আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাহিত্যে কর্ষিত উত্তরাধিকার : লন্ডন থেকে সিলেট অথবা সিলেট থেকে লন্ডন - ৯ম পর্ব



সাহিত্যের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ধারা হচ্ছে , মরমী বা আধ্যাত্মিকতাবাদ। গান ও সুরের লহরীতে ভেসে যারা তার প্রভুর সান্নিধ্য খোঁজেন , তারা বাউল। তাদের খুব বেশী কিছু চাওয়ার থাকে না জীবনের কাছে, সমাজের কাছে। তারা গেয়ে যান। বিকশিত হন।

আলোকিত করেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মনন , শিকড়ের অন্বেষণে। আশির দশকে সিলেট বিভাগ এলাকায় একটি বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ''তুই যে ডালে ভর করেছিলে রে পাখি সে ডালে তোর ভর লইলো না এ দেশ নয় আপনা । উড়ে যারে ডালের পাখি , এ দেশ নয় আপনা। '' গানটি লিখেছিলেন , কবি নুরুল গনি।

আর গেয়েছিলেন ক্বারী আমিরুদ্দীন আহমদ। গীতিকবি নুরুল গনি ছিলেন বিলাত প্রবাসী। প্রায় একই সময়ে আরেকজন বিলাত অভিবাসী গীতিকবির গান বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তিনি কবি রমিজ উদ্দীন। এই কবির বেশ কটি গান ও ক্বারী আমিরুদ্দীন আহমদ নিজে গেয়ে প্রচার করেন।

............................................................ বিলাতে এই সময়ে বেশ ক'জন গীতিকবি রয়েছেন ,যারা গান লিখছেন আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি কে লালন করে। তারা গান লিখছেন, আধ্যাত্মিক চেতনায়। প্রখ্যাত গীতিকার আব্দুল গাফফার চৌধুরীর পদাংক অনুসরণ করে গীতিকার হিসেবে আ ম নেসওয়ার, আব্দুল মুখতার মুকিত, হিরণ বেগ, সৈয়দ দুলাল এই সময়ে আলোচিত হচ্ছেন। সৈয়দ দুলালের গান -'' কি মায়া লাগাইলায় রে বন্ধু'' গানটি গেয়ে দেশে বিদেশে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন শিল্পী শাহনাজ বেলী। এ ছাড়াও , গীতিকবি হিসেবে ইলিয়াছ উদ্দীন আহমদ , পীর মোহাম্মদ ইস্কন্দর মিয়া, শোয়েব আহমদ শওকতি , নিয়মিত সাধনা অব্যহত রেখেছেন।

হয়তো আরো অনেকেই আছেন, যারা সাধনা করছেন নিভৃতে থেকে। পীর মোহাম্মদ ইস্কন্দর মিয়ার লেখা গানের সংখ্যা সহস্রাধিক। সাধক এই মানুষ গানের ভুবনকে দিয়ে যাচ্ছেন তার শেষ শক্তিবিন্দু। এই যে মরমী মানুষেরা , তাদের প্রতি শ্রদ্ধা না জানালে আমার এই লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বিলাতে এই সময়ে স্থায়ী নিবাস গড়েছেন , বাংলাদেশের অন্যতম মরমী গানের ধারক ক্বারী আমিরুদ্দীন আহমদ।

তার লেখা গানের বই - '' গোলজারে মা'রেফাত '' ,'' বিরহউচ্ছাসউক্তি '' , ''কালনেত্র'' অন্যতম। দেশের প্রখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ তনয় , হাবিবের পরিচালনায় '' মায়া'' এ্যলবামে একটা গান খুব জনপ্রিয় হয়। '' মায়া লাগাইছে, দিওয়ানা বানাইছে'' ( শাহ আব্দুল করিম প্রণীত ) । এই গানটি ও যারা গেয়েছেন সেই দুই শিল্পী ও বিলাত প্রবাসী । কায়া এবং হেলাল।

তারাও বাংলা গানের জগতে এখন আলোচিত শিল্পী। এছাড়া , হিমাংশু গোস্বামী , আলাউর রহমান, সয়ফুল আলম, সুজানা আনসার, শফিকুন নূর তনয় সোহেল নূর সহ আরো আছেন নতুন প্রজন্মের অনেক শিল্পী । ........................................................ ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড থেকেই একটি ক্যাসেট এ্যালবাম বের হয়। নাম - ''আনন্দে বেড়াব '' - শিল্পী সৈয়দ আতাউর রহমান। ক্যাসেট টি বের করে , ঝংকার - লন্ডন।

পরিবেশনায় ছিল - সংগীতা, ব্রিকলেন, লন্ডন। এই এ্যলবামটির শিরোনাম হয় আমার একটি গান দিয়ে। ক্যাসেটে প্রথম গানটিই ছিল আমার। এখানে গানটির কথা তুলে দিচ্ছি । '' আনন্দে বেড়াব মোরা মুক্ত বাতাসে তোমায় নিয়ে যাবো ঐ চাঁদের দেশে ।

তোমায় ভেবে এঁকেছিনু কতোই আলপনা সুরে ছন্দে করেছি গান রচনা পুরিবে আমার বাসনা থাকিলে পাশে । । তুমি আমার জীবনের পুষ্পকলি তাইতো গো ভালোবেসে সেজেছি অলী যাবো সকল দুঃখ ভুলি তোমার পরশে। । সীমাহীন দিগন্তের মাঝে হবো একাকার বহিবে পুলকধারা প্রেম যমুনার ইলিয়াস বলে হৃদয় আমার আছে এই আশে ।

। '' বলে রাখি , এই নিবন্ধ টি পড়ে কেউ যদি এই ক্যাসেট টি শোনতে আগ্রহী হন, তারা সংগীতা অথবা ব্রিকলেন মিউজিক হাউসে খোঁজ নিতে পারেন। আমার এই গানটিতে প্রথমে কন্ঠ দেন , বিশিষ্ট বাউল শিল্পী মুনিবুর রহমান সরকার। যিনি মরমী বাউল শিল্পী আলী হোসেন সরকার এর বড় ছেলে ও মুজিবুর রহমান সরকার এর বড় ভাই । .............................................. বিলাতের সাথে, বিলাতের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে এভাবেই জড়িয়ে আছে আমার মনন।

ছায়া পড়েছে ব্রিকলেনের ইটে ইটে। আমি দেখেছি, আমার নাবিক পিতা কিভাবে তার জাহাজ নিয়ে ভিড়ছেন টেমসের পাড়ে। না বাস্তবে নয়। কল্পনায় । ( চলবে ..........)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।