আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনিক বসবাস

হৃদযন্ত্রের দড়িদরা বাঁধা আছে উল্টাপাল্টা ভাবে। জানিনা একথা শুনে আর কার মনে কী ভাব হতো, আমার প্রচণ্ড রকম হাসি আসল ডাক্তারের কথা শুনে। ডাক্তার অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। যে ইতস্তত ভাব নিয়ে আমাকে প্রথমে কথাগুলো বলছিল, এখন রীতিমত থমকে গেল। আসলে আমি ঠিক আছি কি না ভেবে।

কেউ তো সাথে আসে নাই একা এসেছে রোগিণী । বেশী ভরকে গিয়ে এখন মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো। সে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল আর ইউ ওকে? আর ইউ ওকে? আমি বেচারার অবস্থা খুব বুঝতে পারছি কিন্তু কি করি হাসি থামাতে পারছি না কিছুতেই। নিজেকে বেশ ইউনিক মনে হচ্ছে। আর সবার মতন নয় একদম স্পেশাল পিস এই পৃথিবীতে।

অন্য সবার চেয়ে আলাদা কিছু হওয়ার মজাটাই আমাকে হাসাচ্ছে এছাড়া ডাক্তারের ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখের চেহারা। ও আমাকে সান্ত¦না দিবে কী আমিই কোন রকমে লাল হয়ে যাওয়া মুখ চোখ সামলে, হাসলেই চোখের কোনে যে পানি জমে তা মুছে দৃঢ়তায় বললাম, তুমি ভেবো না আমি ভয় পাইনি। তা এখন কী করতে হবে আমাকে বলো। স্বস্তি পেয়ে বলল, তোমার সমস্যাগুলোর উপর নজর রাখব আমরা আর আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করব অবস্থার অবনতি হলে তখন হয়তো শৈল্য চিকিৎসায় যাব। মনে মনে ভাবছি অবস্থার অবনতি আর কী হবে এমন করেই তো কেটে গেলো অর্ধেকের বেশী জীবন।

এই বয়সে তোমরা কাটাকাটি করে কী আর নতুন জীবন দিবে আমাকে? তবে কিছু না বলে। আচ্ছা । ছোট করে বলে নতুন একটা এপয়ন্টমেন্ট নিয়ে বেড়িয়ে এলাম তাড়াতাড়ি। ও আমাকে এগিয়ে দিতে দরজা পর্যন্ত আসল। যেতে পারবে তো? মাথা নেড়েই জানালাম হুঁ, আমি আর কথা বাড়ালাম না।

একা হয়ে যেতে চাই। একাই তো থাকি সারাক্ষন তবু এই মুহুর্তে শুধু নিজের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন নিরবতায় হারাতে চাই। একা হয়ে যাওয়ার আমার কতগুলো নিজস্ব তরিকা আছে। আমি জনসমুদ্রে বসে আমার নিজ ভাবনা সমুদ্রে ডুব দিতে পারি কখনো। আবার কখনো দূরে বহু দূরে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছোট একটা পাখির গান বা পাতা উড়ার শব্দও আমাকে বড় বিরক্ত করে তুলে।

কখনো সিনেমা হল থেকে বেড়িয়ে মনে হয় আমি ছবিটার কিছুই দেখিনি আমি আমার মধ্যে মগ্ন ছিলাম। এই মুহুর্তে আমি কেমন পরিবেশ চাইছি তাই ভাবতে হবে প্রথমে। নিচের লবিতে নেমে ফুড কোর্টের দিকে হাঁটা দিলাম। লোকজন আসছে, যাচ্ছে, খাচ্ছে, এত লোকজনের ভিতর হৈ চৈ নেই, কেমন এক শান্ত পরিচ্ছন্ন ভাব আছে। টিম হর্টনের সামনে বরাবরের মতন লম্বা লাইন।

আমিও নীরবে প্রায় কুড়ি জনের পিছনে দাঁড়িয়ে পরলাম। খুব সময় লাগল না মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমার ডাক পরল। ব্যস্ত হাতে সুন্দর ভাবে মেয়েটা আমার খাবার দিল। কফি আর ডোনাট নিয়ে জুত মতন একটা টেবিলে বসে আমি বিষয়টা বোদগম্য করার চেষ্টা করলাম। আমার হৃদয়ের তন্ত্রীগুলো সঠিক ভাবে নেই, যে ভাবে থাকার কথা, যেভাবে সবার থাকে সে ভাবে নেই আছে অন্য জায়গায় লাগানো।

