আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্যারোডি বিষয়ক

ভুল করেও যদি মনে পড়ে...ভুলে যাওয়া কোন স্মৃতি.. ঘুমহারা রাতে..নীরবে তুমি কেঁদে নিও কিছুক্ষণ...একদিন মুছে যাবে সব আয়োজন... ‘আমাদের পরবর্তী পাঠক সংখ্যার বিষয় প্যারোডি। পাঠক/পাঠিকারা ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞাপন, গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির প্যারোডি করে পাঠান....’- নিয়মিত যে দৈনিক পত্রিকাটি বাসায় রাখা হয়, ঐ দৈনিকের পাঠকদের পাঠানো লেখা নিয়ে সাপ্তাহিক আয়োজনের পাতায় এরকম একটা ঘোষণা পড়ে বাসনা জেগে উঠলো। আমি আবার লেখালেখি-অন্তপ্রাণ। তবে, অবশ্যই বাস্তবতা-বিবর্জিত নই। সাহিত্য-পাতা বা ঈদ সংখ্যায় আমি যে একদমই বাঞ্ছিত নই, আমার জন্য অ-বাঞ্ছিত এ সত্যটি কষ্ট হলেও মেনে নিই।

কিন্তু তাতে আমার মনোবাঞ্ছনা ও উৎসাহের খামতি হয় না। দৈনিকের পাঠক-মেলা থেকে শুরু করে খ্যাত-অখ্যাত সাপ্তাহিক-মাসিক পত্রিকার বিশেষ পাঠক সংখ্যাগুলোতে আমি নিয়মিত প্রদায়ক। অর্থাৎ কালি-কলম, খাম-ডাকটিকিট খরচ করে আমি নিয়মিত ঐসব সংখ্যার জন্য লেখা ‘প্রদান’ করি। যদিও ঐ সব পত্রিকা-কর্তৃপক্ষ ‘গ্রহণে’র প্রমাণ দেন বেশ অনিয়মিত। তবুও, ৬৭টি লেখা পাঠানোর বিপরীতে ৩ টি ছাপার হরফে দেখার পরও আমি হতোদ্যম হই না।

উদ্যমী রবার্ট ব্র“সের গল্পটা আমি প্রতি সপ্তাহেই দুই বার করে পড়ি। যাই হোক, প্যারোডি লেখার জন্য আমার প্রাণ আই-ঢাই করে উঠলো। সিদ্ধান্ত নিলাম, ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’ - প্যারোডি করব তো ‘সিনেমা’র-ই। জানা-অজানা হিন্দি ছবি তো বটেই, হলিউডি ‘টারমিনেটর’ পর্যন্ত এফডিসিতে এসে প্যারোডি হয়ে গেল, তাহলে আমার আর কি দোষ? ‘দশজনে করে যাহা, আমিও করিব তাহা’। প্যারোডির জন্য বিশ্বখ্যাত সিনেমা ‘টাইটানিক’কেই বেছে নিলাম।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে বাস্তবতার ছোঁয়ায় জীবনঘনিষ্ঠ প্যারোডি অর্থাৎ ‘রিমেক’ হিসেবে লঞ্চডুবি ঘটাবো ঠিক করলাম। ডুবোচরে ঘষা খেয়ে পতনোন্মুখ জলযান থেকে পিছলে পড়ে প্রাণ যাওয়ার পর নায়কের দেহ নদীর জলে ভাসতে থাকবে, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক - ‘প্রেমের মরা জলে ডোবে নাআআ’। বাংলার ‘কেট উইনস্লেট’ কে মহানুভব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাদা-কালো অথবা রঙিন ছাগল পাইয়ে দিব কিনা, যখন চিন্তা করছি, তখনই মনে পড়লো ঘোষণার পরবর্তী অংশ- ‘.... অবশ্যই মূল লেখা এবং আপনার প্যারোডি করা লেখা একসঙ্গে পাঠাতে হবে..’- ‘মূল লেখা’ মানে কি চিত্রনাট্যের পান্ডুলিপি? ‘টাইটানিক’-এর সিডি-ডিভিডি চাইলেও পাইরেটেড কয়েক কপি নীলক্ষেত মোড় থেকে যোগাড় করা যায়, কিন্তু পান্ডুলিপি যোগাড় করতে হলে তো আমাকে ক্যামেরন সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ, সাক্ষাৎ ইত্যাদি মিলে হিসাব করে দেখলাম, সব কাজ শেষ করে লেখা জমা দেয়ার সর্বশেষ তারিখের মধ্যে দেশে প্রত্যাবর্তন অসম্ভবই বটে। সুতরাং, ঐ পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সম্ভাব্য হিসেবে বাংলা ছবির কথা যখন চিন্তা করছি, এ সময় এক ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্খী পিঠে চাটি মেরে বললেন, ‘বে-আক্কেল, তারা পাঠকদের সাথে একটুখানি রঙ্গ করেছে, আর তুমি তাকেই সিরিয়াসলি নিয়েছ? সিনেমার পান্ডুলিপি প্রকাশ করলে ঐ দৈনিকের কয় সংখ্যা ছাপাতে হবে, সে হিসাব আছে?’ আমি সঠিক হিসাব করতে ব্যর্থ হলাম।

