আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন ফ্রিল্যান্সার হই।

স্বপ্নের হাতছানি আমাকে কাছে টানে, যদিও জানি এটা মরিচিকার মত। আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যকুল শূধাইলনা কেহ। আমি বরাবরই চাকুরি খোজার বিপক্ষে। আমার লেখাপড়া শেষ করে , কত যে চাকুরির চেষ্টা করেছি তা গুনে শেষ করা যাবে না। সেই থেকে চাকুরি খোজার বিপক্ষে।

২০০৬ থেকে ২০০৮ শেষ পর্যন্তু কত যে দরখাস্ত করেছি তা এখন আর মনে করতে পারছি না। বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায় সহজেই কিন্তু তারা গাধার মত খাটায়। আর সরকারি চাকরি ? ওরে বাবা! খুবই দুর্লভ। সোনার হরিণের চেয়েও দুর্লভ। আমার মনে পড়ে, নন ক্যাড়ার কাস্টমস্ পরিদর্শকের চাকরির দরখাস্তের জমা দেওয়ার দিনের কথা।

জমা দিতে গেছি সকাল ৭ টায়। আর জমা দিয়ে বেরিয়েছি ৩ টায়। আমার সামনে আরো ২৭৩ জন দাড়িয়েছিল। আর আমার পিছনে কতজন ছিলো গুনিনি। তাও হয়তো ২০০ জন হবে।

যখন আমি দরখাস্ত জমা দিই তখন এক অফিসার (মানে যিনি দরখাস্ত জমা নিচ্ছিলেন তিনি । তার সাথে আরো তিন জন অফিসার ছিলো । তারা জমা নেওয়ার সময়ই একটা ভাইবা নিচ্ছিল। ) আমাকে শেষ প্রশ্ন করলে, "তোমার আত্মিয়-স্বজ্বনের মধ্যে কোন কেউকেটা গোছের কেউ আছে ?" আমি না বুঝে বল্লাম " বুঝলাম না" । তিনি বল্লেন " তোমার সুপারিস করার মত কেউ আছে? " আমি বল্লাম "না"।

"১০ লাখ দিতে পারবা? " তিনি বল্লে । আমি বল্লাম " দিতে পারলে চাকরি করতে আসতাম না "। তিনি বল্লেন " যাও। খালি খালি দরখাস্ত দিচ্ছ। কোন কাজে লাগবে না।

" আমি বল্লাম " কম করা যায় না ?" তিনি বল্লেন " আমি তো তোমার কাছে প্রথম মাসের উপরির টাকার ৪০% চাইছি। দিতে পারলে , বলো । আর না পারলে, যাও। " আমি মাথা নিচু করে চলে এলাম। আমার আব্বা কোনদিনই আমাকে এত টাকা দেবেন না।

তার দেওয়ার সামর্থ নেই। একবার আর্মিতে একটা ইনটারভিউ বোর্ডে ভাইবা দিচ্ছিলাম । ভাইবা নিচ্ছিলেন মেজর জামাল। সবার ভাইবা নিলেন সব্বের্চো ৫ মিনিট । আর আমার ভাইবা নিলেন প্রায় ৪০ মিনিট।

সব শেষে তিনি বল্লেন, কাউকে বাদ দিতে গেলে তার একটা দুর্বলতা দেখিয়ে দিতে হয় । আমি তোমার এই সেক্টোরে দুর্বলতা পেলাম না। দেখো, সরকারী চাকুরি পেতে গেলে ভালো লিংক লাগে। আমার ধারনা, তোমার তা নেই। এ পোষ্টে তোমার চাকরি হবে না।

এখানে লোক আগে থেকে নেওয়া হয়ে গেছে। এটা ফরমালিটি মাত্র। এসব চাকরি খোজার চেয়ে তুমি ফ্রিল্যাংসিং করো। ভালো উন্নতি করতে পারবে। আমি অবসর সময়ে ফ্রিল্যাংসিং করি ।