কথাটা মনে হতেই আবার আমার হাসি আসতে শুরু করল। কফি পান করতে করতে একাকী একজন ফিকফিক করে হাসছে। পাশের টেবিলের দু চারজন আড় চোখে দেখল আমাকে। পাশের টেবিলের একাকী বৃদ্ধা সুযোগ পেয়ে আমার চোখে তাকিয়ে হাসল। ওর হাসি দেখে আমার আরো হাসি আসল, মনে মনে বললাম বুঝেছি তোমার মতলব, কেউ নাই তাই আমার হাসির বাহানা ধরে আমার সাথে কথা বলতে চাও, আমি এখন তোমাকে পাত্তা দিচ্ছি না ।

এখন আমার নিজের সময়। ওর আর আমার বয়স একই হবে কিন্তু ও যেমন বুড়িয়ে গেছে আমি তেমন নই। আমার বাচ্চারা সবাই বড় হয়ে চাকরীতে ব্যস্ত, আমাকে নিয়ে ওদের কাছে রাখার বহুত বাহানা করেছিল। আমি তো জানি এত বাহানার কারণ দুজনে চাকরী করবে আর আমাকে বাচ্চার ন্যানী হতে হবে । ও সব অনেক করেছি তোমাদের জন্য।

এখন আমি ফ্রি টাইম কাটাব। উৎসব জন্মদিনে পার্লার থেকে সেজে বড় গিফ্টের বক্স নিয়ে আমি লিমোজিন থেকে নামি। সবার সাথে হাই হ্যালো বলে, কেক কাটা হলে নাতি-নাতনীর গাল টেনে থুতনি নেড়ে বাই বলে চলে যাই। ওদের বন্ধু বান্ধব অবাক হয়ে দেখে স্পেশাল মমকে। বউ, জামাইরা এমন শাশুড়ি না পাওয়ার জন্য একটু ঈর্ষার চোখে দেখে আমার ছেলে মেয়েদের।

আমার ছেলে, মেয়ে, বউ, জামাই বেশ গর্বের সাথে গল্পের ঝুড়ি মেলে ধরে বন্ধুদের সামনে। “মা, লাস্ট উইকটা সেলিব্রেট করল, জন্মদিন স্পেশাল বাচ্চার সাথে। ফেন্টাসি কিংডম, পাঁচতারায় ডিনার পার্টি বা ড্যান্স আয়োজন এছাড়া তিনদিনের ক্রুজ বা দূরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় বাচ্চার বয়স অনুপাতে। আমরা যতই ভালো গিফ্ট দেই না কেন ওরা অপেক্ষায় থাকে নানু বা দাদীর উপহারটার জন্য। ” ওদের স্পেশাল মাদারের গল্প বলার সুযোগ দিয়ে আমি চলে যাই।

এই স্পেশাল হওয়াটা আমি বড় চেয়েছি। না টাকা পয়সায় না, হতে চেয়েছি নিজের ব্যবহার দিয়ে। সে চেষ্টা করে এসেছি সারা জীবন, বিশেষ কিছু না হলেও হয়েছি অন্যের থেকে ভিন্ন। কিন্তু অর্ধ জীবন পার হয়ে শেষ পারে এসে জানলাম জন্ম নিয়েছি অন্য রকম এক্কেবারে আলাদা হয়ে। মাঝে মাঝেই বুকটা ব্যথা করে, দৌড়ের উপর কিছু করতে গেলে প্রাণ পাখি যায় যায় করে, দম বন্ধ অবস্থা।

তার অন্য কারণ ভেবে এসেছি এতদিন। স্বাভাবিক সব মানুষের চেয়ে রক্তের পরিমাণও আমার শরীরে অর্ধেক, এদিকেও স্পেশাল । রক্ত শূন্যতা হতে পারে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণ কিন্তু পিঠের ব্যথা যা সারাতে অনেক টাকা ম্যাসাজ থেরাপী আর আকুপাংচারের পিছনে ব্যয় করে ফেলেছি এখন জানা গেলো ওরা কিছুই করেনি। শুধু সাময়িক ব্যথা নিরাময় হয়েছে ওদের মেশিনের ঘষাঘষিতে। হুম সবাই বেশ পকেটের টাকা বিজ্ঞাপনের জোড়ে বের করে নিচ্ছে আর আমরাও তা ঢেলে দিচ্ছি।

ফল কিছুই হচ্ছে না। মানসিক চিন্তাই সব ব্যথা নিয়ন্ত্রক বা বার্ধক আসলে। হা হা হা আবারো আমার ভুঁড়িতে ভূমিকম্প উঠছে হাসির জোয়ারে। মন নিয়ন্ত্রিত দেহঘড়ি আমরা কত কী পয়দা করি। আচ্ছা এই শব্দগুলো মনে আসল হঠাৎ, বেশ তো শব্দগুলো! এ নিয়ে কোন ফকির সাধক গান লিখে নাই? আছে মনে হয় আমার জানা নাই।

বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের কত কিছুই যে অজানা পরে আছে। নিজের শরীর যা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি তারই খবর জানলাম আজ মোটে। ২ কফি শেষে আমি উঠে পরলাম আজ শহর ছেড়ে দূরে চলে যাবো কিন্তু কোথায়, কাউকে কি সাথে নিব? না আজ শুধু আমার দিন। পার্কিংলট থেকে গাড়ি বের করতে করতে ঠিক করে নিলাম ওসাকা বীচে চলে যাবো, দিনটা বড় সুন্দর আগস্টের রোদে ঝলমল করছে পৃথিবী। বাড়ি ফিরে সময়টা ঘরে বসে কাটানোর চেয়ে রৗদ্রোজ্জ্বল আকাশের নিচে কাটাই।

রোদ খুব রেয়ার এখানে এমন মহার্ঘ দিন ঘরে বসে মিস করা ঠিক হবে না, বিশেষত আজকের এই বিশেষ খবর পাওয়ার দিনটা সেলিব্রেট করা যাক। ডন ভ্যালি পার্কওয়ে রাস্তাটা এই শহরের ভিতর আমার একটা প্রিয় রাস্তা। আঁকাবাঁকা দুপাশে সবুজ আর নিচে ভ্যালি দারুণ কিন্তু ভীড় লেগে থাকে খুব। আজও অনেক ভীড়, থাক ভীড় আমার কোন তাড়া নেই। চারপাশের গাড়ির বহরের সাথে আমি চলেছি যাবো উত্তরে ঘণ্টা দেড়েক দূরে শহর থেকে।

আধঘণ্টা লাগল মিনিট বিশের পথ পেরুতে আজ। আমার পাশের কালো মার্সিডিজে বসা জুটি খানিক পরপর চুমু খাচ্ছে। মেয়েটার সোনালী চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে হুড খোলা বাতাসে। ছেলেটার সেন্ডো গেঞ্জির বাইরে মজবুত পেশীবহুল বাহু । এক হাতে জড়িয়ে আছে মেয়েটাকে অন্য হাতে স্টিয়ারিং ধরা।

ওদের দেখে খুব ভালো লাগল আমার। জীবনটা প্রানবন্ত উচ্ছল কোন বাঁধা নিষেধের বেড়া নেই যা মন চায় তাই করো। এক যুগের বেশী সময় সেই বাঁধার প্রাচীর ভাঙ্গতে গেলো। কী দুঃসহ অবস্থা ভাবলে দম বন্ধ হয়ে আসে এখনো। আজকের এই খবরটা আগে জানলে হয়তো বাঁচা হতো না এতকাল।

জীবনের শুরুটা স্পেশাল আমিত্ব নিয়ে শুরু হয়েছিল। আজ থেকে সেই ষাট পঁয়ষট্টি বছর আগে সব বন্ধুদের যখন নান রকমের বাঁধার প্রাচীরের ভিতর বসবাস তখন আমার ছিল খোলা মাঠ, আঙ্গিনা ছড়ানো জীবন। কিছু চাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি কখনো। ছেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজী, সিনেমা দেখা এসব আমার বাড়িতে কেউ কিছু মনে করতেন না। শিল্প সংস্কৃতির আঁধার আমাদের বাড়ি ।

অন্যদের নানা, দাদারা যখন নামাজ, রোজা এবাদত বন্দেগীর জন্য কড়া আদেশ দিয়ে রাখেছেন, ধর্ম পর্দা পুসিদা নিয়ে ব্যস্ত তখন আমার দাদা, সবাই যখন ছেলে খুঁজছে মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য, দাদা তখন তাঁর নাটকে পাঠ করার জন্য আমাকে মনোনীত করলেন। নানা খবর পাঠালেন তার সাথে বিভিন্ন সভায় গান গাওয়ার জন্য। ঈর্ষার চোখে দেখে আমাকে আমার বন্ধু বান্ধবী। কী ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিস রে তুই! ভাগ্য তো আর আমি বদলাতে পারি না। এমন দাদা, নানা, বাবা আমার কপালে জুটেছে যাদের আমি বদলাতে তো পারি না ।

জন্মেছি স্পেশাল হয়ে, বিশাল ভূখণ্ড ভেঙ্গে তিন খণ্ড করে দিলাম জন্মের সাথে সাথে। চৌদ্দপুরুষের ভিটা মাটি ছেড়ে দাদা নানা, পূর্ব বঙ্গে বসতি স্থাপন করলেন। ঐটুকু ছোট বয়সে ওদের কেমন কেটেছে সেই উদ্বাস্তু জীবন তা মনে রাখতে পারি নাই তবে আমি কুলে কাঁখে চড়ে দেশ পাড়ি দিয়ে বড় হতে হতে বেশ গোছানো সব পেয়ে যাই, স্পেশাল হয়েই কেটে গেলো। কৈশোর, যৌবনের শুরুতেই যখন বান্ধবীরা দু, চার বাচ্চার মা হয়ে জীবনের সব সাধ সংসারের পিছনে ঢেলে দিয়েছে, অপেক্ষা করছে সন্তান সন্ততির বিয়ে থা দিয়ে কবরে পা বাড়াবার তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ঝকঝকে একখানা খেতাব নিয়ে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করে জীবনটা কে নতুন ভাবে শুরু করার স্বপ্ন দেখছি। ইচ্ছে ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সাজানো পরিকল্পিত একটি গ্রাম তৈরী করার।

