আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ নৈশব্দের রোদন

শীত পর্ণমাত্রায় পড়ছে। রাত্রি বেলায় কুয়াশার মাত্রাটা তাই একটু বেশি। কুয়াশা আর চাঁদের আলো মিশে মায়াবী পরিবেশ তৈরি হওয়ায় মদনপুরা বিলের মাঝখানে দাড়ালে চারিপাশের বাড়িগুলো অদৃশ্য মনে হয়। দেখে মনে হয় এই বিলের কোন কুল কিনারা নাই। দৃষ্টি বেশি দুর এগোতে পারে না।

কুয়াশার দেয়ালে আটকে যায়। মনে হয় ওপাশে আরেক পৃথিবী আছে। বিশ্ব ব্রক্ষ্রান্ডের অনেক অপরূপ সৌন্দর্যের এটি একটি। শীত আসলে রাশেদ এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাড়ীতে আসে। এটা রাশেদের একান্ত পছন্দ।

রাশেদের একজন প্রিয় লেখক জ্যোছনাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি তার সাহিত্যে জ্যোছনাকে নিয়ে গেছেন এক ভিন্ন মাত্রায়। তাই রাশেদরও জ্যোছনা খুব ভাল লাগে। লেখকের অনেক বিখ্যাত চরিত্রের মধ্যে একটি বিখ্যাত চরিত্র ‘হিমু’। নিজেকে রাশেদ মনে মনে হিমু ভাবে।

রাশেদ চাকুরীর পাশাপাশি লেখালেখিও করে । একজন উঠতি লেখক হিসাবে রাশেদের সুনাম আছে সাহিত্যপাড়ায়। বন্ধুরা অনেকে বলে থাকে যে, রাশেদ তার প্রিয় লেখককে অনুকরণ করে। রাশেদ তাদের কথার প্রতিবাদ করে না। মদনপুরা বিলে রাশেদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ।

শৈশবে ঘুড়ি উড়াত এই বিলের। তার সাথী ছিল বন্ধু মিরণ। রাশেদ ঘুড়ি উড়িয়ে দিত আর মিরণ পরনের লুঙ্গিটাকে বামুনের পৈতার মত কাধে ফেলে ভৌঁ দৌড় দিত। এভাবে লুঙ্গি পরা নিয়ে মিরন তার মায়ের হাতে মার খেত কিন্তু সে কিছুতেই লুঙ্গি ঠিক করে পরতে পারত না। লুঙ্গির গিট দিতে সে পারত না, যদিও কেউ পরিয়ে দিত পরক্ষনেই যখন খুলে যেত তখন সে পূর্বের ন্যায় কাঁধে ফেলে রাখত।

তার বয়স কিছুটা বাড়লে অর্থাৎ যে বয়সে এভাবে লুঙ্গি পরা লজ্জার ব্যাপার তখনও সে মাঝে মাঝে এভাবেই পরে থাকত সম সময়। এভাবে লুঙ্গি পরার কারণে তার শরীরের বিশেষ অঙ্গটি সবসময় বেরিয়ে থাকত। এটি সকলের দৃষ্টিতে পড়ার জন্য সে নিজেও সচেষ্ট ছিল। এ নিয়ে সবাই তার সাথে হাসি ঠাট্টা করতো। তখন সে তাদের সামনে আরো বেশি করে তার বিশেষ অঙ্গটি হেলিয়ে দুলিয়ে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে চলে যেত।

একবার তার এক চাচার দূরে কোথাও যাওয়া কারণে চাচী ও ছোট চাচাতো বোনেরা ঘরে একা। মিরনে উপর দায়িত্ব বর্তায় রাত্রিতে পাহারাদার হিসাবে তাদের সাথে রাত্রি যাপনের। গভীর রাত্রে মিরন তার চাচাতো বোন ভেবে চাচীর উপর চড়াও হয়। পরদিন একথা চাচী সকলের কাছে বলে দেয় আর পুরো বাড়ী প্রচার হয়ে যায় সে কথা। এ নিয়ে মিরন একটুমাত্র বিচলিত হয়নি।

