’দিন বাঁচিয়ে রাখার জন্য। জীবনকে আরও কয়েকটা দিন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার সুযোগ দেয়ার জন্য।

মৃত্যুর সাথে যুদ্ধটা আরেকটু প্রলম্বিত করার জন্য। এই অধম লেখক আজ এরকমই এক জীবনযুদ্ধের জ্বলন্ত সাক্ষী হয়েছে। মৃত্যুর বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে সে অনেকটা জেনে না জেনেই অংশগ্রহণ করেছে। এই অধম লেখক আজ জীবনে প্রথমবারের মত রক্তদান করেছে। বলা বাহুল্য, রক্তগ্রহীতা ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়ার পেশেন্ট।

অতিরিক্ত কথা বলার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.