গতানুগতিক জীবন কী আমার ভালো লাগে। ছোট বেলা থেকে স্পেশাল মাল। এসি,ডিসি পাত্রের সন্ধান চলছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেও চলে তবে আমি বেঁকে বসলাম এই নিয়ম মাফিক বিয়ে দেয়ার জন্য এমন পড়ালেখা গান বাজনার কৌলন্য না করালেও তো হতো। কেউ বাঁধা দিল না সোজা সাপটা জানতে চাওয়া, তুমি কি করতে চাও? আমি নিয়মের বাইরে একজন কে বিয়ে করতে চাই। যার টাকা সম্পত্তি, পরিবারের জোর কিছুই নাই কিন্তু কথায়বার্তায় চৌকস।

লেখাপড়ায় প্রচণ্ড ভালো, রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত বুনো একটা ব্যাপার আছে। একেবারে আলাদা। সেই আলাদার সাথে জীবন পথে পাড়ি জমালাম। সবার অনুমতি নিয়েই। যাও, নিজের পছন্দের জীবন দেখো।

তোমাকে তো আর হাত পা বেঁধে মানুষ করিনি। ডুবে যেতে থাকলে সাঁতরে উঠতে পারবে। দাদার এই কথার উপর কেউ আর উচ্চবাচ্য করার সাহস করল না। যদিও মনে কেউ বিষণ্নতা ধারণ করেছিল হয়তো বা। বনেদী বাড়ির মেয়ে সাধারণ ঘরের বধু হয়ে শুরু হলো অন্যরকম জীবন দেখা।

আমার তাতে আপত্তি নাই আমি তো এমনি কিছু চেয়েছিলাম, নতুন কিছু দেখব বলে। চৌকস মানুষটার মোহ আমার সময় আনন্দময় করে তুলে। কিন্তু রঙিন স্বপ্নের জীবন আর বাস্তবতা বড় পার্থক্য। আমি সারাদিন একা থাকি ওর বাড়ির এক দঙ্গল মানুষের সাথে। যাদের অনেক অভাব আর অনেক চাওয়া।

ওরা মনে করে আমি ওদের সব সমাধান করে দিব। অভাব আমি মিটিয়ে দিতে পারি কিন্তু আমি সেটা করব না আমার এই স্পেশাল বিষয়টা ওরা বুঝে না বরং আমাকে জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা চলে। আমি সব বুঝে না বোঝার ভান করে থাকি আর যে মানুষটাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন। বিয়ের আগে যেমন আমার জন্য ব্যস্ত হয়ে সে ছুটে আসত সময় কাটাতো সে আকর্ষণ কোন আর আভাস পাইনা। মনে হয় আমার জন্য তার কোন টান নাই অথবা আছে কিন্তু সময় নাই।

দুজনে মিলে স্পেশাল এক নতুন যৌথ জীবনের যে স্বপ্ন ছিল তা দিনে দিনে ক্ষয়ে মলিন থেকে মলিনতর হতে থাকল এছাড়া একধরনের উদ্বিগ্নতা সারাক্ষন ঘিরে আছে। কখন জেলে যাবে কখন লুকিয়ে থাকতে হবে তাকে এর কোন কিছুই আমি তাল পাই না। তার উপর আছে শাশুড়ির আদেশ নিষেধের পাহারা। এটা করো না, ওখানে যেও না। এমন কি আমার খাবার দাবার নিয়েও নানান বাছবিচার উ্নার।

টক খাবে না, চা খাবে না। মাছ, মাংসও সব সময় খাওয়া চলবে না। বাঁধন ছাড়া মানুষ আমি নিয়মের বেড়াজালের শিকল পরে একেবারে হিমশিম অবস্থা। প্রথম কয়েকটা বছর কেমন যেন এক ঘোরের ভিতর কেটে গেলো। এর মাঝে বাচ্চাও হয়ে গেছে তিনটা।

তাদের সামলাব না নিজের দিকে নজর দিব না ভালোবাসার মানুষের দিকে নজর দিব, নাকি আমার লালিত স্বপ্ন পূরণে কাজ করব। আমি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সব কেমন আমার অজান্তে আমাকে চেপে ধরল। যাঁতা কলে ঘুরে ঘুরে কেটে যাচ্ছে প্রতিদিন আমার ইচ্ছার বাইরে। কোথায় সেই সবার মাঝে ছাপ ফেলানো চৌকস জীবন। গান নাটক, অনুষ্ঠান ওসব যেন আমার স্বপ্নে দেখা জীবন আদৌ কখনো আমি ওসবের সাথে জড়িত ছিলাম বলে আর মনে হয় না।