তার সমবয়সী বা তার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট এমন চাচাতো এবং পাড়ার মেয়েদের সাথে বউ বউ খেলত। খেলার চলে তারা স্বামী স্ত্রী সাজত। আর মিরন সেই সুযোগে স্বামীর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করত। সেই সব নিয়ে মিরনের পিতার কাছে নালিশ নিয়ে আসত সবাই। মিরনের পিতা মৌলভী ছিলেন।

তিনি পুত্রের এসব অপকর্মের কথা শুনে লজ্জায় মিরনকে বেদম প্রহার করতেন। চোরের মত মার খেতে পারত মিরন। অবস্থা বেগতিক দেখে মিরনের পিতা মিরনকে বাড়ী থেকে দুরে আবাসিক হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। যে মাদ্রাসায় একবার কেউ ঢুকলে হাফেজ হয়ে তারপর তার মুক্তি। মিরনের পিতা পুত্রকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ী ফিরে আসে।

পুত্র হাফেজ হয়ে এসব বেমালূম ভুলে যাবে। কিন্তু মিরন সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসে। এসকল কারণে রাশেদ তার বন্ধু মিরনের সঙ্গ আস্তে আস্তে দূরে সরে আসে। তারপর জানা যায় মিরন বিদেশে যাওয়া মত বয়স হলে তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর পিতৃমাতৃহীন রাশেদ লেখাপড়া আর ভরণপোষণের জন্য চলে আসে নানারবাড়ী।

আঞ্চলিক ভাষায় বিলকে পাথর বলে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষকের সেচ দেওয়ার সুবিধার্থে পাথরের মাছ খান দিয়ে যে নালা চলে গেছে তার পাশ দিয়ে পায়ে হাটার রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে রাশেদ আনমনে হাঁটছে। রাত্র ক’টা বাজে তা জানার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে তারকারাজির অবস্থান দেখে অনুমান হল রাত্রি দ্বি-প্রহর। কিছু দুর যেতে রাশেদ একটি নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেল।

নারী কন্ঠটি রাশেদকে ডাকছে। কন্ঠটি রাশেদের কাছে খুবই পরিচিত মনে হয়। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না। রাশেদ ভয় পেয়ে দ্রুত হাটতে থাকে। রাশেদ যত দ্রুত হাটছে নারী কন্ঠটি ততই কাছে শুনতে পাচ্ছে।

রাশেদ দৌড়াতে শুরু করল কিন্তু পথের কোন শেষ পাচ্ছে না। অন্তহীন পথে রাশেদ দৌড়াচ্ছে। রাশেদ পায়ে হাটা পথ ছেড়ে ফসল কাটা ধান ক্ষেতের মাঝ দিয়ে দৌড়াতে শুরু করল। পায়ে লতা পেছিয়ে রাশেদ পড়ে গেল ক্ষেতের আইলের ওপর। রাশেদ ওঠে দাড়াতে সাহস পায় না।

একটা শীতল হাতের স্পর্শ রাশেদ তার পীঠে অনুভব করে। রাশেদ সচকিয়ে ওঠে বসে, দেখে তার টেবিলের পাশে হরিপদ কাকা দাঁড়িয়ে আছে। হরিপদ বাবু বলেন- কি বাবা! এখনো ঘুমাও নি? টেবিলের উপর গোঙ্গাচ্ছিলে তাই ডাকতে এলাম। রাশেদ টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলল- কাকা বাবু, আমার ছুটি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আমি কাল ঢাকা ফিরে যাব। হরিপদ বাবু বললেন- তোমাকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে।

ঘুমিয়ে পড়। তোমার বিছানা পাতা আছে। রাশেদ বলল- তেমন কিছু নয়। কাকা বাবু, আমার কিছু টাকা লাগবে। আপনি এ মৌসুমের ফসল বিক্রির টাকা গুলো গুছিয়ে নিন।

