আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আখের বিকল্প সুগারবিট

আখ থেকে চিনি উত্পাদন হলেও সুগারবিট থেকেও হয়। বিশ্বের উত্পাদিত চিনির ৩০-৩৫ ভাগই আসে সুগারবিট থেকে। আখের অভাবে দিন দিন চিনিকলগুলোতে যখন উত্পাদন হ্রাস পাচ্ছে, তখন সুগারবিট চাষের মাধ্যমে চিনি উত্পাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। ঠাকুরগাঁওয়ের মাদারগঞ্জে অবস্থিত আঞ্চলিক আখ গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে সুগারবিট চাষ করে এর ফলন দেখে আশান্বিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, পার্শ্ববতী সেতাবগঞ্জ ও পঞ্চগড় চিনিকল এলাকাতেও সুগারবিট থেকে চিনি উত্পাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাদারগঞ্জ আঞ্চলিক আখ গবেষণা কেন্দ্রের স্টেশন ইনচার্জ রণজিত্ কুমার কবিরাজ ও বিজ্ঞানী সোহরাব হোসেন জানান, ২০০২-০৩ সালে রবি মৌসুমে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট সিনজেন্টা বাংলাদেশের মাধ্যমে ফ্রান্সের হিল্সহগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাত নিয়ে সীমিত আকারে সুগারবিটের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে। ২০১০-১১ রবি মৌসুমে এসে ঠাকুরগাঁওয়ে এক একর জমিতে সুগারবিটের ফলন পাওয়া যায় হেক্টেরপ্রতি ৩৫ টন থেকে প্রায় ৬৩ টন। ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে সুগারবিটের ৭টি জাতের মধ্যে রয়েছে সুভ্রা, কাভেরী, সি-গ্রিন, ইবি-০৫১৩, ০৬১৬, ০৬১৭ ও ০৬২১। সাধারণত শীতপ্রধান দেশে সুগারবিটের চাষ হয়ে থাকে। তবে এখন উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও চাষ হচ্ছে।

ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা, রাশিয়া, তুরস্ক, ইটালি, পোল্যান্ড, স্পেন ও ইউক্রেনে এর প্রচুর চাষ হয়। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, চীন, জাপান ও ইরানে এর চাষ হচ্ছে এবং চিনিও উত্পাদন হচ্ছে। বাংলাদেশে বারি ও ব্র্যাক পরীক্ষামূলক সুগারবিটের চাষ করছে। সুগারবিট একটি স্বল্প মেয়াদি শস্য। মাত্র ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই চিনি উত্পাদনের উপযুক্ত হয়ে উঠে।

অন্যদিকে আখ ১২ থেকে ১৫ মাস পর্যন্ত জমিতে থাকে। উঁচু, মাঝারি উঁচু ও সমতল জমির দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি যেখানে পানি দাঁড়ায় না, এমন মাটি সুগারবিটের জন্য উত্তম। অংকুরোদগমের সময় তাপমাত্রা ১৫-২৫ ডিগ্রি, গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ২১-৩৫ ডিগ্রি ও পরিপক্বের সময় ১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। মাটির আর্দ্রতা থাকতে হবে ৬৫ শতাংশের উপর। হেক্টরপ্রতি ২৬০ কেজি ইউরিয়া, ১শ’ কেজি ফসফেট, ২৫ কেজি পটাশ, জিঙ্ক সালফেট ১০ কেজি, জিপসাম ১শ’ কেজি, বরিক এসিড ৭ কেজি ও গোবর সার দেড় টন প্রয়োগ করতে হয়।

দেশের চিনিকলগুলোতে ডিফিউজার প্লান্টসহ আনুষঙ্গিক কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করলে সুগারবিট থেকে আখের চেয়ে অনেক বেশি চিনি উত্পাদন করা যাবে। সুগারবিট থেকে চিনি ছাড়াও চকলেট, সিরাপ, ইথানল (জৈব জ্বালানি) উত্পাদন এবং মোলাসেস থেকে বিটেন, ইউরিডিন প্রভৃতি উত্পাদন করা যায় এবং পাল্প পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে এর বীজ প্রতি বছরই আমদানি করতে হবে। কারণ এই দেশের জলবায়ুতে বীজ উত্পাদন করা কঠিন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন অদূর ভবিষ্যতে দেশের মাটিতেই সুগারবিটের বীজ উত্পাদন করা সম্ভব হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।