মানুষটা ক’বার জেলে গেলো কবার নির্যাতন সইল, অস্থির সময়, ছেলে মেয়ে নিয়ে দুঃসহ অবস্থা অভাব উদ্বিগ্নতায় আর বাড়ি ফিরে এলে রাতদিন ঘুম, পাশে বসে তাকে মায়ের পাহাড়া দেয়া আর ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না করা। নয়তো নতুন কোন পরিকল্পনায় তার ব্যস্ততা রাজা উজির মারা অথচ কখনোই ব্যস্ত নয় সন্তান বউ বাচ্চার জন্য অদ্ভুত এক সময়। এ আমি কড়ে গুনে বলে দিতে পারি কিন্তু আমাদের সোহাগী সময়, ভালোবাসায় ভরপুর আনন্দময় সময় আমি সমুদ্রে মুক্ত সেঁচার মতন খুঁজে যাই কিছু পাই না। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি। না সেও এক স্পেশাল জীবন আমার।

সমুদ্রের মতনই উথাল পাতাল ঢেউয়ের নাচন। দাদাজান হয়তো ঠিকই বুঝেছিলেন, কেমন হবে পরিণতি তাই সমাধানের পথ বাতলে বলে দিয়েছেন সমুদ্রে পড়ে গেলে সাঁতার দিয়ে উঠতে পারবে। দাদাজান চলে গেলেন। আমি বুকে চেপে রাখি সকল কষ্ট কাউকে কিছু জানাই না। এ আমার লজ্জা মুখ ফুটে কী ভাবে বলব? যে স্পেশাল সংসার করে সবাইকে তাক লাগাব ভেবেছিলাম মনের মানুষের সাথে, তা গড়িয়ে গেলো আর দশজন সাধারন মানুষের জীবনের মতনই।

তবে আমার জন্য সেও স্পেশাল যে দেখে সে অবাক হয়ে যায় এই আমার জীবন। অভাব যা চোখে দেখিনি কখনো অথচ ছেলে মেয়ে নিয়ে যেন দিশাহারা অবস্থা। আমার সন্তান অভাবের সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বাবার বাড়ি থেকে অর্থকড়ি এনে সমস্যার সমাধান করে ফেলব এমন আশা মনে মনে বাড়ির সবার, মুখেও বলে ফেলেন কেউ কেউ কিন্তু এই ব্যাপারে আমি বুঝেও মুখে রা করি না। আমার যুদ্ধ আমি একাই লড়ব বাবার বাড়ির লোকদের মুখ ফুটে বলব না কখনো।

বাবার বাড়ির লোকরা বুঝে কিন্তু আমার অহংকারে বাঁধা দেয় না। সোনাবরন রঙ, টসটসে যৌবন কেমন মিইয়ে গেছে। ডাগর চোখের নীচে কালি। রক্ত কম শরীর আরো বেশী ফ্যাকাসে। এনিমিয়ায় সারাক্ষন শরীরে কাঁপন, বুকের ভিতর ধুকধুক অস্থিরতা।

মনে হয় সন্তান গুলোকে মানুষ করার আগে নিজেই কুপোকাত হয়ে চলে যাব স্পেশাল দেশে। বেশ একটা ভালোবাসার উজান ভাটি দেখিয়ে বছর চৌদ্দ একটা শিক্ষিতা স্বয়ংসর্ম্পূণ মেয়ে নড়বড়ে বেতস পাতার মতন জীবন কাটিয়ে দিলাম। জীবনের হাল ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজে চলে যাওয়ারই অপেক্ষায় থাকা। ভালোবাসা, সে যে কেন ভালোবাসায় মাতাল করল তাই বুঝে উঠা হলো না। এতটা বছরের মধ্যে কখনো পাশে বসে দুদ- কথা বলার সময় হলো না অথচ সে আছে দেশের জনগনের উদ্ধারের কাজে নিয়োজিত।

ঠোঁট বাঁকা হয়ে হাসি আসে আমার। যখন কিছু কাজ হয় একগাদা লোকের হৈচৈ এ সরগড়ম হয়ে উঠে বাড়ি। সারাদিন চা, পান, খাবারের ঝড় বয়ে যায়, সাথে কথার তুবড়ি, মুখে সব হাতি ঘোড়া মারা শেষ। লোকজনের উৎসাহের অন্ত নাই। আমারও কেমন আশা জাগে হয়তো বা এবার কোন কারিশমা দেখাবে ওরা।