হরিপদ বাবু বলল- সে আমি গুছিয়ে রেখেছি। কিন্তু তুমি বলেছিলে আরো কিছু দিন থাকবে। এখন চলে যাবে যে! রাশেদ বলল- আমাকে যেতে হবে। আমার একটা জরুরী কাজ আছে। এই বলে রাশেদ বিছানায় শুয়ে পড়ল।

হরিপদ বাবুকে রাশেদ হরিপদ কাকা বাবু বলে সম্বোধন করে। হরিপদ বাবু রাশেদের বাবার সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন। তাদের মধ্যে বন্ধত্বের সম্পর্ক খুব গভীর ছিল। রাশেদের বাবার মৃত্যুর পর স্ত্রী পুত্র নিয়ে তিনি ভারত চলে যান। কিন্তু কিছুদিন থাকার পর তিনি দেশের টানে চলে আসেন।

বলেন- “এদেশ আমার, এটা আমার মাতৃভূমি। দেশ ছেড়ে স্বর্গে গিয়ে থাকতে পারব না। ” স্ত্রী পুত্র কেউ সঙ্গে আসেনি। মন চাইলে পরিবারের সাথে দেখা করতে যান। তিনি এখন পিতৃমাতৃহীন রাশেদের অভিভাবক।

বিষয় সম্পত্তি সবকিছু পরম যত্নে আগলে রেখেছেন। হরিপদ বাবুর অভিভাবকত্বে রাশেদকে অনেকটা নিশ্চিন্ত। রাশেদের বাবা পৈতৃক সূত্রে অঢেল সম্পত্তির মালিক হন। যাত্রা পালা করে দেশ দেশে ঘুরতেন। যাত্রা দলের মেয়েকে বিয়ে করেছে বলে পরিবারের সাথে তার দুরত্ব তৈরি হয়।

রাশেদ বয়স যখন ৬/৭ বছর তখন একদিন হঠাৎ রাশেদের বাবা এ সংসারের মায়া ত্যাগ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাশেদের মা অথৈ সাগরে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকেন। একেতে যাত্রা দলের মেয়ে, তার উপর রাশেদের বাবার সম্পতির বিশাল অংশ আত্মসাৎ, সুযোগ পেয়ে রাশেদের চাচারা রাশেদের মাকে নির্যাতন করে বাড়ী থেকে বের করে দেন। রাশেদের মা রাশেদকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলে চাচারা রাশেদকে নিয়ে যেতে দেয়নি। সন্তানের শোকে রাশেদের মা কিছুদিন দ্বারে দ্বারে বিচার চেয়ে পাগালের মত ঘুরে বেড়িয়েছেন।

তারপর একদিন হঠাৎ করে উদাও হয়ে গেলেন। আর তাকে খুজে পাওয়া যায়নি। রাশেদ নানার বাড়ীতে বড় হয়। লেখা পড়ায় রাশেদ মেধাবী ছাত্র। পড়া শেষ করে রাশেদ মোটা মাইনে চাকুরী করে।

যে বাড়ী থেকে রাশেদের মা বিতাড়িত হয়েছে, সে বাড়ীতে রাশেদ আর উঠেনি। পিতার বেহাত হওয়া সম্পত্তি চাচাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে রাশেদ আলাদা বাড়ী করেছে। অনেকটা ছবির মত সুন্দর করে একটা বাড়ী করেছে রাশেদ। বাড়ীতে সান বাধানো পুকুর, বাগানে নানা জাতের ফলের গাছ, চারিদিকে প্রাচীর করা বাড়ী। মনদপুরা বিলের ঠিক মধ্যখানে বাড়ীটি হওয়ায় জ্যোছনা রাতে বাড়ীটিতে এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়।