তোমার কোন সাহায্য লাগলে আমি সাহায্য করতে পারব। এতে নিজের ইনকামের সাথে সাথে দেশেরও সুনাম বাড়াতে পারবে। তার কথা আমার মনে ধরল। এটা ২০০৮ এর শেষ দিকের কথা। তার কাছ থেকে আমি অনেক সাহয্য পেয়েছি।

তিনি আমাকে যেভাবে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন আমি তা হয়েছি। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি ২০০৯ সালের প্রথম দিকে ফ্রিল্যাংসিংয়ে ঢুকি। প্রথম কয়েক মাস বেশ কষ্টে কেটেছে। কিন্তু তার পর থেকে আমাকে আর আল্লাহর অশেষ রহমতে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আমি স্বচ্ছল ও স্বলম্বি।

এটুকু বলতে পারি , একজন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার থেকে আমার বর্তমান বেতন কম নয়। বরং বেশিই বলা যায়। প্রথম দিকে আমি ডাটা এন্ট্রির কাজ দিয়ে শুরু করি। আস্তে আস্তে আমি নিজেকে পরিবর্তন করি। এক্ষেত্রে আমি জাকারিয়া (বাংলাদেশের একজন বড় মাপের ফ্রিল্যাংসার) ব্লগ থেকে অনেক দরকারি তথ্য পেয়েছি।

তার একটা কথা মনে পড়ে, সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করতে না পারলে এই অনলাইন জগতে টিকে থাকা বড়ই কস্টের। তার কথা অনুযায়ি আমি নিজেকে আপডেট করতে পেরেছি। ডাটা এন্ট্রি থেকে এস ই ও এক্সপার্ট এবং পরবর্তীতে ওয়েব ডিজাইনার, আর এখন ওয়েভ প্রোগ্রামার হয়েছি। আমার এই অনলাইন জগতের দুইজন নায়ক, ১. মেজর জামাল আর ২. জাকারিয়া চৌধুরি । এই জগতে টিকে থাকার মুল মন্ত্র হল, হাল ছেড়ে না দেওয়া।

এক্ষেত্রে আমার মা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেয়না দিয়েছে। অনেক সময় কাজ পাইনি । হাল ছেড়ে দেওয়ার মত অবস্থা । মা আমাকে সাহস দিয়েছে। এখন আমি অনলাইন কাজ বুঝতে শিখেছি।

হাল ছাড়ার মত পরিস্থিতি এখন আর তৈরি হয় না। আসুন আমরা অনলাইনে কাজ করি। এসব কাজ কিন্তু কঠিন না। একটু মেধা খাটালে আপনিও পারবেন। যেহেতু এই ব্লগে আসতে পেরেছেন, তারমানে আপনি ওয়েব ব্রাইজ করতে পারেন।

যেহেতু আপনি গুগলে সার্চ করতে পারেন , তার মানে আপনি ওয়েব রিসার্চ এক্সপার্ট। তার মানে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাচের ২য় অবস্থানে আছেন। যেহেতু আপনি লিখতে পারেন আর এই ব্লগে লেখা পোষ্ট করতে পারেন , সেহেতু আপনি ব্লগ পোষ্ট আর ক্রিয়েটও করতে পারেন আর সাথে পারেন কমেন্ট করতে । তাহলে কি দাড়ালো , আপনি অলরেডি একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হয়ে বসে আছেন। তাহলে আর দেরি করে কি করবেন? আসুন ফ্রিল্যান্সিং করি।

ঢুকে যান ওডেক্স কিংবা ফ্রিল্যান্সারে অথবা ভিওয়ারকারে। শুরু করুন বিট (দরখাস্ত করা) করা। শুরু করুন অনলাইন জীবন। প্রথমে হয়তো কাজ পেতে দেরি হবে কিন্তু আশা ছাড়বেন না। অবশ্যই কাজ পাবেন।

আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করুন। তবে একটা কথা প্রথম দিকে কমরেটে কাজ ধরার চেষ্টা করবেন। তাহলে আর দেরি করে কি করবেন? আসুন ফ্রিল্যান্সিং করি এবং প্রমান করি আমরা বেকার নই। আমরা নিজের যোগ্যতায় যোগ্যতাবান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.