কিছুদিন পর সব শুনসান। হয় পরে পরে ঘুমানো না হয় জেল খানায় বন্দি। ঘুমিয়ে থাকলে শাশুড়ির বিলাপ, জেলে থাকলে আমার দৌড় অচেনা অজানা রাস্তাঘাট, মানুষের মাঝে। আহারে জীবন! কী স্পেশাল জীবন বেছে নিয়েছিলাম নিজের পছন্দে। এমনি এক সময়ে এজলাসে বসে থেকে বিচার দেখতে দেখতে মনে হলো আমি বারবার ওকে জেলখানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাই।

আমাকে কে জেলখানা থেকে ছাড়াবে? উঠো মন জাগো, তোমার উকিল, জজ, ব্যারিস্টার সব তুমি । যুক্তি, তর্কে রায় দিয়ে নিজেকে মুক্ত করো। এমন ভাবনা আসার পর কেমন যেন শীর্ণ দূর্বল হাফধরা বুকে চিনচিনে ব্যথা ধরা শরীরে এক রকম জোয়ার জাগা টের পেলাম। ভরা পূর্ণিমার মায়াভরা টান। না আমি আর থাকতে পারলামনা।

ঐ গুমট ঘর, দমবন্ধ অবস্থা, চারপাশের পিলপিলে মানুষ এ আমার জীবন নয়। যে মানুষটাকে ভেবেছি শিক্ষায় সচেতনতায় রত্ন ভাণ্ডার, সে একটা অকাট মূর্খ ভেরেণ্ডা এমন ছাড়া আর কিছু নয়। আমার গায়ের মধ্যে ঝমঝম ভাব, নিশির ডাকে আমি বেড়িয়ে পরতে চাই কিন্তু দরজা বন্ধ কী ভাবে বেরুব? ৩ সমুদ্রের পাড়ে ঢেউয়ের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় পুরানো সব স্মৃতি। অবারিত খোলা প্রান্তরে শ্বাস নিতে নিতে মনে হয় কেমন দমবন্ধ একখানা ঘরে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে জীবন ছিল। পাশের মানুষ বেজায় জোরে নাক ডেকে যাচ্ছে।

বাচ্চারা জেগে উঠছে বারবার। গুমট গরম আর চেপে আসা সময়টা যেন জাপটে ধরতে আসে আবারো। আমি দৌড়াই জলের ঢেউয়ে দাপাদাপি করে ধুয়ে দিই সব কালিমা সব কষ্ট। বালুকায় বসে জলের আদর নিতে নিতে মনে হয়, নাহ্ সেও ছিল স্পেশাল সময়! লোকটার কিছু ছিল না কিন্তু মানুষ ওকে ভালোবাসতো। আমকেও সম্মান দেখাত।

কিন্তু আমি ঐ মানুষের ভালোবাসা চাইনি চেয়েছি একজনার ভালোবাসা। চেয়েছি সন্তানের বাবা। কিন্ত সে মনে হয় এসব বিষয় তেমন বুঝে উঠত না যত বুঝত বিশাল মানুষের জীবন। খণ্ড খণ্ড জীবন নিয়ে তো বিশাল দালান হবে কিন্তু খণ্ড গুলো যদি ঘুণে ধরা ফোকলা হয় তা হলে দালান টিকবে কেমনে। আমি চাই মজবুত মজবুত ভীত।

আমার কিছু পরিকল্পনা ছিল, দুজনে আমরা চৌকস লেখাপড়ায় বুদ্ধি বিবেচনায়। দুজনে মিলে সংসারটার ভীত দাঁড় করে ফেললে দুজনে মিলে আশপাশের গরীব মানুষের জন্য সুন্দর স্থায়ী ভাবে আয়ের জন্য প্রকল্প গড়ে তোলার ইচ্ছা পুষন করেছিলাম, যা বয়ে আনবে মানুষের ভালোবাসা অনাবীল। সুন্দর কিছু করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস কিন্তু আমার লম্বা পথ চলা তার পছন্দ নয় সে মনে করত মানুষের জন্য কিছু করা আমার বোঝার বাইরে আমি বড় লোকের মেয়ে এই আমার অযোগ্যতা, সে সব জানে। যাহোক অপেক্ষার পালা শেষ করে একদিন ওকে ধরে বসলাম, আমার কিছু কথা আছে তোমাকে শুনতে হবে। এখন সময় নেই, পরে শুনব বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল।

আমি বললাম, শুনব বলে বছর বারো কেটে গেছে আজ এই মুহুর্তে শুনবে। ভিষণ অবাক চোখে আমাকে দেখল তারপর আমার কথা শুনতে বসল। আমি আর এই গ্রামে থাকব না ঢাকা যাবো। নাটক, গান যা আমার জীবনের অঙ্গ তা থেকে বহু দিন দূরে পরে আছি আবার সব শুরু করব। এখন এই বয়সে? বয়সের কোন সীমা নাই তাছাড়া ছেলে মেয়ের শিক্ষার জন্যও ঢাকা থাকা দরকার।

