আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি (প্রায়) নগ্ন কাহিনী

আমরা প্রত্যেকে সেইসব মানুষদেরই একজন, যাদের সাথে আমাদের প্রতিদিন দেখা হয়।
সে এক বহুকাল আগের কথা..এটা ছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক সন্ধিঃক্ষণ । দেশে কোনও রাষ্ট্রপ্রধান নেই! ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আমরা ৪ জন বন্ধু তখন ঢাকা শহর থেকে বহু দূরে.. চুয়াডাঙ্গা জেলায় আমার নানা বাড়িতে অবস্থান করছি। ঈদের পরের দিন আমরা ৭-৮ বন্ধু বগুড়ার কাছাকাছি এক গ্রামে আমাদেরই আরেক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম।

কিন্তু এই কারফিউ জারি হওয়ার কারণে আর ঢাকা ফিরতে পারিনি। আর তাই তখন আমি প্রস্তাব করেছিলাম চুয়াডাঙ্গায় আমার এই নানা-বাড়ির গ্রামে আসার জন্য। বগুড়া থেকে চুয়াডাঙ্গা ভাঙা-পথে আসতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩ দিন। বাস চলাচল বন্ধ । ফলে ট্রেন.. ভটভটি.. নসিমন..করিমন.. রিক্সাভ্যান.. নৌকা.. হেলিকপ্টার (!)..এমনকি কখনওবা গ্রামের ভিতর দিয়ে পায়ে হেটে আসতে হয়েছে।

সবচেয়ে ইন্টারেষ্টিং অভিজ্ঞতা ছিল পল্ট্রি-মুরগীর বাচ্চা বহনকারি ট্রাকের খাঁচায় করে কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গা আসা। বাইরে থেকে যেন কিছু দেখা না যায় একারনে, পুরো খাঁচা চটের বস্তা দিয়ে ঢাকা ছিল। রাস্তার অবস্থাও খুব বেশি ভাল ছিল না। একটু পরপর গাড়ির ঝাকুনিতে আমাদের পশ্চাৎ-অঙ্গের নম্রকানন বড়ই নিষ্ঠুরভাবে খাঁচার নিচের দিকের গ্রিল দ্বারা আহত হচ্ছিল। আসার পথে আমাদের দু'রাতের এক রাত কেটেছে সিরাজগঞ্জের এক তাতী-পল্লি তে, আরেক রাত কাটে কুষ্টিয়া রেলস্টেশনে।

সদ্য কলেজ পেরুনো আমাদের এই চার বন্ধুর ভিতর সবসময় তখন এডভেঞ্চার..মেশানো অস্থিরতা কাজ করছে। এর মাঝেই একটু পর-পর মোবাইলে খোঁজ নিচ্ছি আমাদের তিন বন্ধুর আরেকটি দলের। দুঃসাহসিক এই তিন নায়কের লক্ষ্য যেভাবেই হোক ঢাকা পৌছুনো। সর্বশেষ খবর পেয়েছি গরু-ছাগল এবং হাস-মুরগি সহ একদল গ্রামবাসির সাথে একটা বড় নৌকায় করে তারা যমুনা নদী পার হতে পেরেছে। রিক্সাভ্যানে করে ভেড়ামারা রেলস্টেশনে যাওয়ার পথে আমাদের ভ্যানে একটু জায়গা চেয়ে নেয় লুঙ্গি-গেঞ্জী পরিহিতা স্থানীয় এক যুবক।

