আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডন, ম্যানিলা, সিডনী,মেলবোর্নঃ কোথায় একাধিক মেয়র,একাধিক সিটি কর্পোরেশন?

ডিসেম্বরের এক তারিখের প্রথম আলো থেকে উদ্ধৃতিঃ “ঢাকাকে ভাঙা হচ্ছে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকাকে ভাঙছি না, বরং সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য ডিসিসিকে ভাগ করা হয়েছে, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু কিছু লোক অন্য কোনো উদ্দেশ্যে এর বিরোধিতা করছে। ’ তিনি বলেন, লন্ডনে দুটি, ম্যানিলায় ১২টি, সিডনি, মেলবোর্নসহ অনেক শহরেই একাধিক সিটি করপোরেশন করে সুফল পাওয়া গেছে। “ শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শেষের অংশ নিয়ে আমার একটু কৌতুহল জেগেছে।

তাই উনার বক্তব্যে উল্লেখিত শহরগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করার উদ্দেশ্যে ঝাপিয়ে পড়লাম কারেন্ট জাল নিয়ে আন্তর্জালিক মহাসমুদ্রে। জাল উঠানোর পর যা পাওয়া গেলোঃ লন্ডন লন্ডনের দু’জন মেয়র আছেন এটি সত্যি কথা। একজন হচ্ছে লর্ড মেয়র এবং আরেকজন হচ্ছেন মেয়র অব লন্ডন। লর্ড মেয়র আসলে একটি নামে মাত্র মেয়র পদ। এটি একটি প্রাচীন এবং অরাজনৈতিক পদ।

লর্ড মেয়রের মূল দায়িত্ব লন্ডনের আর্থিক খাতের প্রতিনিধিত্ব করা। তাঁর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ প্রাচীন রোমান লন্ডন স্কয়ার মাইলের মধ্যে। ইনি শুধুমাত্র এক বৎসরের জন্য নির্বাচিত হন কাউন্সিলরদের দ্বারা। বর্তমান লর্ড মেয়রের নাম হচ্ছে ডেভিড উটন। অন্যদিকে মেয়র অব লন্ডন একটি পুরোপুরি রাজনৈতিক পদ।

প্রতি চার বৎসর অন্তর অন্তর মেয়র নির্বাচিত হন। কার্যত বৃহত্তর লন্ডনের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ন্ত্রণ করে মেয়র অব লন্ডন। সুতরাং নামে লন্ডনের দু’জন মেয়র থাকলেও কার্যত মেয়র কিন্তু একজনই যার সাথে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের তুলনা করা যেতে পারে। তিনি হলেন এই মেয়র অব লন্ডন, বরিস জনসন, যিনি ২০০৮ সালে কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। সুতরাং লন্ডনে একাধিক মেয়র বা একাধিক সিটি কর্পোরেশন রয়েছে, এটি খুবই আংশিক ভাবে সত্য।

ম্যানিলা ম্যানিলা সিটি এবং মেট্রো ম্যানিলা দু’টো আলাদা প্রশাসনিক সত্ত্বা। মেট্রো ম্যানিলাতে ১৬টির মত শহর আছে যেগুলোর আলাদা মেয়র আছে। ম্যানিলা সিটি তার মধ্যে একটি। সুতরাং ঢাকার সাথে তুলনা করতে গেলে ম্যানিলা সিটিকে করতে হবে ম্যানিলা মেট্রোকে নয়। তাই ম্যানিলার সাথে ঢাকার তুলনা একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।

মেলবোর্ন, সিডনী অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শহরগুলোতে নির্বাহী দায়িত্ব আছেন লর্ড মেয়র এবং এটি একমাত্র মেয়র পদ। এই লর্ড মেয়র যুক্তরাজ্যের লর্ড মেয়রের মত নাম মাত্র কোন পদ নয়। এটিই একমাত্র মেয়র পদ যেটি রাজনৈতিক ভাবে নির্বাচিত এবং নির্বাহী দায়িত্ব পালন করে। সিডনীর বর্তমান এবং একমাত্র মেয়র হচ্ছেন ক্লোভার মূর এবং মেলবোর্নের রবার্ট ডয়েল। সুতরাং এসব শহরে একাধিক সিটি কর্পোরেশন বা একাধিক মেয়র কোথা থেকে আসলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের শহরগুলোর উদাহরণ ছাড়াও আরও কিছু প্রাসংগিক ইস্যু অন্যান্য সরকারী বক্তব্যে উঠে এসেছে। তার মধ্যে কয়েকটিঃ বলা হচ্ছে যে ঢাকা বিভক্তি মানে ঢাকা শহর বিভক্তি নয়। এটা শুধু মাত্র ঢাকার প্রশাসনিক কাঠামোর বিভক্তিকরণ। এটা কতখানি সত্য? কোন শহর বা গ্রাম যাই হোক না কেন, সেটি সংজ্ঞায়িত হয় প্রশাসনিক কাঠামো দ্বারাই। সুতরাং প্রশাসনিক কাঠামোকে বিভক্ত করা মানেই হলো শহরকে বিভক্ত করা।

ঢাকা শহর বিভক্তিকে কি এটি প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা যায়? প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ একটি এখনই আছে। ঢাকা সিটি করপরোশনের ১০টি জোন আছে এবং প্রত্যেকটির আলাদা এক্সিকিউটিভ অফিসার রয়েছে। শুধু তাই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে রয়েছে নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার। যদি সম্প্রসারণ উদ্দেশ্য হতো তাহলে এই জোনাল অফিসগুলো এবং ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়িয়ে সেটি সহজেই করা যেতো। এটাও দাবী করা হচ্ছে যে, সেবার মান এবং পরিধি বাড়ানোর জন্যই এই বিভক্তি দরকার ছিল।

ব্যাপারটি কতখানি সত্যি? উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, একটি শহরের জনসংখ্যার র‍্যাংকিং অনুযায়ী ঢাকার অবস্থান ২৪-তম। এর উপরের ২৩টি শহরের নির্বাহী দায়িত্বে একজন মেয়রই রয়েছে। সুতরাং জনসংখ্যার সাথে সেবার মান এবং পরিধির বৃদ্ধির সাথে একাধিক ভাগের কোন সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বিভক্তি ছাড়া আর নতুন কিছু প্রস্তাবনায় আনা হয়নি। দেখা যায় যে সিটি কর্পোরেশনের কাঠামোতে একচ্ছত্র ক্ষমতা মেয়রের, সেই তুলনায় ওয়ার্ড কমিশনারদের কোন ক্ষমতাই নেই যদিও মেয়রের মত ওয়ার্ড কমিশনার ও একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি।

এই ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস না করে কিভাবে ক্ষমতা এবং সেবার বিকেন্দ্রীকরণ হবে সেটা ঠিক বোঝা গেলনা। আর সিটি কর্পোরেশনকে সেবা প্রদান করতে হলে তো সেবা প্রদানকারীর উপর কর্তৃত্ব থাকতে হবে। শুনলে আশ্চর্য হতে হয় যে সিটি কর্পোরেশনের ওয়াসা, ডেসা, পুলিশ কারও উপর কোন কর্তৃত্ব কখনই ছিল না এবং নতুন বিলেও নেই। শুধু দু’ভাগ করে দিলেই ভাল সেবা দেয়া যাবে এর চেয়ে উদ্ভট ধারণা আর কিছুই হতে পারে না। সূত্রঃ http://www.citymayors.com/ http://www.dhakacity.org/ Click This Link Click This Link http://en.wikipedia.org/wiki/Lord_Mayor Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.