-কী ভাবে চলবে? -আমি চালিয়ে নিব। সে বাঁধা দিল না বলল যাও, প্রথম ক’বছর এসে সাথে থাকল। সময়টা সুন্দর ছিল পারিবারিক একটা জীবন কিন্তু ধীরে ধীরে আবার মানুষের ভীড় বাড়তে থাকল একটু গুছিয়ে উঠতে না উঠতে। ছেলে মেয়েদের মা বাবার সাথে আনন্দময় সময়টা, আবার মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গেলো। ওরা একলা নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেলো।

বিদেশী যে কোম্পানিতে আমি কাজ নিয়েছিলাম ওরা আমাকে বিদেশে পোষ্টিং দিয়ে পাঠাতে চাইল। আমি বিদেশে পাড়ি জমালাম। বছর খানেক পর ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসে স্কুলে ভর্তি করে দিলাম। ওকে আনার অনেক চেষ্টা করলাম, সে আসল না, আসবে না। বিদেশ মনে হয় ওকে গিলে খেয়ে ফেলবে এমন একটা ভাব।

বিদেশ ভীতির কথা আবার আমাকে হাসিয়ে দিল। না জেনে কত উদ্ভট ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে বসে আছে কিন্তু জানার আগ্রহও নাই। দিনদিন দূরত্ব বেড়ে গেলো দিনদিন দুজনার পথ দুদিকে চলে যেতে লাগল। হাসি আর দুঃখগুলো জল উর্মিরধারা বইয়ে ধুয়ে নিয়ে যায়। আমার বড় ভালোলাগে নির্জলা আনন্দ, পবিত্র স্বচ্ছতা।

আমার স্পেশাল জীবনের কথাগুলো জলের কানে ঢেলে দিলাম। ও ঝংকার তুলে হেসে গড়িয়ে গেল আমার মতন। বয়ে নিয়ে যাও ছড়িয়ে দাও পৃথিবীময় আমার নতুন জানা কথাগুলো। দুহাতের ঝাপটায় জল ছিটাই জল আমাকে ঢেউয়ের দোলায় ভাসায়। প্রাণবন্ত খেলায় মেতে উঠি দুই সখি।

কথা বলি গান শুনাই সেও আমর সাথে কথা বলে শব্দ তুলে। জলের ভিতর অনেকক্ষন সাঁতার কেটে উঠে আসলাম। বিকালের সোনা রঙ রঙিনতরো হয়ে উঠছে। পৃথিবীময় এক অদ্ভুত মায়ার খেলা। আরো একটা দিন গড়িয়ে গেলো জলের নিচে।

গ্রীষ্মের দিনগুলো অনেক লম্বা এখানে সূর্য ডুবে রাত দশটায়। জলকেলি করে উঠে এসে বেশ খিদা লেগেছে তবু আমি খানিক বসে এই পৃথিবীর রঙ দেখলাম। এখন প্রতিদিন মনে হয় এই সময়টা আর পাবো না, আগে একটা ভাবনা ছিল সময় অফুরন্ত। এখন মনে হয় কবে যে প্রাণ পাখি বেড়িয়ে যায়। হৃদযন্ত্রে তেমন কোন অস্বস্থি বোধ করি না।

বরং মনে হয় আরো বেশী শান্ত । এত ঝাপাঝাপির পরে বড় আরামে পরিষ্কার বায়ু আসা যাওয়া করছে শ্বাস যন্ত্রের মাধ্যমে। যে পিঠের ব্যথাটা অনেক ভুগায় তাও টের পাচ্ছি না। আজ তবে আরো আনন্দ করা যাক। গাড়ি নিয়ে চলে এলাম একটা বারকাম রেস্টুরেন্টে যেখানে পোলাপানেরই ভীড় বেশী।

ধুম ধারাক্কা গান চলছে। আলো আধাঁরীর মাঝে জোড়াজোড়া মানুষ বেশী দেখা যায়। তারমাধ্যে আমার মতন একা অথবা অনেকে মিলেও আছে। প্রচ- ভীড় ভিতরে বাহিরে। মিনিট বিশেক অপেক্ষার পালা শেষ করতে আমি ড্রিংকস নিয়ে বসে পড়লাম বারের সামনে।

পাশে বসা মানুষটি একা মনে হয়, দু’একবার আমার দিকে আড় চোখে তাকাল তারপর ঘুরে কথা বলা শুরু করল। তুমি কি একা ? দেখতেই পাচ্ছ। ডিনার করবে নাকি এখান থেকেই কেটে পরবে? ডিনার করব না মানে পেটের ভিতর ছুঁচো দৌড়াচ্ছে কিন্তু যা ভীড় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা কী একসাথে বসতে পারি? সারাদিন তো নিজের মতন কেটে গেলো নাহয় কারো সাথে অন্যরকম কিছু মুহুর্ত কাটুক। সায় দিয়ে বললাম ঠিক আছে।