এই বাড়ীতে হরিপদ বাবু একা থাকেন। রাশেদ লেখা লেখির করে তাই চাকুরী থেকে ছুটি পেলেই চলে আসে। গ্রামে রাশেদের যথেষ্ট সুনাম আছে। ছোট বেলায় পিতা মাতাকে হারানো রাশেদকে সবাই খুব আপন মনে করে। সবাই রাশেদের ভাল চায়।

লেখা লেখি করে বলে গ্রামের ছোট বড় সবাই রাশেদকে খুব ভালবাসে। রাশেদ উদ্যোগে গ্রামে একটি পাঠাগার গড়ে উঠেছে। সেখানে ছাত্র, শিতি যুবক, শিক প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ কম বেশি সম্পৃক্ত। বাড়িতে এলে পাঠাগারের সকল সদস্য ও গ্রামের সবাইকে নিয়ে রাশেদ পাঠাগারের উন্নয়ন, গ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, নারী শিক্ষা সহ নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। রাশেদের কথা সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনে।

রাশেদের এগুলো খুব ভাল লাগে। রাশেদ ঘুম থেকে জেগে দেখে চারিদিকে আকাশ আলোকিত হয়ে আছে। সকালের সূর্য হেসে আছে পূর্ব দিগন্তে। সেই হাসির কিছুটা জলক রাশেদের বিছানার এক পাশে দিয়ে বেয়ে নিছে নেমে গেছে। পাখিদের নিজের মাঝে নানা রকম শব্দ বিনিময় রাশেদের মনটা ভরে যায়।

রাত্রের দু:স্বপ্ন ভুলে রাশেদ এখন নতুন দিগন্তে উদ্ভাসিত। এরকম সকাল শহরে পাওয়া যায় না। নির্মল সকাল আর নির্জন পরিবেশ রাশেদকে আবেগায়িত করে তোলে। বুকের ভিতর জমে থাকা বায়ু প্রবল শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে বের হয়ে মুক্ত বাতাসে মিশে যায়। বাহির ঘরে মানুষের কথার আওয়াজ পেয়ে রাশেদ এগিয়ে যায়।

সবাই রাশেদের পরিচিত । রাশেদ সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আগমণের হেতু জানতে চায়। তাদের মধ্যে এক বলে উঠে- রাশেদ ভাই, আমরা ঠিক করেছি এবার শীতে গ্রামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করব। রাশেদের ভিতরটা অজানা শঙ্কায় চমকে উঠে। নাটক, যাত্রা পালা রাশেদের কাছে এক অন্য রকম শিহরণ জাগানিয়া শব্দ।

করতে চাইলে করবে। ভাল উদ্যোগ। আপনাকে আমাদের সাথে থাকতে হবে। আমিতো তোমাদের সাথে আছিই। আপনার সহযোগিতা নাটকটি সফল ভাবে মঞ্চস্থ্য করতে চাই, যাতে নাটকটি উপভোগ্য হয়।

রাশেদ তাদের কথায় সম্মতি অসম্মতি কিছুই জানাল না। সবাইকে বসতে বলল আর হরিপদ বাবুকে নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে ভেতর ঘরে চলে যায়। রূপার সাথে রাশেদ একই অফিসে চাকুরী করে। রূপা অসম্ভব রূপবতী, অবিবাহিত। সাধারণত এমন রূপসী মেয়েরা অবিবাহিত থাকে না।

তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু রূপার বেলায় যে কেন তা হয়নি রাশেদ জানে না। এরকম রূপবতী একটা মেয়ের পাশে সুদর্শন একটা অবিবাহিত পুরুষ পাশাপাশি চাকুরি করলে যা হয় তাই হলো। কিছুদিনে মধ্যে রাশেদের সাথে রূপার সম্পর্ক বেশ গভীর হয়ে উঠে। রাশেদ অফিস থেকে ছুটি নিতে চাইলে আগে রূপার কাছ অলিখিত ভাবে ছুটি নিতে হয়।