বন্ধুবর শিশির কথায় কথায়..যুবকটিকে জিজ্ঞেস করল, ভাই আপনি কি করেন? যুবকটি খুব সহজ ভাবে খানিকটা লজুক মুখে বলল "ভাই আমি ফেনসিডিল বিক্রি করি.." যুবকের সরলতায় আমরা সবাই মুগ্ধ ! এরপর শিশির আরেকটু নরম কন্ঠে যুবকটির কাছে জানতে চাইল আশেপাশে কোথাও গাঁজা কিনতে পাওয়া যাবে কিনা। সে বলল, সে নিজেই এনে দেবে আমাদের জন্য। স্টেশনে পৌছুনোর সাথে সাথেই শিশির বিশ টাকার একটা নোট যুবকটির হাতে গুজে দিল। মিনিট দশেকের ভিতরেই যুবকটি গাঁজা নিয়ে হাজির ! যাহোক এবারে মূল ঘটনায় আসি। নানা বাড়ির গ্রামে পৌছুনোর পর সারাদিন বিশ্রাম করলাম।

সন্ধ্যার দিকে আমরা চার বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে গেলাম গ্রামের বাজার দেখতে, সেখান থেকে কিছু সিগরেট কিনে নিয়ে চলে গেলাম গ্রামের সরকারী স্কুলের মাঠে। কয়েকটা ফুটবল মাঠের সমান বড় বিশাল এই মাঠের মাঝখানে বসে শুরু হল আড্ডা। আশেপাশে তেমন কোনও বাড়িঘর নেই। মাঠের চারপাশে ঘন জঙ্গল।

আকশে চাঁদ নেই কিন্তু খুব পরিষ্কার তারা দেখা যাচ্ছে। তারার আলোয় আমাদের সবাইকে কেমন যেন ছায়ামূর্তির মতন দেখাচ্ছে। পর্যাক্রমে একটু পর পর এক এক জনের হাতের সিগরেট জ্বলে উঠছে। আলোচনা আস্তে আস্তে আধ্যাত্বিক দিকে মোড় নিচ্ছিল এমন সময় আমাদের ছ'ফুট দু ইঞ্চি লম্বা দীর্ঘাঙ্গি বন্ধু সাগর একটি অদ্ভুত প্রস্তাব দিল। বলল, চল.. সবাই সব কাপড়চোপর খুলে মুক্ত হয়ে এই মাঠে দৌড়াই।

বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে অক্সিজেনের ঘনত্ব কম থাকায়, আমাদের এই দীর্ঘাঙ্গি বন্ধুর মস্তিষ্কে বুদ্ধির প্রবাহ বরাবরই খানিকটা কম। কিন্তু, ওর এই আইডিয়াটা আমারও বেশ মনে ধরল। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসগুলোতে এধরণের কাহিনী পড়েছি কিন্তু নিজে কখনও করা হয় নি এমন কিছু। একজন ছাড়া বাকি তিন জনেই মোটামুটি রাজি হল। কিন্তু, কাপড় প্রথমে কে খুলবে এই নিয়ে বাধল ঘট।

একপর্যায়ে সাগরই উঠে দাড়াল। আন্ডারওয়্যার রেখে বাকি সব জামাকাপড় খুলে, দিল দৌড়..! এরপর আমিও আর দেরি করলাম না। শিশিরও শুরু জামাকাপড় খোলা শুরু করল। সাগরের মত আমরাও শুধু আন্ডারওয়্যার রেখে বাকি সব খুলে ফেললাম। এরপর দৌড়ানো শুরু করলাম।

মনে হচ্ছে বাতাসের বেগে দৌড়াচ্ছি.. একটু পর মনে হল উড়ছি..আর মাঝে মাঝে পায়ের নিচে নরম ঘাসের স্পর্শ পাচ্ছি। ততক্ষণে, সাগর মাঠের শেষ প্রান্তে পৌছে গেছে। কিছুক্ষন পর খানিকটা দূর থেকে আবছা অন্ধকারে আমরা সবাই দেখলাম সাগর ওর আন্ডারওয়্যারটাও খুলে হতে নিয়ে উচু করে ধরে দৌড়াচ্ছে। এরই মাঝে আমি খানিকটা ঘেমে গেছি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘাসের ওপরেই বসে পড়লাম।

সিগরেট জ্বেলে আরাম করে একটা টান দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। আর মনে মনে চিন্তা করলাম, মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা আসলে খুব একটা খারাপ কিছু না ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.