খানিক অপেক্ষার পর কোনার দিকের একটা টেবিলে নিয়ে বসাল আমাদের। বুড়ো কখন আবার বিশেষ আয়োজনের কথা বলে দিয়েছিল কে জানে। বেশ ফুল মোম জ্বালানো দুজনের বসার একখানা রোমান্টিক সাইজের টেবিল। চাপদাড়ি মাখা মুখে মিটিমিটি হেসে বলে তুমি অনেক সুন্দর। আর কত? এই বয়সে এসেও শুনতে হবে।

এই স্পেসাল তো জন্মের পর থেকেই আমার সাথে লেগে আছে। যা হোক আমিও বললাম তুমিও মন্দ না। আকাঙ্ক্ষার আগুনে ঘি ঢালা হয়ে গেলো। গলে যায় কিনা মোমের মতন এখন সেই আশংকাই করছি। জাহাজে ঘুরে কাটিয়েছে কর্মজীবন বেশ বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা গল্পো কথায় খাওয়া শেষ হলো।

নাচ হলো অনেক রাতে ফিরে এলাম ঘরে। বারবার লোকটা জানতে চাচ্ছিল আবার কি দেখা করা যায়। এই খানিকের পরিচয় এই মধুময় সময় স্মৃতি হয়ে থাক। আমি থাকি তোমার ভাবনার জগৎ জুড়ে। খুব ভালো আছি আমি আমার ভুবনে ।

আর একটা কথা চুপি চুপি বলি যেটা আমাকে আরো স্পেশাল করে দিবে আপনাদের সামনে। ছেলেমেয়ে নিয়ে বিদেশে আসার পর মোটামুটি স্বচ্ছন্ধ জীবন। আমার বাবার বাড়ির মতন বনেদি আড়ম্বরপূর্ণ না। সন্তানদের বাবার বাড়ির মতন বেহাল দশা না। মোটামুটি স্বচ্ছল সুন্দর একটা জীবন।

সন্তানরা শিক্ষা জীবন শেষ করে এক একজন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হলো এই বিদেশের মাটিতে। ওদের বিয়ে শাদি হয়ে গেলে আমি আমার একক বাড়িটা নিজের মতন গুছিয়ে একাকী আছি বেশ ভালো কাজে যাই আসি। মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হই, বাঙালি সমাজে গান নাটকের অভিজ্ঞতার কারণে। এরমধ্যে একদিন বোমফাটানো একটা ঘটনা ঘটে । আমার কেনা দু ডলারের লটারিতে আমি বিশ মিলিয়ন ডলার পেয়ে যাই।

সাতদিন এইখবর জেনে তব্দা লেগে বসে থাকি। এরপর ঠিক করি কাউরে জানাব না। এই বয়সে টাকার খবর পেয়ে মানুষ আমার পিছনে লাগবে তারচেয়ে টাকাটা আমি নিজের মতন করে দান খয়রাত সুখ ভোগ যা খুশি তাই করে ব্যয় করব। মহা ঝামেলা করে নিজের টাকা উঠিয়ে আনলাম। যতবার যাই টাকা উঠাতে টেলিভিশনের লোক বসে থাকে।

পত্রিকার লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেষে বোরখার আড়ালে মুখ ঢেকে বহু তিলিসমাত করে টাকা তুলে ব্যাংকে চালান করলাম। এখানেও দেখি আমাদের দেশের মতন অবস্থা! কোন প্রাইভেসি রাখার উপায় নাই। পরিবারের সবার নামে পরিমান মতন টাকা উইল করে রাখছি বাকি টাকার একটা ব্যবস্থা করছি। দেশের দুস্থ মানুষের সেবার জন্য।

আগে যেখানে প্রতি মাসে অল্পসল্প পাঠাতাম লটারীর টাকায় একটা বড় অংশ দিয়ে বিশেষ এক সেবা সংঘ গড়ে তুলেছি নিজের মতন। বিদেশি সংস্থার নামে চলছে এখন আড়ালে আমার নাম আপাততঃ। বিদেশে না আসলে এই বয়সে মানুষের এই উপকারটুকু কোনদিনই করতে পারতাম না আর, যা ছিল আমার একান্ত আকাঙ্ক্ষার, নিজের মতন কিছু করা মানুষের জন্য, এইটা আমার মনে হয়। যাকে মানুষের জন্য খাটতে দেখলাম সারা জীবন সে তো আজও কিছুই করতে পারল না দেশে বসে এইটাই আফসোস। স্পেশাল র্হাট নিয়ে স্পেশাল ভাবে কাটিয়ে যাই যে ক’টা দিন স্বাভাবিক ভাবে বাঁচি।

ডাক্তারের ছুড়ির সামনে যেতে চাই না। মরে গেলে আরেক তরফা স্পেশাল হওয়া তো রয়েই গেলো বাকি সেটা আপনারা দেখবেন আমি তো থাকব না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.