এবার রাশেদ রূপাকে না জানিয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে। রূপা রাশেদকে খোজাখুজি করবে ভেবে রাশেদ তার মোবাইল ফোনটি সুইচ অফ করে রাখে। তাছাড়া এখানে যে কয়দিন থাকবে সে কয়দিন একটা লেখার কাজ সারতে হবে। একটা প্রকাশনা সংস্থা তার একটি গল্পের বই বের করবে। তারা কিছু টাকা অগ্রীমও দিয়েছে।

তাই রাশেদ আপাদত লেখার কাজ নিয়ে কিছুদিন ব্যস্ত সময় কাটালো। রাশেদ সবাইকে বিদায় দিয়ে পুকুর ঘাটে এসে বসল। রাশেদ যে গল্পটা লেখছিল তা এখন শেষে দিকে। এখন শুধু নায়ক নায়িকা মিলন না বিরহ দিয়ে শেষ করবে তা নিয়ে ভেবে পাচ্ছে না। অবশ্য এরকম সমস্যায় রূপা ভাল সাজেশন দিতে পারে।

রূপা খুব বুদ্ধিমতি। তার কাছ থেকে একটা সমাধান চাওয়া যায়। এই ভেবে রাশেদ তার মোবাইলের সুইচ অন করল। অন করেই মিসকল এলার্টে রূপার অনেক গুলো কল দেখতে পায়। ফিরতি কল করার জন্য অনেক গুলো ম্যাসেজ আছে।

রাশেদ ভাবছে রূপা খুব রেগে আছে তার উপর। একেতে না বলে আসা তার উপর আবার মোবাইল বন্ধ করে রাখা। রাশেদকে ভাবছে এবার রূপার কাছ থেকে বুকনি খেতে হবে। কয়েকবারের চেষ্টায় রাশেদ ভয়ে ভয়ে রূপার মোবাইল নাম্বার ডায়াল করে। অনেক্ষণ মোবাইল বেজে রিসিভ হয়।

ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ পেয়ে রাশেদ মোবাইল লাইন কেটে দেয়, ভাবে ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছে। রাশেদ মোবাইল কল কেটে দিয়ে নাম্বার দেখে। ঠিক আছে, এটাইতো রূপার নাম্বার। সে আবার রূপাকে কল দেয়। এবার রূপা রিসিভ করে।

রাশেদ রূপাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের দোষ ঢাকতে একতরফা কথা বলে যায়। বলে আমি সত্যিই অন্যায় করে ফেলেছি, তোমাকে না জানিয়ে আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি। এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করো। আর কখনো এমন হবে না। রাশেদ তার কথা গুলোর কোনো ফিরতি জবাব না পেয়ে একটু দম নেয়।

তারপর ওপাশ থেকে কান্না শব্দ পায় এবং মোবাইলের সংযোগ কেটে যায়। তারপর রাশেদ শত চেষ্টা করেও ওপাশের মোবাইলে সংযোগ পেতে ব্যর্থ হয়। মোবইলের সংযোগ কেটে গেলেও তার কান্নার শব্দটি রাশেদের কানে অনবরত বেজেই চলছে। রাশেদ মা যখন রাশেদকে ছেড়ে যেতে চাননি তখন এরকম কান্নার শব্দ হয়েছিল। সেই শব্দ রাশেদের স্মৃতিতে আজও সজিব।

ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ রাশেদের সেই স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। রাশেদ ভাবে পৃথিবীর সকল কান্নার শব্দ একরকম। পৃথিবীতে অনেক ভাষা ভাষির মানুষ থাকলেও হাসি ও কান্নার ভাষা সবারই এক। কান্না সুর প্রিয়জনকে হারনো, কান্না দু:খের কথাই প্রকাশ করে। দূরাগত রাখালের বাঁশির সুরের মতো রাশেদের কানে রূপার কান্নার সুর নিরন্তর বেজে চলছে।

সেই সুর রাশেদে বুকের ভেতর উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি করছে। এ ঢেউ একবার তীরে আচড়ে পড়ছে আবার আচমকা টান মেরে গভীরে নিয়ে চলছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।