সিনেমার সাথে সাথে নাটক, উপন্যাসেরও আকার-আয়তনের কথা চিন্তা করে পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদকের প্রকৃত রগড় বুঝতে পারলাম। ছোট গল্পের কথা মাথায় এলো, কিন্তু রবীঠাকুরের ছোট গল্পের সাইজও যে সা¤প্রতিককালে ঈদসংখ্যাগুলোতে ছাপা হওয়া উপন্যাসগুলোর সম-আয়তনের। গানেও তো সমস্যা। সুর সংযোজন না করে কিভাবে গানের প্যারোডি করবো, তা ভেবে ব্যাকুল হলেও সমস্যার কোন কূল-কিনারা করতে পারলাম না। ‘এক পায়ে নুপুর তোমার, অন্য পা খালি’ - এটাকে না হয় বানালাম - ‘সামনে করি স্তুতি তোমার, পিছে দেই গালি’।

কিন্তু, সবাই যদি মূল গানটা না শুনে থাকেন, তারা কিভাবে প্যারোডি গাইবেন? মালিক-কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পত্রিকার সাথে মূল গানের এক কপি করে সিডি দিয়ে দেবে না! বিজ্ঞাপনের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি অধুনা এর ‘মূল লেখা’ বলতে কিছু নেই। আইডিয়া যা, তা থাকে নির্মাতার মাথায়, কিছুই নেই খাতায়। নির্মাতাদের নাটকের মতোই তাদের বিজ্ঞাপনও ‘ইনস্ট্যান্ট’। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যা মনে আসবে, তাতেই তৈরী হয়ে যাবে নাটক-বিজ্ঞাপন। অবশেষে তাই প্যারোডির সবচেয়ে সহজ রাস্তাটি ধরলাম- ‘কবিতা’।

‘কবিতা’ বলতেই মাথায় চট করে চলে এলো জাতীয় কবির রচনাটি। তবে, এটাকে কবিতা বলে, না ছড়া, তা নিয়ে আবার দ্বন্দ্বে পড়লাম। বাসায় বাংলা-টু-বাংলা অভিধান খুঁজে পেলাম না যে সংজ্ঞাটা দেখে নেব। শেষে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলাম, এই বিষয়ে গবেষণা করা তো আমার কাজ না। বিভাগীয় সম্পাদক ছড়া অংশে ছাপাবেন না কবিতা অংশে, তার মর্জি।

আমি বানালাম- ‘কান না দিয়ে মায়ের হাঁকাহাঁকি সবার পরে বিছানা ছেড়ে উঠবো আমি ডাকি। সূয্যি জাগার অনেক পরে উঠবো আমি জেগে দুপুর কখন গড়িয়ে গেল!- মা বলবেন রেগে। বলবো হেসে, আলসে আমি, ঘুমিয়ে না হয় থাকি সূয্যি মাথার উপর এলেই উঠতে হবে নাকি? আমি যদি না জাগি মা, দিন তো কেটে যাবে। সূয্যি কখন আটকে ছিল, কার জন্যে, কবে?’ নিজস্ব সাহিত্য সৃষ্টিতে বিমোহিত হয়ে ‘একালের শিশুর সাধ’ বা ‘অলস আমি’ নাম দিয়ে এটাই পাঠিয়ে দেব স্থির করলাম। কিন্তু এখন আরেক সমস্যা মাথাচাড়া দিল।

কোন ক্লাসে এই কবিতাটি পড়েছিলাম মনে পড়ছে না। ধরা যাক, প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর বইয়ে কবিতাটি পাওয়া গেল, ‘মূল লেখা’ পাঠাবো কিভাবে, বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এর সাথে দিয়ে দেব? নাকি বইটার ভেতর আমার লেখাটি ভরে কুরিয়ার করে দেব? ধু-র , এইসব সংবাদপত্র কেন যে পাঠকদের সাথে এরকম রঙ্গ করে? কোন কিছুই পরিষ্কার করে উল্লেখ করে না। সৃষ্টির অপচয়-আশংকায় উদ্বিগ্ন আমি সংবাদপত্র ও তার সম্পাদকের মুন্ডুপাত করতে লাগলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।